পীরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
পীরগাছা (রংপুর) : স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার -সংবাদ
শয্যার সংখ্যা বাড়লেও সুবিধা বাড়েনি রংপুরের পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। নানা সমস্যা বিদ্যমান থাকলেও নিয়মিত পরিষ্কার-পরি”ছন্নতার অভাবে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ বিপাকে ফেলেছে রোগী, স্বজন ও দর্শনার্থীদের। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া রোগীরা।
এদিকে গত বুধবার সন্ধ্যায় জরাজীর্ণ ভবনের ছাদের পলেস্তারা ধসে রিমা আক্তার (২০) নামে এক রোগী আহত হয়েছেন।
এ সময় হাসপাতালজুড়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আহত রিমা আক্তার উপজেলার চৌধুরানী মিড়াপাড়া গ্রামের রকিজল মোল্লার মেয়ে। তিনি জানান, ‘হঠাৎ ছাদের পলেস্তরা আমার মাথা ও হাতে পড়ে। প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি, কিন্তু কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। সংশ্লিষ্টরা চিকিৎসা সেবায় আন্তরিক না বলে অভিযোগ তার।’
রিমার মতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও স্বজনরাও।
হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিষ্কার-পরি”ছন্নতার অবস্থা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীরা। প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা নিতে আসলেও চিকিৎসা সেবার মান আশানুরূপ নয়। হাসপাতালটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়েনি সুবিধা বরং বেড়েছে ভোগান্তি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছড়িয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা। সিঁড়ি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ও জানালার পাশে জমে আছে পলিথিন, পরিত্যক্ত খাবার, ব্যবহৃত সিরিঞ্জসহ নানান আবর্জনা। এসব ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থ্যা না থাকায় রোগী, স্বজন ও নার্সরাই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছেন, ফলে নিচে তৈরি হয়েছে ময়লার ভাগাড়।
হাসপাতালের ভেতরে নিয়মিত দেখা যায় একাধিক বেওয়ারিশ কুকুর ঘোরাফেরা করছে। জরুরি বিভাগের বারান্দা থেকে শুরু করে আশপাশে অবাধে চলাফেরা করছে এসব কুকুর। এতে রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। এ অবস্থ্যায় সেবার পরিবেশ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে সংক্রমণের সম্ভাবনাও। কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থ্যা না নেওয়ায় স্হানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে।
রোগীর স্বজন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শয্যার সংখ্যা বাড়লেও সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ একটু সচেতন হলে এমন হতো না।’
রোগী রহিমা বেগম বলেন, ‘পরি”ছন্নতা না থাকার কারণে দুর্গন্ধে হাঁসফাঁস করছি। পরি”ছন্নতাকর্মীদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই।’
টাইফয়েডে আক্রান্ত শিশু বায়জীদ আহমেদের মা বিউটি বেগম বলেন, ‘আজ সকালে পলেস্তরা ছেলের চোখে পড়ে ভয় পেয়েছি। তিনদিন ধরে হাসপাতালে থাকলেও ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।’
সাতদরগাহ এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য এনেছি, কিন্তু পরিবেশ খুবই নোংরা, সেবা নেই বললেই চলে। বেডশিট চাইলে কেউ দেয় না।’
পারুল থেকে আসা জহুরুল হক বলেন, ‘চিকিৎসাধীন আত্মীয়কে দেখতে এসেছিলাম। হঠাৎ ছাদের পলেস্তরা ধসে পড়ায় সবাই ভয়ে চিৎকার শুরু করে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে কেবল ভবনের ঝুঁকি নয়, রয়েছে ওষুধ সংকট, কক্ষের অভাব, নার্স-ডাক্তারের দায়িত্বে অবহেলা ও স্বাস্হবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও।
হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স শিউলী বেগম বলেন, ‘আমাদের রুমের ছাদের অবারও খারাপ, বীমে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকি। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন দ্রুত ব্যবস্হা নেয়।’
দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. রাশিদা আক্তার রেশমা বলেন, ‘পুরনো ভবনের ছাদ ধসে একজন রোগী আহত হয়েছেন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ময়লা ও কুকুরের বিষয়ে কিছুই করার নেই, কর্তৃপক্ষ কুকুর মারেন না কেন?’
অপরদিকে বহির্ভাগের ডাক্তার, টেকনিশিয়ান ও কর্মচারীরা সঠিক সময়ে আগমন প্রস্হান না করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
উপজেলা স্বাস্হ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানভীর হাসনাত রবিন বলেন, ‘ভবনটি পুরনো হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ময়লা ও ডাস্টবিনের বিষয়টি নজরে এসেছে, ব্যবস্হা নেবো। তবে হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না।’
এ বিষয়ে রংপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ শাহীন সুলতানা বলেন, যা জনবল আছে তা দিয়েই আমাদের পরিস্কার-পরি”ছন্নতাসহ সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। তবে সমস্যাগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।
পীরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
পীরগাছা (রংপুর) : স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার -সংবাদ
শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫
শয্যার সংখ্যা বাড়লেও সুবিধা বাড়েনি রংপুরের পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। নানা সমস্যা বিদ্যমান থাকলেও নিয়মিত পরিষ্কার-পরি”ছন্নতার অভাবে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ বিপাকে ফেলেছে রোগী, স্বজন ও দর্শনার্থীদের। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া রোগীরা।
এদিকে গত বুধবার সন্ধ্যায় জরাজীর্ণ ভবনের ছাদের পলেস্তারা ধসে রিমা আক্তার (২০) নামে এক রোগী আহত হয়েছেন।
এ সময় হাসপাতালজুড়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আহত রিমা আক্তার উপজেলার চৌধুরানী মিড়াপাড়া গ্রামের রকিজল মোল্লার মেয়ে। তিনি জানান, ‘হঠাৎ ছাদের পলেস্তরা আমার মাথা ও হাতে পড়ে। প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি, কিন্তু কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। সংশ্লিষ্টরা চিকিৎসা সেবায় আন্তরিক না বলে অভিযোগ তার।’
রিমার মতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও স্বজনরাও।
হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিষ্কার-পরি”ছন্নতার অবস্থা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীরা। প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা নিতে আসলেও চিকিৎসা সেবার মান আশানুরূপ নয়। হাসপাতালটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়েনি সুবিধা বরং বেড়েছে ভোগান্তি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছড়িয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা। সিঁড়ি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ও জানালার পাশে জমে আছে পলিথিন, পরিত্যক্ত খাবার, ব্যবহৃত সিরিঞ্জসহ নানান আবর্জনা। এসব ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থ্যা না থাকায় রোগী, স্বজন ও নার্সরাই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছেন, ফলে নিচে তৈরি হয়েছে ময়লার ভাগাড়।
হাসপাতালের ভেতরে নিয়মিত দেখা যায় একাধিক বেওয়ারিশ কুকুর ঘোরাফেরা করছে। জরুরি বিভাগের বারান্দা থেকে শুরু করে আশপাশে অবাধে চলাফেরা করছে এসব কুকুর। এতে রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। এ অবস্থ্যায় সেবার পরিবেশ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে সংক্রমণের সম্ভাবনাও। কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থ্যা না নেওয়ায় স্হানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে।
রোগীর স্বজন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শয্যার সংখ্যা বাড়লেও সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ একটু সচেতন হলে এমন হতো না।’
রোগী রহিমা বেগম বলেন, ‘পরি”ছন্নতা না থাকার কারণে দুর্গন্ধে হাঁসফাঁস করছি। পরি”ছন্নতাকর্মীদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই।’
টাইফয়েডে আক্রান্ত শিশু বায়জীদ আহমেদের মা বিউটি বেগম বলেন, ‘আজ সকালে পলেস্তরা ছেলের চোখে পড়ে ভয় পেয়েছি। তিনদিন ধরে হাসপাতালে থাকলেও ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।’
সাতদরগাহ এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য এনেছি, কিন্তু পরিবেশ খুবই নোংরা, সেবা নেই বললেই চলে। বেডশিট চাইলে কেউ দেয় না।’
পারুল থেকে আসা জহুরুল হক বলেন, ‘চিকিৎসাধীন আত্মীয়কে দেখতে এসেছিলাম। হঠাৎ ছাদের পলেস্তরা ধসে পড়ায় সবাই ভয়ে চিৎকার শুরু করে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে কেবল ভবনের ঝুঁকি নয়, রয়েছে ওষুধ সংকট, কক্ষের অভাব, নার্স-ডাক্তারের দায়িত্বে অবহেলা ও স্বাস্হবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও।
হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স শিউলী বেগম বলেন, ‘আমাদের রুমের ছাদের অবারও খারাপ, বীমে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকি। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন দ্রুত ব্যবস্হা নেয়।’
দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. রাশিদা আক্তার রেশমা বলেন, ‘পুরনো ভবনের ছাদ ধসে একজন রোগী আহত হয়েছেন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ময়লা ও কুকুরের বিষয়ে কিছুই করার নেই, কর্তৃপক্ষ কুকুর মারেন না কেন?’
অপরদিকে বহির্ভাগের ডাক্তার, টেকনিশিয়ান ও কর্মচারীরা সঠিক সময়ে আগমন প্রস্হান না করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
উপজেলা স্বাস্হ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানভীর হাসনাত রবিন বলেন, ‘ভবনটি পুরনো হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ময়লা ও ডাস্টবিনের বিষয়টি নজরে এসেছে, ব্যবস্হা নেবো। তবে হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না।’
এ বিষয়ে রংপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ শাহীন সুলতানা বলেন, যা জনবল আছে তা দিয়েই আমাদের পরিস্কার-পরি”ছন্নতাসহ সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। তবে সমস্যাগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।