দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) : বলগেট দিয়ে চলছে বালু উত্তোলনের রমরমা ব্যবসা -সংবাদ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সন্ত্রাসী প্রহরায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে এমন অবাধে বালু উত্তলন চলছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজা নামক এলাকায় প্রকাশ্যে ড্রেজার ও বলগেট দিয়ে চলছে এ বালু উত্তোলনের রমরমা ব্যবসা। কুষ্টিয়াসহ পার্শতর্বী জেলার একাধিক প্রভাবশালী চক্রের পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর পাহারায় চলছে এ অবৈধ বালু উত্তলন। এদিকে প্রশাসন বলছে অভিযান চালিয়েও মিলছে না কিছুই।
নদী তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় অবাধে এই কার্যক্রম চললেও প্রতিবাদ করলেই বন্দুকের গুলির মুখে পড়তে হয় তাদের। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভঙনে ফসলি জমি ও বসত ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজারো পরিবার। বর্তমানে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফিলিপনগর-মরিচা বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী বাঁধ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মেসার্স সরকার ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহীর লক্ষীনগর মৌজায় ২৪ একর বৈধ ইজারাভূক্ত এলাকা পেলেও তারা দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মধ্যে এসে বালু উত্তোলন করছে। প্রতিবাদ করে কোন কাজ না হওয়ায় দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও মিলছে না সুফল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১জুলাই দৌলতপুর সীমানার শেষ প্রান্তে ভেড়ামারা উপজেলার ফয়জুল্লাপুর ঘাটে একদল সন্ত্রাসী স্পিডবোর্ডে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে স্থানীয় আমিরুল গাইন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় একইদিন ভেড়ামারা থানায় মামলা (মামলা নম্বর-৬) দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত গুলি চালানো কোনো সন্ত্রাসী বা আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মরিচা ইউনিয়নের কোলদিয়াড় গ্রামের বাসিন্দা আতর আলী ফরাজী বলেন, পদ্মা ভাড়নের কারণে নদী এখন আমাদের বাড়ীর সন্নিকটে, প্রতিদিনি নদী দিয়ে বালিবাহী ৫০ থেকে ৬০টি বলগেট যাতায়াত করে। এতে পদ্মার পাড় ভাঙন অব্যহত রয়েছে। এবিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসককে অবগত করা হলে সাময়িক ভাবে বলগেট যাতায়াত বন্ধ হয়। পরে তা পূর্বের নেয় অভ্যাহত রয়েছে। এতে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ইউনিয়নটির একাধিক গ্রাম। এসময় তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত পদ্মা নদীর অবৈধভাবে দৌলতপুর পদ্মা নদীর অংশে বালি উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীমহল।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর দাবি বালু উত্তোলন বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হলে পদ্মা নদীতে বিচরণ করা সন্ত্রাসীদের অবৈধ কার্যক্রম অনেকাংশে কমে আসবে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে দৌলতপুরের ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের দাবি মরিচার চৌদ্দহাজার মৌজায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করার পাশাপাশি সন্ত্রাসী বাহিনীর অভয়াশ্রম নিশ্চিহ্ন করা হলে স্বস্থি ফিরবে তাদের মাঝে।
দৌলতপুর সীমানায় বালু উত্তোলনের বিষয়ে মেসার্স সরকার ট্রেডার্স-এর মালিক এস.এম. একলাস আহমেদ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, আমি রাজশাহীর বাঘায় বৈধভাবে ইজারা নিয়েছি। যদি কেউ ইজারার বাইরে গিয়ে অন্য জেলায় বালু উত্তোলন করে, সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।
সন্ত্রাসী প্রহরায় বালু উত্তোলনের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে দৌলতপুর ইউএনওকে সাথে নিয়ে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হবে।
দৌলতপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয় নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, অবৈধভাবে উত্তলনের বিষয় জানি, বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা অভিযান করে ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি। বাঘা উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে শীঘ্রই অবৈধ বালু উত্তলন বন্ধে আইনয়ানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাইকোর্ট ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বে স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে অবাধে ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তাদের দাবি প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিলে বন্ধ হবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। স্বস্তি ফিরবে চরবাসীর।
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) : বলগেট দিয়ে চলছে বালু উত্তোলনের রমরমা ব্যবসা -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সন্ত্রাসী প্রহরায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে এমন অবাধে বালু উত্তলন চলছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজা নামক এলাকায় প্রকাশ্যে ড্রেজার ও বলগেট দিয়ে চলছে এ বালু উত্তোলনের রমরমা ব্যবসা। কুষ্টিয়াসহ পার্শতর্বী জেলার একাধিক প্রভাবশালী চক্রের পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর পাহারায় চলছে এ অবৈধ বালু উত্তলন। এদিকে প্রশাসন বলছে অভিযান চালিয়েও মিলছে না কিছুই।
নদী তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় অবাধে এই কার্যক্রম চললেও প্রতিবাদ করলেই বন্দুকের গুলির মুখে পড়তে হয় তাদের। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভঙনে ফসলি জমি ও বসত ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজারো পরিবার। বর্তমানে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফিলিপনগর-মরিচা বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী বাঁধ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মেসার্স সরকার ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহীর লক্ষীনগর মৌজায় ২৪ একর বৈধ ইজারাভূক্ত এলাকা পেলেও তারা দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মধ্যে এসে বালু উত্তোলন করছে। প্রতিবাদ করে কোন কাজ না হওয়ায় দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও মিলছে না সুফল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১জুলাই দৌলতপুর সীমানার শেষ প্রান্তে ভেড়ামারা উপজেলার ফয়জুল্লাপুর ঘাটে একদল সন্ত্রাসী স্পিডবোর্ডে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে স্থানীয় আমিরুল গাইন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় একইদিন ভেড়ামারা থানায় মামলা (মামলা নম্বর-৬) দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত গুলি চালানো কোনো সন্ত্রাসী বা আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মরিচা ইউনিয়নের কোলদিয়াড় গ্রামের বাসিন্দা আতর আলী ফরাজী বলেন, পদ্মা ভাড়নের কারণে নদী এখন আমাদের বাড়ীর সন্নিকটে, প্রতিদিনি নদী দিয়ে বালিবাহী ৫০ থেকে ৬০টি বলগেট যাতায়াত করে। এতে পদ্মার পাড় ভাঙন অব্যহত রয়েছে। এবিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসককে অবগত করা হলে সাময়িক ভাবে বলগেট যাতায়াত বন্ধ হয়। পরে তা পূর্বের নেয় অভ্যাহত রয়েছে। এতে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ইউনিয়নটির একাধিক গ্রাম। এসময় তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত পদ্মা নদীর অবৈধভাবে দৌলতপুর পদ্মা নদীর অংশে বালি উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীমহল।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর দাবি বালু উত্তোলন বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হলে পদ্মা নদীতে বিচরণ করা সন্ত্রাসীদের অবৈধ কার্যক্রম অনেকাংশে কমে আসবে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে দৌলতপুরের ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের দাবি মরিচার চৌদ্দহাজার মৌজায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করার পাশাপাশি সন্ত্রাসী বাহিনীর অভয়াশ্রম নিশ্চিহ্ন করা হলে স্বস্থি ফিরবে তাদের মাঝে।
দৌলতপুর সীমানায় বালু উত্তোলনের বিষয়ে মেসার্স সরকার ট্রেডার্স-এর মালিক এস.এম. একলাস আহমেদ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, আমি রাজশাহীর বাঘায় বৈধভাবে ইজারা নিয়েছি। যদি কেউ ইজারার বাইরে গিয়ে অন্য জেলায় বালু উত্তোলন করে, সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।
সন্ত্রাসী প্রহরায় বালু উত্তোলনের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে দৌলতপুর ইউএনওকে সাথে নিয়ে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হবে।
দৌলতপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয় নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, অবৈধভাবে উত্তলনের বিষয় জানি, বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা অভিযান করে ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি। বাঘা উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে শীঘ্রই অবৈধ বালু উত্তলন বন্ধে আইনয়ানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাইকোর্ট ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বে স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে অবাধে ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তাদের দাবি প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিলে বন্ধ হবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। স্বস্তি ফিরবে চরবাসীর।