নরসিংদী : রেল স্টেশন -সংবাদ
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল স্টেশন গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেশন হল নরসিংদী। এই স্টেশনে যাত্রী দুর্ভোগ ও নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান। স্টেশনটিতে অবকাঠামোগত দুর্বলতা,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, নিরাপত্তা সংকট, বিশ্রামাগার, পাবলিক টয়লেট, যাত্রীছাউনি এবং টিকিট প্রাপ্তিতে ভোগান্তির মতো সমস্যাগুলো দেখা যায়। এছাড়াও স্টেশনের আশেপাশে অবৈধ হকার ও মাদক সেবনকারীদের মাদক সেবন ও ভবঘুরেদের অবাধে বিচরণের মত ঘটনাও ঘটে থাকে। যা সাধারণ যাত্রীদের জন্য হুমকি স্বরূপ।
জানা গেছে, নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনটি মূলত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি দ্বারা ১৯১০-১৯১৪ সালে টঙ্গী-ভৈরব-আখাউড়া রেলপথ নির্মাণের সময় স্থাপিত হয়। ১৯৭০ সালে এটি জংশন স্টেশন ছিল। নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ যুক্ত ছিল। পরে ১৯৭৭ সালে রেল কর্তৃপক্ষ রেলপথটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। পরে নরসিংদী জংশন স্টেশন নাম বাদ দিয়ে শুধু নরসিংদী স্টেশন নামকরণ করেন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে এই স্টেশনে ২৪ ঘন্টায় ৭টি মেইল ও ৯টি আন্তঃনগরসহ মোট ১৬টি ট্রেন বিভিন্ন সময়ে স্টপেজ দেয়। এইসব ট্রেন দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া-আসা করেন। এত সংখ্যক যাত্রী উঠা-নামার জন্য রয়েছে ২টি প্লাটফরম। ১নং প্লাটফর্মে ট্রেনের জন্য অপেক্ষামান যাত্রীদের জন্য মাথার উপর কয়েকটা ফ্যান ও চেয়ার থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটা কম। এছাড়া যাত্রীদের জন্য ছোট পরিসরে বিশ্রামাগার থাকলে তা ব্যবহারে অনুপযোগী।যাত্রীদের জন্য টিকিট কাটার জন্য ৩টি টিকিট কাউন্টার থাকলেও খোলা থাকে ১টি, অপর ২টি থাকে বন্ধ। প্লাটফর্মগুলোতে রয়েছে অসংখ্য ভাসমান দোকান এবং হকারের ছড়াছড়ি। ফলে প্লাটফর্ম ২টি মাদক সেবনকারী, ভবঘুরে ও ভিক্ষুকদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।ফলে যাত্রীরা থাকেন নিরাপত্তাহীনতায়।
চাকরির সুবাদে প্রতিদিন ঢাকা যাতায়াতকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে যাত্রী বলেন, প্রতিদিন সকালে আমি ট্রেনে করে ঢাকায় যাতায়ত করি। স্টেশনের চারপাশ ও প্লাটফর্ম দখল করে রয়েছে মাদকসেবনকারী, ভবঘুরে, ভিক্ষুক ও হকাররা।দিন যত যাচ্ছে তাদের সংখ্যা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আস্তে আস্তে পুরো স্টেশন তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। ফলে যাত্রীরা রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায়। তিনি আরও বলেন, এই স্টেশনে যাত্রী সংখ্যা প্রচুর। টিকেট কাউন্টার ৩টির মধ্যে খোলা থাকে ১টি। সময়মত টিকেটও কাটতে পারে না যাত্রীরা। এমনও সময় দেখা যায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ট্রেন চলে আসে।পরে আর টিকেট কাটা হয় না।
ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, দীর্ঘ এক ঘন্টা ধরে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কোথাও কোনো বসার ব্যবস্থা নেই। প্লাটফর্মের তুলনায় যাত্রী ছাউনি অনেক ছোট। বৃষ্টি হলে ভিজে ট্রেনে উঠতে হয়। স্টেশনের ভবন ও প্ল্যাটফর্মের দুর্বল অবস্থা,পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার ও শৌচাগারের অভাব এবং ট্রেন আসার জন্য সঠিক সংকেত ব্যবস্থা না থাকার কারণে যাত্রীরা প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হন। কর্তৃপক্ষ যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের জন্য এই স্টেশনে যা যা প্রয়োজন তার একটাও নেই বলেও তিনি জানান।
বিষয়ে স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, টিকিট কাউন্টার ও সুইপারে লোকবল সংকট রয়েছে। পাশাপাশি হকার ও ভাসমান ভবঘুরেদের উচ্ছেদে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।বিশেষ করে শহরের মাঝে স্টেশনটি হওয়ায় বাইরের লোকজনের আনাগোনা একটু বেশি হচ্ছে।তারপরও আমার দায়বদ্ধতা থেকে আমি চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণে রাখার।
তিনি আরোও বলেন, ইতিমধ্যে রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন করে গেছেন। আমরা স্টেশনের ২নং প্লাটফর্ম ও যাত্রী ছাউনি বর্ধিতকরণ সহ লোকবলের বৃদ্ধির চাহিদার আবেদন করেছি। আশাকরি অল্প কয়েকদিনের মধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তা পূরণ করবেন। স্টেশনে যাত্রী সমাগম থাকা সত্ত্বেও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসে তখন তালা বুঝছিল। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নরসিংদী : রেল স্টেশন -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল স্টেশন গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেশন হল নরসিংদী। এই স্টেশনে যাত্রী দুর্ভোগ ও নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান। স্টেশনটিতে অবকাঠামোগত দুর্বলতা,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, নিরাপত্তা সংকট, বিশ্রামাগার, পাবলিক টয়লেট, যাত্রীছাউনি এবং টিকিট প্রাপ্তিতে ভোগান্তির মতো সমস্যাগুলো দেখা যায়। এছাড়াও স্টেশনের আশেপাশে অবৈধ হকার ও মাদক সেবনকারীদের মাদক সেবন ও ভবঘুরেদের অবাধে বিচরণের মত ঘটনাও ঘটে থাকে। যা সাধারণ যাত্রীদের জন্য হুমকি স্বরূপ।
জানা গেছে, নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনটি মূলত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি দ্বারা ১৯১০-১৯১৪ সালে টঙ্গী-ভৈরব-আখাউড়া রেলপথ নির্মাণের সময় স্থাপিত হয়। ১৯৭০ সালে এটি জংশন স্টেশন ছিল। নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ যুক্ত ছিল। পরে ১৯৭৭ সালে রেল কর্তৃপক্ষ রেলপথটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। পরে নরসিংদী জংশন স্টেশন নাম বাদ দিয়ে শুধু নরসিংদী স্টেশন নামকরণ করেন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে এই স্টেশনে ২৪ ঘন্টায় ৭টি মেইল ও ৯টি আন্তঃনগরসহ মোট ১৬টি ট্রেন বিভিন্ন সময়ে স্টপেজ দেয়। এইসব ট্রেন দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া-আসা করেন। এত সংখ্যক যাত্রী উঠা-নামার জন্য রয়েছে ২টি প্লাটফরম। ১নং প্লাটফর্মে ট্রেনের জন্য অপেক্ষামান যাত্রীদের জন্য মাথার উপর কয়েকটা ফ্যান ও চেয়ার থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটা কম। এছাড়া যাত্রীদের জন্য ছোট পরিসরে বিশ্রামাগার থাকলে তা ব্যবহারে অনুপযোগী।যাত্রীদের জন্য টিকিট কাটার জন্য ৩টি টিকিট কাউন্টার থাকলেও খোলা থাকে ১টি, অপর ২টি থাকে বন্ধ। প্লাটফর্মগুলোতে রয়েছে অসংখ্য ভাসমান দোকান এবং হকারের ছড়াছড়ি। ফলে প্লাটফর্ম ২টি মাদক সেবনকারী, ভবঘুরে ও ভিক্ষুকদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।ফলে যাত্রীরা থাকেন নিরাপত্তাহীনতায়।
চাকরির সুবাদে প্রতিদিন ঢাকা যাতায়াতকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে যাত্রী বলেন, প্রতিদিন সকালে আমি ট্রেনে করে ঢাকায় যাতায়ত করি। স্টেশনের চারপাশ ও প্লাটফর্ম দখল করে রয়েছে মাদকসেবনকারী, ভবঘুরে, ভিক্ষুক ও হকাররা।দিন যত যাচ্ছে তাদের সংখ্যা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আস্তে আস্তে পুরো স্টেশন তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। ফলে যাত্রীরা রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায়। তিনি আরও বলেন, এই স্টেশনে যাত্রী সংখ্যা প্রচুর। টিকেট কাউন্টার ৩টির মধ্যে খোলা থাকে ১টি। সময়মত টিকেটও কাটতে পারে না যাত্রীরা। এমনও সময় দেখা যায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ট্রেন চলে আসে।পরে আর টিকেট কাটা হয় না।
ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, দীর্ঘ এক ঘন্টা ধরে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কোথাও কোনো বসার ব্যবস্থা নেই। প্লাটফর্মের তুলনায় যাত্রী ছাউনি অনেক ছোট। বৃষ্টি হলে ভিজে ট্রেনে উঠতে হয়। স্টেশনের ভবন ও প্ল্যাটফর্মের দুর্বল অবস্থা,পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার ও শৌচাগারের অভাব এবং ট্রেন আসার জন্য সঠিক সংকেত ব্যবস্থা না থাকার কারণে যাত্রীরা প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হন। কর্তৃপক্ষ যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের জন্য এই স্টেশনে যা যা প্রয়োজন তার একটাও নেই বলেও তিনি জানান।
বিষয়ে স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, টিকিট কাউন্টার ও সুইপারে লোকবল সংকট রয়েছে। পাশাপাশি হকার ও ভাসমান ভবঘুরেদের উচ্ছেদে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।বিশেষ করে শহরের মাঝে স্টেশনটি হওয়ায় বাইরের লোকজনের আনাগোনা একটু বেশি হচ্ছে।তারপরও আমার দায়বদ্ধতা থেকে আমি চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণে রাখার।
তিনি আরোও বলেন, ইতিমধ্যে রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন করে গেছেন। আমরা স্টেশনের ২নং প্লাটফর্ম ও যাত্রী ছাউনি বর্ধিতকরণ সহ লোকবলের বৃদ্ধির চাহিদার আবেদন করেছি। আশাকরি অল্প কয়েকদিনের মধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তা পূরণ করবেন। স্টেশনে যাত্রী সমাগম থাকা সত্ত্বেও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসে তখন তালা বুঝছিল। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।