মাদারীপুর : নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি -সংবাদ
মাদারীপুরে ৪ বছর ধরে আটকে আছে আড়িয়াল খাঁ নদ অববাহিকার সম্ভাব্যতার সমীক্ষা প্রকল্পের কাজ। সমীক্ষা না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে কাজও বন্ধ। ফলে আড়িয়াল খাঁ নদের অববাহিকার নদ-নদীগুলোর ভাঙনে প্রতি বছর কমছে ফসলি জমিসহ বসতবাড়ি। এতে প্রতি বছর হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সমীক্ষা সম্পাদন করা হলে প্রকল্পটির কার্যক্রম হাতে নিতে পারত বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষদের নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বরিশাল অঞ্চলের নদী সমূহের অববাহিকা ভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করা হলে নদীভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল অঞ্চলের নদী সমূহের অববাহিকা ভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় মাদারীপুর জেলার সদর, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার, লোয়ার কুমার, কাটা কুমার, মাদারীপুর বিলরুট, কীর্তিনাশা, সাধুর খাল, অবদা খাল ও টরকী নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ড্রেজিং কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমীক্ষা সম্পাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ২০২৪ সালের ২৮ মে প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকল্পটি কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। ইতোপূর্বে মাদারীপুর জেলার সদর, কালকিনি ও রাজৈর উপজেলাধীন আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার, এমবিআর, লোয়ার কুমার কীর্তিনাশা নদী এবং সাধুর খালের ভাঙন রোধ ও নাব্যতা সংকট নিরসনে ১৪৮২.১৭ কোটি টাকা খরচে ৩৭.১১ কিমি. নদী তীর প্রতিরক্ষা ও ১২.০০ কিমি. নদী ড্রেজিং কাজ সম্বলিত মাদারীপুর জেলার মাদারীপুর সদর, রাজৈর এবং কালকিনি উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার, এমবিআর, লোয়ার কুমার, কীর্তিনাশা, টরকী নদী এবং সাধুর খালের তীর সংরক্ষণ এবং ড্রেজিং প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মাঠ দপ্তর হতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে ১৬৯.২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪.৩৫৬ কি.মি. নদী তীর সংরক্ষণ কাজ পুনর্বাসন ও ০.৫৫০ কিমি. নদী তীর সংরক্ষণ কাজের প্রস্তাব সম্বলিত মাদারীপুর শহর এবং তৎসংলগ্ন এলাকা প্রতিরক্ষা ও পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। দুটি প্রকল্পই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনের অভাবে পাশ হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই মাদারীপুর জেলার তিনটি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত আড়িয়াল খা নদ, আপার কুমার নদ, লোয়ার কুমার, অবদার খাল, কীর্তিনাশা, টরকি ও পালরদী নদীর তীব্র আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক মাসের মধ্যেই এই সব নদীর তীর এলাকার শত শত বসতভিটা ও ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, মাদারীপুর ও বরিশাল অঞ্চলের নদী তীরবর্তী মানুষের জীবনমানের সুরক্ষা ও নদী তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিংয়ের জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। কিন্তু আমরা খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি, প্রকল্পটি বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গত ৪ বছর ধরে আটকে আছে। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখাতেও অফিসিয়াল কার্যক্রমগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। আমাদের দাবি, এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি ও নদী রক্ষার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান বলেন, মাদারীপুর জেলার মাদারীপুর সদর, রাজৈর এবং কালকিনি উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার/এমবিআর, লোয়ার কুমার, কীর্তিনাশা, টরকী নদী এবং সাধুর খালের তীর সংরক্ষণ এবং ড্রেজিং কাজের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২১ সালে নেয়া এই প্রকল্পটির আওতায় মাদারীপুরে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৮২ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্বতবায়ন করতে হলে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ করতে হবে। ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা খরচের প্রকল্পটির সমীক্ষা কাজের দরপত্র মূল্যায়ন চলমান রয়েছে। সমীক্ষা প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি হলেও এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে টেকসই হবে এই অঞ্চলের নদীর পানি ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম এবং এর সুফল পাবে সাধারণ মানুষ।
মাদারীপুর : নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি -সংবাদ
শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫
মাদারীপুরে ৪ বছর ধরে আটকে আছে আড়িয়াল খাঁ নদ অববাহিকার সম্ভাব্যতার সমীক্ষা প্রকল্পের কাজ। সমীক্ষা না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে কাজও বন্ধ। ফলে আড়িয়াল খাঁ নদের অববাহিকার নদ-নদীগুলোর ভাঙনে প্রতি বছর কমছে ফসলি জমিসহ বসতবাড়ি। এতে প্রতি বছর হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সমীক্ষা সম্পাদন করা হলে প্রকল্পটির কার্যক্রম হাতে নিতে পারত বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষদের নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বরিশাল অঞ্চলের নদী সমূহের অববাহিকা ভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করা হলে নদীভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল অঞ্চলের নদী সমূহের অববাহিকা ভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় মাদারীপুর জেলার সদর, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার, লোয়ার কুমার, কাটা কুমার, মাদারীপুর বিলরুট, কীর্তিনাশা, সাধুর খাল, অবদা খাল ও টরকী নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ড্রেজিং কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমীক্ষা সম্পাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ২০২৪ সালের ২৮ মে প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকল্পটি কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। ইতোপূর্বে মাদারীপুর জেলার সদর, কালকিনি ও রাজৈর উপজেলাধীন আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার, এমবিআর, লোয়ার কুমার কীর্তিনাশা নদী এবং সাধুর খালের ভাঙন রোধ ও নাব্যতা সংকট নিরসনে ১৪৮২.১৭ কোটি টাকা খরচে ৩৭.১১ কিমি. নদী তীর প্রতিরক্ষা ও ১২.০০ কিমি. নদী ড্রেজিং কাজ সম্বলিত মাদারীপুর জেলার মাদারীপুর সদর, রাজৈর এবং কালকিনি উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার, এমবিআর, লোয়ার কুমার, কীর্তিনাশা, টরকী নদী এবং সাধুর খালের তীর সংরক্ষণ এবং ড্রেজিং প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মাঠ দপ্তর হতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে ১৬৯.২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪.৩৫৬ কি.মি. নদী তীর সংরক্ষণ কাজ পুনর্বাসন ও ০.৫৫০ কিমি. নদী তীর সংরক্ষণ কাজের প্রস্তাব সম্বলিত মাদারীপুর শহর এবং তৎসংলগ্ন এলাকা প্রতিরক্ষা ও পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। দুটি প্রকল্পই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনের অভাবে পাশ হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই মাদারীপুর জেলার তিনটি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত আড়িয়াল খা নদ, আপার কুমার নদ, লোয়ার কুমার, অবদার খাল, কীর্তিনাশা, টরকি ও পালরদী নদীর তীব্র আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক মাসের মধ্যেই এই সব নদীর তীর এলাকার শত শত বসতভিটা ও ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, মাদারীপুর ও বরিশাল অঞ্চলের নদী তীরবর্তী মানুষের জীবনমানের সুরক্ষা ও নদী তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিংয়ের জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। কিন্তু আমরা খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি, প্রকল্পটি বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গত ৪ বছর ধরে আটকে আছে। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখাতেও অফিসিয়াল কার্যক্রমগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। আমাদের দাবি, এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি ও নদী রক্ষার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান বলেন, মাদারীপুর জেলার মাদারীপুর সদর, রাজৈর এবং কালকিনি উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার/এমবিআর, লোয়ার কুমার, কীর্তিনাশা, টরকী নদী এবং সাধুর খালের তীর সংরক্ষণ এবং ড্রেজিং কাজের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২১ সালে নেয়া এই প্রকল্পটির আওতায় মাদারীপুরে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৮২ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্বতবায়ন করতে হলে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ করতে হবে। ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা খরচের প্রকল্পটির সমীক্ষা কাজের দরপত্র মূল্যায়ন চলমান রয়েছে। সমীক্ষা প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি হলেও এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে টেকসই হবে এই অঞ্চলের নদীর পানি ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম এবং এর সুফল পাবে সাধারণ মানুষ।