ভালুকা (ময়মনসিংহ) : নিজের বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করছেন দুই উদ্যোক্তা শেখ মামুন ও আশরাফ সোবাহ -সংবাদ
মূল্যবান ও সুস্বাদু বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষ করে ভালুকার কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছেন ঢাকার মধ্য বাড্ডার দুই উদ্যোক্তা শেখ মামুন ও আশরাফ সোবাহ।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের গোয়ারী গ্রামে জমি লিজ নিয়ে তারা এই রাম্বুটান চাষ শুরু করেন। সবুজ পাতায় থোকা থোকা লাল টকটকে রাম্বুটান দেখতে প্রতিদিনই আশপাশের এবং দূরদূরান্তের দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন ওই বাগানে।
এপ্রিলে গাছে ফুল আসার পর ছোট ফল বের হয়, এবং মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে ফল পাকতে শুরু করে।
বাগান মালিক শেখ মামুন জানান, ২০২০ সালে থাইল্যান্ড থেকে রাম্বুটানের চারা এনে ৬ একর জমিতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন, ভালুকার বেলে-দোঁআশ মাটি এই ফলের জন্য উপযোগী, গাছ দ্রুত বাড়ে এবং ভালো ফলন দেয়। প্রতিটি গাছের জন্য ১৬ বর্গফুট জমিতে দেড় ফুট গর্ত করে পোড়া মাটি, ভার্মিকম্পোস্ট ও অন্যান্য জৈব সার মিশিয়ে চারা রোপণ করলে ফলন ভালো হয়। কলম করে চারা তৈরি করলে ফলন আরও উন্নত হয়।
গাছের উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছে ৮০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। নরম কাঁটার এত লোমযুক্ত আবরণে ঘেরা পাকা রাম্বুটান বাদুড় বা পোকামাকড় খায় না, এমনকি গাছ থেকে ঝরে পড়ে না। ফলে দুই মাস পর্যন্ত গাছে রেখেই বাজার পরিস্থিতি বুঝে বিক্রি করা যায়।
হঠাৎ দুয়েকটি ফলে পোকা ধরলে পরিমিত পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ভিটামিন ই, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এ ফল রোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্বাদে ও গুণে সমৃদ্ধ এই ফল অনেকটা লিচুর মতো।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তারা রাম্বুটান চাষ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বাগানেই কলম চারা তৈরি শুরু করেছেন। উন্নত মানের চারা সুলভ মূল্যে বিক্রির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের উৎসাহিত করতে চান।
তাদের বাগানে বর্তমানে প্রায় ২০০টি গাছ রয়েছে এবং প্রায় সবগুলোতেই কম-বেশি ফল এসেছে।
জুন-জুলাই ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে রাম্বুটান বাজারজাত করা হয়। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি কেজি ফল ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ বছর বাজার ভালো থাকলে ৭০৮০ লাখ টাকার ফল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে উদ্যোক্তারা আশাবাদী।
শেখ মামুন আরও জানান, স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বাড়তি ফল বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। তার ১৫ বিঘা জমিতে তিনি আরও কয়েকটি বিদেশি ফল যেমন—পারসিমন, সুপার বাগুয়ানা, লংগান, সিডলেস লিচু, হোয়াইট জাম্বুরা, মিয়াজাকি আম, কাটিমন আম, বারোমাসি কাঁঠাল, সাদা জাম ও কালো জাম ইত্যাদি মিশ্রভাবে চাষ করছেন।
তাদের মতে, শুধু ভালুকায় নয়- দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষ করে কৃষিতে একটি বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, ভালুকার গোয়ারী গ্রামে রাম্বুটান চাষ করে শেখ মামুন ও আশরাফ সোবাহ নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুসরণ করে বাগান পরিচালনা করায় ফল সুস্বাদু ও উন্নতমানের হয়েছে। বিদেশি ফল হলেও রাম্বুটানকে এদেশে উচ্চফলনশীল ফল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : নিজের বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করছেন দুই উদ্যোক্তা শেখ মামুন ও আশরাফ সোবাহ -সংবাদ
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
মূল্যবান ও সুস্বাদু বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষ করে ভালুকার কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছেন ঢাকার মধ্য বাড্ডার দুই উদ্যোক্তা শেখ মামুন ও আশরাফ সোবাহ।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের গোয়ারী গ্রামে জমি লিজ নিয়ে তারা এই রাম্বুটান চাষ শুরু করেন। সবুজ পাতায় থোকা থোকা লাল টকটকে রাম্বুটান দেখতে প্রতিদিনই আশপাশের এবং দূরদূরান্তের দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন ওই বাগানে।
এপ্রিলে গাছে ফুল আসার পর ছোট ফল বের হয়, এবং মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে ফল পাকতে শুরু করে।
বাগান মালিক শেখ মামুন জানান, ২০২০ সালে থাইল্যান্ড থেকে রাম্বুটানের চারা এনে ৬ একর জমিতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন, ভালুকার বেলে-দোঁআশ মাটি এই ফলের জন্য উপযোগী, গাছ দ্রুত বাড়ে এবং ভালো ফলন দেয়। প্রতিটি গাছের জন্য ১৬ বর্গফুট জমিতে দেড় ফুট গর্ত করে পোড়া মাটি, ভার্মিকম্পোস্ট ও অন্যান্য জৈব সার মিশিয়ে চারা রোপণ করলে ফলন ভালো হয়। কলম করে চারা তৈরি করলে ফলন আরও উন্নত হয়।
গাছের উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছে ৮০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। নরম কাঁটার এত লোমযুক্ত আবরণে ঘেরা পাকা রাম্বুটান বাদুড় বা পোকামাকড় খায় না, এমনকি গাছ থেকে ঝরে পড়ে না। ফলে দুই মাস পর্যন্ত গাছে রেখেই বাজার পরিস্থিতি বুঝে বিক্রি করা যায়।
হঠাৎ দুয়েকটি ফলে পোকা ধরলে পরিমিত পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ভিটামিন ই, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এ ফল রোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্বাদে ও গুণে সমৃদ্ধ এই ফল অনেকটা লিচুর মতো।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তারা রাম্বুটান চাষ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বাগানেই কলম চারা তৈরি শুরু করেছেন। উন্নত মানের চারা সুলভ মূল্যে বিক্রির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের উৎসাহিত করতে চান।
তাদের বাগানে বর্তমানে প্রায় ২০০টি গাছ রয়েছে এবং প্রায় সবগুলোতেই কম-বেশি ফল এসেছে।
জুন-জুলাই ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে রাম্বুটান বাজারজাত করা হয়। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি কেজি ফল ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ বছর বাজার ভালো থাকলে ৭০৮০ লাখ টাকার ফল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে উদ্যোক্তারা আশাবাদী।
শেখ মামুন আরও জানান, স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বাড়তি ফল বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। তার ১৫ বিঘা জমিতে তিনি আরও কয়েকটি বিদেশি ফল যেমন—পারসিমন, সুপার বাগুয়ানা, লংগান, সিডলেস লিচু, হোয়াইট জাম্বুরা, মিয়াজাকি আম, কাটিমন আম, বারোমাসি কাঁঠাল, সাদা জাম ও কালো জাম ইত্যাদি মিশ্রভাবে চাষ করছেন।
তাদের মতে, শুধু ভালুকায় নয়- দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষ করে কৃষিতে একটি বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, ভালুকার গোয়ারী গ্রামে রাম্বুটান চাষ করে শেখ মামুন ও আশরাফ সোবাহ নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুসরণ করে বাগান পরিচালনা করায় ফল সুস্বাদু ও উন্নতমানের হয়েছে। বিদেশি ফল হলেও রাম্বুটানকে এদেশে উচ্চফলনশীল ফল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব।