মোরেলগঞ্জে ইউপি সেবা নিতে হয়রানি
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পরিষদে সেবা নিতে হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ নাগরিকরা। প্রশাসক পরিষদে বসেন অনিয়মিত। নতুন জন্মনিবন্ধনের টিকা কার্ডসহ আবেদন করেও ৫০ শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। উপবৃত্তি থেকে হয়েছে বঞ্চিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গত ৫ আগস্টের পর চেয়ারম্যান মাস্টার মো. সাইদুর রহমান আত্মগোপনে থাকায় পরিষদের সব কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায়। উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মো. মনিরুল ইসলামকে অতিরিক্ত দায়িত্বে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিলেও তিনি অনিয়মিত সপ্তাহে মাত্র একদিন অফিস করছেন। যে কারণে প্রত্যান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের স্থানীয় নাগরিকরা ওয়ারিশ কায়েম, জন্মসদন, প্রত্যায়ন, মৃত্যুসনদ, পরিচয়পত্র, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সেবা নিতে এসে মাসের পর মাস হয়রানির শিকার হতে হচ্ছেন।
এ ছাড়া পরিষদের উদ্যোক্তা ও ইউপি সচিবের অন্তর্দ্বন্দ্বে অনলাইনে শতাধিক নতুন জন্মনিবন্ধনের আবেদন ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে থাকায় আবেদনকারীরা ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে প্রতিনিয়ত ফিরে যেতে হচ্ছে পরিষদ থেকে।
সেবা নিতে আসা ছোটপরী গ্রামের শহিদুল ইসলাম, মধ্য বরিশাল গ্রামের দুলাল কাজি, বানিয়াখালী গ্রামের রুবেল, চালিতাবুনিয়া গ্রামের বেয়ায়েত শেখসহ একাধিকরা বলেন, ২০ দিন পূর্বে জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যু সনদের আবেদন করে হাতে কপি পেলেও প্রশাসকের স্বাক্ষর করাতে পারেনি। আবার অনেকে মাসের পর মাস আবেদন করে ফিরে যাচ্ছেন। এ ভোগান্তির শেষ কোথায়। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
এর মধ্যে বড়পরী গ্রামের রাফিয়া আক্তার, মানিকজোর গ্রামের মাইনুল হাওলাদার, তাসিন হাওলাদার, চালিতাবুনিয়া গ্রামের আবিদ ফরাজী, ফারিয়া আক্তার, আবু তোহাসহ অর্ধশতাধিক শিশুর পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন না হওয়ায় ওই শিশুরাও তাদের জন্মনিবন্ধন করতে পারেনি। যে কারণে স্কুলে ভর্তিসহ উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে এক বছর পিছিয়ে পড়েছেন শিশু শিক্ষার্থীরা। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রশাসক অনিয়মিত অফিস করায় পরিষদটি এখন হ-য-ব-র-ল অবস্থা নিয়মিত সরকারি রাজস্ব ট্যাক্সের টাকা আদায় করা হলেও সঠিকভাবে ব্যাংকে জমা প্রদান করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক নিজেও জানে না এ অর্থ বছরে নাগরিকদের কাছ থেকে হোল্ডিং ও ট্রেড লাইসেন্সের কত টাকা আদায় হয়েছে। পরিষদের উদ্যোক্তা রেশমা আক্তারের দপ্তরের সরকারি অর্থব্যায়ে ক্রয়কৃত কম্পিউটার, ল্যাবটপ, রাউডার, অনুসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ অফিস কক্ষ থেকে উধাও। ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের পারসোনাল লোক সেজে কথিত উদ্যোক্তা হয়ে অনলাইনের কাজ করছে দুই যুবক। গোটা পরিষদে কার্যক্রমে চলছে হরিলুট। যে যার প্রভাব খাটিয়ে চলছে।
পরিষদের উদ্যোক্তা রেশমা আক্তার বলেন, অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের শতাধিক নতুন আবেদন ৩/৪ মাস ধরে জমা রয়েছে। এর মধ্যে টিকাকার্ডধারী শিশুদের জন্মনিবন্ধন আবেদন রয়েছে প্রায় ৫০টি। পিতা-মাতার জন্ম সনদ না পাওয়ায় তাদের জন্মনিবন্ধনও হচ্ছে না।
তিনি তার কাজ শেষ করেছেন। এখন বাকি কাজ সচিব ও প্রশাসকের। তার অফিসের কম্পিউটার, ল্যাবটপ, অনুসহ নানা যন্ত্রাংশ উঠাও বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসককে অবহিত করেছেন।
এ বিষয়ে খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি গত ৪ মাস পূর্বে ওই পরিষদে প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় মূল অফিসের কাজ শেষ করে অনেক সময় পরিষদে যেতে পারছেন না। তবে, শিশুদের জন্মনিবন্ধনের আবেদনের বিষয়টি তিনি অবহিত নন। তার আইডিতে কোন আবেদনই পেন্ডিং নেই। হোল্ডিং, ট্রেড লাইসেন্সের আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা প্রদান হয়েছে কিনা অদ্যবধি পর্যন্ত সচিব তাকে অবহিত করেননি। এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্ড অথারাইজ এখনও তার নামে যুক্ত করেননি। এ বিষয়টি সচিবই ভালো জানে।
এ সর্ম্পকে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল্লাহ বলেন, খাউলিয়া ইউনিয়নে নতুন জন্মনিবন্ধনের আবেদনসহ নাগরিকসেবা নিতে এসে কোনো মানুষই হয়রানি না হয় সে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে। অনিয়মের বিষয়গুলো সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোরেলগঞ্জে ইউপি সেবা নিতে হয়রানি
বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পরিষদে সেবা নিতে হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ নাগরিকরা। প্রশাসক পরিষদে বসেন অনিয়মিত। নতুন জন্মনিবন্ধনের টিকা কার্ডসহ আবেদন করেও ৫০ শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। উপবৃত্তি থেকে হয়েছে বঞ্চিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গত ৫ আগস্টের পর চেয়ারম্যান মাস্টার মো. সাইদুর রহমান আত্মগোপনে থাকায় পরিষদের সব কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায়। উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মো. মনিরুল ইসলামকে অতিরিক্ত দায়িত্বে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিলেও তিনি অনিয়মিত সপ্তাহে মাত্র একদিন অফিস করছেন। যে কারণে প্রত্যান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের স্থানীয় নাগরিকরা ওয়ারিশ কায়েম, জন্মসদন, প্রত্যায়ন, মৃত্যুসনদ, পরিচয়পত্র, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সেবা নিতে এসে মাসের পর মাস হয়রানির শিকার হতে হচ্ছেন।
এ ছাড়া পরিষদের উদ্যোক্তা ও ইউপি সচিবের অন্তর্দ্বন্দ্বে অনলাইনে শতাধিক নতুন জন্মনিবন্ধনের আবেদন ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে থাকায় আবেদনকারীরা ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে প্রতিনিয়ত ফিরে যেতে হচ্ছে পরিষদ থেকে।
সেবা নিতে আসা ছোটপরী গ্রামের শহিদুল ইসলাম, মধ্য বরিশাল গ্রামের দুলাল কাজি, বানিয়াখালী গ্রামের রুবেল, চালিতাবুনিয়া গ্রামের বেয়ায়েত শেখসহ একাধিকরা বলেন, ২০ দিন পূর্বে জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যু সনদের আবেদন করে হাতে কপি পেলেও প্রশাসকের স্বাক্ষর করাতে পারেনি। আবার অনেকে মাসের পর মাস আবেদন করে ফিরে যাচ্ছেন। এ ভোগান্তির শেষ কোথায়। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
এর মধ্যে বড়পরী গ্রামের রাফিয়া আক্তার, মানিকজোর গ্রামের মাইনুল হাওলাদার, তাসিন হাওলাদার, চালিতাবুনিয়া গ্রামের আবিদ ফরাজী, ফারিয়া আক্তার, আবু তোহাসহ অর্ধশতাধিক শিশুর পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন না হওয়ায় ওই শিশুরাও তাদের জন্মনিবন্ধন করতে পারেনি। যে কারণে স্কুলে ভর্তিসহ উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে এক বছর পিছিয়ে পড়েছেন শিশু শিক্ষার্থীরা। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রশাসক অনিয়মিত অফিস করায় পরিষদটি এখন হ-য-ব-র-ল অবস্থা নিয়মিত সরকারি রাজস্ব ট্যাক্সের টাকা আদায় করা হলেও সঠিকভাবে ব্যাংকে জমা প্রদান করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক নিজেও জানে না এ অর্থ বছরে নাগরিকদের কাছ থেকে হোল্ডিং ও ট্রেড লাইসেন্সের কত টাকা আদায় হয়েছে। পরিষদের উদ্যোক্তা রেশমা আক্তারের দপ্তরের সরকারি অর্থব্যায়ে ক্রয়কৃত কম্পিউটার, ল্যাবটপ, রাউডার, অনুসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ অফিস কক্ষ থেকে উধাও। ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের পারসোনাল লোক সেজে কথিত উদ্যোক্তা হয়ে অনলাইনের কাজ করছে দুই যুবক। গোটা পরিষদে কার্যক্রমে চলছে হরিলুট। যে যার প্রভাব খাটিয়ে চলছে।
পরিষদের উদ্যোক্তা রেশমা আক্তার বলেন, অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের শতাধিক নতুন আবেদন ৩/৪ মাস ধরে জমা রয়েছে। এর মধ্যে টিকাকার্ডধারী শিশুদের জন্মনিবন্ধন আবেদন রয়েছে প্রায় ৫০টি। পিতা-মাতার জন্ম সনদ না পাওয়ায় তাদের জন্মনিবন্ধনও হচ্ছে না।
তিনি তার কাজ শেষ করেছেন। এখন বাকি কাজ সচিব ও প্রশাসকের। তার অফিসের কম্পিউটার, ল্যাবটপ, অনুসহ নানা যন্ত্রাংশ উঠাও বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসককে অবহিত করেছেন।
এ বিষয়ে খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি গত ৪ মাস পূর্বে ওই পরিষদে প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় মূল অফিসের কাজ শেষ করে অনেক সময় পরিষদে যেতে পারছেন না। তবে, শিশুদের জন্মনিবন্ধনের আবেদনের বিষয়টি তিনি অবহিত নন। তার আইডিতে কোন আবেদনই পেন্ডিং নেই। হোল্ডিং, ট্রেড লাইসেন্সের আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা প্রদান হয়েছে কিনা অদ্যবধি পর্যন্ত সচিব তাকে অবহিত করেননি। এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্ড অথারাইজ এখনও তার নামে যুক্ত করেননি। এ বিষয়টি সচিবই ভালো জানে।
এ সর্ম্পকে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল্লাহ বলেন, খাউলিয়া ইউনিয়নে নতুন জন্মনিবন্ধনের আবেদনসহ নাগরিকসেবা নিতে এসে কোনো মানুষই হয়রানি না হয় সে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে। অনিয়মের বিষয়গুলো সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।