alt

সারাদেশ

কাঁঠালের চিপসে সফল যশোর সদরের রুপা খাতুন

যশোর অফিস : বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

যশোর : কাঁঠালের চিপসে বাজিমাত করেছেন যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের রুপা খাতুন -সংবাদ

১৯৯৬ সালে ৭ম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ৮ম শ্রেডুতে উঠেছিলেন রুপা খাতুন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ করে একদিন বিয়ে হয়ে যায় তার। বইখাতা আঁকড়ে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখা কিশোরীর স্বপ্ন ভেঙে যায়। বইখাতা ফেলে হাড়ি-কড়াই হাতে ঢুকে পড়তে হয় সংসার-রান্নাঘরে। কিন্তু বইখাতা ছাড়লেও স্বপ্ন ছাড়েননি রুপা খাতুন। সেই হাড়ি-কড়াইকে সম্বল করেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলেছেন তিনি। যশোরের অজপাড়া গাঁয়ের সেই রুপা খাতুন এখন পরিচিত ‘কাঁঠাল চিপসের কারিগর’ হিসেবে। শুধু এই কাঁঠালের চিপস্ইে মাসে ২০ হাজার টাকা উপার্জন তার। একসময় যারা নাক সিঁটকে সমালোচনা করতেন; এখন তারাই রুপা খাতুনের কাজ দেখতে আসেন, আসেন পরামর্শ নিতে।

যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের ইখতার আলীর স্ত্রী রুপা খাতুন (৪২)। অজপাড়া গাঁয়ের বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন ‘রেইনবো অ্যাগ্রো ফুড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। অনেক দিন ধরেই তিনি বাড়িতে নানা রকমের আচার, জ্যাম-জেলি, কুমড়োর বড়ি, গুড়-পাটালিসহ বিভিন্ন ধরণের খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে আসছেন। এ বছরই তিনি শুরু করেছেন, কাঁঠালের চিপস্ তৈরি। গত তিনমাস ধরে তিনি এই চিপস তৈরি করে বাজারজাত করছেন। কাঁঠাল প্রসেসিং করে ফ্রিজে সংরক্ষণের মাধ্যমে আরও তিন মাস এই চিপস বাজারে ছাড়া সম্ভব বলে তিনি জানান। কাঁঠালের চিপসে বাজিমাত করা রুপা খাতুনের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তার নিষ্ঠা-একাগ্রতা। তিনি গল্পে গল্পে শুনিয়েছেন তার হাল না ছাড়া সংগ্রামের কথা।

রুপা খাতুন বলেন, তার বাবার বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার পুশখালি গ্রামে। বাবা শামসুর রহমান বিশ্বাস কাঠের ব্যবসা করতেন। ১৯৯৬ সালে রুপা খাতুন ৭ম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ৮ম শ্রেণিতে ওঠেন। এ সময় হঠাৎ করেই বাবা মা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। সাত ভাই বোনের সংসারে কিছু টানাপড়েন আর ভালো ছেলে পাওয়ার সুবাদে বিয়ে হয়ে যায় তার। চলে আসেন স্বামীর বাড়ি যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বইখাতার ভাঁজে ফেলে রেখে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। এরই মধ্যে একে একে তিনটি সন্তানের মা হয়ে যান। ফলে সংসারের চক্রে ঘুরতে থাকা রুপা খাতুন অন্যদিনে ফিরে তাকানোর ফুসরত পাননি। তবে স্বামী কাপড়ের ব্যবসায়ী ও টেইলর মাস্টার হওয়ায় এক সময় তিনিও সেলাইয়ের কাজ শেখেন। যদিও সেলাইয়ের কাজ তাকে খুব বেশি টানতে পারেনি।

এরপর যেন নিজের আগ্রহের জায়গাটি খুঁজে পান রুপা খাতুন। ২০১৯ সালের দিকে তিনি খাদ্যপণ্য উৎপাদনের দিকে ঝটুকে পড়েন। রুপা খাতুন জানান, ‘আমি লক্ষ্য করি বিভিন্ন মৌসুমী ফল সিজনের কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় যেমন এর দাম পাওয়া যায় না; তেমনি বড় একটি অংশ অপচয়ও হয়। এই ভাবনা থেকে বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরি শুরু করি। এই সময় উন্নয়ন সংস্থা ‘সুশীলন’ থেকে প্রশিক্ষণ নিই। প্রশিক্ষণের পর আম-তেঁতুলের আচার, সস, জ্যাম-জেলি ইত্যাদি তৈরি শুরু করি। পরবর্তীতে সুশীলন-বন্ধনের মাধ্যমে ঢাকাতেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এরপর পুরোদমে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে লেগে যাই। ’

রুপা খাতুন বলেন, এরই মধ্যে তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাদের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পার্টনার প্রোগ্রামের আওতায় অন দ্যা জব প্রশিক্ষণের খবর পাই। ‘প্রিজম অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুড’ থেকে এই প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি কাঁঠালের চিপস তৈরি।

কাঁঠালের চিপস্রে কথা শুনে প্রথম দিকে সবাই হাসতো, নাক সিঁটকাতো। কিন্তু এখন এই চিপস্ বেশ সাড়া ফেলছে।

চিপস তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে রুপা খাতুন জানান, প্রথমে কাঁঠাল কেটে কোষগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে আঁটি বের করে ফেলতে হয়। এরপর কাঁঠাল চিপসের আকারে কেটে তেলে ভাজতে হয়। পরে মসলা মিশিয়ে প্যাকেট করে দেন। প্রতি প্যাকেট দোকানে খুচরা ২০ টাকা করে বিক্রি হয়। প্রতিদিন গড়ে তিনি তিনশ প্যাকেট চিপস তৈরি করেন। এক কেজি কাঁঠাল থেকে ১০ প্যাকেট চিপস হয়। গত তিন মাস ধরে তিনি চিপস তৈরি করে বিক্রি করছেন। খরচ বাদে গড়ে প্রতি মাসে এই চিপস থেকেই তার ২০ হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে।

তবে রুপা খাতুন আরও জানান, তিনি হাতে ভাজলেও এই প্রক্রিয়াটি মেশিনেও করা সম্ভব। সেজন্য তার ভ্যাকুয়াম প্রাইম, ডি অয়েলিং এবং প্যাকেজিং মেশিন দরকার। এ ছাড়া কাঁঠালের কোষ কেটে প্রসেসিং করে ফ্রিজে রেখে আরও তিন মাস এই চিপস উৎপাদন ও বাজারজাত করা সম্ভব।

রুপা খাতুনকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে যশোরে ‘প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, অ্যান্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার-ডিএএম অঙ্গ)’ শীর্ষক প্রকল্পে তরুণ ও নারী উদ্যোক্তার প্রশিক্ষণ প্রদান করছে প্রিজম অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুড’।

প্রিজম হোটেল ম্যানেজমেন্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান বশির আহমেদ চন্দন জানান, দেশব্যাপী বিশেষ করে তরুণ ও নারীদের মধ্যে কৃষি ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের বিকাশকে উৎসাহিত করতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তারা নিবিড়ভাবে এই তরুণ উদ্যোক্তাদের গড়ে তুলতে চেষ্টা করছেন। এখানে খাদ্যপণ্যের অনেকগুলো আইটেমের মধ্যে রুপা খাতুন কাঁঠালকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে সফল হয়েছেন।

প্রিজম অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুসলিমা খাতুন জানান, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে রুপা খাতুন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। শুধু কাঁঠালের চিপস বিক্রি করে তিনি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন। এ ছাড়া তার অন্যান্য খাদ্যপণ্য তো রয়েছেই। শুধু নিজেই তৈরি করছেন তা নয়; তিনি চিপস্ তৈরির জন্য প্রায় ১৮শ কেজি প্রসেসিং কাঁঠালও আমাদের সরবরাহ করেছেন।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যশোরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা বলেন, শুধু রুপা খাতুন নন, এমন অসংখ্য উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাদের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পার্টনার প্রোগ্রামের আওতায় অন দ্য জব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবসা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত যাবতীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। রুপা খাতুন কাঁঠালের চিপসে সফল হয়েছেন। চিপস তৈরির জন্য যেসব মেশিন প্রয়োজন সেগুলো যাতে তিনি পেতে পারেন, সে ব্যাপারেও তারা ভাবছেন। শুধু রুপা খাতুন নয়, সে সব উদ্যোক্তা এভাবেই উঠে আসবেন, তাদের সবার পাশেই থাকবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

দশমিনায় জলাবদ্ধ জমিতে করলা চাষে কৃষাণীদের সাফল্য

সালথায় অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের বেতন বন্ধ

ছবি

তিন সীমান্ত দিয়ে ফিরলেন ৪২ বাংলাদেশি, অধিকাংশই নারী ও শিশু

বন্যা প্রবণ কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়

ঈশ্বরগঞ্জে বাবার কুড়ালের আঘাতে নিথর শিশুপুত্র

নগরকান্দায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ব্যবসায়ীকে জরিমানা

কক্সবাজারে ছাদ থেকে পড়ে ব্যবসায়ীর রহস্যজনক মৃত্যু

ছবি

সিকৃবি-১ শিম চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন আহসান হাবিব

ছবি

সিলেট বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক নিহত, আহত ১

শিবালয়ে মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান

আমতলীতে কর্মব্যস্ত নৌকার কারিগররা

রামপালে বিষপানে নারীর আত্মহত্যা

ছবি

পাউবোর উদ্ধার করা জমিতে হবে বনায়ন ও পরিবেশবান্ধব পার্ক

শরীয়তপুরে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, স্বামী গ্রেপ্তার

ছবি

সখীপুর-ভালুকা সড়কের কাজ শুরু

কিন্ডারগার্টেন স্কুলকে বৃত্তি পরীক্ষা হতে বাদ দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন

সিরাজগঞ্জে বিসিক শিল্পপার্কের প্লট বরাদ্দ উদ্বোধন

আগামী সংসদ নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর ভোটবাক্স হবে একটাই সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম

ছবি

পদ্মার ভাঙনে বাড়ি জমি হারিয়ে দিশেহারা মানুষ

টঙ্গীতে তামিশনার ডাইং সেকশনে শ্রমিকের মৃত্যু

নবাবগঞ্জে শিশু লাবিব হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, গ্রেপ্তার ১

ছবি

আতাই নদীর বাঁধ ভেঙে অভয়নগরের দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দী

ছবি

ময়না জাতের লাউ চাষ করে লাভবান কৃষক

মহেশপুরে স্কুলে মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে শুকনা মরিচ আমদানি বেড়েছে

উৎপাদনে ফিরল বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট

দিনাজপুর পৌরসভা ও পেমব্রোক পার্ক টাউনের মধ্যে সিস্টার সিটি চুক্তি স্বাক্ষর

চাটখিলে প্রতিবন্ধী যুবককে পিলারে বেঁধে নির্যাতন

রাজশাহীতে ছিনতাইকারী আটক

ছবি

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত

ধনবাড়ীতে গৃহবূধর মরদেহ উদ্ধার,স্বজনদের দাবি হত্যা!

সোনারগাঁয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে স্বামী পলাতক

ছবি

বৃষ্টিপাতে আবারও জলাবদ্ধ বেগমগঞ্জ ডুবে গেছে অধিকাংশ সড়ক, বাড়িঘর

নদীতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

সিলেটে স্কুলছাত্র হত্যা ৮ জনের ফাঁসি, ৭ জনের যাবজ্জীবন

রুয়েটে যোগাযোগে দক্ষতা শীর্ষক সেমিনার

tab

সারাদেশ

কাঁঠালের চিপসে সফল যশোর সদরের রুপা খাতুন

যশোর অফিস

যশোর : কাঁঠালের চিপসে বাজিমাত করেছেন যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের রুপা খাতুন -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

১৯৯৬ সালে ৭ম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ৮ম শ্রেডুতে উঠেছিলেন রুপা খাতুন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ করে একদিন বিয়ে হয়ে যায় তার। বইখাতা আঁকড়ে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখা কিশোরীর স্বপ্ন ভেঙে যায়। বইখাতা ফেলে হাড়ি-কড়াই হাতে ঢুকে পড়তে হয় সংসার-রান্নাঘরে। কিন্তু বইখাতা ছাড়লেও স্বপ্ন ছাড়েননি রুপা খাতুন। সেই হাড়ি-কড়াইকে সম্বল করেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলেছেন তিনি। যশোরের অজপাড়া গাঁয়ের সেই রুপা খাতুন এখন পরিচিত ‘কাঁঠাল চিপসের কারিগর’ হিসেবে। শুধু এই কাঁঠালের চিপস্ইে মাসে ২০ হাজার টাকা উপার্জন তার। একসময় যারা নাক সিঁটকে সমালোচনা করতেন; এখন তারাই রুপা খাতুনের কাজ দেখতে আসেন, আসেন পরামর্শ নিতে।

যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের ইখতার আলীর স্ত্রী রুপা খাতুন (৪২)। অজপাড়া গাঁয়ের বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন ‘রেইনবো অ্যাগ্রো ফুড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। অনেক দিন ধরেই তিনি বাড়িতে নানা রকমের আচার, জ্যাম-জেলি, কুমড়োর বড়ি, গুড়-পাটালিসহ বিভিন্ন ধরণের খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে আসছেন। এ বছরই তিনি শুরু করেছেন, কাঁঠালের চিপস্ তৈরি। গত তিনমাস ধরে তিনি এই চিপস তৈরি করে বাজারজাত করছেন। কাঁঠাল প্রসেসিং করে ফ্রিজে সংরক্ষণের মাধ্যমে আরও তিন মাস এই চিপস বাজারে ছাড়া সম্ভব বলে তিনি জানান। কাঁঠালের চিপসে বাজিমাত করা রুপা খাতুনের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তার নিষ্ঠা-একাগ্রতা। তিনি গল্পে গল্পে শুনিয়েছেন তার হাল না ছাড়া সংগ্রামের কথা।

রুপা খাতুন বলেন, তার বাবার বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার পুশখালি গ্রামে। বাবা শামসুর রহমান বিশ্বাস কাঠের ব্যবসা করতেন। ১৯৯৬ সালে রুপা খাতুন ৭ম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ৮ম শ্রেণিতে ওঠেন। এ সময় হঠাৎ করেই বাবা মা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। সাত ভাই বোনের সংসারে কিছু টানাপড়েন আর ভালো ছেলে পাওয়ার সুবাদে বিয়ে হয়ে যায় তার। চলে আসেন স্বামীর বাড়ি যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বইখাতার ভাঁজে ফেলে রেখে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। এরই মধ্যে একে একে তিনটি সন্তানের মা হয়ে যান। ফলে সংসারের চক্রে ঘুরতে থাকা রুপা খাতুন অন্যদিনে ফিরে তাকানোর ফুসরত পাননি। তবে স্বামী কাপড়ের ব্যবসায়ী ও টেইলর মাস্টার হওয়ায় এক সময় তিনিও সেলাইয়ের কাজ শেখেন। যদিও সেলাইয়ের কাজ তাকে খুব বেশি টানতে পারেনি।

এরপর যেন নিজের আগ্রহের জায়গাটি খুঁজে পান রুপা খাতুন। ২০১৯ সালের দিকে তিনি খাদ্যপণ্য উৎপাদনের দিকে ঝটুকে পড়েন। রুপা খাতুন জানান, ‘আমি লক্ষ্য করি বিভিন্ন মৌসুমী ফল সিজনের কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় যেমন এর দাম পাওয়া যায় না; তেমনি বড় একটি অংশ অপচয়ও হয়। এই ভাবনা থেকে বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরি শুরু করি। এই সময় উন্নয়ন সংস্থা ‘সুশীলন’ থেকে প্রশিক্ষণ নিই। প্রশিক্ষণের পর আম-তেঁতুলের আচার, সস, জ্যাম-জেলি ইত্যাদি তৈরি শুরু করি। পরবর্তীতে সুশীলন-বন্ধনের মাধ্যমে ঢাকাতেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এরপর পুরোদমে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে লেগে যাই। ’

রুপা খাতুন বলেন, এরই মধ্যে তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাদের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পার্টনার প্রোগ্রামের আওতায় অন দ্যা জব প্রশিক্ষণের খবর পাই। ‘প্রিজম অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুড’ থেকে এই প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি কাঁঠালের চিপস তৈরি।

কাঁঠালের চিপস্রে কথা শুনে প্রথম দিকে সবাই হাসতো, নাক সিঁটকাতো। কিন্তু এখন এই চিপস্ বেশ সাড়া ফেলছে।

চিপস তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে রুপা খাতুন জানান, প্রথমে কাঁঠাল কেটে কোষগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে আঁটি বের করে ফেলতে হয়। এরপর কাঁঠাল চিপসের আকারে কেটে তেলে ভাজতে হয়। পরে মসলা মিশিয়ে প্যাকেট করে দেন। প্রতি প্যাকেট দোকানে খুচরা ২০ টাকা করে বিক্রি হয়। প্রতিদিন গড়ে তিনি তিনশ প্যাকেট চিপস তৈরি করেন। এক কেজি কাঁঠাল থেকে ১০ প্যাকেট চিপস হয়। গত তিন মাস ধরে তিনি চিপস তৈরি করে বিক্রি করছেন। খরচ বাদে গড়ে প্রতি মাসে এই চিপস থেকেই তার ২০ হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে।

তবে রুপা খাতুন আরও জানান, তিনি হাতে ভাজলেও এই প্রক্রিয়াটি মেশিনেও করা সম্ভব। সেজন্য তার ভ্যাকুয়াম প্রাইম, ডি অয়েলিং এবং প্যাকেজিং মেশিন দরকার। এ ছাড়া কাঁঠালের কোষ কেটে প্রসেসিং করে ফ্রিজে রেখে আরও তিন মাস এই চিপস উৎপাদন ও বাজারজাত করা সম্ভব।

রুপা খাতুনকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে যশোরে ‘প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, অ্যান্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার-ডিএএম অঙ্গ)’ শীর্ষক প্রকল্পে তরুণ ও নারী উদ্যোক্তার প্রশিক্ষণ প্রদান করছে প্রিজম অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুড’।

প্রিজম হোটেল ম্যানেজমেন্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান বশির আহমেদ চন্দন জানান, দেশব্যাপী বিশেষ করে তরুণ ও নারীদের মধ্যে কৃষি ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের বিকাশকে উৎসাহিত করতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তারা নিবিড়ভাবে এই তরুণ উদ্যোক্তাদের গড়ে তুলতে চেষ্টা করছেন। এখানে খাদ্যপণ্যের অনেকগুলো আইটেমের মধ্যে রুপা খাতুন কাঁঠালকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে সফল হয়েছেন।

প্রিজম অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুসলিমা খাতুন জানান, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে রুপা খাতুন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। শুধু কাঁঠালের চিপস বিক্রি করে তিনি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন। এ ছাড়া তার অন্যান্য খাদ্যপণ্য তো রয়েছেই। শুধু নিজেই তৈরি করছেন তা নয়; তিনি চিপস্ তৈরির জন্য প্রায় ১৮শ কেজি প্রসেসিং কাঁঠালও আমাদের সরবরাহ করেছেন।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যশোরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা বলেন, শুধু রুপা খাতুন নন, এমন অসংখ্য উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাদের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পার্টনার প্রোগ্রামের আওতায় অন দ্য জব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবসা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত যাবতীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। রুপা খাতুন কাঁঠালের চিপসে সফল হয়েছেন। চিপস তৈরির জন্য যেসব মেশিন প্রয়োজন সেগুলো যাতে তিনি পেতে পারেন, সে ব্যাপারেও তারা ভাবছেন। শুধু রুপা খাতুন নয়, সে সব উদ্যোক্তা এভাবেই উঠে আসবেন, তাদের সবার পাশেই থাকবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

back to top