এক সময় আমনের সঙ্গে আউশ ছিলো অন্যতম প্রধান ফসল। কৃষকের ধান ক্ষেত মানেই ছিলো আউশ-আমনে বাতেসে হেলা পড়া পুরষ্ট ধানের দোলা। আউশ- আমন ছাড়া কৃষকর ধানের গোলা অসম্পুর্ণ থেকে যেতে। তবে অধিক ফলনের ইরি-বোরো আবাদ আউশের স্থান ক্রমশঃ ছোট করে ফেলে। এখন অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন পুরানো সেই আউশের কাছে। উত্তরের শস্য ভান্ডার খ্যাত বগুড়া এথেকে পিছিয়ে নেই। কৃষকরা এখন আউশে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বৃষ্টি নির্ভর আউশে খরচ অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় আউশের ক্ষেতে বাতাসের শীষ দেয়ার শব্দ উঠে আসছে। আমন-বোরোর সঙ্গে আউশেও কৃষকদের স্বপ্ন দানা বাঁধছে। লোকসানের আশঙ্কা তেমন না থাকায় অনেক কৃষক বৃষ্টির সঙ্গে মিতালী গড়ে আউশে রাখছেন আস্থা। ইতোমধ্যে জেলার আউশের ক্ষেত গুলোতে ধান পুরষ্ট হচ্ছে। অনেক এলাকায় আবার আউশ কাটা কেবল শুরু হয়েছে। তবে পুরোদ্দমে কাটতে আরো সময় বাকী। শস্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা হিসাবে বগুড়ার পরিচিতি অনেক আগে থেকেই। শস্যর সঙ্গে এখানকার সবজিও দেশের অন্য এলাকার চাহিদা মেটায়। বোরো ও আমন ধানের সঙ্গে এখানকার কৃষকরা এখন আউশেও আস্থা রাখতে শুরু করেছেন। জেলায় এবার প্রায় ১২ হাজার ৭শ হেব্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। এই আবাদে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হওয়ার আশা করছেন। যা দেশে খাদ্য নির্ভরতায় ভালো ভুমিকা অংশ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন। জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে সব খানেই আউশ আবাদ হলেও সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়ে থাকে নন্দীগ্রাম, শেরপুর ধুনট গাবতলি উপজেলায়।

এক সময় দেশে আমনের সঙ্গে আউশের নাম একই ভাবে উচ্চরিত হতো। তবে বিংশ শতাব্দির ষাট শতকের দিকে অধিক ফলনের আবাদ ইরি বোরো দেশে লাভজনক হয়ে উঠে। কৃষকদের নিকটও এটি ক্রমান্বয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। বেশি ফলনের কারনেই বোরোতে কৃষকদের নিকট আগ্রহ। তবে সেচ নির্ভর এই ফসলে পানির স্তর নীচে যাওয়ার বিষয়টিও এখন সামনে এসেছে। কৃষি কর্মকর্মকতারা তাই বোরোর পাশাপাশি আউশ আবাদেও কৃষকদের মনোযোগী করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন। দেয়া হচ্ছে প্রনোদনা। এবার বগুড়ায় ৭ হাজার ৬শ জন কৃষকের মাঝে আউশ চাষে প্রনোদনা দেয়া হয়েছে। এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের আউশ আবাদ বোপন ও রোপন দুই পদ্ধতিতেই চাষ করেন কৃষকরা। এটি এখন বগুড়ায় কৃষকদের নিকট বাড়তি পাওনা ফসল হিসাবে পরিচিত। বোরো ও আমনের মাঝের সময়ে কৃষকরা আউশ আবাদ করছেন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মীর্জাপুর এলাকার ইসহাক,জানালেন গত বছর তারা ৩ বিঘা জমিতে আউশ আবাদ করলেও এবার ৬ বিঘা জমিতে চাষ করছেন। জানালেন আউশ তাদের নিকট বাড়তি পাওনা।

খরচও কম। তাই আবাদ করছেন। নন্দীগ্রামের হাটলাল গ্রামের রুগুল আমিন ৮বিঘা জমিতে আউশ চাষ করছেন। জানালেন শীষে ধান আসতে এখন বেশ সময় লাগবে। তবে আবাদ নিয়ে খুশি। আউশ লাগালে আমনের সময় পরিশ্রম কম হয়। লোকসানের ভয় নেই। আবার জমি ফেলে রাখলে আগাছা বেশি হয়। তাই আউশ তাদের জন্য সাশ্রয়ী এবং লাভজনক।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগর উপ পরিচালনক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ জানান, বগুড়ায় আউশের উফশি জাতের আবাদে কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আবাদও ভালো হয়েছে। জেলায় ইতোমধ্যে ৫০ হেক্টোর জমির ধান কাটা হয়েছে। কৃষকদের মাঝে আউশ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে।