রাজশাহী : নগরীতে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভির তার -সংবাদ
পরিচ্ছন্ন আর নান্দনিক শহরের উদাহরণ বললে প্রথমেই যেটি মনে আসে, সেটি রাজশাহী। বাতাসে ধুলাবালি কমানো, বৃক্ষরোপণ, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা-সবদিক থেকেই বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য নগরী হিসেবে পরিচিত। রাজশাহী নগরের রাস্তাঘাট আর উন্মুক্ত স্থানগুলোতে যেভাবে পরিচ্ছন্নতার মান বজায় রাখা হচ্ছে, তা বহু শহরের জন্য দৃষ্টান্ত।
কিন্তু এই শহরের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তায় বড় এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভি অপারেটরদের এলোমেলো তার। শহরজুড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ল্যাম্পপোস্ট গুলোতে এতো বেশি তার জড়ো হয়ে গেছে যে, অনেক স্থানে খুঁটিগুলো ঝুঁকে পড়ছে, পায়ে হাঁটা পথ ও রাস্তার সৌন্দর্য ঢেকে যাচ্ছে এবং সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
শুধু সৌন্দর্যহানি নয়, এই তারের জট নগরবাসীর জীবনের জন্যও বিপজ্জনক। বর্ষাকালে যখন বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যায়, তখন তারগুলো বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট তৈরি করে। সড়কের উপর তার ছিঁড়ে পড়ে ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরে অন্তত ৭টি অগ্নিকান্ড এবং কয়েক ডজন ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই মূল কারণ এই তারের জট।
শহরের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির শিকার। আরডিএ মার্কেট এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, একবার অগ্নিকান্ডে আমাদের মার্কেটের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারের কারণে আগুন লেগেছিল। অথচ এগুলো সরানোর কোনো উদ্যোগ নেই।
রাজশাহী মহানগরীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাহেববাজার, মনিচত্বর, লক্ষ্মীপুর মোড়, রাণীবাজার থেকে শুরু করে কোর্ট স্টেশন, বর্ণালী মোড় কিংবা নিউ মার্কেট-প্রতিটি জায়গায় খুঁটিতে পেঁচানো অসংখ্য তার ঝুলে আছে। সড়কের মাঝখান দিয়ে জড়িয়ে পড়া তারের কারণে যান চলাচলেও সমস্যা হয়।
শহরের এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিটি কর্পোরেশন যখন পরিচ্ছন্ন শহরের পুরস্কার নিতে পারে, তখন এই জঞ্জাল কেন দেখছে না? বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তায় বের হতে ভয় হয়। ঝুলে থাকা তার যেকোনো সময় ছিঁড়ে পড়তে পারে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, উন্নত নগর ব্যবস্থাপনায় এই ধরনের জঞ্জাল দূর করা এখন সময়ের দাবি। নগর পরিকল্পনাবিদ শওকত হোসেন বলেন, রাজশাহীকে সত্যিকারের ‘স্মার্ট সিটি’ করতে হলে মাটির নিচে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য নেটওয়ার্ক লাইনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে শহরের সৌন্দর্য রক্ষা হবে, দুর্ঘটনাও কমবে।
কিন্তু এর জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, মাটির নিচে তার নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য কোটি কোটি টাকার প্রকল্প প্রয়োজন। যদিও একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তারা বিভিন্নবার তার অপারেটরদের চিঠি ও নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু তারা নিয়মিত নিয়ম ভঙ্গ করে খুঁটিতে নতুন নতুন তার বসিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাইলে এখনই কেটে দিতে পারি, কিন্তু তাতে ইন্টারনেট ও টিভি সংযোগ বন্ধ হয়ে নগরবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ধাপে ধাপে সমাধান করা হবে। রাজশাহীর সচেতন নাগরিকরা বলছেন, পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সঙ্গে নান্দনিকতারও যেন যত্ন নেয়া হয়। কলেজছাত্র আব্দুল আলীম বলেন, রাজশাহীর সৌন্দর্য রক্ষায় সবাই মিলে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
রাজশাহীকে সবার কাছে সত্যিকারের বাসযোগ্য ও দৃষ্টিনন্দন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ‘তার জঞ্জাল’ সমস্যা এখনই সমাধান করা জরুরি। এ জন্য প্রয়োজন সিটি কর্পোরেশনের পরিকল্পিত পদক্ষেপ ও সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের সহযোগিতা। নগরবাসীর আশা, পরিচ্ছন্নতার এই শহর তার নান্দনিকতাও ধরে রাখবে-যাতে রাজশাহী সবসময়ই থাকে অন্যরকম।
রাজশাহী : নগরীতে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভির তার -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
পরিচ্ছন্ন আর নান্দনিক শহরের উদাহরণ বললে প্রথমেই যেটি মনে আসে, সেটি রাজশাহী। বাতাসে ধুলাবালি কমানো, বৃক্ষরোপণ, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা-সবদিক থেকেই বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য নগরী হিসেবে পরিচিত। রাজশাহী নগরের রাস্তাঘাট আর উন্মুক্ত স্থানগুলোতে যেভাবে পরিচ্ছন্নতার মান বজায় রাখা হচ্ছে, তা বহু শহরের জন্য দৃষ্টান্ত।
কিন্তু এই শহরের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তায় বড় এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভি অপারেটরদের এলোমেলো তার। শহরজুড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ল্যাম্পপোস্ট গুলোতে এতো বেশি তার জড়ো হয়ে গেছে যে, অনেক স্থানে খুঁটিগুলো ঝুঁকে পড়ছে, পায়ে হাঁটা পথ ও রাস্তার সৌন্দর্য ঢেকে যাচ্ছে এবং সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
শুধু সৌন্দর্যহানি নয়, এই তারের জট নগরবাসীর জীবনের জন্যও বিপজ্জনক। বর্ষাকালে যখন বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যায়, তখন তারগুলো বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট তৈরি করে। সড়কের উপর তার ছিঁড়ে পড়ে ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরে অন্তত ৭টি অগ্নিকান্ড এবং কয়েক ডজন ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই মূল কারণ এই তারের জট।
শহরের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির শিকার। আরডিএ মার্কেট এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, একবার অগ্নিকান্ডে আমাদের মার্কেটের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারের কারণে আগুন লেগেছিল। অথচ এগুলো সরানোর কোনো উদ্যোগ নেই।
রাজশাহী মহানগরীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাহেববাজার, মনিচত্বর, লক্ষ্মীপুর মোড়, রাণীবাজার থেকে শুরু করে কোর্ট স্টেশন, বর্ণালী মোড় কিংবা নিউ মার্কেট-প্রতিটি জায়গায় খুঁটিতে পেঁচানো অসংখ্য তার ঝুলে আছে। সড়কের মাঝখান দিয়ে জড়িয়ে পড়া তারের কারণে যান চলাচলেও সমস্যা হয়।
শহরের এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিটি কর্পোরেশন যখন পরিচ্ছন্ন শহরের পুরস্কার নিতে পারে, তখন এই জঞ্জাল কেন দেখছে না? বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তায় বের হতে ভয় হয়। ঝুলে থাকা তার যেকোনো সময় ছিঁড়ে পড়তে পারে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, উন্নত নগর ব্যবস্থাপনায় এই ধরনের জঞ্জাল দূর করা এখন সময়ের দাবি। নগর পরিকল্পনাবিদ শওকত হোসেন বলেন, রাজশাহীকে সত্যিকারের ‘স্মার্ট সিটি’ করতে হলে মাটির নিচে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য নেটওয়ার্ক লাইনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে শহরের সৌন্দর্য রক্ষা হবে, দুর্ঘটনাও কমবে।
কিন্তু এর জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, মাটির নিচে তার নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য কোটি কোটি টাকার প্রকল্প প্রয়োজন। যদিও একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তারা বিভিন্নবার তার অপারেটরদের চিঠি ও নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু তারা নিয়মিত নিয়ম ভঙ্গ করে খুঁটিতে নতুন নতুন তার বসিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাইলে এখনই কেটে দিতে পারি, কিন্তু তাতে ইন্টারনেট ও টিভি সংযোগ বন্ধ হয়ে নগরবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ধাপে ধাপে সমাধান করা হবে। রাজশাহীর সচেতন নাগরিকরা বলছেন, পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সঙ্গে নান্দনিকতারও যেন যত্ন নেয়া হয়। কলেজছাত্র আব্দুল আলীম বলেন, রাজশাহীর সৌন্দর্য রক্ষায় সবাই মিলে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
রাজশাহীকে সবার কাছে সত্যিকারের বাসযোগ্য ও দৃষ্টিনন্দন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ‘তার জঞ্জাল’ সমস্যা এখনই সমাধান করা জরুরি। এ জন্য প্রয়োজন সিটি কর্পোরেশনের পরিকল্পিত পদক্ষেপ ও সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের সহযোগিতা। নগরবাসীর আশা, পরিচ্ছন্নতার এই শহর তার নান্দনিকতাও ধরে রাখবে-যাতে রাজশাহী সবসময়ই থাকে অন্যরকম।