ভোলার মেঘনা নদীতে ইলিশের ভরা মৌসুম। বিগত সময়ে এ মৌসুমে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে। তবে এবার ভিন্ন চিত্র। চলতি মৌসুমে কাংক্ষিত ইলিশ মিলছে না জেলেদের জালে। এদিকে নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় মেঘনা নদীতীরে খতমে ইউনুস পড়ে মোনাজাত করেছেন ভোলার জেলেরা। গত রবিবার জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের মহাজনকান্দি চেয়ারম্যানঘাটে এ ব্যতিক্রম আয়োজন করেন স্থানীয় জেলেরা।
এর আগে সকাল থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদের ইমামসহ ৬০ জন আলেমকে নিয়ে দোয়া ইউনুসের খতম পড়ানো হয়। পরে বিকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মেঘনা নদীর তীরে ইলিশের জন্য দোয়া করেন জেলেরা। এ সময় মোনাজাত পরিচালনা করেন বোরহানউদ্দিনের বাটামারা পীর সাহেব মাওলানা মো. মুহিববুল্লাহ। এসময় পাঁচ শতাধিক জেলে এতে অংশ নেন।
দোয়া মোনাজাতের আয়োজক ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, সাধারণত এখানকার জেলেরা বৈশাখের ১৫ তারিখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে এবার ভরা মৌসুম চললেও গত তিন মাস ধরে মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা নেই।
জেলেরা জাল-ট্রলার নিয়ে নদীতে গিয়ে অনেকটা খালি হাতে ফিরে আসেন। মাঝেমধ্যে দুই-চারটি ইলিশ পেলেও তা বিক্রি করে ট্রলারের তেলের খরচ ওঠে না। ফলে জেলেরা ধার-দেনা করে অনেকটা অসহায় জীবন পার করছেন। তাই তারা শেষ ভরসা হিসেবে আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য খতমে ইউনুস ও দোয়ার আয়োজন করেন।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মাছঘাটের জেলে মো. লাবলু জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তাদের নৌকায় ১০ জন জেলে। একবার নদীতে গেলে তাদের ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। গত তিন দিন আগে নদীতে গিয়ে তিনটি ইলিশ পেয়েছেন। বিক্রি করেছেন ছয় হাজার টাকায়। এতে খরচের টাকা দিয়ে একেকজন জেলে ভাগে পেয়েছেন ১০০ টাকা করে। তাই এখন নদীতে যাওয়া বন্ধ করে ঘাটে জাল মেরামতের কাজ করছেন। তার সংসারে সদস্য সংখ্যা চারজন। এছাড়া সপ্তাহে এক হাজার টাকা এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় জেলে পেশা বাদ দিয়ে গ্রাম ছাড়তে হবে।
একই এলাকার জেলে মো. নীরব জানান, তিনি ২০ বছর ধরে নদীতে মাছ শিকার করেন। তাদের নৌকায় সাতজন জেলে। গত রবিবার নদীতে গিয়ে ট্রলারের তেলসহ তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মাছ পেয়েছেন একটি বড় ইলিশ ও এক হালি জাটকা। ঘাটে এনে বিক্রি করেছেন দুই হাজার ৩০০ টাকায়। এতে নিজেরা তো কিছুই পাননি বরং উল্টো তাদের লোকসান হয়েছে ৭০০ টাকা।
জেলে ফরিদ উদ্দিন মাঝি জানান, তাদের চেয়ারম্যান ঘাটে শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। গত দুই বছরে নদীতে মাছ কম থাকায় তাদের ঘাটের ৫০ জনের বেশি জেলে ঋণের চাপে জাল-ট্রলার ফেলে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। বর্তমানে নদীতে ইলিশের যে খরা চলছে তাতে বাকি জেলেরাও এক সময় এলাকা ছাড়তে বাধ্য হবেন।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইলিশের মৌসুমেরও পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া নদীতে ডুবোচরের কারণে নদীর পানি ঘোলা থাকে। এ কারণে নদীতে ইলিশ আসছে না। সামনের পূর্ণিমায় নদীর পানি ঘোলা কিছুটা কমলে নদীতে ইলিশ ধরা পরবে।
বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫
ভোলার মেঘনা নদীতে ইলিশের ভরা মৌসুম। বিগত সময়ে এ মৌসুমে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে। তবে এবার ভিন্ন চিত্র। চলতি মৌসুমে কাংক্ষিত ইলিশ মিলছে না জেলেদের জালে। এদিকে নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় মেঘনা নদীতীরে খতমে ইউনুস পড়ে মোনাজাত করেছেন ভোলার জেলেরা। গত রবিবার জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের মহাজনকান্দি চেয়ারম্যানঘাটে এ ব্যতিক্রম আয়োজন করেন স্থানীয় জেলেরা।
এর আগে সকাল থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদের ইমামসহ ৬০ জন আলেমকে নিয়ে দোয়া ইউনুসের খতম পড়ানো হয়। পরে বিকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মেঘনা নদীর তীরে ইলিশের জন্য দোয়া করেন জেলেরা। এ সময় মোনাজাত পরিচালনা করেন বোরহানউদ্দিনের বাটামারা পীর সাহেব মাওলানা মো. মুহিববুল্লাহ। এসময় পাঁচ শতাধিক জেলে এতে অংশ নেন।
দোয়া মোনাজাতের আয়োজক ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, সাধারণত এখানকার জেলেরা বৈশাখের ১৫ তারিখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে এবার ভরা মৌসুম চললেও গত তিন মাস ধরে মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা নেই।
জেলেরা জাল-ট্রলার নিয়ে নদীতে গিয়ে অনেকটা খালি হাতে ফিরে আসেন। মাঝেমধ্যে দুই-চারটি ইলিশ পেলেও তা বিক্রি করে ট্রলারের তেলের খরচ ওঠে না। ফলে জেলেরা ধার-দেনা করে অনেকটা অসহায় জীবন পার করছেন। তাই তারা শেষ ভরসা হিসেবে আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য খতমে ইউনুস ও দোয়ার আয়োজন করেন।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মাছঘাটের জেলে মো. লাবলু জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তাদের নৌকায় ১০ জন জেলে। একবার নদীতে গেলে তাদের ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। গত তিন দিন আগে নদীতে গিয়ে তিনটি ইলিশ পেয়েছেন। বিক্রি করেছেন ছয় হাজার টাকায়। এতে খরচের টাকা দিয়ে একেকজন জেলে ভাগে পেয়েছেন ১০০ টাকা করে। তাই এখন নদীতে যাওয়া বন্ধ করে ঘাটে জাল মেরামতের কাজ করছেন। তার সংসারে সদস্য সংখ্যা চারজন। এছাড়া সপ্তাহে এক হাজার টাকা এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় জেলে পেশা বাদ দিয়ে গ্রাম ছাড়তে হবে।
একই এলাকার জেলে মো. নীরব জানান, তিনি ২০ বছর ধরে নদীতে মাছ শিকার করেন। তাদের নৌকায় সাতজন জেলে। গত রবিবার নদীতে গিয়ে ট্রলারের তেলসহ তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মাছ পেয়েছেন একটি বড় ইলিশ ও এক হালি জাটকা। ঘাটে এনে বিক্রি করেছেন দুই হাজার ৩০০ টাকায়। এতে নিজেরা তো কিছুই পাননি বরং উল্টো তাদের লোকসান হয়েছে ৭০০ টাকা।
জেলে ফরিদ উদ্দিন মাঝি জানান, তাদের চেয়ারম্যান ঘাটে শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। গত দুই বছরে নদীতে মাছ কম থাকায় তাদের ঘাটের ৫০ জনের বেশি জেলে ঋণের চাপে জাল-ট্রলার ফেলে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। বর্তমানে নদীতে ইলিশের যে খরা চলছে তাতে বাকি জেলেরাও এক সময় এলাকা ছাড়তে বাধ্য হবেন।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইলিশের মৌসুমেরও পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া নদীতে ডুবোচরের কারণে নদীর পানি ঘোলা থাকে। এ কারণে নদীতে ইলিশ আসছে না। সামনের পূর্ণিমায় নদীর পানি ঘোলা কিছুটা কমলে নদীতে ইলিশ ধরা পরবে।