হাকালুকি হাওরে পানি কমতে শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ মৎস্য শিকারীরা। হাওরের বিভিন্ন বিলে অবৈধভাবে বেড় জাল, কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব চলছে। সন্ধ্যার পরে হাওরে মাছ নিধনের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ভোর রাতে এসব মাছ বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়- যার কারণে চরম হুমকিতে রয়েছে হাকালুকি হাওরের মৎস্যসম্পদ, জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য। প্রশাসনের অভিযান এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান থাকলেও স্থানীয় জেলেদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র নিষিদ্ধ বেড় জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে হাওরে।
গত ৮ জুলাই বিকেলে কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেনের নেতৃত্বে হাকালুকি হাওরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল জব্দ ও ধ্বংস করা হয়। অভিযানকালে হাওরের বিভিন্ন স্থানে পেতে রাখা প্রায় ৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল, ৩০০টি চায়না দোয়ারি জাল এবং ৬ হাজারটি চাই জব্দ করে হাওরের তীরে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে মাছ ধরার দায়ে কুঞ্জ লাল বিশ্বাস নামে একজনকে আটক করে তিন হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়।
এর আগে, গত ১৮ জুন ও বিগত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর হাওরের কুলাউড়া অংশে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু মাসুদ। এ সময় প্রায় ১ হাজার মিটারের দুটি জাল জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরে ‘চকিয়া বিল গ্রুপ (বদ্ধ)’ জলমহালের ১৪৩২-১৪৩৪ বাংলা সনে ইজারা নেন রাজনগর উপজেলার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. মাসুক মিয়া। সংঘবদ্ধ জেলেরা ওই জলমহাল থেকে বেড় জাল দিয়ে অবৈধভাবে পোনা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করছে। প্রতিকার চেয়ে গত ২৯ জুন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ওসি বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন ইজারাদার মো. মাসুক মিয়া।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরে দুই যুগ আগেও ১১০ প্রজাতিরও বেশি দেশি মাছ ছিল- যা এখন ৫০ প্রজাতির নিচে নেমে গেছে। হাওর থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে মাগুর, রিটা, নানিদ, বাঘাইড়, চিতল, রানী মাছ, এলংসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। হাকালুকিই দেশের অন্যতম প্রধান মাছের উৎসস্থল হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মাছ যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ হাওরের মাছ খুব সুস্বাদু। এতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালো বাউস, আইড়, বোয়াল, শোল, গজার, পাঙ্গাস, ঘনিয়া ও ছোট প্রজাতির কই, মাগুর, পাবদা, সিং, পুটি, টেংরা, ভেড়া, মলা, রানি, বাঁচা মাছসহ সব প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এক কথায় এমন কোনো প্রজাতির মাছ ছিল না, যা হাওরে পাওয়া যেত না। অনেক প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে অবাধে শিকারের ফলে।
হাকালুকি হাওর কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই অরক্ষিত হাওরে দিন দিন পোনা মাছ ধরার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের পরিমাণ কমছে। হাওরের বাস্তু তন্ত্র (ইকো সিস্টেম) রক্ষায় অবিলম্বে হাওরকে উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি হাওর তীরের মানুষের।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলা ইসিএ কমিটির সভায় হাকালুকি হাওরের উন্নয়ন এবং হাওর তীরের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ব্যাপক আলোচনা হয়। ১৯৯৯ সালে হাকালুকি হাওরকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা হাওর উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও প্রকৃত অর্থে হাওরের কিংবা হাওর তীরের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি। সব অর্থই হাওরের জলে ভেসে গেছে।
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
হাকালুকি হাওরে পানি কমতে শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ মৎস্য শিকারীরা। হাওরের বিভিন্ন বিলে অবৈধভাবে বেড় জাল, কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব চলছে। সন্ধ্যার পরে হাওরে মাছ নিধনের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ভোর রাতে এসব মাছ বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়- যার কারণে চরম হুমকিতে রয়েছে হাকালুকি হাওরের মৎস্যসম্পদ, জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য। প্রশাসনের অভিযান এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান থাকলেও স্থানীয় জেলেদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র নিষিদ্ধ বেড় জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে হাওরে।
গত ৮ জুলাই বিকেলে কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেনের নেতৃত্বে হাকালুকি হাওরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল জব্দ ও ধ্বংস করা হয়। অভিযানকালে হাওরের বিভিন্ন স্থানে পেতে রাখা প্রায় ৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল, ৩০০টি চায়না দোয়ারি জাল এবং ৬ হাজারটি চাই জব্দ করে হাওরের তীরে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে মাছ ধরার দায়ে কুঞ্জ লাল বিশ্বাস নামে একজনকে আটক করে তিন হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়।
এর আগে, গত ১৮ জুন ও বিগত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর হাওরের কুলাউড়া অংশে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু মাসুদ। এ সময় প্রায় ১ হাজার মিটারের দুটি জাল জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরে ‘চকিয়া বিল গ্রুপ (বদ্ধ)’ জলমহালের ১৪৩২-১৪৩৪ বাংলা সনে ইজারা নেন রাজনগর উপজেলার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. মাসুক মিয়া। সংঘবদ্ধ জেলেরা ওই জলমহাল থেকে বেড় জাল দিয়ে অবৈধভাবে পোনা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করছে। প্রতিকার চেয়ে গত ২৯ জুন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ওসি বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন ইজারাদার মো. মাসুক মিয়া।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরে দুই যুগ আগেও ১১০ প্রজাতিরও বেশি দেশি মাছ ছিল- যা এখন ৫০ প্রজাতির নিচে নেমে গেছে। হাওর থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে মাগুর, রিটা, নানিদ, বাঘাইড়, চিতল, রানী মাছ, এলংসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। হাকালুকিই দেশের অন্যতম প্রধান মাছের উৎসস্থল হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মাছ যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ হাওরের মাছ খুব সুস্বাদু। এতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালো বাউস, আইড়, বোয়াল, শোল, গজার, পাঙ্গাস, ঘনিয়া ও ছোট প্রজাতির কই, মাগুর, পাবদা, সিং, পুটি, টেংরা, ভেড়া, মলা, রানি, বাঁচা মাছসহ সব প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এক কথায় এমন কোনো প্রজাতির মাছ ছিল না, যা হাওরে পাওয়া যেত না। অনেক প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে অবাধে শিকারের ফলে।
হাকালুকি হাওর কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই অরক্ষিত হাওরে দিন দিন পোনা মাছ ধরার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের পরিমাণ কমছে। হাওরের বাস্তু তন্ত্র (ইকো সিস্টেম) রক্ষায় অবিলম্বে হাওরকে উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি হাওর তীরের মানুষের।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলা ইসিএ কমিটির সভায় হাকালুকি হাওরের উন্নয়ন এবং হাওর তীরের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ব্যাপক আলোচনা হয়। ১৯৯৯ সালে হাকালুকি হাওরকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা হাওর উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও প্রকৃত অর্থে হাওরের কিংবা হাওর তীরের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি। সব অর্থই হাওরের জলে ভেসে গেছে।