alt

সারাদেশ

অনলাইন জুয়ার ফাঁদে চুয়াডাঙ্গার স্কুল-কলেজপড়ুয়া যুবকরা

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা : শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলা। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি কাজ। অথচ সবুজ-শ্যামল এই অঞ্চলে পড়েছে জুয়া নামক অপরাধের কালোথাবা। বোঝার উপায় নেই যে, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, জীবননগর, দর্শনাসহ আশপাশের এই অঞ্চলগুলো এখন অনলাইন জুয়ার হটস্পট। এই অনলাইন জুয়া খেলছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ।

অনলাইন জুয়ার ধরন ভিন্ন ভিন্ন। কখনো ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা বেচাকেনায় লেনদেন আবার কখনো গেইমসের মাধ্যমে জুয়ার কার্মকান্ড চালানো হয়। ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা বা বিট কয়েন কেনাবেচায় যে অর্থ লেনদেন করা হয় তা ডলারের হিসাবে পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ এটি নিয়ন্ত্রণ হয় দেশের বাইরে থেকে। তথ্য বলছে, সবথেকে বেশি প্রচলিত এই বিট কয়েনে লেনদেনের ধরনটি নিয়ন্ত্রিত হয় রাশিয়া থেকে। অপরদিকে গেইমসের মাধ্যমে যেসব জুয়া পরিচালিত হয় তার অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকেই নিয়ন্ত্রিত। এ ধরনের জুয়ায় অংশ নিয়ে প্রয়োজন হয় না খুব বেশি অর্থ। ফলে এটি এখন শহর থেকে গ্রাম পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে।

বর্তমানে জুয়া চলছে অনলাইনে, ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইসের অবাধ ব্যবহারে এই অপরাধেরও ধরন পাল্টেছে। হাতে থাকা স্মার্টফোনেই সম্ভব বেটিং সাইটের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। কেউ জানবে না, কেউ বুঝবে না। অথচ সবার আড়ালে থাকা এই স্মার্টফোনের মাধ্যমেই অনলাইন জুয়ায় ডেকে আনছে সর্বনাশ। বিশেষ করে এই জুয়ার জালে আটকা পড়ছে চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলার স্কুল-কলেজপড়ুয়া যুবকরা। বাদ যাচ্ছেন না কর্মজীবীরাও। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার নেশায় ডুব দিচ্ছেন অবাস্তব স্বপ্নে। কিন্তু দিনশেষে বাস্তব পরিণতি খুবই ভয়াল, খুবই কঠিন।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, কোটি কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা বেচাকেনা, অনলাইন গেমিং এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের আড়ালে সারাদেশে প্রতারণার জাল বিছিয়ে রেখেছে শক্তিশালী প্রতারক চক্র। মুহূর্তেই হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এসব অর্থ লেনদেন হচ্ছে ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। সেই সূত্র ধরে তাদের শনাক্ত খুবই সহজ, আইনের আওতায় আনাও কঠিন নয়। আরও অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, জুয়ার মাধ্যমে লেনদের টাকা পাচার হচ্ছে বিদেশে।

অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতা কতটা সর্বনাশা হতে পারে তা জানলে চোখ কপালে উঠবে।

এই জুয়া কখনো লাভ তো কখনো লস। নূন্যতম ১০০ টাকা লগ্নি করেই এই জুয়ায় অংশ নেয়া যায়। লাভের নামে যে টাকা জমা হচ্ছে সেটি আবারও লগ্নি করছেন জুয়াড়িরা। শেষ পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে বড় আকারের। নিজের লগ্নি করা অর্থ তো বটেই জেতা টাকাও হারিয়ে হচ্ছেন নিঃস্ব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবক চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি মোবাইলের দোকানে কাজ করেন। ফেসবুকে ক্রেজি টাইম নামে একটি বেটিং অ্যাপসের বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহ জাগে বিনিয়োগ করার। ওই অ্যাপসে আইডি খোলার পর মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করেন লগ্নি করা। প্রথমে লাভও হচ্ছিল খুব ভালো। এরপর লাভের নেশায় ডুবে শতকের ঘর থেকে হাজার, হাজার থেকে লাখের অংকে বিনিয়োগ করে বসেন তিনি। ফলাফল, যা হবার তাই। এক রাতেই হারিয়েছেন ২৫ লক্ষ টাকা। সেদিন থেকে ওই আইডিতে আর লগ ইন করতে পারেননি তিনি। মিলছে না কোন প্রতিকার। তার চারপাশে এখন হাতাশার ছায়া।

ভুক্তভোগী আরেক যুবক লেখা পড়া শেষ করে চাকরির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজের পাশাপাশি চেষ্টা করছেন বাড়তি উপার্জনের। এজন্য জড়িয়ে পড়েন অনলাইন প্রতারণার জালে। তাকেও কাজ পাওয়ার জন্য টাকা লগ্নি করতে হয়। কিন্তু সেই টাকা আর ফেরত পাননি সে। কয়েক লাখ হারিয়ে ঘুরছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে। পুলিশের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে থানায় জিডি করার। কিন্তু তার প্রশ্ন- যারা অনলাইনে এমন প্রতারণা করেন তাদের সবারই রয়েছে ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ফোন নম্বর। এমনকি রয়েছে প্রতারকদের পারিবারিক ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্যও। তবুও তাদের শনাক্তে গড়িমসি কেন?

এভাবে এই জেলার হাজার হাজার যুবকের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সামান্য কিছু মানুষ মুখ খুললেও সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় অনেকেই থাকছেন পর্দার আড়ালে। নীরবেই ঢুকরে মরছেন তারা। অবাস্তব স্বপ্নে ডুবে থাকা রঙিন দুনিয়া যে কখনোই বাস্তব হতে পারে না, তা জেনেও নেশায় পড়ে সব কূল হারাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সীরা।

সচেতন মহলরা বোলছেন এভাবে ফাঁদে পড়ে একজন ব্যক্তি শেষ করে দিচ্ছেন নিজেকে এবং তার গোটা পরিবারকে। জুয়ার আসক্তি এতটাই নির্মম যে কেউ কেউ আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছে। হরহামেশাই এসব করুণ পরিণতির পরও নতুন করে জুয়ার জালে জড়াচ্ছেন অনেকেই।

এদিকে বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপসের বিজ্ঞাপন করছেন তার বাড়িও চুয়াডাঙ্গাতেই। টিকটকে তার ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। অজপাড়াগায়ের এই নারী জুয়ার বিজ্ঞাপন করেও হয়েছেন সমালোচিত। অভিযোগ রয়েছে, তার বিজ্ঞাপন দেখে প্রলুব্ধ হয়ে জুয়ায় জাড়িয়ে পড়েছেন অনেকে।

কিভাবে ওই নারী জুয়ার সাইটের সঙ্গে পরিচিত হলেন, কিভাবেই বা বিজ্ঞাপন করতে চুক্তিবদ্ধ হলেন, সেটি জানতে চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর গ্রামের তার বাড়িতে গেলেও তিনি এসব ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। তার পরিবারের সদস্যরাও এ ব্যাপারে কথা বলতে আগ্রহী নন।

আরও জানাযায়, জুয়া প্রতারকরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু পরিচিত ব্যক্তিদের টার্গেট করে। এরপর উদ্ধুব্ধ করে তাদেরকে দিয়ে বিজ্ঞাপন করাতে। কয়েক সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন ভিডিও নির্মানের পর দেয়া হয় লাখ লাখ টাকা। এই কাজ শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ঘটছে প্রতিনিয়ত।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সবকিছু এমন প্রকাশ্যে ঘটলেও আইনের আওতায় এসেছে কয়জন? একজনও নয়। বাংলাদেশের প্রচলিত জুয়া আইনে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব নয়। যদিও এই দিক বিবেচনা করে সংশোধিত প্রস্তাবিত জুয়া আইনে অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করে সরাসরি শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তবে শুধুই আইন দিয়ে এই অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়, বলছেন সচেতন মানুষেরা। এ বিষয় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার গোলাম মওলা বলেন আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। আমাদের পুলিশের একাধিক টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। অপরাধী যেই হোক পার পাবেনা। দ্রুতই এদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এলাকার সচেতন মহল আর অভিভাবকদেরকে আরো সতর্ক হতে হবে।

ছবি

কক্সবাজারে পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষায় জবি প্রেসক্লাবের মানববন্ধন

ছবি

বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাতে বিদ্যুৎ না থাকলে দুর্ভোগে পড়ে রোগী-চিকিৎসক

শেরপুরে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছাত্তার অর্থাভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত

ছবি

বারবাকিয়ার সামাজিক বনায়নের ৩০ হাজার গাছ লুট, আতঙ্কে উপকারভোগীরা

ছবি

সাজেকে ধর্ষকদের বিচার দাবিতে লাঠি-ঝাড়– মিছিল

ছবি

দেহ ও মনের চাহিদায় জবা

সখীপুরে অনুপস্থিত থেকেও বেতন নিচ্ছেন শিক্ষক দম্পতি

ছবি

১০ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার, বনে অবমুক্ত

সাপের কামড়ে প্রাণ গেল যুবকের

ছবি

গোপালগঞ্জে ‘ঢালা’ মামলা ও গ্রেপ্তার ‘পুরোনো বন্দোবস্ত’ ফিরিয়ে আনছে, ১০ নাগরিকের বিবৃতি

পিরোজপুরে নিজ ঘরে বৃদ্ধার গলা কাটা মরদেহ

ছবি

সাদুল্লাপুরে ধর্ষককে গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

রাজশাহীতে মাদক ব্যবসায়ী আটক

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কালো ব্যাজ ধারণ

ছবি

দামুড়হুদার কচুরিপানার দখলে মাথাভাঙা নদী

সোনাইমুড়ীতে কামরুল হত্যা মামলার আসামি ঢাকায় আটক

সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির চেষ্টা গোবিন্দগঞ্জে থ্রি-হুইলার উল্টে নিহত ১, আহত ১

ছবি

হবিগঞ্জে কলেজের খেলার মাঠ লিজ নিয়ে ধান চাষের প্রস্তুতি

চাটখিলে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

চাটমোহরে বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার

ছবি

চৌমুহনীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত

রাজশাহী নগরীতে বিভিন্ন অভিযোগে আটক ১৮

চুনারুঘাটে অজ্ঞাত বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার

দুর্গাপুরে বৃক্ষরোপণে সেমিনার

মহেশপুর সীমান্তে ৬ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণ উদ্ধার

মুরাদনগরে সেবা মেলা

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন হয়ে যাবে -নাহিদ ইসলাম

ছবি

গোমদণ্ডীতে ট্রেনের হুক ভেঙে বগি বিচ্ছিন্ন, দেরি ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’-এর যাত্রা

দোয়ারাবাজার

মান্দায় দুই ট্রাকের সংঘর্ষে হেলপার নিহত, চালক আহত

ছবি

মাদারগঞ্জে বিএনপির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

জগন্নাথপুরে টিকটকের জেরে যুবক নিহত

পটুয়াখালীতে ভুয়া জুলাই শহীদ শনাক্ত, গেজেট বাতিলের সুপারিশ

ছবি

কমলনগরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত মেঘনার উপকূল

চিতলমারীতে কাপড়ের দোকান ছাই

দাউদকান্দিতে ২৩ মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

tab

সারাদেশ

অনলাইন জুয়ার ফাঁদে চুয়াডাঙ্গার স্কুল-কলেজপড়ুয়া যুবকরা

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা

শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলা। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি কাজ। অথচ সবুজ-শ্যামল এই অঞ্চলে পড়েছে জুয়া নামক অপরাধের কালোথাবা। বোঝার উপায় নেই যে, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, জীবননগর, দর্শনাসহ আশপাশের এই অঞ্চলগুলো এখন অনলাইন জুয়ার হটস্পট। এই অনলাইন জুয়া খেলছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ।

অনলাইন জুয়ার ধরন ভিন্ন ভিন্ন। কখনো ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা বেচাকেনায় লেনদেন আবার কখনো গেইমসের মাধ্যমে জুয়ার কার্মকান্ড চালানো হয়। ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা বা বিট কয়েন কেনাবেচায় যে অর্থ লেনদেন করা হয় তা ডলারের হিসাবে পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ এটি নিয়ন্ত্রণ হয় দেশের বাইরে থেকে। তথ্য বলছে, সবথেকে বেশি প্রচলিত এই বিট কয়েনে লেনদেনের ধরনটি নিয়ন্ত্রিত হয় রাশিয়া থেকে। অপরদিকে গেইমসের মাধ্যমে যেসব জুয়া পরিচালিত হয় তার অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকেই নিয়ন্ত্রিত। এ ধরনের জুয়ায় অংশ নিয়ে প্রয়োজন হয় না খুব বেশি অর্থ। ফলে এটি এখন শহর থেকে গ্রাম পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে।

বর্তমানে জুয়া চলছে অনলাইনে, ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইসের অবাধ ব্যবহারে এই অপরাধেরও ধরন পাল্টেছে। হাতে থাকা স্মার্টফোনেই সম্ভব বেটিং সাইটের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। কেউ জানবে না, কেউ বুঝবে না। অথচ সবার আড়ালে থাকা এই স্মার্টফোনের মাধ্যমেই অনলাইন জুয়ায় ডেকে আনছে সর্বনাশ। বিশেষ করে এই জুয়ার জালে আটকা পড়ছে চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলার স্কুল-কলেজপড়ুয়া যুবকরা। বাদ যাচ্ছেন না কর্মজীবীরাও। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার নেশায় ডুব দিচ্ছেন অবাস্তব স্বপ্নে। কিন্তু দিনশেষে বাস্তব পরিণতি খুবই ভয়াল, খুবই কঠিন।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, কোটি কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা বেচাকেনা, অনলাইন গেমিং এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের আড়ালে সারাদেশে প্রতারণার জাল বিছিয়ে রেখেছে শক্তিশালী প্রতারক চক্র। মুহূর্তেই হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এসব অর্থ লেনদেন হচ্ছে ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। সেই সূত্র ধরে তাদের শনাক্ত খুবই সহজ, আইনের আওতায় আনাও কঠিন নয়। আরও অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, জুয়ার মাধ্যমে লেনদের টাকা পাচার হচ্ছে বিদেশে।

অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতা কতটা সর্বনাশা হতে পারে তা জানলে চোখ কপালে উঠবে।

এই জুয়া কখনো লাভ তো কখনো লস। নূন্যতম ১০০ টাকা লগ্নি করেই এই জুয়ায় অংশ নেয়া যায়। লাভের নামে যে টাকা জমা হচ্ছে সেটি আবারও লগ্নি করছেন জুয়াড়িরা। শেষ পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে বড় আকারের। নিজের লগ্নি করা অর্থ তো বটেই জেতা টাকাও হারিয়ে হচ্ছেন নিঃস্ব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবক চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি মোবাইলের দোকানে কাজ করেন। ফেসবুকে ক্রেজি টাইম নামে একটি বেটিং অ্যাপসের বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহ জাগে বিনিয়োগ করার। ওই অ্যাপসে আইডি খোলার পর মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করেন লগ্নি করা। প্রথমে লাভও হচ্ছিল খুব ভালো। এরপর লাভের নেশায় ডুবে শতকের ঘর থেকে হাজার, হাজার থেকে লাখের অংকে বিনিয়োগ করে বসেন তিনি। ফলাফল, যা হবার তাই। এক রাতেই হারিয়েছেন ২৫ লক্ষ টাকা। সেদিন থেকে ওই আইডিতে আর লগ ইন করতে পারেননি তিনি। মিলছে না কোন প্রতিকার। তার চারপাশে এখন হাতাশার ছায়া।

ভুক্তভোগী আরেক যুবক লেখা পড়া শেষ করে চাকরির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজের পাশাপাশি চেষ্টা করছেন বাড়তি উপার্জনের। এজন্য জড়িয়ে পড়েন অনলাইন প্রতারণার জালে। তাকেও কাজ পাওয়ার জন্য টাকা লগ্নি করতে হয়। কিন্তু সেই টাকা আর ফেরত পাননি সে। কয়েক লাখ হারিয়ে ঘুরছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে। পুলিশের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে থানায় জিডি করার। কিন্তু তার প্রশ্ন- যারা অনলাইনে এমন প্রতারণা করেন তাদের সবারই রয়েছে ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ফোন নম্বর। এমনকি রয়েছে প্রতারকদের পারিবারিক ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্যও। তবুও তাদের শনাক্তে গড়িমসি কেন?

এভাবে এই জেলার হাজার হাজার যুবকের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সামান্য কিছু মানুষ মুখ খুললেও সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় অনেকেই থাকছেন পর্দার আড়ালে। নীরবেই ঢুকরে মরছেন তারা। অবাস্তব স্বপ্নে ডুবে থাকা রঙিন দুনিয়া যে কখনোই বাস্তব হতে পারে না, তা জেনেও নেশায় পড়ে সব কূল হারাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সীরা।

সচেতন মহলরা বোলছেন এভাবে ফাঁদে পড়ে একজন ব্যক্তি শেষ করে দিচ্ছেন নিজেকে এবং তার গোটা পরিবারকে। জুয়ার আসক্তি এতটাই নির্মম যে কেউ কেউ আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছে। হরহামেশাই এসব করুণ পরিণতির পরও নতুন করে জুয়ার জালে জড়াচ্ছেন অনেকেই।

এদিকে বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপসের বিজ্ঞাপন করছেন তার বাড়িও চুয়াডাঙ্গাতেই। টিকটকে তার ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। অজপাড়াগায়ের এই নারী জুয়ার বিজ্ঞাপন করেও হয়েছেন সমালোচিত। অভিযোগ রয়েছে, তার বিজ্ঞাপন দেখে প্রলুব্ধ হয়ে জুয়ায় জাড়িয়ে পড়েছেন অনেকে।

কিভাবে ওই নারী জুয়ার সাইটের সঙ্গে পরিচিত হলেন, কিভাবেই বা বিজ্ঞাপন করতে চুক্তিবদ্ধ হলেন, সেটি জানতে চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর গ্রামের তার বাড়িতে গেলেও তিনি এসব ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। তার পরিবারের সদস্যরাও এ ব্যাপারে কথা বলতে আগ্রহী নন।

আরও জানাযায়, জুয়া প্রতারকরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু পরিচিত ব্যক্তিদের টার্গেট করে। এরপর উদ্ধুব্ধ করে তাদেরকে দিয়ে বিজ্ঞাপন করাতে। কয়েক সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন ভিডিও নির্মানের পর দেয়া হয় লাখ লাখ টাকা। এই কাজ শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ঘটছে প্রতিনিয়ত।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সবকিছু এমন প্রকাশ্যে ঘটলেও আইনের আওতায় এসেছে কয়জন? একজনও নয়। বাংলাদেশের প্রচলিত জুয়া আইনে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব নয়। যদিও এই দিক বিবেচনা করে সংশোধিত প্রস্তাবিত জুয়া আইনে অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করে সরাসরি শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তবে শুধুই আইন দিয়ে এই অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়, বলছেন সচেতন মানুষেরা। এ বিষয় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার গোলাম মওলা বলেন আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। আমাদের পুলিশের একাধিক টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। অপরাধী যেই হোক পার পাবেনা। দ্রুতই এদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এলাকার সচেতন মহল আর অভিভাবকদেরকে আরো সতর্ক হতে হবে।

back to top