সিলেট বিভাগের মানুষের কাছে একটি বিশেষ আকর্ষণ ‘খাসিয়া পান’। যা সিলেটে ‘খাইয়া পান’ নামে পরিচিত। প্রচন্ড ঝাঁজালো এই পানে আসক্তদের কাছে অন্য জাতের পানকে পানসে লাগে। আর এই বিশেষ পান উৎপাদন করেন খাসিয়া জনগোষ্ঠী। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত সিলেট বিভাগের লোকজনের চাহিদা মেটাতে খাসিয়া পান বিদেশেও রপ্তানি হয়।
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে খাসিয়াদের অবস্থান রয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জী। এখানে ১২৪ পরিবারের সবাই খাসিয়া পানের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে পান তোলার ভরা মৌসুম চলছে। ফলে সেখানে নারী-পুরুষ সবাই পান তোলা থেকে শুরু করে পাইকারের কাছে বিক্রি পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি ও জংলাঘেরা রাস্তা পেরিয়ে বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নে অবস্থিত আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জীতে গিয়ে মানুষদের ব্যস্ততা দেখা যায়। প্রতিটি বাড়ির চারদিকেই খাসিয়া পানের উৎপাদন হচ্ছে। লতার মতো পান গাছগুলো মাচা কিংবা অন্য কোনো গাছের সঙ্গে জড়িয়ে অনেক উঁচু পর্যন্ত উঠে গেছে। ভোর থেকেই খাসিয়ারা পান তোলা শুরু করেন। এরপর বিকেল পর্যন্ত বাড়ির সামনে সেগুলোকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। বিকেলে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট থেকে পাইকাররা এসে পান কিনে নেন।
আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জীর প্রধান ব্যক্তিকে ‘মন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করা হয়। বর্তমানে এই পুঞ্জীর মন্ত্রীর পদে দায়িত্বরত উটিয়ান টংপেয়ার জানান, পান উৎপাদন করে এখন ব্যয় নির্বাহ করা খাসিয়া পরিবারের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যে কারণে এখন অনেকে পান চাষের পাশাপাশি অন্যান্য ফসল চাষ করতে হচ্ছে। গত ১ বছর ধরে খাসিয়ারা পানের পাশাপাশি পানীয়দ্রব্য কফি চাষ শুরু করেছে। এছাড়াও পুঞ্জীর গুঁটিকয়েক পরিবার পান ছাড়াও লেবু, জাম্বুরা, কলা চাষ করে। তবে অধিকাংশ পরিবার এখনও খাসিয়া পানের ওপর নির্ভরশীল।
উটিয়ান টংপেয়ার বলেন, খাসিয়া পান বিদেশে রপ্তানি হবার ব্যাপারটা আমরা জানি। তবে এতে আমাদের বিশেষ কোনো লাভ নেই। আমরা আগে যেমন পাইকারের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখনও সেভাবেই আছি। যে কারণে বিদেশে খাসিয়া পান রপ্তানি হলেও আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার তেমন কোনো হেরফের নেই। মন্ত্রী উটিয়ান টংপেয়ারের ছেলে অনিক লামিন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ডিগ্রি কলেজ থেকে বি.এ. পরীক্ষা শেষে পারিবারিক সম্পদের দেখভাল করছেন। যিনি পরবর্তীতে আলিয়াছড়ার মন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
পান চাষ ও এর প্রতিকূলতা সম্পর্কে অনিক লামিন এই প্রতিবেদককে জানান, ‘জুন, জুলাই ও আগস্ট, এই তিন মাস পান চাষের ভরা মৌসুম। এই তিন মাস প্রতিদিন পান উত্তোলন ও বিক্রি করা হয়। তবে ভরা মৌসুমে পানের মূল্য থাকে কম। প্রতিকুড়ি পানের দাম ৫০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এই মূল্যের তারতম্য পুরোটাই পাইকারদের ওপর নির্ভর করে। ১৪৪টি পান পাতায় ১ কান্তা হয়। আর ২০ কান্তা মিলে হয় ১ কুড়ি।’
অনিক লামিন জানান, গাছ রোপনের ৩ বছর পর থেকে পান উৎপাদান শুরু হয়। এরপর প্রায় ১৬/১৭ বছর একটি গাছ থেকে পান উৎপাদন হয়। তবে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কারসহ সারাবছরই পান গাছের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। খাসিয়া পানের মূল বিশেষত্ব ও স্বাদ অক্ষুন্ন রাখার জন্য তারা কোনো সার-কীটনাশক ব্যবহার করেন না।
তবে পান গাছের একটি মারাত্মক রোগ আছে। এতে পানের পাতা লালচে হযে পচে যায়। আর এই রোগ মুহূর্তের মধ্যে সব পান গাছে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই রোগের আক্রমণের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। যদি কোনো গাছে এই রোগ ধরা পড়ে, তাহলে গাছটির গোড়ায় কেটে দিতে হয়। গাছ কেটে ফেলা ছাড়া পানের জন্য ভয়ংকর এই রোগ মোকাবেলার কোনো উপায় নেই বলেও জানান অনিক লামিন।
পুঞ্জীর একজন গৃহবধূ জানান, এখন পানের ভরা মৌসুম হওয়ায়, বাড়ির সবাই খুব ভোরে উঠে কাজ শুরু করেন। তাদের পাশাপাশি আশপাশের এলাকার বাঙালি ও চা বাগানের শ্রমিকদের তারা দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া করেন। পান উত্তোলনের পর সেগুলোকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করতে তাদের বিকেল হয়ে যায়।
রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫
সিলেট বিভাগের মানুষের কাছে একটি বিশেষ আকর্ষণ ‘খাসিয়া পান’। যা সিলেটে ‘খাইয়া পান’ নামে পরিচিত। প্রচন্ড ঝাঁজালো এই পানে আসক্তদের কাছে অন্য জাতের পানকে পানসে লাগে। আর এই বিশেষ পান উৎপাদন করেন খাসিয়া জনগোষ্ঠী। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত সিলেট বিভাগের লোকজনের চাহিদা মেটাতে খাসিয়া পান বিদেশেও রপ্তানি হয়।
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে খাসিয়াদের অবস্থান রয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জী। এখানে ১২৪ পরিবারের সবাই খাসিয়া পানের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে পান তোলার ভরা মৌসুম চলছে। ফলে সেখানে নারী-পুরুষ সবাই পান তোলা থেকে শুরু করে পাইকারের কাছে বিক্রি পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি ও জংলাঘেরা রাস্তা পেরিয়ে বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নে অবস্থিত আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জীতে গিয়ে মানুষদের ব্যস্ততা দেখা যায়। প্রতিটি বাড়ির চারদিকেই খাসিয়া পানের উৎপাদন হচ্ছে। লতার মতো পান গাছগুলো মাচা কিংবা অন্য কোনো গাছের সঙ্গে জড়িয়ে অনেক উঁচু পর্যন্ত উঠে গেছে। ভোর থেকেই খাসিয়ারা পান তোলা শুরু করেন। এরপর বিকেল পর্যন্ত বাড়ির সামনে সেগুলোকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। বিকেলে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট থেকে পাইকাররা এসে পান কিনে নেন।
আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জীর প্রধান ব্যক্তিকে ‘মন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করা হয়। বর্তমানে এই পুঞ্জীর মন্ত্রীর পদে দায়িত্বরত উটিয়ান টংপেয়ার জানান, পান উৎপাদন করে এখন ব্যয় নির্বাহ করা খাসিয়া পরিবারের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যে কারণে এখন অনেকে পান চাষের পাশাপাশি অন্যান্য ফসল চাষ করতে হচ্ছে। গত ১ বছর ধরে খাসিয়ারা পানের পাশাপাশি পানীয়দ্রব্য কফি চাষ শুরু করেছে। এছাড়াও পুঞ্জীর গুঁটিকয়েক পরিবার পান ছাড়াও লেবু, জাম্বুরা, কলা চাষ করে। তবে অধিকাংশ পরিবার এখনও খাসিয়া পানের ওপর নির্ভরশীল।
উটিয়ান টংপেয়ার বলেন, খাসিয়া পান বিদেশে রপ্তানি হবার ব্যাপারটা আমরা জানি। তবে এতে আমাদের বিশেষ কোনো লাভ নেই। আমরা আগে যেমন পাইকারের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখনও সেভাবেই আছি। যে কারণে বিদেশে খাসিয়া পান রপ্তানি হলেও আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার তেমন কোনো হেরফের নেই। মন্ত্রী উটিয়ান টংপেয়ারের ছেলে অনিক লামিন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ডিগ্রি কলেজ থেকে বি.এ. পরীক্ষা শেষে পারিবারিক সম্পদের দেখভাল করছেন। যিনি পরবর্তীতে আলিয়াছড়ার মন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
পান চাষ ও এর প্রতিকূলতা সম্পর্কে অনিক লামিন এই প্রতিবেদককে জানান, ‘জুন, জুলাই ও আগস্ট, এই তিন মাস পান চাষের ভরা মৌসুম। এই তিন মাস প্রতিদিন পান উত্তোলন ও বিক্রি করা হয়। তবে ভরা মৌসুমে পানের মূল্য থাকে কম। প্রতিকুড়ি পানের দাম ৫০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এই মূল্যের তারতম্য পুরোটাই পাইকারদের ওপর নির্ভর করে। ১৪৪টি পান পাতায় ১ কান্তা হয়। আর ২০ কান্তা মিলে হয় ১ কুড়ি।’
অনিক লামিন জানান, গাছ রোপনের ৩ বছর পর থেকে পান উৎপাদান শুরু হয়। এরপর প্রায় ১৬/১৭ বছর একটি গাছ থেকে পান উৎপাদন হয়। তবে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কারসহ সারাবছরই পান গাছের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। খাসিয়া পানের মূল বিশেষত্ব ও স্বাদ অক্ষুন্ন রাখার জন্য তারা কোনো সার-কীটনাশক ব্যবহার করেন না।
তবে পান গাছের একটি মারাত্মক রোগ আছে। এতে পানের পাতা লালচে হযে পচে যায়। আর এই রোগ মুহূর্তের মধ্যে সব পান গাছে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই রোগের আক্রমণের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। যদি কোনো গাছে এই রোগ ধরা পড়ে, তাহলে গাছটির গোড়ায় কেটে দিতে হয়। গাছ কেটে ফেলা ছাড়া পানের জন্য ভয়ংকর এই রোগ মোকাবেলার কোনো উপায় নেই বলেও জানান অনিক লামিন।
পুঞ্জীর একজন গৃহবধূ জানান, এখন পানের ভরা মৌসুম হওয়ায়, বাড়ির সবাই খুব ভোরে উঠে কাজ শুরু করেন। তাদের পাশাপাশি আশপাশের এলাকার বাঙালি ও চা বাগানের শ্রমিকদের তারা দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া করেন। পান উত্তোলনের পর সেগুলোকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করতে তাদের বিকেল হয়ে যায়।