alt

সারাদেশ

রাজশাহীর স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থী সংকট

১২ স্কুল থেকে এসএসসি দিয়েছে ৭৪ পরীক্ষার্থী

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী : রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে এবছর ১২টি স্কুল এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেছে ১০ জনের নিচে। আবার কোন স্কুলের একজন পরীক্ষার্থীও ছিল। রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলার এসব স্কুলের মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭৪ জন। এরমধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে ৩০জন পরীক্ষার্থী। আর পাস করেছে ৪৪ জন। মফস্বল এলাকার স্কুলগুলোর শ্রেণিকক্ষে কমপক্ষে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী থাকার বিধান থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

কারণ হিসেবে শিক্ষকরা বলছেন, বাল্য বিয়ে ছাড়াও বিভিন্ন কারণে স্কুলের মুখি করা যাচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উদাসীনতা রয়েছে। শিক্ষাবোর্ড সূত্র বলছে- এ বছর রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৯০টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়। শতভাগ পাস করেছে এমন স্কুলের সংখ্যা ৯৯টি।

স্কুলগুলোর এসএসসির ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- মোট পাসের হার ৫৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এরমধ্যে গার্লস স্কুলগুলোর পাসের হার (ছাত্রী) ৫৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মডেল স্কুলগুলোর ছাত্রদের পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। তবে ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের পাসের হার বেশি।

জেলার মোহনপুর উপজেলার ধোরসা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি গতবছরও (২০২৪) একজন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় পাঠায়। সে বছর ওই পরীক্ষার্থী ফেল করে। ফলে বিদ্যালয়টির শতভাগ ফেলের তালিকায় নাম আসে। এ বছরও (২০২৫) একজন পরীক্ষার্থী পাঠিয়ে বড় ধরনের রিক্স নেয় বিদ্যালয়টি। ফলাফল আসে পাস। এতে করে এক পরীক্ষার্থী পাঠিয়ে শতভাগ পাসের তালিকায় স্থান পায় বিদ্যালয়টি। আর পরীক্ষায় অংশ নেয় পরীক্ষার্থী পেয়েছে জিপিএ ২.২৮।

অপরদিকে, এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্কুল গুলোর মধ্যে আটটি গার্লস স্কুল। এসব গার্লস স্কুল থেকে ৫৫জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে ৩১ জন পাস করেছে। এছাড়া ২৪ জন ফেল করেছে। তিনটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মডেল স্কুল থেকে ১৯ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে ১৩ জন পাস করেছে। ফেল করেছে ৬ পরীক্ষার্থী। শুধুমাত্রা সরেরহাট গার্লস হাই স্কুল থেকে এক ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাকি স্কুল গুলোর পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রেডে পাস করেছেন।

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের প্রকাশিত ফলাফল সূত্রে জানা গেছে- শারেরহাট গার্লস হাই স্কুল থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় ৮জন অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। স্কুলটি থেকে একজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এমএইচ. গার্লস’ হাই স্কুল থেকে ৬ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল করেছে। জটনোশি গার্লস হাই স্কুল থেকে ৯ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল করেছে। বানিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫ জনের মধ্যে ৪ জন ফেল করেছে। কোয়ালিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১০ জনের মধ্যে ২ জন ফেল করেছে। সায়রা খাতুন গার্লস হাই স্কুল থেকে পরীক্ষায় ৬ জন অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। বঙ্গবন্ধু মোয়ার গার্লস হাই স্কুল থেকে ৫ জনের মধ্যে ১ জন ফেল করেছে। সিরাজ উদ্দিন শাহ গার্লস হাই স্কুল থেকে ৮ জনের মধ্যে ৬ জন ফেল করেছে। জুগিশো চাইনিকা গার্লস হাই স্কুল থেকে ৬ জনের মধ্যে ১ জন ফেল করেছে। পাকড়ী গার্লস হাই স্কুল থেকে ৭ জনের মধ্যে ৬ জন ফেল করেছে। ধোরসা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে। এছাড়া বিয়াম মডেল স্কুল, রাজশাহী থেকে ৩জন অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে।

ধোরসা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ইমন হোসেন বলেন, তিনি ২০১৫ সালে স্কুলটিতে ষষ্ঠ ে শ্রেণিতে পড়াশোনা করেছেন। তারপরে পাশের গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি বলেন, এখানে পড়াশোনার মান ভালো ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন শিক্ষকদের বেতন না হওয়ার কারণে তারা ঠিকমত আসতেন না স্কুলে । এরফলে তার সহপাঠীরা অন্য স্কুলে ভর্তি হলে তিনিও চলে যান।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে- ধোরসা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইটি টিনশেড ভবন রয়েছে। এরমধ্যে একটি পুরোপুরি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। আর একটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে জানালা দিয়ে দেখা গেছে স্কুল ক্লাস রুমের ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বেঞ্চ।

এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু স্কুলের। প্রথম অবস্থায় সবক্লাসের ভালো শিক্ষার্থী ছিল। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে শিক্ষার্থী কমে যায়। এছাড়া দীর্ঘদিন এমপিওভুক্ত না হওয়ার কারণে শিক্ষকরা স্কুলে আসা কমিয়ে দেয়।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন- ‘অর্থ, সময় ও শ্রম। সবই দিয়েছি স্কুলের পেছনে। তবুও স্কুলটা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি। এবছর যে ছেলেটা এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে তাকে ধরে বেধে পরীক্ষায় বসাতে হয়েছে।

অরপদিকে, রাজশাহী নগরীর বিনোপুর এলাকায় রয়েছে সায়রা খাতুন গার্লস হাই স্কুল । এই স্কুলটিতেও শিক্ষার্থীদের অভাব। স্কুলটি থেকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ৬ জন শিক্ষার্থী। শতভাগ পাস করা স্কুলটিতে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের মুঠোফোনে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী গার্লস হাইস্কুল । এই স্কুলটি থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় ৭ জন অংশ নিয়ে ৬ জন ফেল করেছে। আর গতবছর (২০২৪) ১৩ জন পরীক্ষা দিয়ে ১২ জন পাসে করে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক এসএম আক্তার রিজভী বলেন, ‘পাঠ দানের অনুমতি রয়েছে। তবে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি নেই। ষষ্ঠ থেকে দশম শেণি পর্যন্ত মোট ১৮০ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছে। আর দশম শ্রেণিতে ২৩ জন ছাত্রী।’ ক্লাসে শিক্ষার্থী ৩০ জনের কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এবছর একটু কম শিক্ষার্থী রয়েছে। আর এবছর যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল তাদের সবার বিয়ে হওয়া।’

শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গ্রাম এলাকায় মেয়েদের ১৪-১৫ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর বেশির ভাগ মেয়ে আর স্কুলে যায় না। আবার মেয়ের ইচ্ছা থাকলেও স্বামী পড়াশোনা করাতে চায় না। সবমিলে বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। ছেলে শিক্ষাথীর ক্ষেত্রে এদেও একটি অংশ উপার্জনের উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে শহরে যায়। ফলে তাদেরও লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আ.ন.ম. মোফাখখারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী কম থাকলে পরীক্ষা অংশ নিতে পারবে। তবে তিনবছর পরপরে স্বীকৃতি নবায়ন হয় স্কুলে । শিক্ষার্থী কম থাকলে স্বীকৃতি নবায়ন প্রশ্নের মুখে পড়বে।

ছবি

চাঁদাবাজির অভিযোগের পর এনসিপি নেতার অনুসারীদের হামলায় সাবেক বৈছাআ নেতা আহত

ছবি

টঙ্গীতে ড্রেনে নিঁখোজ নারীর লাশ ৩৭ ঘন্টা পর উদ্ধার

ছবি

গাজীপুর প্রেসক্লাবের নির্বাচন স্থগিত

ছবি

সৈকতে স্ত্রীকে প্রকাশ্যে মারধর, ভিডিও ভাইরাল, স্বামী গ্রেপ্তার

ছবি

কালিয়াকৈরে ব্যবসায়ী হত্যায় আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে মামলা, ৩ জন গ্রেপ্তার

জাফলংয়ে অভিযান: পাথরবোঝাই ৫০ নৌকা ধ্বংস, ৫ ট্রাক বালু জব্দ

ছবি

গাজীপুরে সরকারি জমি দখলমুক্ত, ৪.৬০ একর জমি উদ্ধার

বাগেরহাটে যৌথবাহিনীর অভিযানে ৮ জন গ্রেপ্তার

ছবি

ভুয়া পরিচয়ে কর্মকর্তাদের হুমকি, ওসমানীনগরে যুবককে দুই মাসের কারাদণ্ড

তারাগঞ্জে বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন ইউএনও

ছবি

সাতক্ষীরায় ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর জায়গায় হচ্ছে কাঠের সেতু

উচ্চকক্ষ ভোটের অনুপাতে পিআর অনুসারে হতে হবে নাহিদ ইসলাম

কলমাকান্দায় গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক কারাগারে

ছবি

মুন্সিগঞ্জ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি, প্রাণ গেল শুটার মান্নান

ছবি

লক্ষ্মীপুরে মেঘনার জোয়ারে পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ

হবিগঞ্জে গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ দেবরের বিরুদ্ধে

কাঁঠালিয়ায় সরকারি জমি দখল করে আওয়ামী লীগ নেতার ঘর নির্মাণ

ছবি

কালীগঞ্জ ডাকঘরে সেবা নয়, জলাবদ্ধতা আর দুর্ভোগ!

নিম্নচাপের প্রভাবে দশমিনার চরাঞ্চল বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত

জোড়া খুনের মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য গ্রাম

ছবি

চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতু উদ্বোধন আবারও পেছাল

রেহানাপুত্র ববির বিরুদ্ধে ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জনের মামলা

ছবি

দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত, চলাচল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ

ছবি

মানিকগঞ্জে পদ্মা নদীতে ব্যাপক ভাঙন, দিশাহারা লোকজন

ছবি

দশমিনায় চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় ভোগান্তি

ভরা বর্ষায়ও পানি নেই হাওরে, মিলছে না স্বাদু পানির মাছ

মুন্সীগঞ্জের কারাবন্দী আ’লীগ নেতার হাসপাতালে মৃত্যু

ছবি

শহীদ সৈনিক মোকমেদ আলীর কবর আজও ভারতের চল্লিশদ্রোণ গ্রামে

সান্তাহারে ট্রেনে কাটা পড়ে বাইক আরোহীর মৃত্যু

নড়াইলে বিএনপি নেতাদের বাড়িঘর-অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ

ছবি

মোরেলগঞ্জে একটি চক্রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী, প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

ছবি

সুগন্ধা পয়েন্টে নারী নির্যাতনের ঘটনায় যুবক গ্রেপ্তার, নারী পুলিশ হেফাজতে

কুষ্টিয়ায় দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ

ছবি

দেড় যুগেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি মেহেরুন্নেছা মহিলা কলেজে

ছবি

কাজিপুরে কাঁচা রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ

নোয়াখালীতে পুকুরে জাল ফেলে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার

tab

সারাদেশ

রাজশাহীর স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থী সংকট

১২ স্কুল থেকে এসএসসি দিয়েছে ৭৪ পরীক্ষার্থী

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে এবছর ১২টি স্কুল এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেছে ১০ জনের নিচে। আবার কোন স্কুলের একজন পরীক্ষার্থীও ছিল। রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলার এসব স্কুলের মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭৪ জন। এরমধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে ৩০জন পরীক্ষার্থী। আর পাস করেছে ৪৪ জন। মফস্বল এলাকার স্কুলগুলোর শ্রেণিকক্ষে কমপক্ষে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী থাকার বিধান থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

কারণ হিসেবে শিক্ষকরা বলছেন, বাল্য বিয়ে ছাড়াও বিভিন্ন কারণে স্কুলের মুখি করা যাচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উদাসীনতা রয়েছে। শিক্ষাবোর্ড সূত্র বলছে- এ বছর রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৯০টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়। শতভাগ পাস করেছে এমন স্কুলের সংখ্যা ৯৯টি।

স্কুলগুলোর এসএসসির ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- মোট পাসের হার ৫৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এরমধ্যে গার্লস স্কুলগুলোর পাসের হার (ছাত্রী) ৫৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মডেল স্কুলগুলোর ছাত্রদের পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। তবে ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের পাসের হার বেশি।

জেলার মোহনপুর উপজেলার ধোরসা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি গতবছরও (২০২৪) একজন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় পাঠায়। সে বছর ওই পরীক্ষার্থী ফেল করে। ফলে বিদ্যালয়টির শতভাগ ফেলের তালিকায় নাম আসে। এ বছরও (২০২৫) একজন পরীক্ষার্থী পাঠিয়ে বড় ধরনের রিক্স নেয় বিদ্যালয়টি। ফলাফল আসে পাস। এতে করে এক পরীক্ষার্থী পাঠিয়ে শতভাগ পাসের তালিকায় স্থান পায় বিদ্যালয়টি। আর পরীক্ষায় অংশ নেয় পরীক্ষার্থী পেয়েছে জিপিএ ২.২৮।

অপরদিকে, এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্কুল গুলোর মধ্যে আটটি গার্লস স্কুল। এসব গার্লস স্কুল থেকে ৫৫জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে ৩১ জন পাস করেছে। এছাড়া ২৪ জন ফেল করেছে। তিনটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মডেল স্কুল থেকে ১৯ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে ১৩ জন পাস করেছে। ফেল করেছে ৬ পরীক্ষার্থী। শুধুমাত্রা সরেরহাট গার্লস হাই স্কুল থেকে এক ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাকি স্কুল গুলোর পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রেডে পাস করেছেন।

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের প্রকাশিত ফলাফল সূত্রে জানা গেছে- শারেরহাট গার্লস হাই স্কুল থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় ৮জন অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। স্কুলটি থেকে একজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এমএইচ. গার্লস’ হাই স্কুল থেকে ৬ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল করেছে। জটনোশি গার্লস হাই স্কুল থেকে ৯ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল করেছে। বানিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫ জনের মধ্যে ৪ জন ফেল করেছে। কোয়ালিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১০ জনের মধ্যে ২ জন ফেল করেছে। সায়রা খাতুন গার্লস হাই স্কুল থেকে পরীক্ষায় ৬ জন অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। বঙ্গবন্ধু মোয়ার গার্লস হাই স্কুল থেকে ৫ জনের মধ্যে ১ জন ফেল করেছে। সিরাজ উদ্দিন শাহ গার্লস হাই স্কুল থেকে ৮ জনের মধ্যে ৬ জন ফেল করেছে। জুগিশো চাইনিকা গার্লস হাই স্কুল থেকে ৬ জনের মধ্যে ১ জন ফেল করেছে। পাকড়ী গার্লস হাই স্কুল থেকে ৭ জনের মধ্যে ৬ জন ফেল করেছে। ধোরসা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে। এছাড়া বিয়াম মডেল স্কুল, রাজশাহী থেকে ৩জন অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে।

ধোরসা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ইমন হোসেন বলেন, তিনি ২০১৫ সালে স্কুলটিতে ষষ্ঠ ে শ্রেণিতে পড়াশোনা করেছেন। তারপরে পাশের গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি বলেন, এখানে পড়াশোনার মান ভালো ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন শিক্ষকদের বেতন না হওয়ার কারণে তারা ঠিকমত আসতেন না স্কুলে । এরফলে তার সহপাঠীরা অন্য স্কুলে ভর্তি হলে তিনিও চলে যান।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে- ধোরসা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইটি টিনশেড ভবন রয়েছে। এরমধ্যে একটি পুরোপুরি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। আর একটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে জানালা দিয়ে দেখা গেছে স্কুল ক্লাস রুমের ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বেঞ্চ।

এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু স্কুলের। প্রথম অবস্থায় সবক্লাসের ভালো শিক্ষার্থী ছিল। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে শিক্ষার্থী কমে যায়। এছাড়া দীর্ঘদিন এমপিওভুক্ত না হওয়ার কারণে শিক্ষকরা স্কুলে আসা কমিয়ে দেয়।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন- ‘অর্থ, সময় ও শ্রম। সবই দিয়েছি স্কুলের পেছনে। তবুও স্কুলটা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি। এবছর যে ছেলেটা এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে তাকে ধরে বেধে পরীক্ষায় বসাতে হয়েছে।

অরপদিকে, রাজশাহী নগরীর বিনোপুর এলাকায় রয়েছে সায়রা খাতুন গার্লস হাই স্কুল । এই স্কুলটিতেও শিক্ষার্থীদের অভাব। স্কুলটি থেকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ৬ জন শিক্ষার্থী। শতভাগ পাস করা স্কুলটিতে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের মুঠোফোনে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী গার্লস হাইস্কুল । এই স্কুলটি থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় ৭ জন অংশ নিয়ে ৬ জন ফেল করেছে। আর গতবছর (২০২৪) ১৩ জন পরীক্ষা দিয়ে ১২ জন পাসে করে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক এসএম আক্তার রিজভী বলেন, ‘পাঠ দানের অনুমতি রয়েছে। তবে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি নেই। ষষ্ঠ থেকে দশম শেণি পর্যন্ত মোট ১৮০ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছে। আর দশম শ্রেণিতে ২৩ জন ছাত্রী।’ ক্লাসে শিক্ষার্থী ৩০ জনের কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এবছর একটু কম শিক্ষার্থী রয়েছে। আর এবছর যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল তাদের সবার বিয়ে হওয়া।’

শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গ্রাম এলাকায় মেয়েদের ১৪-১৫ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর বেশির ভাগ মেয়ে আর স্কুলে যায় না। আবার মেয়ের ইচ্ছা থাকলেও স্বামী পড়াশোনা করাতে চায় না। সবমিলে বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। ছেলে শিক্ষাথীর ক্ষেত্রে এদেও একটি অংশ উপার্জনের উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে শহরে যায়। ফলে তাদেরও লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আ.ন.ম. মোফাখখারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী কম থাকলে পরীক্ষা অংশ নিতে পারবে। তবে তিনবছর পরপরে স্বীকৃতি নবায়ন হয় স্কুলে । শিক্ষার্থী কম থাকলে স্বীকৃতি নবায়ন প্রশ্নের মুখে পড়বে।

back to top