রাতের অনিরাপদ চকরিয়া রেলস্টেশন -সংবাদ
কক্সবাজারের ২২ লাখ মানুষের শতবছরের লালিত স্বপ্ন ছিল স্থাপিত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যটন শহর কক্সবাজারে আইকনিক রেল স্টেশন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে হয় সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
অবশ্য রেললাইন চালু হলেও এখনও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপজেলাভিত্তিক স্টেশনগুলোকে শতভাগ নিরাপদ করার কাজ শেষ হয়নি। সন্ধ্যা নামতেই উপজেলাভিত্তিক রেল স্টেশনগুলোর প্রত্যেকটাই যেন একেকটা অপরাধের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে।
রেল স্টেশনগুলোতে নেই কোনো লাইটিং ব্যবস্থা, নেই রেলওয়ে পুলিশও। তাই বিশেষ করে সন্ধ্যার পর যাত্রী সাধারণ পড়ছেন ডাকাত, ছিনতাইকারীর কবলে। সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি শারীরিকভাবেও হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে।
চকরিয়া উপজেলার সাহারবিলস্থ রেল লাইনের গত ছয় মাসের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা গেছে, প্রতিনিয়ত এই স্টেশনে পর্যটক, যাত্রী সাধারণ অপরাধীদের কাছে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এতে যাত্রী সাধারণের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
একাধিক ভুক্তভোগী ও স্টেশন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, চকরিয়ার স্টেশনটি এমন জায়গায় স্থাপিত হয়েছে, সেখানে রাত দূরের কথা, দিনের আলোতেও কোনো ধরনের নিরাপত্তা নেই যাত্রী সাধারণের।
চকরিয়া রেল স্টেশনটির এই পরিস্থিতির কথা অকপটে স্বীকার করে নিয়ে স্টেশন মাস্টার মো. ফরহাদ চৌধুরী বলেন, চকরিয়া রেল স্টেশনের সার্বিক এই চিত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।
যাত্রীদের দাবি, চট্টগ্রামগামী সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনে যাতায়াতের জন্য চকরিয়া স্টেশনে আগত যাত্রীদের সংঘবদ্ধ ডাকাত-ছিনতাইকারী চক্রের কাছে হামলার শিকার হতে হচ্ছে। এ সময় স্টেশনে আগত যাত্রীদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে মোবাইল, নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিচ্ছে। আর তাদের কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে নিশ্চিত হামলার শিকার হতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা এবং কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রামু, সদর, ঈদগাঁওসহ কক্সবাজার জেলা এবং পাবর্ত্য বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়িসহ আশপাশের উপজেলাগুলোর মানুষ যাতায়াত করেন। এই অবস্থায় রেল স্টেশনগুলোতে দিন দিন চাপ বাড়ছে যাত্রীদের।
রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চকরিয়া উপজেলাটি এমন স্থানে অবস্থিত যার চারপাশে বেশ কয়েকটি উপজেলার জনসাধারণ চকরিয়া রেল স্টেশন হয়েই সারাদেশে যাতায়াত করছেন। সেই বিবেচনায় যাত্রীদের সুবিধার জন্য চকরিয়ায় তিনটি রেল স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো হলো- উত্তর প্রান্তে হারবাং ও দক্ষিণ প্রান্তে ডুলাহাজারা স্টেশন আর মধ্যখানে চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের পাশে চকরিয়া স্টেশন। চকরিয়া স্টেশনটি মাতারবাড়ি কয়লা বিদুৎ সড়কের সঙ্গেও সংযুক্ত। এই স্টেশনে যাত্রীর চাপও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা।
চকরিয়া রেল স্টেশন মাস্টারের দেয়া তথ্যানুযায়ী, রেল লাইনটি চালু
হওয়ার পরেও রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপত্তায় স্থায়ীভাবে রেল পুলিশ নিয়োগ দেয়নি। এমনকি স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে এখানও হস্তান্তর করেনি। এতে আগত যাত্রী সাধারণ চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়ছেন প্রতিনিয়ত। শুধু তাই নয়, স্টেশনটিতে যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার থাকলেও ভেতরে নেই কোনো বসার ব্যবস্থা, নেই কোনো পরিছন্নতা কর্মীও। এতে যাত্রীদের টয়লেটসহ স্টেশনটি অপরিছন্নও হয়ে পড়ছে।
চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রেল স্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজস্ব বাহিনী তথা রেলওয়ে পুলিশ রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে চকরিয়া স্টেশনগুলোতে এখনও রেল পুলিশ নিয়োগ না দেয়ায় বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে থানা পুলিশকে।
তিনি বলেন, রেল স্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা থানা পুলিশের কাজ না হলেও প্রতিদিন একটি করে থানা পুলিশের টহল টিম প্রেরণ করতে হচ্ছে। যাতে রেলে ভ্রমণকারী যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, আধুনিক মানের রেললাইন ও আইকনিক স্টেশনের আদলে তৈরি রেল স্টেশনগুলোতে প্রতিনিয়ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়া খুবই দুঃখজনক।
রেল স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সংযোগ সড়কগুলোতে পর্যাপ্ত লাইটিং, নিয়মিত রেলওয়ে পুলিশের টহল ব্যবস্থা জোরদার, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ জরুরি সহায়তা সেল চালু করার পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।
রাতের অনিরাপদ চকরিয়া রেলস্টেশন -সংবাদ
রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫
কক্সবাজারের ২২ লাখ মানুষের শতবছরের লালিত স্বপ্ন ছিল স্থাপিত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যটন শহর কক্সবাজারে আইকনিক রেল স্টেশন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে হয় সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
অবশ্য রেললাইন চালু হলেও এখনও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপজেলাভিত্তিক স্টেশনগুলোকে শতভাগ নিরাপদ করার কাজ শেষ হয়নি। সন্ধ্যা নামতেই উপজেলাভিত্তিক রেল স্টেশনগুলোর প্রত্যেকটাই যেন একেকটা অপরাধের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে।
রেল স্টেশনগুলোতে নেই কোনো লাইটিং ব্যবস্থা, নেই রেলওয়ে পুলিশও। তাই বিশেষ করে সন্ধ্যার পর যাত্রী সাধারণ পড়ছেন ডাকাত, ছিনতাইকারীর কবলে। সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি শারীরিকভাবেও হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে।
চকরিয়া উপজেলার সাহারবিলস্থ রেল লাইনের গত ছয় মাসের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা গেছে, প্রতিনিয়ত এই স্টেশনে পর্যটক, যাত্রী সাধারণ অপরাধীদের কাছে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এতে যাত্রী সাধারণের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
একাধিক ভুক্তভোগী ও স্টেশন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, চকরিয়ার স্টেশনটি এমন জায়গায় স্থাপিত হয়েছে, সেখানে রাত দূরের কথা, দিনের আলোতেও কোনো ধরনের নিরাপত্তা নেই যাত্রী সাধারণের।
চকরিয়া রেল স্টেশনটির এই পরিস্থিতির কথা অকপটে স্বীকার করে নিয়ে স্টেশন মাস্টার মো. ফরহাদ চৌধুরী বলেন, চকরিয়া রেল স্টেশনের সার্বিক এই চিত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।
যাত্রীদের দাবি, চট্টগ্রামগামী সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনে যাতায়াতের জন্য চকরিয়া স্টেশনে আগত যাত্রীদের সংঘবদ্ধ ডাকাত-ছিনতাইকারী চক্রের কাছে হামলার শিকার হতে হচ্ছে। এ সময় স্টেশনে আগত যাত্রীদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে মোবাইল, নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিচ্ছে। আর তাদের কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে নিশ্চিত হামলার শিকার হতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা এবং কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রামু, সদর, ঈদগাঁওসহ কক্সবাজার জেলা এবং পাবর্ত্য বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়িসহ আশপাশের উপজেলাগুলোর মানুষ যাতায়াত করেন। এই অবস্থায় রেল স্টেশনগুলোতে দিন দিন চাপ বাড়ছে যাত্রীদের।
রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চকরিয়া উপজেলাটি এমন স্থানে অবস্থিত যার চারপাশে বেশ কয়েকটি উপজেলার জনসাধারণ চকরিয়া রেল স্টেশন হয়েই সারাদেশে যাতায়াত করছেন। সেই বিবেচনায় যাত্রীদের সুবিধার জন্য চকরিয়ায় তিনটি রেল স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো হলো- উত্তর প্রান্তে হারবাং ও দক্ষিণ প্রান্তে ডুলাহাজারা স্টেশন আর মধ্যখানে চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের পাশে চকরিয়া স্টেশন। চকরিয়া স্টেশনটি মাতারবাড়ি কয়লা বিদুৎ সড়কের সঙ্গেও সংযুক্ত। এই স্টেশনে যাত্রীর চাপও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা।
চকরিয়া রেল স্টেশন মাস্টারের দেয়া তথ্যানুযায়ী, রেল লাইনটি চালু
হওয়ার পরেও রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপত্তায় স্থায়ীভাবে রেল পুলিশ নিয়োগ দেয়নি। এমনকি স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে এখানও হস্তান্তর করেনি। এতে আগত যাত্রী সাধারণ চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়ছেন প্রতিনিয়ত। শুধু তাই নয়, স্টেশনটিতে যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার থাকলেও ভেতরে নেই কোনো বসার ব্যবস্থা, নেই কোনো পরিছন্নতা কর্মীও। এতে যাত্রীদের টয়লেটসহ স্টেশনটি অপরিছন্নও হয়ে পড়ছে।
চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রেল স্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজস্ব বাহিনী তথা রেলওয়ে পুলিশ রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে চকরিয়া স্টেশনগুলোতে এখনও রেল পুলিশ নিয়োগ না দেয়ায় বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে থানা পুলিশকে।
তিনি বলেন, রেল স্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা থানা পুলিশের কাজ না হলেও প্রতিদিন একটি করে থানা পুলিশের টহল টিম প্রেরণ করতে হচ্ছে। যাতে রেলে ভ্রমণকারী যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, আধুনিক মানের রেললাইন ও আইকনিক স্টেশনের আদলে তৈরি রেল স্টেশনগুলোতে প্রতিনিয়ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়া খুবই দুঃখজনক।
রেল স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সংযোগ সড়কগুলোতে পর্যাপ্ত লাইটিং, নিয়মিত রেলওয়ে পুলিশের টহল ব্যবস্থা জোরদার, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ জরুরি সহায়তা সেল চালু করার পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।