রাজশাহী : আড়তগুলোতে আমের স্তূপ সাজিয়ে রেখেছেন চাষিরা সংবাদ
রাজশাহী অঞ্চলে কাটিমন এবং গৌড়মতি আম সাধারণত আমের মৌসুমের শেষে পাওয়া যায়। কাটিমন আম সারা বছর পাওয়া গেলেও গৌড়মতি আম সাধারণত ১৫ জুলাই থেকে বাজারে পাওয়া যায়।
রাজশাহীতে আমের বাজার সাধারণত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় এবং জুলাই মাস পর্যন্ত চলে। আমের জাত অনুসারে বাজারজাতকরণের সময়সীমা নির্ধারিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, গোপালভোগ আম সাধারণত ২০ মে থেকে পাওয়া যায়, ল্যাংড়া ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো ১০ জুন থেকে, এবং ফজলি ও আম্রপালি ১৫ জুন থেকে বাজারে পাওয়া যায়।
গৌড়মতি আম সাধারণত ১৫ জুলাই থেকে পাওয়া যায়, এবং এটি মৌসুমের শেষের দিকে পাওয়া যায়। কাটিমন আম সারা বছর পাওয়া গেলেও, সাধারণত আমের মৌসুমের শেষে এর সরবরাহ বাড়ে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়, যাতে অপরিপক্ব আম বাজারজাত করা না হয়।
রাজশাহীতে আমের ভরা মৌসুম শেষ হতেই হু হু করে বেড়েছে দাম। মাসখানেক আগেও যেখানে ভালো মানের আম প্রতি মণ দেড়-দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে এখন দাম উঠেছে সাত থেকে আট হাজার টাকায়। সরবরাহ কমে যাওয়া এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আমের মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে আসায় এই দাম বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। এই বাড়তি দরেও ক্রেতাদের চাহিদা কমেনি, তবে পরিমাণে কম কিনছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার রাজশাহী নগরের রেলস্টেশন রোডের পার্শ্ববর্তী আমের আড়তগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনা থাকলেও ভরা মৌসুমের সেই ব্যস্ততা নেই। আড়তগুলোতে এখন মূলত আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি, গৌরমতি, আশ্বিনা, কাটিমণ ও ব্যানানা ম্যাঙ্গোর মতো নাবি জাতের আমই বেশি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাজারে আমের সরবরাহ প্রায় শেষ হওয়ায় এখন রাজশাহীর বাজারই ভরসা। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বাজারেই এখন আম পাওয়া যাচ্ছে।
বাঘা উপজেলার খাবাসপুর এলাকা থেকে আসা সততা ফল ভান্ডারের মালিক সেকেন্দার আলী জানান, নওগাঁর সাপাহার থেকে বাছাই করে আম এনেছেন তিনি। তাঁর আড়তে এখন আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি, আশ্বিনা, গৌরমতি, কাটিমণ ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো—এই সাত জাতের আম মিলছে। তিনি বলেন,“মৌসুমের শুরুতে খারাপ আবহাওয়ায় সব আম একসঙ্গে পেকে যাওয়ায় দাম একেবারে কম ছিল। পাইকারিতে ২৫ টাকা কেজিও বিক্রি করেছি। কিন্তু ১৫ দিনের ব্যবধানে সেই দাম এখন দ্বিগুণেরও বেশি।”
তাঁর আড়তে ভালো মানের আম্রপালি, কাটিমণ ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো পাইকারি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর গৌরমতি, বারি-৪ ও ফজলি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২৫ টাকা এবং আশ্বিনা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। আরেক আড়তদার শফিকুল ইসলাম জানান, মাঝারি মানের আম এখন প্রতিমণ সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর সবচেয়ে ভালো মানের আমের দাম উঠছে সাত থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত।
চাহিদা থাকায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও চড়া দামে আম বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের আমের বড় একটি অংশ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। কিছুটা নিম্নমানের আম স্থানীয় ভ্যানচালকেরা কিনে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করছেন।
ভ্যানচালক আসলাম সরকার জানান, তিনি লক্ষ্মীপুর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে করে আম বিক্রি করেন। সোমবার তিনি ৬০ টাকা কেজিতে ফজলি ও বারি-৪ আম কিনেছেন, যা তিনি ৯০ টাকা দরে বিক্রি করবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আমের মৌসুম প্রায় পাঁচ মাস চলে, যার মধ্যে জুন ও জুলাই মাসে বাজার সবচেয়ে রমরমা থাকে। এ বছর ভালো ফলন হলেও মৌসুমের শুরুতে দাম কম ছিল। কিন্তু এখন মৌসুম প্রায় শেষের দিকে হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়েছে। আগামী মাসখানেক বাজারে আশ্বিনা, গৌরমতি, বারি-৪, ও ফজলি জাতের আম পাওয়া যাবে। এরপর এই মৌসুমের মতো আমের বেচাকেনা শেষ হয়ে আসবে।
রাজশাহী : আড়তগুলোতে আমের স্তূপ সাজিয়ে রেখেছেন চাষিরা সংবাদ
বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
রাজশাহী অঞ্চলে কাটিমন এবং গৌড়মতি আম সাধারণত আমের মৌসুমের শেষে পাওয়া যায়। কাটিমন আম সারা বছর পাওয়া গেলেও গৌড়মতি আম সাধারণত ১৫ জুলাই থেকে বাজারে পাওয়া যায়।
রাজশাহীতে আমের বাজার সাধারণত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় এবং জুলাই মাস পর্যন্ত চলে। আমের জাত অনুসারে বাজারজাতকরণের সময়সীমা নির্ধারিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, গোপালভোগ আম সাধারণত ২০ মে থেকে পাওয়া যায়, ল্যাংড়া ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো ১০ জুন থেকে, এবং ফজলি ও আম্রপালি ১৫ জুন থেকে বাজারে পাওয়া যায়।
গৌড়মতি আম সাধারণত ১৫ জুলাই থেকে পাওয়া যায়, এবং এটি মৌসুমের শেষের দিকে পাওয়া যায়। কাটিমন আম সারা বছর পাওয়া গেলেও, সাধারণত আমের মৌসুমের শেষে এর সরবরাহ বাড়ে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়, যাতে অপরিপক্ব আম বাজারজাত করা না হয়।
রাজশাহীতে আমের ভরা মৌসুম শেষ হতেই হু হু করে বেড়েছে দাম। মাসখানেক আগেও যেখানে ভালো মানের আম প্রতি মণ দেড়-দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে এখন দাম উঠেছে সাত থেকে আট হাজার টাকায়। সরবরাহ কমে যাওয়া এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আমের মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে আসায় এই দাম বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। এই বাড়তি দরেও ক্রেতাদের চাহিদা কমেনি, তবে পরিমাণে কম কিনছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার রাজশাহী নগরের রেলস্টেশন রোডের পার্শ্ববর্তী আমের আড়তগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনা থাকলেও ভরা মৌসুমের সেই ব্যস্ততা নেই। আড়তগুলোতে এখন মূলত আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি, গৌরমতি, আশ্বিনা, কাটিমণ ও ব্যানানা ম্যাঙ্গোর মতো নাবি জাতের আমই বেশি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাজারে আমের সরবরাহ প্রায় শেষ হওয়ায় এখন রাজশাহীর বাজারই ভরসা। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বাজারেই এখন আম পাওয়া যাচ্ছে।
বাঘা উপজেলার খাবাসপুর এলাকা থেকে আসা সততা ফল ভান্ডারের মালিক সেকেন্দার আলী জানান, নওগাঁর সাপাহার থেকে বাছাই করে আম এনেছেন তিনি। তাঁর আড়তে এখন আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি, আশ্বিনা, গৌরমতি, কাটিমণ ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো—এই সাত জাতের আম মিলছে। তিনি বলেন,“মৌসুমের শুরুতে খারাপ আবহাওয়ায় সব আম একসঙ্গে পেকে যাওয়ায় দাম একেবারে কম ছিল। পাইকারিতে ২৫ টাকা কেজিও বিক্রি করেছি। কিন্তু ১৫ দিনের ব্যবধানে সেই দাম এখন দ্বিগুণেরও বেশি।”
তাঁর আড়তে ভালো মানের আম্রপালি, কাটিমণ ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো পাইকারি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর গৌরমতি, বারি-৪ ও ফজলি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২৫ টাকা এবং আশ্বিনা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। আরেক আড়তদার শফিকুল ইসলাম জানান, মাঝারি মানের আম এখন প্রতিমণ সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর সবচেয়ে ভালো মানের আমের দাম উঠছে সাত থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত।
চাহিদা থাকায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও চড়া দামে আম বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের আমের বড় একটি অংশ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। কিছুটা নিম্নমানের আম স্থানীয় ভ্যানচালকেরা কিনে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করছেন।
ভ্যানচালক আসলাম সরকার জানান, তিনি লক্ষ্মীপুর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে করে আম বিক্রি করেন। সোমবার তিনি ৬০ টাকা কেজিতে ফজলি ও বারি-৪ আম কিনেছেন, যা তিনি ৯০ টাকা দরে বিক্রি করবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আমের মৌসুম প্রায় পাঁচ মাস চলে, যার মধ্যে জুন ও জুলাই মাসে বাজার সবচেয়ে রমরমা থাকে। এ বছর ভালো ফলন হলেও মৌসুমের শুরুতে দাম কম ছিল। কিন্তু এখন মৌসুম প্রায় শেষের দিকে হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়েছে। আগামী মাসখানেক বাজারে আশ্বিনা, গৌরমতি, বারি-৪, ও ফজলি জাতের আম পাওয়া যাবে। এরপর এই মৌসুমের মতো আমের বেচাকেনা শেষ হয়ে আসবে।