তারা দু’জন সম্পর্কে মামা শ্বশুর, ভাগ্নি জামাই। দু’জনই মুচী সম্প্রদায়ের। যাচ্ছিলেন একজনের মেয়ের বিয়ে পাকা করতে। আর পথে একদল লোক ‘চোর, চোর’ চিৎকার করে লোক জড়ো করে তাদের পিটাতে থাকেন। মারা গেছেন দু’জনই।
ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের তারাগজ্ঞ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট এলাকায় শনিবার রাতে। স্বজনদের অভিযোগ ‘পরিকল্পিতভাবে’ মব তৈরী করে ‘হত্যা করা হয়েছে’। দায়িদের বিচার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
পুলিশ ও স্বজনরা জানান নিহত রূপলাল দাসের বাড়ি তারাগজ্ঞ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর বেলতলী বুড়িরহাট এলাকায়। সে বুড়িরহাট বাজারে মুচির কাজ করে। আর রুপলালের ভাগ্নিজামাই প্রদীপ দাস মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর ছড়ান গ্রামের বাসিন্দা। সেও মুচির কাজ করে, রিকশা ভ্যানও চালায়।
নিহত রুপলালের চাচা রামনাথ দাস জানান রুপলালের মেয়ে নুপুর স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। রুপলালের মেয়ে নুপুরের সাথে পাশের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পৌর এলাকার কমল নামে এক যুবকের সাথে বিয়ের কথা বার্তা চলছিলো। দিন তারিখ ঠিক করার জন্য নিহত রুপলাল তার ভাগ্নি জামাই প্রদীপকে ডেকে পাঠায়।
খবর পেয়ে মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে মামাশশুড় রুপলাল দাসের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন প্রদীপ।
আর বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য তাদের সামাজিক রীতির অংশ হিসেবে শনিবার সৈয়দপুরের একটি ভাটিখানা থেকে স্পিড ড্রিংকের বোতলে বাংলা মদ সংগ্রহ করে প্রদীপ ও রূপলাল বাসায় ফিরছিলেন।
শনিবার রাত ৮টার দিকে সয়ার ইউনিয়নের ফরিদাবাদ মোড় সংলগ্ন বটতলা এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাদের ব্যাগে থাকা মদ দেখতে পান। এক পর্যায়ে তারা চোর চোর বলে চিৎকার করতে থাকলে মুহূর্তেই লোকজন জড়ো হয়ে কোনো কথা না শুনে তাদেরেক বেধড়ক মারধর শুরু করে। পিটুনিতে রুপলাল ঘটনা স্থলেই নিহত হন। গুরতর আহত হন প্রদীপ।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত রপলাল ও আহত প্রদীপকে উদ্ধার করে তারাগজ্ঞ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে প্রদীপের অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রদীপ মারা যায়। পুলিশ নিহত দুজনের মৃত দেহ ময়না তদন্তের জন্য রোববার দুপুর ৩ টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
রুপলাল নিহত হবার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়িকে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
সরেজমিন রোববার দুপুরে নিহত রুপলালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে রুপা দাস ও ১৩ বছর বয়সী ছেলে জয় দাসকে জড়িয়ে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন তার স্ত্রী ভারতী দাস। তার বুক ফাটা আর্তনাদে সেখানে শোকাবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী দাস চিৎকার করে বলছিলেন, আমার স্বামীকে ‘পরিকল্পিত ভাবে হত্যা’ করা হয়েছে। ভাগ্নি জামাই প্রদীপকেও ‘হত্যা করা হয়েছে’।
তিনি বিলাপ করে বলছিলেন, দেশে ‘কোন আইন আছে?’ নিরপরাধ মানুষকে এভাবে নৃশংস ভাবে ‘হত্যা’ করা হলো, কিন্তু কেউই তাদের বাাঁচাতে এগিয়ে আসে নাই। তিনি তার স্বামী ও ভাগ্নিজামাইকে হত্যার সাথে জড়িতদের সকলকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। বলেন ওই ঘটনার যারা নাযক যাদের উস্কানি আর নেতৃত্বে নৃশংস ভাবে হত্যা কান্ড সংঘটিত করা হয়েছে সকলকে গ্রেফতার করতে দাবি জানান তিনি।
বিয়ে ঠিক হওয়া বড় মেয়ে নুপুর দাস (১৮) মা ভারতী দাসের গলা ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। এ সময় তার আহাজারিতে অনেকেই তাদের অশ্রু সংবরন করতে পারেনি। নুপুর বলছিলেন, ‘আমাদের এতিম করে দেয়া হলো। অন্যায় ভাবে দুজন নিরাপরাধ মানুষকে এ ভাবে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে হত্যার বিচার কি আমরা পাবো? সরকার কি আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারলো? আমরা কঠিন বিচার চাই।’
ছেলেকে হারিয়ে নিহত রুপলালের বৃদ্ধা মা লালিচা দাস কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রতিবেশীরা তাঁর মুখ ও মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরান। তিনি তার ছেলে রুপলাল ও প্রদীপ হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে বলেন, ‘আমাদের সংসার কে চালাবে? রুপলাল যা রোজগার করতো তা দিয়ে কোন রকমে আমাদের সংসার চলতো। এখন কিভাবে সংসার চলবে? ছেলে মেয়েদের কে দেখবে?’ এসব কথা বলতে বলতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
দুপুর ৩টার দিকে এ্যাম্বুলেন্সে করে রুপলাল দাস ও প্রদীপ দাসের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে আনা হয়। সেখানে তারাগজ্ঞ থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য সঙ্গে আসলেও তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা বলেন মরদেহের ময়না তদন্তের জন্য তারা এসেছেন।
মরদেহের সাথে এসেছেন রুপলালের ভাতিজা রনি দাস ও সরেন দাস। তারা জানান রাতে খবর পেয়েছেন যে রুপলাল দাস নিহত হয়েছেন।
রোববার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রদীপও মারা যান।
তারাগজ্ঞ থানার ওসি এম এ ফারুখের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানান তিনি।
####
রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫
তারা দু’জন সম্পর্কে মামা শ্বশুর, ভাগ্নি জামাই। দু’জনই মুচী সম্প্রদায়ের। যাচ্ছিলেন একজনের মেয়ের বিয়ে পাকা করতে। আর পথে একদল লোক ‘চোর, চোর’ চিৎকার করে লোক জড়ো করে তাদের পিটাতে থাকেন। মারা গেছেন দু’জনই।
ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের তারাগজ্ঞ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট এলাকায় শনিবার রাতে। স্বজনদের অভিযোগ ‘পরিকল্পিতভাবে’ মব তৈরী করে ‘হত্যা করা হয়েছে’। দায়িদের বিচার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
পুলিশ ও স্বজনরা জানান নিহত রূপলাল দাসের বাড়ি তারাগজ্ঞ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর বেলতলী বুড়িরহাট এলাকায়। সে বুড়িরহাট বাজারে মুচির কাজ করে। আর রুপলালের ভাগ্নিজামাই প্রদীপ দাস মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর ছড়ান গ্রামের বাসিন্দা। সেও মুচির কাজ করে, রিকশা ভ্যানও চালায়।
নিহত রুপলালের চাচা রামনাথ দাস জানান রুপলালের মেয়ে নুপুর স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। রুপলালের মেয়ে নুপুরের সাথে পাশের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পৌর এলাকার কমল নামে এক যুবকের সাথে বিয়ের কথা বার্তা চলছিলো। দিন তারিখ ঠিক করার জন্য নিহত রুপলাল তার ভাগ্নি জামাই প্রদীপকে ডেকে পাঠায়।
খবর পেয়ে মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে মামাশশুড় রুপলাল দাসের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন প্রদীপ।
আর বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য তাদের সামাজিক রীতির অংশ হিসেবে শনিবার সৈয়দপুরের একটি ভাটিখানা থেকে স্পিড ড্রিংকের বোতলে বাংলা মদ সংগ্রহ করে প্রদীপ ও রূপলাল বাসায় ফিরছিলেন।
শনিবার রাত ৮টার দিকে সয়ার ইউনিয়নের ফরিদাবাদ মোড় সংলগ্ন বটতলা এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাদের ব্যাগে থাকা মদ দেখতে পান। এক পর্যায়ে তারা চোর চোর বলে চিৎকার করতে থাকলে মুহূর্তেই লোকজন জড়ো হয়ে কোনো কথা না শুনে তাদেরেক বেধড়ক মারধর শুরু করে। পিটুনিতে রুপলাল ঘটনা স্থলেই নিহত হন। গুরতর আহত হন প্রদীপ।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত রপলাল ও আহত প্রদীপকে উদ্ধার করে তারাগজ্ঞ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে প্রদীপের অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রদীপ মারা যায়। পুলিশ নিহত দুজনের মৃত দেহ ময়না তদন্তের জন্য রোববার দুপুর ৩ টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
রুপলাল নিহত হবার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়িকে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
সরেজমিন রোববার দুপুরে নিহত রুপলালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে রুপা দাস ও ১৩ বছর বয়সী ছেলে জয় দাসকে জড়িয়ে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন তার স্ত্রী ভারতী দাস। তার বুক ফাটা আর্তনাদে সেখানে শোকাবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী দাস চিৎকার করে বলছিলেন, আমার স্বামীকে ‘পরিকল্পিত ভাবে হত্যা’ করা হয়েছে। ভাগ্নি জামাই প্রদীপকেও ‘হত্যা করা হয়েছে’।
তিনি বিলাপ করে বলছিলেন, দেশে ‘কোন আইন আছে?’ নিরপরাধ মানুষকে এভাবে নৃশংস ভাবে ‘হত্যা’ করা হলো, কিন্তু কেউই তাদের বাাঁচাতে এগিয়ে আসে নাই। তিনি তার স্বামী ও ভাগ্নিজামাইকে হত্যার সাথে জড়িতদের সকলকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। বলেন ওই ঘটনার যারা নাযক যাদের উস্কানি আর নেতৃত্বে নৃশংস ভাবে হত্যা কান্ড সংঘটিত করা হয়েছে সকলকে গ্রেফতার করতে দাবি জানান তিনি।
বিয়ে ঠিক হওয়া বড় মেয়ে নুপুর দাস (১৮) মা ভারতী দাসের গলা ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। এ সময় তার আহাজারিতে অনেকেই তাদের অশ্রু সংবরন করতে পারেনি। নুপুর বলছিলেন, ‘আমাদের এতিম করে দেয়া হলো। অন্যায় ভাবে দুজন নিরাপরাধ মানুষকে এ ভাবে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে হত্যার বিচার কি আমরা পাবো? সরকার কি আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারলো? আমরা কঠিন বিচার চাই।’
ছেলেকে হারিয়ে নিহত রুপলালের বৃদ্ধা মা লালিচা দাস কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রতিবেশীরা তাঁর মুখ ও মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরান। তিনি তার ছেলে রুপলাল ও প্রদীপ হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে বলেন, ‘আমাদের সংসার কে চালাবে? রুপলাল যা রোজগার করতো তা দিয়ে কোন রকমে আমাদের সংসার চলতো। এখন কিভাবে সংসার চলবে? ছেলে মেয়েদের কে দেখবে?’ এসব কথা বলতে বলতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
দুপুর ৩টার দিকে এ্যাম্বুলেন্সে করে রুপলাল দাস ও প্রদীপ দাসের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে আনা হয়। সেখানে তারাগজ্ঞ থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য সঙ্গে আসলেও তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা বলেন মরদেহের ময়না তদন্তের জন্য তারা এসেছেন।
মরদেহের সাথে এসেছেন রুপলালের ভাতিজা রনি দাস ও সরেন দাস। তারা জানান রাতে খবর পেয়েছেন যে রুপলাল দাস নিহত হয়েছেন।
রোববার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রদীপও মারা যান।
তারাগজ্ঞ থানার ওসি এম এ ফারুখের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানান তিনি।
####