বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কাটাখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হঠাৎ ধসে পড়েছে। এতে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে আশপাশের কমপক্ষে ১০ গ্রাম। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বাঁধটির প্রায় ৪০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ে। প্রবল পানির চাপে ধসে যায় বাঁধসংলগ্ন সড়ক, উপড়ে পড়ে গাছপালা। ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা বাঁধ ধসের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা আর পাইপ বসানো প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, প্রাায় তিন দশক আগে শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চককল্যাণী গ্রামের বাঙ্গালী নদীর তীরে কাটাখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি নির্মিত হয়েছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, ধসে যাওয়া বাঁধের ফাঁক দিয়ে তীব্র্র বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই বাঁধের ওপর নির্ভর করেই এলাকার মানুষ কৃষিপণ্য পরিবহন, চলাচল ও যোগাযোগ কার্যক্রম চালান। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় অনেকেই সর্বস্ব হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। বাঁধটি দ্রুত মেরামত করা না হলে বন্যার পানিতে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাঙ্গালী নদীর উত্তরে নির্মিত এ বাঁধের দক্ষিণে রয়েছে বিল জয়সাগর খাল। এই খাল দিয়ে আগে অন্তত ২০টি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পর সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে প্রায় এক হাজার একর জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। জলাবদ্ধতা দূর করতে এক দশক আগে এলাকাবাসী বাঁধের নিচে পাইপ স্থাপন করেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে তারা স্লুইসগেট স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। এলাকাবাসী বলেন, এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন পাইপ স্থাপন করার জন্য সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে অর্থ উত্তোলন করা হয়। তাদের অভিযোগ, এই কাজে মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সময়এত কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বাঁধটি ধসে পড়েছে। সরকারি প্রকল্পের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে চারটি পাইপ বসানো হয়েছিল। তার বাইরেও এলাকাবাসীর কাছ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা তোলা হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে অব্যবস্থাপনা থাকায় কাজ শেষ হয়নি, বরং বাঁধই ধসে গেল। দোকানি আবুল কাশেম বলেন, তার দোকানটি বাঁধসংলগ্ন ছিল। ধসের সময় কিছু মালামাল সরাতে পারলেও দোকানটি ভেঙে পড়ে এবং পানিতে ভেসে যায়। স্থানীয় একটি কারখানার মালিক রিপন আহমেদ জানান, তার জালি টুপি তৈরির কারখানা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এতে তার প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প সভাপতি ছিলেন সুঘাট ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুন্নবী তালুকদার। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে তার ভূমিকা ছিল না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার তার কাছ থেকে কেবল চেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন বিল জয়সাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ। এদিকে শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি প্রকল্প কমিটির কেউ নন। ১৭ জুলাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তার কাছে ১০ ইঞ্চি ব্যাস ও ২৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে পাইপ পাঠান। তিনি স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে সেগুলো বসিয়ে দিয়েছেন মাত্র।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘বাঁধটি সংস্কারের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পের সভাপতির অসহযোগিতার কারণে অন্য একজনের মাধ্যমে মাত্র ৫০ হাজার টাকার পাইপ বসানো হয়েছে। বাঁধ ধসের আগে দক্ষিণ পাশে একটি অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দারা সেটি খুলে দিলে অতিরিক্ত পানির চাপে মূল বাঁধ ভেঙে যায়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান জানান, প্রকল্প সভাপতির অনুমোদন ছাড়া অন্য কারো মাধ্যমে কাজ করানো এবং জনগণের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন অনিয়ম। তিনি এসব বিষয়ে আগে অবগত ছিলেন না। যদি প্রকল্প বাস্তবায়নে অবহেলা বা অনিয়ম থেকে থাকে, তবে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, ভাঙা বাঁধের স্থানে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কাটাখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হঠাৎ ধসে পড়েছে। এতে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে আশপাশের কমপক্ষে ১০ গ্রাম। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বাঁধটির প্রায় ৪০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ে। প্রবল পানির চাপে ধসে যায় বাঁধসংলগ্ন সড়ক, উপড়ে পড়ে গাছপালা। ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা বাঁধ ধসের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা আর পাইপ বসানো প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, প্রাায় তিন দশক আগে শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চককল্যাণী গ্রামের বাঙ্গালী নদীর তীরে কাটাখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি নির্মিত হয়েছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, ধসে যাওয়া বাঁধের ফাঁক দিয়ে তীব্র্র বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই বাঁধের ওপর নির্ভর করেই এলাকার মানুষ কৃষিপণ্য পরিবহন, চলাচল ও যোগাযোগ কার্যক্রম চালান। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় অনেকেই সর্বস্ব হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। বাঁধটি দ্রুত মেরামত করা না হলে বন্যার পানিতে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাঙ্গালী নদীর উত্তরে নির্মিত এ বাঁধের দক্ষিণে রয়েছে বিল জয়সাগর খাল। এই খাল দিয়ে আগে অন্তত ২০টি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পর সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে প্রায় এক হাজার একর জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। জলাবদ্ধতা দূর করতে এক দশক আগে এলাকাবাসী বাঁধের নিচে পাইপ স্থাপন করেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে তারা স্লুইসগেট স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। এলাকাবাসী বলেন, এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন পাইপ স্থাপন করার জন্য সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে অর্থ উত্তোলন করা হয়। তাদের অভিযোগ, এই কাজে মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সময়এত কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বাঁধটি ধসে পড়েছে। সরকারি প্রকল্পের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে চারটি পাইপ বসানো হয়েছিল। তার বাইরেও এলাকাবাসীর কাছ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা তোলা হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে অব্যবস্থাপনা থাকায় কাজ শেষ হয়নি, বরং বাঁধই ধসে গেল। দোকানি আবুল কাশেম বলেন, তার দোকানটি বাঁধসংলগ্ন ছিল। ধসের সময় কিছু মালামাল সরাতে পারলেও দোকানটি ভেঙে পড়ে এবং পানিতে ভেসে যায়। স্থানীয় একটি কারখানার মালিক রিপন আহমেদ জানান, তার জালি টুপি তৈরির কারখানা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এতে তার প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প সভাপতি ছিলেন সুঘাট ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুন্নবী তালুকদার। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে তার ভূমিকা ছিল না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার তার কাছ থেকে কেবল চেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন বিল জয়সাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ। এদিকে শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি প্রকল্প কমিটির কেউ নন। ১৭ জুলাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তার কাছে ১০ ইঞ্চি ব্যাস ও ২৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে পাইপ পাঠান। তিনি স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে সেগুলো বসিয়ে দিয়েছেন মাত্র।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘বাঁধটি সংস্কারের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পের সভাপতির অসহযোগিতার কারণে অন্য একজনের মাধ্যমে মাত্র ৫০ হাজার টাকার পাইপ বসানো হয়েছে। বাঁধ ধসের আগে দক্ষিণ পাশে একটি অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দারা সেটি খুলে দিলে অতিরিক্ত পানির চাপে মূল বাঁধ ভেঙে যায়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান জানান, প্রকল্প সভাপতির অনুমোদন ছাড়া অন্য কারো মাধ্যমে কাজ করানো এবং জনগণের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন অনিয়ম। তিনি এসব বিষয়ে আগে অবগত ছিলেন না। যদি প্রকল্প বাস্তবায়নে অবহেলা বা অনিয়ম থেকে থাকে, তবে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, ভাঙা বাঁধের স্থানে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হবে।