alt

সারাদেশ

কৌশলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন উপকূলের মৎস্য ব্যবসায়ীরা

কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা : শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী অঞ্চলে মৎস্য ব্যবসা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত। এ খাতে কর ফাঁকি উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পটুয়াখালী জেলার অন্যতম মৎস্য বন্দর কুয়াকাটা, আলীপুর ও মহিপুর মাছ ব্যবসায়ীরা নানা কৌশল আর অজুহাতে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। এ মৎস্য বন্দরগুলোতে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা করলেও সরকার পাচ্ছে না সঠিক রাজস্ব। রাজস্ব বিভাগের জোরালো তৎপরতা না থাকায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

পটুয়াখালীর মহিপুর, আলীপুর ও কুয়াকাটা মৎস্য ঘাটগুলোতে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছে না। মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা সরকারি অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) এড়িয়ে মাছ কিনে নিজেদের ঘাটে মজুদ করেন। পরে সেখান থেকে আড়ালে বড় আকারে লেনদেন হয়, যা রেকর্ডে আসে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে ডিজিটাল ওজন মেশিন, অনলাইন চালান ও ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ঘাটগুলোকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। মৎস্য খাতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রশাসন, রাজস্ব বিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তর একযোগে কাজ করলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের সুবিধার জন্য ২০০৯ সালে দেশের অন্যতম মৎস্য বন্দর আলীপুর ও মহিপুরে দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। ২০১২ সালে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৬ সালে ১১০ শতাংশ জমিতে ১৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ে ‘আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’ এবং ১০৯ শতাংশ জমির ওপর ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ‘মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’ নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর আলীপুরের ব্যবসায়ীরা অবতরণ কেন্দ্রে মাছ বেচাকেনা করছেন। পাইকার, ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক ডাকে সরগরম থাকে আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি। কিন্তু তারা নানা অজুহাতে সঠিকভাবে সরকারের রাজস্ব দিচ্ছেন না। আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা উদাহরণস্বরূপ একটি হিসাব দিয়েছেন। তাঁর হিসাব মতে, গত ১৩ জুলাই এফবি সাদিয়া-২ নামের ট্রলার বিভিন্ন সাইজের ৬৫ মণ ইলিশ বিক্রিয় করেন ৩৯ লাখ ৬০ হাজার ১৪০ টাকায়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী রাজস্ব আসে ৪৯ হাজার ৫০১ টাকা। কিন্তু আড়ৎদার ব্যবসায়ী রাজস্ব দিয়েছেন মাত্র ২ হাজার টাকা। ২ হাজার টাকা হিসাবে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের খাতায় ১২৮ কেজি (৩ মণ ৮ কেজি) মাছ লেখা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মহিপুরের ব্যবসায়ীরা সরকারি বিএফডিসি মার্কেট ব্যবহার না করায় আলীপুরের ব্যবসায়ীদের চাপ প্রয়োগ করে রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না।

আলীপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘খাপড়াভাঙ্গা নদীর দুই পাড়ে দুইটি মৎস্য বন্দর। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন দুই পাড়ে দুইটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। মহিপুরের ব্যবসায়ীরা অবতরণ কেন্দ্রে না গিয়ে নিজস্ব গতিতে মাছ কেনাবেচা করছেন। এতে সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। ফলে জেলেদের কাছ থেকে রাজস্ব বাবদ তারা কোন টাকা কাটছেন না। আমরা জেলেদের নিকট থেকে রাজস্ব বাবদ টাকা কর্তন করলেই শুরু হয় নানা বিপত্তি। তাই আমরা সঠিকভাবে সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করতে পারছি না।’

এ দিকে জায়গা স্বল্পতার অজুহাতে মহিপুরের ব্যবসায়ীরা অবতরণ কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। তারা খাপড়াভাঙ্গা নদীর তীরে নিজস্ব গতিতে মাছ কেনাবেচা করছেন। ফলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা রাজস্ব আদায় করতে পারছেন না। মহিপুরের ব্যবসায়ীদের দাবি, মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটিতে ৪৫ জন ব্যবসায়ীর কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মহিপুর নিবন্ধিত ব্যবসায়ী রয়েছেন ৮২ জন। এ অবতরণ কেন্দ্রের পল্টুনে একসাথে সর্বোচ্চ ১০ টি ট্রলার মাছ খালাস করতে পারে। কিন্তু ট্রলার রয়েছে ১ হাজারেও বেশী। এ ছাড়া এখানে পাইকার আছেন ২০০ জন, শ্রমিক রয়েছেন ৮০০ জন। এত লোকের উপস্থিতিতে মাছ ক্রয় বিক্রয় করার জায়গা এখানে নেই। তারা একবার শীতের মৌসুমে অবতরণ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। জায়গা স্বল্পতার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিদিন মারামারি হয়। তাই নিজস্ব গদিতে ফেরৎ এসেছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী আলীপুরে ২৫-৩০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। আলীপুর অবতরণ কেন্দ্রে যে জায়গা আছে তাতে মাছ ক্রয় বিক্রয় সম্ভব। এ প্রসঙ্গে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০৯ সালে যখন এখানে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। তখন মহিপুরে ৪০-৪৫ জন ব্যবসায়ী ছিলেন। ১১ বছর পরে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অবতরণ কেন্দ্রটি চালু হলে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা দ্বিগুন হয়। যার ফলে জায়গা স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।

মহিপুর মৎস্য আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজু আহম্মেদ রাজা বলেন, ‘বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ যখন অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখন প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা না করে তৎকালীন সরকার দলীয় কিছু অব্যবসায়ীদের সাথে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যার কারণে অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এখন আমাদের দাবি পূরণ করলে আমরা অবতরণ কেন্দ্রে যেতে রাজি আছি।’

এ বিষয়ে আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মহিপুরের ব্যবসায়ীরা অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবহার না করায় রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না। আর এ অজুহাতে আলীপুরের ব্যবসায়ীরা খেয়াল খুশি মতো নামমাত্র রাজস্ব দিচ্ছেন। যার ফলে প্রায় ২৯ কোটি টাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে শুধুমাত্র ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ১১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা লোকসান গুনছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত পোষণ করে জায়গা স্বল্পতার কথা স্বীকার করে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পরিধি বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীদের সেখানে নিতে হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন।’

যশোরে ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে রেখে ৪ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ

ছবি

কক্সবাজারে সুহায়েত নামের যুবককে গুলি করে হত্যা

ছবি

খুলনায় বাড়িতে ঢুকে যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা

ছবি

পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় তিন বিভাগে অতিভারি বর্ষণের শঙ্কা

ছবি

১০ আগস্ট থেকে এগিয়ে আসছে সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের যাত্রা সূচি

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি পালিত

অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক ২

ছবি

মধুপুরের লোকজ সংস্কৃতির ধুয়া গানে অনন্য আব্দুল খালেক বয়াতি

এক মাসেও আইডি কার্ড পায়নি জবির নবীন শিক্ষার্থীরা

ছবি

সিরাজগঞ্জে উৎপাদিত দুগ্ধজাত পণ্য যাচ্ছে সারা দেশে

ছবি

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দশমিনা মডেল মসজিদ

ছবি

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর

চাঁদপুরে চোরাই ৬ বাইকসহ আটক ৩

চান্দিনায় মাদক ও টাকাসহ আটক ১

বগুড়ায় দুর্বৃত্তদের অস্ত্রাঘাতে যুবদল নেতা আহত

রামুতে ইয়াবাসহ আটক ২

ছবি

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ

নন্দীগ্রামে নতুন সেচ লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে উন্মুক্ত লটারিতে ওএমএস ডিলার নিয়োগ

ছবি

বিরামপুরে ধান রোপণে নারীরা এগিয়ে থাকলেও রয়েছে মজুরি বৈষম্য

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ ৪৭৭ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা

রাণীনগরে কিশোরীকে হত্যার চেষ্টা, যুবক গ্রেপ্তার

ছবি

তিস্তার পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি নিম্নাঞ্চল মানুষের

ড্রেজারের গর্জনে ঘুম ভাঙে রায়পুরবাসীর

কালিয়াকৈরে থানার পাশ থেকে প্রকাশ্যে ৯ লাখ টাকা ছিনতাই

ছবি

সার-কীটনাশক বিক্রিতে অনিয়ম

ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ১

ছবি

ভাঙন রোধে দশমিনা ইউএনওর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস

বোদা পৌর এলাকার ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড পঞ্চগড়-২ সংসদীয় আসনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আনন্দ মিছিল

ছবি

পুরনো ভবন, অব্যবস্থাপনা ও সেবার মানে চরম অসন্তোষ রোগীদের

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে দেশ সেরা দুমকি

ছবি

পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ভাঙন, বিলীন হলো আরও ১৭ বসতবাড়ি

নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার, পরিবর্তন বা চার্টার কিছুই হবে না

ছবি

লোহাগড়ায় ‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো’র প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

পাচার প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভা

ছবি

খাগড়াছড়ির প্লাস রক্তের বন্ধনে মানবতা সম্পন্ন হলো

tab

সারাদেশ

কৌশলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন উপকূলের মৎস্য ব্যবসায়ীরা

কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা

শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী অঞ্চলে মৎস্য ব্যবসা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত। এ খাতে কর ফাঁকি উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পটুয়াখালী জেলার অন্যতম মৎস্য বন্দর কুয়াকাটা, আলীপুর ও মহিপুর মাছ ব্যবসায়ীরা নানা কৌশল আর অজুহাতে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। এ মৎস্য বন্দরগুলোতে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা করলেও সরকার পাচ্ছে না সঠিক রাজস্ব। রাজস্ব বিভাগের জোরালো তৎপরতা না থাকায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

পটুয়াখালীর মহিপুর, আলীপুর ও কুয়াকাটা মৎস্য ঘাটগুলোতে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছে না। মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা সরকারি অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) এড়িয়ে মাছ কিনে নিজেদের ঘাটে মজুদ করেন। পরে সেখান থেকে আড়ালে বড় আকারে লেনদেন হয়, যা রেকর্ডে আসে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে ডিজিটাল ওজন মেশিন, অনলাইন চালান ও ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ঘাটগুলোকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। মৎস্য খাতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রশাসন, রাজস্ব বিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তর একযোগে কাজ করলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের সুবিধার জন্য ২০০৯ সালে দেশের অন্যতম মৎস্য বন্দর আলীপুর ও মহিপুরে দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। ২০১২ সালে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৬ সালে ১১০ শতাংশ জমিতে ১৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ে ‘আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’ এবং ১০৯ শতাংশ জমির ওপর ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ‘মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’ নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর আলীপুরের ব্যবসায়ীরা অবতরণ কেন্দ্রে মাছ বেচাকেনা করছেন। পাইকার, ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক ডাকে সরগরম থাকে আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি। কিন্তু তারা নানা অজুহাতে সঠিকভাবে সরকারের রাজস্ব দিচ্ছেন না। আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা উদাহরণস্বরূপ একটি হিসাব দিয়েছেন। তাঁর হিসাব মতে, গত ১৩ জুলাই এফবি সাদিয়া-২ নামের ট্রলার বিভিন্ন সাইজের ৬৫ মণ ইলিশ বিক্রিয় করেন ৩৯ লাখ ৬০ হাজার ১৪০ টাকায়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী রাজস্ব আসে ৪৯ হাজার ৫০১ টাকা। কিন্তু আড়ৎদার ব্যবসায়ী রাজস্ব দিয়েছেন মাত্র ২ হাজার টাকা। ২ হাজার টাকা হিসাবে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের খাতায় ১২৮ কেজি (৩ মণ ৮ কেজি) মাছ লেখা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মহিপুরের ব্যবসায়ীরা সরকারি বিএফডিসি মার্কেট ব্যবহার না করায় আলীপুরের ব্যবসায়ীদের চাপ প্রয়োগ করে রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না।

আলীপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘খাপড়াভাঙ্গা নদীর দুই পাড়ে দুইটি মৎস্য বন্দর। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন দুই পাড়ে দুইটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। মহিপুরের ব্যবসায়ীরা অবতরণ কেন্দ্রে না গিয়ে নিজস্ব গতিতে মাছ কেনাবেচা করছেন। এতে সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। ফলে জেলেদের কাছ থেকে রাজস্ব বাবদ তারা কোন টাকা কাটছেন না। আমরা জেলেদের নিকট থেকে রাজস্ব বাবদ টাকা কর্তন করলেই শুরু হয় নানা বিপত্তি। তাই আমরা সঠিকভাবে সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করতে পারছি না।’

এ দিকে জায়গা স্বল্পতার অজুহাতে মহিপুরের ব্যবসায়ীরা অবতরণ কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। তারা খাপড়াভাঙ্গা নদীর তীরে নিজস্ব গতিতে মাছ কেনাবেচা করছেন। ফলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা রাজস্ব আদায় করতে পারছেন না। মহিপুরের ব্যবসায়ীদের দাবি, মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটিতে ৪৫ জন ব্যবসায়ীর কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মহিপুর নিবন্ধিত ব্যবসায়ী রয়েছেন ৮২ জন। এ অবতরণ কেন্দ্রের পল্টুনে একসাথে সর্বোচ্চ ১০ টি ট্রলার মাছ খালাস করতে পারে। কিন্তু ট্রলার রয়েছে ১ হাজারেও বেশী। এ ছাড়া এখানে পাইকার আছেন ২০০ জন, শ্রমিক রয়েছেন ৮০০ জন। এত লোকের উপস্থিতিতে মাছ ক্রয় বিক্রয় করার জায়গা এখানে নেই। তারা একবার শীতের মৌসুমে অবতরণ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। জায়গা স্বল্পতার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিদিন মারামারি হয়। তাই নিজস্ব গদিতে ফেরৎ এসেছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী আলীপুরে ২৫-৩০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। আলীপুর অবতরণ কেন্দ্রে যে জায়গা আছে তাতে মাছ ক্রয় বিক্রয় সম্ভব। এ প্রসঙ্গে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০৯ সালে যখন এখানে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। তখন মহিপুরে ৪০-৪৫ জন ব্যবসায়ী ছিলেন। ১১ বছর পরে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অবতরণ কেন্দ্রটি চালু হলে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা দ্বিগুন হয়। যার ফলে জায়গা স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।

মহিপুর মৎস্য আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজু আহম্মেদ রাজা বলেন, ‘বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ যখন অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখন প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা না করে তৎকালীন সরকার দলীয় কিছু অব্যবসায়ীদের সাথে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যার কারণে অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এখন আমাদের দাবি পূরণ করলে আমরা অবতরণ কেন্দ্রে যেতে রাজি আছি।’

এ বিষয়ে আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মহিপুরের ব্যবসায়ীরা অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবহার না করায় রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না। আর এ অজুহাতে আলীপুরের ব্যবসায়ীরা খেয়াল খুশি মতো নামমাত্র রাজস্ব দিচ্ছেন। যার ফলে প্রায় ২৯ কোটি টাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে শুধুমাত্র ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ১১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা লোকসান গুনছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত পোষণ করে জায়গা স্বল্পতার কথা স্বীকার করে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পরিধি বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীদের সেখানে নিতে হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন।’

back to top