কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : নিষ্কাশনের অভাবে তিন গ্রামের জমি জলাবদ্ধ -সংবাদ
কৃষি প্রধান এলাকা। কিন্তু তাদের ফসলি মাঠটি অপেক্ষাকৃত নিচু। যেখানে একটু ভারি বৃষ্টি হলেই সব ফসলিখেত চলে যায় পানির নীচে। আর বর্ষা মৌসুমে যে বছর লাগাতর বৃষ্টি হয় সে বছর আমন রোপণের আর কোন সুযোগ থাকে না তাদের। চলতি বছরেও জমে থাকা অতিরিক্ত পানির কারণে আমন রোপণ একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থা বিরাজ করছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের রাখালগাছি ইউনিয়নের নরদহি, মোল্যাডাঙ্গা ও বগেরগাছি তিন গ্রামের মাঠে। পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় এটি তাদের দীর্ঘ দিনের সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিস্তর এলাকার কৃষকদের ঘাড়ে জেকে বসা এ সমস্যা সমাধানে বিশাল মাঠের পানি মোল্যাডাঙ্গা গ্রামের মধ্যদিয়ে সরু খাল খনন করে পাশর্^বর্তী মর্জাদ (সাঁকো) বাওড়ে দেয়ার জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারী দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং দিন দিন এলাকার হাজারো কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা জমি অনাবাদির শঙ্কায় শুধু কপালের ভাজ বেড়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের নরদহী মাঠে গেলে দেখা যায় নরদহী, মোল্যাডাঙ্গা , বগেরগাছি এ তিন গ্রামের মাঝখানের যে বিস্তীর্ণ মাঠ সেখানে পানিতে থৈ থৈ করছে। পানির ঢেউ নদীর মত একপাশ থেকে অপর পাশে আছড়ে পড়ছে। যতদূর দৃষ্টি যাচ্ছে শুধু পানি আর পানি। এরমধ্যে কার জমি কোথায় তা কৃষকেরা নিজেরাও চিনতে পারছেন না। এছাড়াও মাঠটির উপরিভাগে কৃষকেরা বেশ কিছু কৃষক পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন। সেগুলোর বেশিরভাগই ডুবে মাঠের পানির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।
এলাকার একাধিক কৃষক জানান, তাদের তিন গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠের হাজারো কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা আবাদি জমি এখন পানির নিচে। ফলে চলতি আমন রোপণের মৌসুমে তারা আমন রোপন করতে পারছেন না। তারা জানান, এ মাঠের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় যে বছর ভারী বর্ষা হয় সে বছর তাদের মাঠের ফসলের ভরাক্ষেতও নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন।
ভুক্তভোগী নরদহী গ্রামের কৃষক কামরুল শেখ জানান, এই মাঠে তার ৮ বিঘা জমি আছে। মাঠটিতে জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। তারা ছোটবেলায় ৩০-৩৫ বছর আগে দেখেছেন নরদহী, মোল্যাডাঙ্গা, বগেরগাছির এ তিন গ্রামের মাঠের মাঝখানে গভীর বিল ছিল। তখন বিলের তলানীর জমিগুলোতে পানির জন্য চাষাবাদ করা কঠিন হলেও পাড়ের জমিগুলোতে চাষ হতো। কেননা তখন উপরি মাঠের পানি বিলের গভীর অংশে দ্রুত চলে যেতো। কিন্ত দিন দিন মাটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিলের তলানীতে সে রকমের আর গভীরতা নেই। আবার পানি নিষ্কাশনেরও কোন ব্যবস্থা নেই। কাজেই এখন একটু ভারি বর্ষা হলেই বিলের পানি ফেঁপে উপরের দিকে উঠে আসে। তখন পানিতে গ্রাস করে সব ফসলি ভরাক্ষেত। আর যে বছর বর্ষার পানি কম হয় সে বছর বেশিরভাগ ক্ষেতেই বিশেষ করে ধানচাষ করা সম্ভব হয়। কিন্ত এ বছর বর্ষার প্রথম থেকে লাগাতর ভারি বৃষ্টির পানির কারনে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে আমন রোপন একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কৃষক কওছার আলী জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই মাঠের পানি জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছেন। ভারী বৃষ্টির ওপর তাদের অঞ্চলের হাজারো কৃষকের হাসি কান্না নির্ভর করে। কেননা যে বছর মাঠে তাদের আবাদ হয় না সে বছর তাদের পাশাপাশি তিন গ্রামের কৃষক পরিবারগুলোতে ঘরে ঘরে অভাব একেবারে জেঁকে বসে। দরকার স্থায়ীভাবে পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা।
নরদহী গ্রামের কৃষক শুকুর আলী বলেন, মাঠটিতে তার ১০ বিঘা জমি আছে। এই মাঠের জমি ছাড়া তাদের অন্য কোথাও জমি নেই। এই জমির উপরেই তাদের সংসার চালাতে হয়। এ বছর বর্ষার প্রথম থেকে লাগাতর বর্ষা হয়েছে। যে কারনে তার সব জমি এখন পানির নিচে। বর্ষা মৌসুম সবেমাত্র শুরু। সামনের দিনগুলোতে আরও বৃষ্টি হবে। ফলে এ বছর একমুঠো আমন ধানও পাবেন না। কি করে বছরটিতে সংসার চালাবেন সে চিন্তায় পড়েছেন। এই কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, এই মাঠের মাত্র দেড় কিলোমিটার দুরে মর্জাদ (সাঁকো) বাওড়। এ মাঠ থেকে সাঁকোবাজারের খালের সঙ্গে সংযোগ খাল করে দিলে হাজার কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা জমি আবাদযোগ্য হয়ে যাবে। স্থায়ীভাবে দুর হবে তাদের কষ্ট। এটি বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েছেন কিন্ত তাদের কথা কেউ শোনেনি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেদারুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকার কৃষকদের জন্য এটি অবশ্যই কষ্টের ঘটনা। কৃষকেরা লিখিত আবেদন দিলে অবশ্যই জনস্বার্থে মাঠের পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিবেন।
কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : নিষ্কাশনের অভাবে তিন গ্রামের জমি জলাবদ্ধ -সংবাদ
রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫
কৃষি প্রধান এলাকা। কিন্তু তাদের ফসলি মাঠটি অপেক্ষাকৃত নিচু। যেখানে একটু ভারি বৃষ্টি হলেই সব ফসলিখেত চলে যায় পানির নীচে। আর বর্ষা মৌসুমে যে বছর লাগাতর বৃষ্টি হয় সে বছর আমন রোপণের আর কোন সুযোগ থাকে না তাদের। চলতি বছরেও জমে থাকা অতিরিক্ত পানির কারণে আমন রোপণ একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থা বিরাজ করছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের রাখালগাছি ইউনিয়নের নরদহি, মোল্যাডাঙ্গা ও বগেরগাছি তিন গ্রামের মাঠে। পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় এটি তাদের দীর্ঘ দিনের সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিস্তর এলাকার কৃষকদের ঘাড়ে জেকে বসা এ সমস্যা সমাধানে বিশাল মাঠের পানি মোল্যাডাঙ্গা গ্রামের মধ্যদিয়ে সরু খাল খনন করে পাশর্^বর্তী মর্জাদ (সাঁকো) বাওড়ে দেয়ার জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারী দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং দিন দিন এলাকার হাজারো কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা জমি অনাবাদির শঙ্কায় শুধু কপালের ভাজ বেড়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের নরদহী মাঠে গেলে দেখা যায় নরদহী, মোল্যাডাঙ্গা , বগেরগাছি এ তিন গ্রামের মাঝখানের যে বিস্তীর্ণ মাঠ সেখানে পানিতে থৈ থৈ করছে। পানির ঢেউ নদীর মত একপাশ থেকে অপর পাশে আছড়ে পড়ছে। যতদূর দৃষ্টি যাচ্ছে শুধু পানি আর পানি। এরমধ্যে কার জমি কোথায় তা কৃষকেরা নিজেরাও চিনতে পারছেন না। এছাড়াও মাঠটির উপরিভাগে কৃষকেরা বেশ কিছু কৃষক পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন। সেগুলোর বেশিরভাগই ডুবে মাঠের পানির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।
এলাকার একাধিক কৃষক জানান, তাদের তিন গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠের হাজারো কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা আবাদি জমি এখন পানির নিচে। ফলে চলতি আমন রোপণের মৌসুমে তারা আমন রোপন করতে পারছেন না। তারা জানান, এ মাঠের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় যে বছর ভারী বর্ষা হয় সে বছর তাদের মাঠের ফসলের ভরাক্ষেতও নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন।
ভুক্তভোগী নরদহী গ্রামের কৃষক কামরুল শেখ জানান, এই মাঠে তার ৮ বিঘা জমি আছে। মাঠটিতে জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। তারা ছোটবেলায় ৩০-৩৫ বছর আগে দেখেছেন নরদহী, মোল্যাডাঙ্গা, বগেরগাছির এ তিন গ্রামের মাঠের মাঝখানে গভীর বিল ছিল। তখন বিলের তলানীর জমিগুলোতে পানির জন্য চাষাবাদ করা কঠিন হলেও পাড়ের জমিগুলোতে চাষ হতো। কেননা তখন উপরি মাঠের পানি বিলের গভীর অংশে দ্রুত চলে যেতো। কিন্ত দিন দিন মাটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিলের তলানীতে সে রকমের আর গভীরতা নেই। আবার পানি নিষ্কাশনেরও কোন ব্যবস্থা নেই। কাজেই এখন একটু ভারি বর্ষা হলেই বিলের পানি ফেঁপে উপরের দিকে উঠে আসে। তখন পানিতে গ্রাস করে সব ফসলি ভরাক্ষেত। আর যে বছর বর্ষার পানি কম হয় সে বছর বেশিরভাগ ক্ষেতেই বিশেষ করে ধানচাষ করা সম্ভব হয়। কিন্ত এ বছর বর্ষার প্রথম থেকে লাগাতর ভারি বৃষ্টির পানির কারনে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে আমন রোপন একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কৃষক কওছার আলী জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই মাঠের পানি জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছেন। ভারী বৃষ্টির ওপর তাদের অঞ্চলের হাজারো কৃষকের হাসি কান্না নির্ভর করে। কেননা যে বছর মাঠে তাদের আবাদ হয় না সে বছর তাদের পাশাপাশি তিন গ্রামের কৃষক পরিবারগুলোতে ঘরে ঘরে অভাব একেবারে জেঁকে বসে। দরকার স্থায়ীভাবে পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা।
নরদহী গ্রামের কৃষক শুকুর আলী বলেন, মাঠটিতে তার ১০ বিঘা জমি আছে। এই মাঠের জমি ছাড়া তাদের অন্য কোথাও জমি নেই। এই জমির উপরেই তাদের সংসার চালাতে হয়। এ বছর বর্ষার প্রথম থেকে লাগাতর বর্ষা হয়েছে। যে কারনে তার সব জমি এখন পানির নিচে। বর্ষা মৌসুম সবেমাত্র শুরু। সামনের দিনগুলোতে আরও বৃষ্টি হবে। ফলে এ বছর একমুঠো আমন ধানও পাবেন না। কি করে বছরটিতে সংসার চালাবেন সে চিন্তায় পড়েছেন। এই কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, এই মাঠের মাত্র দেড় কিলোমিটার দুরে মর্জাদ (সাঁকো) বাওড়। এ মাঠ থেকে সাঁকোবাজারের খালের সঙ্গে সংযোগ খাল করে দিলে হাজার কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা জমি আবাদযোগ্য হয়ে যাবে। স্থায়ীভাবে দুর হবে তাদের কষ্ট। এটি বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েছেন কিন্ত তাদের কথা কেউ শোনেনি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেদারুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকার কৃষকদের জন্য এটি অবশ্যই কষ্টের ঘটনা। কৃষকেরা লিখিত আবেদন দিলে অবশ্যই জনস্বার্থে মাঠের পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিবেন।