মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নে ১২ ও ১৬ বছরের দুই শিশুকে মারধরের পর চুরির অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার করে শিশুদের হাতকড়া পরিয়ে থানায় নেয়া হয়। মামলায় তাদের বয়স বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে একরাত থানার গারদে রেখে পুলিশ দুই শিশুকে ১৮ বছর দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে।
অভিযোগ ‘চুরির’। দুই শিশুকে আটক করে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে দেয়া হয় মামলা। তাদের হাতকড়া পরিয়ে থানা থেকে গাড়িতে করে আদালতে নেয়া হয়। তবে অভিযোগ চাঁদা না দেয়ায় এসব কাণ্ড-সংবাদ
তবে ওই দুই শিশুর পরিবারের অভিযোগ জমি কেনার পর দাবি করা ‘চাঁদা না দেয়ার কারনেই’ তাদের ছেলেদের ‘আটকে রেখে মারধর’ করে থানায় ‘মিথ্যা মামলা’ দেয়া হয়েছে। তারা স্থানীয় থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
শিশুদের নির্যাতন, মামলা
জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী গ্রেপ্তার দুই শিশুর একজনের বয়স ১২ বছর ২ মাস ২ দিন এবং অন্যজনের ১৬ বছর ১১ মাস ২২ দিন। একজনের জন্মতারিখ ২৬ মে ২০১৩ এবং অন্যজনের ৫ আগস্ট ২০০৮। বাড়ি সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের আগ সাভার গ্রামে।
এর মধ্যে ২৬ মে ২০১৩ সালে জন্ম নেওয়া শিশুটি বালিয়াটি দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অন্যজন আব্দুর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
একই গ্রামের শফিকুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার সাটুরিয়া থানায় এই দুই শিশুর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করেন। এজাহারে শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, গত বুধবার রাতে তার বাড়ি থেকে একটি ল্যাপটপ, পাঁচটি স্মার্টফোন, ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকাসহ আরও বেশ কিছু মালপত্র চুরি হয়েছে।
পরদিন সকালে টের পেয়ে এ বিষয়ে আশপাশের লোকজনকে জানান তিনি। এ সময় বেশ কয়েকজন দাবি করেন, ঘটনার রাতে ওই দুই শিশুকে তার ‘বাড়ির আশপাশে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে’ দেখা গেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দুজনকে বাজার থেকে তিনি আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদে স্থানীয় লোকজনের সামনে দুজনই চুরির বিষয়টি ‘স্বীকার করে’ বলে শফিকুল ইসলামের দাবি।
থানার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী থেকে জানা গেছে, দুই শিশুর বিরুদ্ধে সিঁধেল চুরির অভিযোগে মামলা নেওয়া হয়েছে। দুজনের বয়স ১৮ দেখানো হয়েছে এই বিবরণীতে।
‘চাঁদা’ না দেয়ায় ‘মিথ্যা’ মামলা!
এক শিশুরর পিতা লাল মিয়া অভিযোগ করেছেন ‘চাঁদা না দেয়ার কারনেই’ শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে তার ছেলেকে মারধর করে থানায় মিথ্যা মামলা করেছে। এ ব্যাপারে তিনি সাটুরিয়া থানায় গত শনিবার লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে সম্প্রতি লাল মিয়া একটি জমি কেনেন। এই জমির কেনার জন্য শফিকুল ইসলাম, উজ্জল মিয়া, জীবন আহমেদ, মান্নান উদ্দিন, মিলন, মামুন,নজরুল ইসলাম নামের কয়েকজন তার কাছে ‘দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি’ করে আসছিল। চাঁদ না দিলে ওই জমি ‘দখল করে নেবে’ বলেও হুমকি দেয়।
অভিযোগে আরও বলা হয় চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় গত বুধবার তার মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে আলমগীর হোসেনকে সাভার বাজারের কামালের সেলুন থেকে সকাল ৮টার সময় মান্নান , উজ্জল ও মামুন ‘তুলে নিয়ে’ শফিকুলের গোডাউনে ‘আটকে রেখে’ বেদম ‘মারধর’ করে। এক পর্যায়ে উজ্জলের মোবাইল ফোন থেকে তার (লাল মিয়া) নাম্বারে ফোন করে চাঁদার টাকা দিতে বলে। তিনি অস্বীকার করলে ছেলে আলমগীরের উপর নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়।
লাল মিয়া বলেন, ‘অভিযুক্ত আরেক স্কুল পড়ুয়া ছাত্র আকাশকে দিয়ে আমার ছেলের উপর নির্যাতন করিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে সেই ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে শফিক গংরা।পরে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ আমার ছেলেকে হ্যান্ডকাফ ও আকাশকে দড়ি দিয়ে বেঁধে থানায় নিয়ে যায়।সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
চুরির মামলায় অভিযুক্ত স্কুল পড়ুয়া আকাশের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘বুধবার সকালে শফিকুলের লোকেরা আমার বাড়িতে প্রবেশ করে ঘর থেকে টানাহেঁচড়া করে আমার ছেলেকে বের করতে গেলে আমার স্ত্রী বাধা দেয়। এতে ওরা আমার স্ত্রীকে কিল ঘুষি মেরে আকাশকে মারতে মারতে নিয়ে যায়। চোরের অপবাদ দিয়ে শফিকুলের গোডাউনে আটকে মারধর করে।এ বিষয়ে সাটুরিয়া থানা একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
*কী বলছেন চিকিৎসক ও পুলিশ*
মারধরের বিষয়ে জানতে গেলে সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. নজরুল ইসলাম জানান, ‘সাটুরিয়া থানার সাব ইন্সপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১০মিনিটে মোঃ আলমগীর ও আকাশ নামের দুই কিশোরকে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসেন। আমরা তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই।তাদের শরীরে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। রেজিস্ট্রার বইতে তা এন্ট্রি করা আছে।’
সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আটক দুজনকে ১৮ বছর দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদের টঙ্গী শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নে ১২ ও ১৬ বছরের দুই শিশুকে মারধরের পর চুরির অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার করে শিশুদের হাতকড়া পরিয়ে থানায় নেয়া হয়। মামলায় তাদের বয়স বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে একরাত থানার গারদে রেখে পুলিশ দুই শিশুকে ১৮ বছর দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে।
অভিযোগ ‘চুরির’। দুই শিশুকে আটক করে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে দেয়া হয় মামলা। তাদের হাতকড়া পরিয়ে থানা থেকে গাড়িতে করে আদালতে নেয়া হয়। তবে অভিযোগ চাঁদা না দেয়ায় এসব কাণ্ড-সংবাদ
তবে ওই দুই শিশুর পরিবারের অভিযোগ জমি কেনার পর দাবি করা ‘চাঁদা না দেয়ার কারনেই’ তাদের ছেলেদের ‘আটকে রেখে মারধর’ করে থানায় ‘মিথ্যা মামলা’ দেয়া হয়েছে। তারা স্থানীয় থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
শিশুদের নির্যাতন, মামলা
জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী গ্রেপ্তার দুই শিশুর একজনের বয়স ১২ বছর ২ মাস ২ দিন এবং অন্যজনের ১৬ বছর ১১ মাস ২২ দিন। একজনের জন্মতারিখ ২৬ মে ২০১৩ এবং অন্যজনের ৫ আগস্ট ২০০৮। বাড়ি সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের আগ সাভার গ্রামে।
এর মধ্যে ২৬ মে ২০১৩ সালে জন্ম নেওয়া শিশুটি বালিয়াটি দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অন্যজন আব্দুর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
একই গ্রামের শফিকুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার সাটুরিয়া থানায় এই দুই শিশুর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করেন। এজাহারে শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, গত বুধবার রাতে তার বাড়ি থেকে একটি ল্যাপটপ, পাঁচটি স্মার্টফোন, ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকাসহ আরও বেশ কিছু মালপত্র চুরি হয়েছে।
পরদিন সকালে টের পেয়ে এ বিষয়ে আশপাশের লোকজনকে জানান তিনি। এ সময় বেশ কয়েকজন দাবি করেন, ঘটনার রাতে ওই দুই শিশুকে তার ‘বাড়ির আশপাশে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে’ দেখা গেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দুজনকে বাজার থেকে তিনি আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদে স্থানীয় লোকজনের সামনে দুজনই চুরির বিষয়টি ‘স্বীকার করে’ বলে শফিকুল ইসলামের দাবি।
থানার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী থেকে জানা গেছে, দুই শিশুর বিরুদ্ধে সিঁধেল চুরির অভিযোগে মামলা নেওয়া হয়েছে। দুজনের বয়স ১৮ দেখানো হয়েছে এই বিবরণীতে।
‘চাঁদা’ না দেয়ায় ‘মিথ্যা’ মামলা!
এক শিশুরর পিতা লাল মিয়া অভিযোগ করেছেন ‘চাঁদা না দেয়ার কারনেই’ শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে তার ছেলেকে মারধর করে থানায় মিথ্যা মামলা করেছে। এ ব্যাপারে তিনি সাটুরিয়া থানায় গত শনিবার লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে সম্প্রতি লাল মিয়া একটি জমি কেনেন। এই জমির কেনার জন্য শফিকুল ইসলাম, উজ্জল মিয়া, জীবন আহমেদ, মান্নান উদ্দিন, মিলন, মামুন,নজরুল ইসলাম নামের কয়েকজন তার কাছে ‘দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি’ করে আসছিল। চাঁদ না দিলে ওই জমি ‘দখল করে নেবে’ বলেও হুমকি দেয়।
অভিযোগে আরও বলা হয় চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় গত বুধবার তার মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে আলমগীর হোসেনকে সাভার বাজারের কামালের সেলুন থেকে সকাল ৮টার সময় মান্নান , উজ্জল ও মামুন ‘তুলে নিয়ে’ শফিকুলের গোডাউনে ‘আটকে রেখে’ বেদম ‘মারধর’ করে। এক পর্যায়ে উজ্জলের মোবাইল ফোন থেকে তার (লাল মিয়া) নাম্বারে ফোন করে চাঁদার টাকা দিতে বলে। তিনি অস্বীকার করলে ছেলে আলমগীরের উপর নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়।
লাল মিয়া বলেন, ‘অভিযুক্ত আরেক স্কুল পড়ুয়া ছাত্র আকাশকে দিয়ে আমার ছেলের উপর নির্যাতন করিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে সেই ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে শফিক গংরা।পরে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ আমার ছেলেকে হ্যান্ডকাফ ও আকাশকে দড়ি দিয়ে বেঁধে থানায় নিয়ে যায়।সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
চুরির মামলায় অভিযুক্ত স্কুল পড়ুয়া আকাশের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘বুধবার সকালে শফিকুলের লোকেরা আমার বাড়িতে প্রবেশ করে ঘর থেকে টানাহেঁচড়া করে আমার ছেলেকে বের করতে গেলে আমার স্ত্রী বাধা দেয়। এতে ওরা আমার স্ত্রীকে কিল ঘুষি মেরে আকাশকে মারতে মারতে নিয়ে যায়। চোরের অপবাদ দিয়ে শফিকুলের গোডাউনে আটকে মারধর করে।এ বিষয়ে সাটুরিয়া থানা একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
*কী বলছেন চিকিৎসক ও পুলিশ*
মারধরের বিষয়ে জানতে গেলে সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. নজরুল ইসলাম জানান, ‘সাটুরিয়া থানার সাব ইন্সপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১০মিনিটে মোঃ আলমগীর ও আকাশ নামের দুই কিশোরকে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসেন। আমরা তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই।তাদের শরীরে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। রেজিস্ট্রার বইতে তা এন্ট্রি করা আছে।’
সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আটক দুজনকে ১৮ বছর দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদের টঙ্গী শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।