গাজীপুরের কাপাসিয়া সদরের বানার নদীর ওপর নির্মিত ফকির মজনু শাহ সেতু ১৯ বছর পরও টোলমুক্ত হয়নি। এ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা হলেও ইতোমধ্যে এর টোলের ইজারা বাবদ সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে ৬৬ কোটি টাকা। এ সেতুর নির্মাতা সংস্থা গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সর্বশেষ ২০২৪ সালে তরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়ুবুর রহমান সিকদারের মালিকানাধীন প্রাপ্তি কনস্ট্রাকশনের নামে ভ্যাট ট্যাক্সসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকায় তিন বছরের জন্য এ সেতুটি ইজারা দেয়। এসে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এ সড়ক ব্যবহারকারী যানবাহন মালিকসহ নানা পর্যায়ের ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ রয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ সেতুটির টোল মওকুফ করতে চাইলেও গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি চক্র নিজেদের পকেটভারী করতে এই সেতুর টোল চলমান রাখার জন্য দেন দরবার করে নিজেরা ইজারা নিতেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ছাত্র জনতার তোপের মুখে কয়েকদিন টোল আদায় বন্ধ থাকলেও পরবর্তী সময়ে সরকার অনুমোদিত টোল আদায় সাইনবোর্ড টানিয়ে নিয়মিত টোল আদায় করা হচ্ছে।
গাজীপুর সড়ক বিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, বিএনপি সরকারের তৎকালীন পাটমন্ত্রী প্রয়াত আ স ম হান্নান শাহর প্রচেষ্টায় ১৯৯৩ সালে কাপাসিয়া বাজারের উত্তরপাশে বানার নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ৩৯০ দশমিক ৯১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করতে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা। কাজ শুরুর প্রায় ১২ বছর পর ২০০৫ সালের ৩ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেতুটি নির্মাণের ফলে এ নদীর দুই পাড়ের বিভিন্ন এলাকার মানুষের চলাচল ও মালামাল পরিবহন সহজ হয়ে উঠেছে। এতে করে ঢাকা থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীর, মনোহরদী, ময়মনসিংহের গফরগাঁও এবং বৃহত্তর সিলেটের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সেতুটি প্রতিবার পার হতে ট্রেইলার কন্টেনার/ভারী যন্ত্রপাতি/ভারীমালামালের টোল দিতে হয় ২৫০ টাক, হেভি ট্রাক ১৭০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ১০০ টাকা, বড় বাস ৯০ টাকা, মিনি ট্রাক ৭৫ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যানবাহন ৬০ টাকা, মিনিবাস ও কোস্টার ৫০, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ৪০ টাকা, জিপকার ও সিডন কার ২৫ টাকা, প্রাইভেটকার ২০ টাকা, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, টেম্পু ১০ টাকা ও মোটরসাইকেল ৫ টাকা।
অনন্যা ক্লাসিক পরিবহনের এম ডি বাবুল খান জানান, বর্তমানে ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ঢাকা-কাপাসিয়া-মনোহরদী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সাতটি পরিবহন কোম্পানীর প্রায় সাড়ে তিনশত যাত্রীবাহী বাস দিন রাত চলাচল করে। তাদেও প্রতিটা পরিবহন কোম্পানির বাস চলাচল করতে এ সেতুতে প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা টোল দিতে হয়। এ সেতু টোলমুক্ত ঘোষণা করতে সংশ্লিষ্ট সব মহলে নানা সময় যোগাযোগ করেও কোন সুফল পান নি তারা।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মো. আল আমীন জানান, ৩০ টাক ভাড়ায় কাপাসিয়া বাজার থেকে এ সেতু পার হয়ে একজন যাত্রী নিয়ে তরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন তিনি। সেতুর আসা ও যাওয়া বাবদ তাকে ২০ টাকা টোল দিতে হয়েছে। তার এত শত শত রিকশাওয়ালার সারাদিন উপার্জনের বেশ একটা মোটা অংশ এ সেতুতে টোল বাবদ দিয়ে দিতে হয়।
মো. জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, এ সেতুর টোলের কারণে দুই পাড়ের লোকজনকে নানা মালামাল পরিবহন করতে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। ফলে দুই পাড়ের বাসিন্দারাই এই টোলের কবল থেকে মুক্তি চান।
আন্তজেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন কাপাসিয়া শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিক্সা, ট্রাক, টলি, লরি, নসিমন, মোটর সাইকেলসহ হাজার হাজার যানবাহন এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কাপাসিয়ার প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের পকেট ভারী করতেই এখনও এই সেতুকে টোলমুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে না।
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মু. তারিক হোসেন জানান, টোল আদায়ে সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে। টোল আদায় কিংবা বন্ধ করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। চালু বা বন্ধ করার একমাত্র ক্ষমতা সরকারের।
মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট ২০২৫
গাজীপুরের কাপাসিয়া সদরের বানার নদীর ওপর নির্মিত ফকির মজনু শাহ সেতু ১৯ বছর পরও টোলমুক্ত হয়নি। এ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা হলেও ইতোমধ্যে এর টোলের ইজারা বাবদ সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে ৬৬ কোটি টাকা। এ সেতুর নির্মাতা সংস্থা গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সর্বশেষ ২০২৪ সালে তরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়ুবুর রহমান সিকদারের মালিকানাধীন প্রাপ্তি কনস্ট্রাকশনের নামে ভ্যাট ট্যাক্সসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকায় তিন বছরের জন্য এ সেতুটি ইজারা দেয়। এসে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এ সড়ক ব্যবহারকারী যানবাহন মালিকসহ নানা পর্যায়ের ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ রয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ সেতুটির টোল মওকুফ করতে চাইলেও গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি চক্র নিজেদের পকেটভারী করতে এই সেতুর টোল চলমান রাখার জন্য দেন দরবার করে নিজেরা ইজারা নিতেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ছাত্র জনতার তোপের মুখে কয়েকদিন টোল আদায় বন্ধ থাকলেও পরবর্তী সময়ে সরকার অনুমোদিত টোল আদায় সাইনবোর্ড টানিয়ে নিয়মিত টোল আদায় করা হচ্ছে।
গাজীপুর সড়ক বিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, বিএনপি সরকারের তৎকালীন পাটমন্ত্রী প্রয়াত আ স ম হান্নান শাহর প্রচেষ্টায় ১৯৯৩ সালে কাপাসিয়া বাজারের উত্তরপাশে বানার নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ৩৯০ দশমিক ৯১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করতে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা। কাজ শুরুর প্রায় ১২ বছর পর ২০০৫ সালের ৩ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেতুটি নির্মাণের ফলে এ নদীর দুই পাড়ের বিভিন্ন এলাকার মানুষের চলাচল ও মালামাল পরিবহন সহজ হয়ে উঠেছে। এতে করে ঢাকা থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীর, মনোহরদী, ময়মনসিংহের গফরগাঁও এবং বৃহত্তর সিলেটের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সেতুটি প্রতিবার পার হতে ট্রেইলার কন্টেনার/ভারী যন্ত্রপাতি/ভারীমালামালের টোল দিতে হয় ২৫০ টাক, হেভি ট্রাক ১৭০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ১০০ টাকা, বড় বাস ৯০ টাকা, মিনি ট্রাক ৭৫ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যানবাহন ৬০ টাকা, মিনিবাস ও কোস্টার ৫০, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ৪০ টাকা, জিপকার ও সিডন কার ২৫ টাকা, প্রাইভেটকার ২০ টাকা, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, টেম্পু ১০ টাকা ও মোটরসাইকেল ৫ টাকা।
অনন্যা ক্লাসিক পরিবহনের এম ডি বাবুল খান জানান, বর্তমানে ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ঢাকা-কাপাসিয়া-মনোহরদী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সাতটি পরিবহন কোম্পানীর প্রায় সাড়ে তিনশত যাত্রীবাহী বাস দিন রাত চলাচল করে। তাদেও প্রতিটা পরিবহন কোম্পানির বাস চলাচল করতে এ সেতুতে প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা টোল দিতে হয়। এ সেতু টোলমুক্ত ঘোষণা করতে সংশ্লিষ্ট সব মহলে নানা সময় যোগাযোগ করেও কোন সুফল পান নি তারা।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মো. আল আমীন জানান, ৩০ টাক ভাড়ায় কাপাসিয়া বাজার থেকে এ সেতু পার হয়ে একজন যাত্রী নিয়ে তরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন তিনি। সেতুর আসা ও যাওয়া বাবদ তাকে ২০ টাকা টোল দিতে হয়েছে। তার এত শত শত রিকশাওয়ালার সারাদিন উপার্জনের বেশ একটা মোটা অংশ এ সেতুতে টোল বাবদ দিয়ে দিতে হয়।
মো. জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, এ সেতুর টোলের কারণে দুই পাড়ের লোকজনকে নানা মালামাল পরিবহন করতে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। ফলে দুই পাড়ের বাসিন্দারাই এই টোলের কবল থেকে মুক্তি চান।
আন্তজেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন কাপাসিয়া শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিক্সা, ট্রাক, টলি, লরি, নসিমন, মোটর সাইকেলসহ হাজার হাজার যানবাহন এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কাপাসিয়ার প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের পকেট ভারী করতেই এখনও এই সেতুকে টোলমুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে না।
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মু. তারিক হোসেন জানান, টোল আদায়ে সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে। টোল আদায় কিংবা বন্ধ করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। চালু বা বন্ধ করার একমাত্র ক্ষমতা সরকারের।