মণিরামপুর (যশোর) : ভবদহে জলাবদ্ধ মানুষ -সংবাদ
ভারীবৃষ্টিতে ভবদহ অধ্যুষিত যশোরের মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার অর্ধশত গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বেশির ভাগ ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভবদহ অঞ্চলের বিলগুলো ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধ এসব বাড়ির লোকজন পরিবার-পরিজন, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। যশোরের মণিরামপুর,অভয়নগর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এই এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয় মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে এসব নদী দিয়ে এখন ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এ কারণে বৃষ্টির পানি আটকা পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে যশোরে ২৯৯ মিলিমিটার এবং চলতি জুলাই মাসে ৫১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় হাল্কা থেকে মাঝারি আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে ভবদহ অঞ্চলের ৫২টি বিল অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে। বিলের উপচেপড়া পানি ঢুকতে শুরু করেছে আশপাশের গ্রামগুলোতে। মণিরামপুর উপজেলার লখাইডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ জয়শ্রী মন্ডল ৪২ বলেন, উঠোনে প্রায় হাঁটু জল। বাজেকুলটিয়া গ্রামের গৃহববধূ লাভলী বিশ্বাস বলেন, এবার আগেই বাড়িতে জল প্লাবিত হয়েছে। উপরের জলের চাপে প্রতিদিন পানি বাড়ছে। টিউবওয়েল, বাথরুম জলের তলে চলে গেছে। থাকার ঘরে জল উঠার মতো অবস্হা হয়েছে। খুব খারাপ অবস্হায় আছি। অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের দীলিপ বিশ্বাস (৪০) তার বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। উঠানের পানিতে তিনি মাছ ধরে জীবিকা চালায়। তিনি বলেন, ভারি ‘বৃষ্টির সঙ্গে উপরের দিকের জল চাপ দেওয়ায় জল বেড়েই চলেছে। উঠোনে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছি। ঘর থেকে সাঁকো দিয়ে বের হচ্ছি। জল আর একটু বাড়লে ঘরে ঢুকবে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালীর বাড়ির উঠোনে হাঁটু পানি। পানি ছুঁইছুঁই করছে তাঁর ঘরের বারান্দায়। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির জল জমে ভবদহ এলাকা ডুবতে শুরু করেছে। এলাকার অর্ধশত গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অনেকের বাড়িতে জল। অনেক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জল ঢুকেছে। তিনি বলেন, ‘ভবদহের ২১-ভেন্ট স্লুইসগেটের মধ্যে মাত্র ছয়টি গেট খোলা হয়েছে। গেট দিয়ে বেশি জল নামছে। সবগুলো গেট খুলে দিলে আরো বেশি জল নামতো। কিন্তু‘ পানি উন্নয়ন বোর্ড সব গেট খুলছে না। এলাকার বিলে টিআরএম-টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট (জোয়ারাধার) চালু না করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড, যশোরের কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘নদীতে জোয়ারের সময় ভবদহ স্লুইসগেটের ২১-ভেন্টের উপর চারটি বড় ও ১৫টি ছোট বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভাটির সময় ৬ টি গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। গেটগুলো দিয়ে প্রচুর পানি বের হচ্ছে। এতে এলাকার পানি দ্রুত সরে যাবে। তিনি বলেন, ‘ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য আগামী মাসে সেনাবাহিনী ৬টি নদীর ৮১ দশমিক ৫ কিলোমিটার খননকাজ শুরু করবে। এ ছাড়া আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। দুই-এক মাসের মধ্যে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
মণিরামপুর (যশোর) : ভবদহে জলাবদ্ধ মানুষ -সংবাদ
শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫
ভারীবৃষ্টিতে ভবদহ অধ্যুষিত যশোরের মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার অর্ধশত গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বেশির ভাগ ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভবদহ অঞ্চলের বিলগুলো ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধ এসব বাড়ির লোকজন পরিবার-পরিজন, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। যশোরের মণিরামপুর,অভয়নগর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এই এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয় মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে এসব নদী দিয়ে এখন ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এ কারণে বৃষ্টির পানি আটকা পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে যশোরে ২৯৯ মিলিমিটার এবং চলতি জুলাই মাসে ৫১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় হাল্কা থেকে মাঝারি আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে ভবদহ অঞ্চলের ৫২টি বিল অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে। বিলের উপচেপড়া পানি ঢুকতে শুরু করেছে আশপাশের গ্রামগুলোতে। মণিরামপুর উপজেলার লখাইডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ জয়শ্রী মন্ডল ৪২ বলেন, উঠোনে প্রায় হাঁটু জল। বাজেকুলটিয়া গ্রামের গৃহববধূ লাভলী বিশ্বাস বলেন, এবার আগেই বাড়িতে জল প্লাবিত হয়েছে। উপরের জলের চাপে প্রতিদিন পানি বাড়ছে। টিউবওয়েল, বাথরুম জলের তলে চলে গেছে। থাকার ঘরে জল উঠার মতো অবস্হা হয়েছে। খুব খারাপ অবস্হায় আছি। অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের দীলিপ বিশ্বাস (৪০) তার বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। উঠানের পানিতে তিনি মাছ ধরে জীবিকা চালায়। তিনি বলেন, ভারি ‘বৃষ্টির সঙ্গে উপরের দিকের জল চাপ দেওয়ায় জল বেড়েই চলেছে। উঠোনে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছি। ঘর থেকে সাঁকো দিয়ে বের হচ্ছি। জল আর একটু বাড়লে ঘরে ঢুকবে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালীর বাড়ির উঠোনে হাঁটু পানি। পানি ছুঁইছুঁই করছে তাঁর ঘরের বারান্দায়। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির জল জমে ভবদহ এলাকা ডুবতে শুরু করেছে। এলাকার অর্ধশত গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অনেকের বাড়িতে জল। অনেক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জল ঢুকেছে। তিনি বলেন, ‘ভবদহের ২১-ভেন্ট স্লুইসগেটের মধ্যে মাত্র ছয়টি গেট খোলা হয়েছে। গেট দিয়ে বেশি জল নামছে। সবগুলো গেট খুলে দিলে আরো বেশি জল নামতো। কিন্তু‘ পানি উন্নয়ন বোর্ড সব গেট খুলছে না। এলাকার বিলে টিআরএম-টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট (জোয়ারাধার) চালু না করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড, যশোরের কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘নদীতে জোয়ারের সময় ভবদহ স্লুইসগেটের ২১-ভেন্টের উপর চারটি বড় ও ১৫টি ছোট বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভাটির সময় ৬ টি গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। গেটগুলো দিয়ে প্রচুর পানি বের হচ্ছে। এতে এলাকার পানি দ্রুত সরে যাবে। তিনি বলেন, ‘ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য আগামী মাসে সেনাবাহিনী ৬টি নদীর ৮১ দশমিক ৫ কিলোমিটার খননকাজ শুরু করবে। এ ছাড়া আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। দুই-এক মাসের মধ্যে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের কাজ শুরু হবে।