পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে আবারও আরও ১১০ মিটার এলাকা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মঙ্গল মাঝিরঘাট-সাত্তার মাদবর হাট বাজার সংলগ্ন অছিমদ্দিন মাদবর কান্দি এলাকায় এই ভাঙন দেখা দেয়। এতে ওই এলাকার ১৭টি বসতবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়েছে এবং সরিয়ে নেয়া হয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি।
এ নিয়ে গত জুন থেকে এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধসহ ঐ এলাকায় অন্তত সারে ৭০০ মিটার অংশ নদীতে ধসে পড়েছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র অনুযায়ী এপর্যন্ত ৭২টি বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের আতঙ্কে আরও শতাধিক বসতঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঝুঁঁকিতে আছে সাত্তার মাদবর বাজার এলাকার আরও ২৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও অছিম উদ্দিন মাদবর কান্দি গ্রামের অন্তত ৮০০ পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকেই পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের অংশ শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় ২০১২ সালে নাওডোবা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। সেতু এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষার জন্য সেতু থেকে ভাটির দিকে ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। পরে সেটির সঙ্গে নদীশাসনের বাঁধ যুক্ত করা হয়।
পাউবো’র তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর মাসে জাজিরার পূর্বনাওডোবা জিরোপয়েন্ট এলাকায় বাঁধে প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছরের ৭ জুন ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার বাঁধের অংশ এবং বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই আরও ১১০ মিটার এলাকা ভেঙে পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে ৫০০ মিটার এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন থামানো যাচ্ছে না।
অছিমদ্দিন মাদবর কান্দি এলাকার বাসিন্দা ভিটেমাটি হারানো ময়না আক্তার সংবাদকে বলেন, ‘দিনের পর দিন নদীতে ভাঙতেছে। এখন আমাগো ভিটাও গেলোগা। সরকার শুধু আশ্বাস দেয় কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না। এখন আমরা কই যামু, কিভাবে থাকমু তার কোন দিশা পাইনা। আমাগো এখন আল্লাহ্ ছাড়া কেউ নাই।’
নদীতে ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্কে থাকা একাধিক বাসিন্দা বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও ভাঙন শুরু হওয়ায় শতাধিক ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন বাজারের দোকানপাটও সরানো হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সব হারিয়ে নিঃস্ব হবেন তারা। তাদের দাবি প্রাথমিক ভাঙনরোধে যেভাবে ধসে যাওয়া স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে তা আরও ভালোভাবে সমীক্ষা করে যেসব এলাকায় ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে সেসব এলাকায় আগে থেকে ডাম্পিং করা হোক এবং দ্রুত স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান সংবাদকে বলেন, নদীতে পানি ও স্রোত এখন অনেক বেশি হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন হচ্ছে। আমরা নিয়মিত জিও ব্যাগ ফেলে প্রাথমিকভাবে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি খুব শিঘ্রই প্রস্তাবটি অনুমোদন হবে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় সংবাদকে বলেন, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে বাঁধের পুরনো অংশগুলো ভেঙে পড়েছে। এখন গ্রামের দিক দিয়ে পদ্মায় বিলীন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যারা ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়েছেন তাদের দ্রুত সহায়তা দেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে আবারও আরও ১১০ মিটার এলাকা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মঙ্গল মাঝিরঘাট-সাত্তার মাদবর হাট বাজার সংলগ্ন অছিমদ্দিন মাদবর কান্দি এলাকায় এই ভাঙন দেখা দেয়। এতে ওই এলাকার ১৭টি বসতবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়েছে এবং সরিয়ে নেয়া হয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি।
এ নিয়ে গত জুন থেকে এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধসহ ঐ এলাকায় অন্তত সারে ৭০০ মিটার অংশ নদীতে ধসে পড়েছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র অনুযায়ী এপর্যন্ত ৭২টি বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের আতঙ্কে আরও শতাধিক বসতঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঝুঁঁকিতে আছে সাত্তার মাদবর বাজার এলাকার আরও ২৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও অছিম উদ্দিন মাদবর কান্দি গ্রামের অন্তত ৮০০ পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকেই পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের অংশ শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় ২০১২ সালে নাওডোবা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। সেতু এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষার জন্য সেতু থেকে ভাটির দিকে ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। পরে সেটির সঙ্গে নদীশাসনের বাঁধ যুক্ত করা হয়।
পাউবো’র তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর মাসে জাজিরার পূর্বনাওডোবা জিরোপয়েন্ট এলাকায় বাঁধে প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছরের ৭ জুন ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার বাঁধের অংশ এবং বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই আরও ১১০ মিটার এলাকা ভেঙে পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে ৫০০ মিটার এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন থামানো যাচ্ছে না।
অছিমদ্দিন মাদবর কান্দি এলাকার বাসিন্দা ভিটেমাটি হারানো ময়না আক্তার সংবাদকে বলেন, ‘দিনের পর দিন নদীতে ভাঙতেছে। এখন আমাগো ভিটাও গেলোগা। সরকার শুধু আশ্বাস দেয় কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না। এখন আমরা কই যামু, কিভাবে থাকমু তার কোন দিশা পাইনা। আমাগো এখন আল্লাহ্ ছাড়া কেউ নাই।’
নদীতে ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্কে থাকা একাধিক বাসিন্দা বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও ভাঙন শুরু হওয়ায় শতাধিক ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন বাজারের দোকানপাটও সরানো হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সব হারিয়ে নিঃস্ব হবেন তারা। তাদের দাবি প্রাথমিক ভাঙনরোধে যেভাবে ধসে যাওয়া স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে তা আরও ভালোভাবে সমীক্ষা করে যেসব এলাকায় ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে সেসব এলাকায় আগে থেকে ডাম্পিং করা হোক এবং দ্রুত স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান সংবাদকে বলেন, নদীতে পানি ও স্রোত এখন অনেক বেশি হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন হচ্ছে। আমরা নিয়মিত জিও ব্যাগ ফেলে প্রাথমিকভাবে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি খুব শিঘ্রই প্রস্তাবটি অনুমোদন হবে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় সংবাদকে বলেন, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে বাঁধের পুরনো অংশগুলো ভেঙে পড়েছে। এখন গ্রামের দিক দিয়ে পদ্মায় বিলীন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যারা ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়েছেন তাদের দ্রুত সহায়তা দেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।