রাজশাহীতে মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, গতকাল শনিবার থেকে চেকপোস্ট পরিচালনা করেছে পুলিশ। আরএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের নির্দেশনায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চেকপোস্টে পুলিশের সদস্যরা সন্দেহভাজন ব্যক্তি এবং যানবাহন তল্লাশি শুরু করছে।
এদিকে নিরাপত্তা তথা জনসুরক্ষা নিশ্চিতে সড়কে স্থাপন করা প্রায় সাড়ে চারশ সিসি ক্যামেরার অধিকাংশই ভঙ্গুর অবস্থায় ঝুঁলছে। কোনো কোনো স্থানে খুঁজেও পাওয়া যায়নি সিসি ক্যামেরা। কোথাওবা সিসি ক্যামেরার বাইরের বক্সটির একাংশ ঝুঁলে আছে ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে। কোনো কোনো স্থানের ল্যাম্পপোস্টে দেখা মেলে ক্যামেরা ও বক্সবিহীন শুধু লোহার অ্যাঙ্গেলের অস্তিত্ব।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহানগরের নিরাপত্তা ও পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৬৫টি ক্যামেরা বসিয়েছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশন। সেগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। সিসি ক্যামেরার অনুপস্থিতিতে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি অপরাধ সংঘটিত হবার পর অপরাধী শনাক্তে ভোগান্তি বাড়ছে পুলিশের।
প্রায় এক বছর ধরে রাজশাহী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর এমন অবস্থা বিরাজ করছে। বিভাগীয় শহর রাজশাহী আয়তনে বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ এবং জনসংখ্যায় ৯ম বৃহত্তম মহানগর। ৯৬.৭২ বর্গ কিলোমিটারের শহরটি দেশের সর্বত্রই শিক্ষানগরী হিসেবেই পরিচিত।
নগরীর অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও আজ অবদি সেগুলো মেরামত বা প্রতিস্থাপন করতে পারেনি আরএমপি (রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ) ও রাসিক (রাজশাহী সিটি করপোরেশন) কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে সচেতনব্যক্তি ও নগরবাসী বিষয়টিকে ভীতিকর পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল রাজশাহী নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে একটি দোকানের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে মোটরসাইকেলে করে আসা ছিনতাইকারীরা রিকশাযোগে যাওয়া রিলায়েন্স অটো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক দিলীপ কুমার প্রামাণিকের হাতে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। গত ১৬ জুলাই রাজশাহীর রেশমপট্টি এলাকায় সামনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পারভেজ হাসান ও তার স্ত্রী লক্ষ্মীপুর মোড় হয়ে অটোরিকশাযোগে রামচন্দ্রপুর নিজবাড়িতে ফেরার সময় মোটরসাইকেল যোগে আসা দুই ব্যক্তি তাদের গতিরোধ করে দেশিয় অস্ত্রের মুখে দুটি মোবাইল ফোন, নগদ ১৫,৮০০ টাকা ও পাঁচটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয়। গত ১৩ মে ছিনতাইয়ের সঙ্গে ঘটে শ্লীলতাহানির মতো নোংরামির ঘটনাও। নগরীর সিটিহাট এলাকা দিয়ে প্রাইভেট কারে যাচ্ছিলেন মতিহার থানার একজন পুলিশ সদস্য। গাড়িতে তার মামা, ভাগনে এবং মামাতো বোনও ছিলেন। সিটিহাট এলাকায় কয়েকজন যুবক সিগন্যাল দিয়ে গাড়িটি থামান। এরপর গাড়িতে থাকা মেয়েকে দেখে তাদের হেনস্তার চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য পরিচয় দেবার পরেও গাড়িতে থাকা মেয়েটিকে শ্লীলতাহানি করে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়।
এ সময় ৫০ হাজার টাকা চাঁদাও দাবি করা হয়। পরে মানিব্যাগে থাকা দুই হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় শাহমখদুম থানায় একটি মামলা করা হয়। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নগরের মাদ্রাসা মাঠসংলগ্ন রাস্তায় ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রনি হোসেনের গলায় চাকু ধরে ৪ হাজার ২০০ টাকা কেড়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারিরা- যাওয়ার সময় বলে যায়, ‘প্রাণভিক্ষা দিলাম, কাউকে বলবি না।’
২২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যার পর ঘোষপাড়া থেকে প্রাইভেট শেষ করে রিকশা নিয়ে মালোপাড়ার দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ বক্স এর সামনে পেছন থেকে মোটরসাইকেলযোগে ২ জন ছেলে চলন্ত অবস্থায় সারা জেরিন নামের এক শিক্ষার্থীর ব্যাগ ধরে টান মেরে ছিনতাই করে নিয়ে চলে যায় ছিনতাইকারীরা।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী সারা জেরিন তার নিজস্ব ফেসবুক পেইজে ছিনতাইয়ের ঘটনাটিকে ‘ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাই’ ট্রিট করে বর্ণনাপূর্বক একটি পোস্ট দেন। একই স্থানে সোহেল রানা নামের এক যুবকের ২টা মোবাইল ফোনসহ মানিব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল সারা জেরিনের ঘটনাই মাসখানেক আগে।
ছিনতাই-মারামারি-কিশোর গ্যাংয়ের দুপক্ষের শোডাউনসহ সমজাতীয় অপরাধ প্রবণতার আস্ফালন প্রায়শই ঘটছে নগরীতে। নগরের খুলিপাড়া এলাকায় ঘটেছে দেশি অস্ত্রের প্রদর্শনী ছাড়াও গোলাগুলির ঘটনাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরতরা বলেন, আগে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসি ক্যামেরা থাকায় অপরাধ দমন অনেকটা সহজ ছিল। তবে নগরীর বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুড়িয়ে ফেলা হয় রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরসহ সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কন্ট্রোলরুম। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা ও সড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন শো-রুম-দোকান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মূল রাস্তা সংলগ্ন বহুতল ভবনসহ ব্যক্তিগতভাবে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরাই এখন ভরসার প্রধান ও অন্যতম সহায়ক ব্যবস্থা। কোনো ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলের আশপাশে বসানো ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত করা হচ্ছে। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ কঠিন।
তবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তারা বিষয়টি নিয়ে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই অগ্রগামী হচ্ছেন। নয় রাস্তার সমাহার হিসেবে পরিচিত নগরীর প্রাণকেন্দ্র গোরহাঙ্গা রেলগেট চত্বর, ভদ্রা মোড়, রেলওয়ে স্টেশন ও ঢাকা বাস টার্মিনাল মোড়, তালাইমারি, দড়িখরবনা মোড়, বর্ণালী মোড়, ঘোষপাড়া (মেডিকেল কলেজ এলাকা), সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, মনিচত্বর, আলুপট্টি, কল্পনা হলের মোড়, বাটার মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সিএন্ডবি মোড় (রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স), কোর্ট চত্বর, কোর্ট স্টেশন চত্বর, সিটি হাট মোড়, ফায়ার সার্ভিস মোড়, আমচত্বর, পোস্টাল একাডেমির মোড়সহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাস্তায় পর্যবেক্ষক ও ‘নিরাপত্তার-রক্ষক’ হিসেবে কাজ করতো সিসি ক্যামেরাগুলো বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের জেলা কর্মকর্তা। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর সেগুলো এখন ভঙ্গুর অবস্থায় অকার্যকর বস্তু হিসেবে জানান দিচ্ছে নিজের উপস্থিতির বিষয়টি। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) নাজমুল হাসান পিপিএম বলেন, সিসিটিভি নতুনভাবে প্রতিস্থাপনের জন্য আমরা রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। শহরের কোন কোন পয়েন্টগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলে প্রশাসনের কাজে লাগবে সেসব পয়েন্টগুলোর তালিকা রাসিক কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যেই আমরা দিয়েছি। এ ছাড়া মেট্রোপলিটন পুলিশের নিজস্ব স্থাপনাগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানোসহ বাড়ানো হয়েছে পুলিশি টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি। সিটি করপোরেশনের প্রশাসকসহ দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পুলিশের বৈঠক হয়েছে। সেখানেই সিসিটিভি স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেছেন, আগস্ট মাসে মহানগরীতে কোন গোষ্ঠি যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে না পরে সে জন্য পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
রোববার, ০৩ আগস্ট ২০২৫
রাজশাহীতে মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, গতকাল শনিবার থেকে চেকপোস্ট পরিচালনা করেছে পুলিশ। আরএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের নির্দেশনায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চেকপোস্টে পুলিশের সদস্যরা সন্দেহভাজন ব্যক্তি এবং যানবাহন তল্লাশি শুরু করছে।
এদিকে নিরাপত্তা তথা জনসুরক্ষা নিশ্চিতে সড়কে স্থাপন করা প্রায় সাড়ে চারশ সিসি ক্যামেরার অধিকাংশই ভঙ্গুর অবস্থায় ঝুঁলছে। কোনো কোনো স্থানে খুঁজেও পাওয়া যায়নি সিসি ক্যামেরা। কোথাওবা সিসি ক্যামেরার বাইরের বক্সটির একাংশ ঝুঁলে আছে ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে। কোনো কোনো স্থানের ল্যাম্পপোস্টে দেখা মেলে ক্যামেরা ও বক্সবিহীন শুধু লোহার অ্যাঙ্গেলের অস্তিত্ব।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহানগরের নিরাপত্তা ও পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৬৫টি ক্যামেরা বসিয়েছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশন। সেগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। সিসি ক্যামেরার অনুপস্থিতিতে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি অপরাধ সংঘটিত হবার পর অপরাধী শনাক্তে ভোগান্তি বাড়ছে পুলিশের।
প্রায় এক বছর ধরে রাজশাহী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর এমন অবস্থা বিরাজ করছে। বিভাগীয় শহর রাজশাহী আয়তনে বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ এবং জনসংখ্যায় ৯ম বৃহত্তম মহানগর। ৯৬.৭২ বর্গ কিলোমিটারের শহরটি দেশের সর্বত্রই শিক্ষানগরী হিসেবেই পরিচিত।
নগরীর অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও আজ অবদি সেগুলো মেরামত বা প্রতিস্থাপন করতে পারেনি আরএমপি (রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ) ও রাসিক (রাজশাহী সিটি করপোরেশন) কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে সচেতনব্যক্তি ও নগরবাসী বিষয়টিকে ভীতিকর পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল রাজশাহী নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে একটি দোকানের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে মোটরসাইকেলে করে আসা ছিনতাইকারীরা রিকশাযোগে যাওয়া রিলায়েন্স অটো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক দিলীপ কুমার প্রামাণিকের হাতে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। গত ১৬ জুলাই রাজশাহীর রেশমপট্টি এলাকায় সামনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পারভেজ হাসান ও তার স্ত্রী লক্ষ্মীপুর মোড় হয়ে অটোরিকশাযোগে রামচন্দ্রপুর নিজবাড়িতে ফেরার সময় মোটরসাইকেল যোগে আসা দুই ব্যক্তি তাদের গতিরোধ করে দেশিয় অস্ত্রের মুখে দুটি মোবাইল ফোন, নগদ ১৫,৮০০ টাকা ও পাঁচটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয়। গত ১৩ মে ছিনতাইয়ের সঙ্গে ঘটে শ্লীলতাহানির মতো নোংরামির ঘটনাও। নগরীর সিটিহাট এলাকা দিয়ে প্রাইভেট কারে যাচ্ছিলেন মতিহার থানার একজন পুলিশ সদস্য। গাড়িতে তার মামা, ভাগনে এবং মামাতো বোনও ছিলেন। সিটিহাট এলাকায় কয়েকজন যুবক সিগন্যাল দিয়ে গাড়িটি থামান। এরপর গাড়িতে থাকা মেয়েকে দেখে তাদের হেনস্তার চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য পরিচয় দেবার পরেও গাড়িতে থাকা মেয়েটিকে শ্লীলতাহানি করে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়।
এ সময় ৫০ হাজার টাকা চাঁদাও দাবি করা হয়। পরে মানিব্যাগে থাকা দুই হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় শাহমখদুম থানায় একটি মামলা করা হয়। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নগরের মাদ্রাসা মাঠসংলগ্ন রাস্তায় ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রনি হোসেনের গলায় চাকু ধরে ৪ হাজার ২০০ টাকা কেড়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারিরা- যাওয়ার সময় বলে যায়, ‘প্রাণভিক্ষা দিলাম, কাউকে বলবি না।’
২২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যার পর ঘোষপাড়া থেকে প্রাইভেট শেষ করে রিকশা নিয়ে মালোপাড়ার দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ বক্স এর সামনে পেছন থেকে মোটরসাইকেলযোগে ২ জন ছেলে চলন্ত অবস্থায় সারা জেরিন নামের এক শিক্ষার্থীর ব্যাগ ধরে টান মেরে ছিনতাই করে নিয়ে চলে যায় ছিনতাইকারীরা।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী সারা জেরিন তার নিজস্ব ফেসবুক পেইজে ছিনতাইয়ের ঘটনাটিকে ‘ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাই’ ট্রিট করে বর্ণনাপূর্বক একটি পোস্ট দেন। একই স্থানে সোহেল রানা নামের এক যুবকের ২টা মোবাইল ফোনসহ মানিব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল সারা জেরিনের ঘটনাই মাসখানেক আগে।
ছিনতাই-মারামারি-কিশোর গ্যাংয়ের দুপক্ষের শোডাউনসহ সমজাতীয় অপরাধ প্রবণতার আস্ফালন প্রায়শই ঘটছে নগরীতে। নগরের খুলিপাড়া এলাকায় ঘটেছে দেশি অস্ত্রের প্রদর্শনী ছাড়াও গোলাগুলির ঘটনাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরতরা বলেন, আগে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসি ক্যামেরা থাকায় অপরাধ দমন অনেকটা সহজ ছিল। তবে নগরীর বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুড়িয়ে ফেলা হয় রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরসহ সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কন্ট্রোলরুম। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা ও সড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন শো-রুম-দোকান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মূল রাস্তা সংলগ্ন বহুতল ভবনসহ ব্যক্তিগতভাবে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরাই এখন ভরসার প্রধান ও অন্যতম সহায়ক ব্যবস্থা। কোনো ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলের আশপাশে বসানো ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত করা হচ্ছে। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ কঠিন।
তবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তারা বিষয়টি নিয়ে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই অগ্রগামী হচ্ছেন। নয় রাস্তার সমাহার হিসেবে পরিচিত নগরীর প্রাণকেন্দ্র গোরহাঙ্গা রেলগেট চত্বর, ভদ্রা মোড়, রেলওয়ে স্টেশন ও ঢাকা বাস টার্মিনাল মোড়, তালাইমারি, দড়িখরবনা মোড়, বর্ণালী মোড়, ঘোষপাড়া (মেডিকেল কলেজ এলাকা), সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, মনিচত্বর, আলুপট্টি, কল্পনা হলের মোড়, বাটার মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সিএন্ডবি মোড় (রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স), কোর্ট চত্বর, কোর্ট স্টেশন চত্বর, সিটি হাট মোড়, ফায়ার সার্ভিস মোড়, আমচত্বর, পোস্টাল একাডেমির মোড়সহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাস্তায় পর্যবেক্ষক ও ‘নিরাপত্তার-রক্ষক’ হিসেবে কাজ করতো সিসি ক্যামেরাগুলো বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের জেলা কর্মকর্তা। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর সেগুলো এখন ভঙ্গুর অবস্থায় অকার্যকর বস্তু হিসেবে জানান দিচ্ছে নিজের উপস্থিতির বিষয়টি। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) নাজমুল হাসান পিপিএম বলেন, সিসিটিভি নতুনভাবে প্রতিস্থাপনের জন্য আমরা রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। শহরের কোন কোন পয়েন্টগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলে প্রশাসনের কাজে লাগবে সেসব পয়েন্টগুলোর তালিকা রাসিক কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যেই আমরা দিয়েছি। এ ছাড়া মেট্রোপলিটন পুলিশের নিজস্ব স্থাপনাগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানোসহ বাড়ানো হয়েছে পুলিশি টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি। সিটি করপোরেশনের প্রশাসকসহ দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পুলিশের বৈঠক হয়েছে। সেখানেই সিসিটিভি স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেছেন, আগস্ট মাসে মহানগরীতে কোন গোষ্ঠি যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে না পরে সে জন্য পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে।