কেশবপুর (যশোর) : পানির ভেতরেই চলছে পাইকারী মাছের আড়তের কার্যক্রম -সংবাদ
ব্রিজ-কালর্ভাটের মুখ ভরাট করে অপরিকল্পিত মাছের ঘেরসহ পলিতে নদী ভরাটের প্রভাবে কেশবপুর পৌর শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ ধারণ করায় দেড় মাস ধরে পানিতে তলিয়ে আছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ধানহাটা, গমপট্টি, পাইকারি ও খুচরা সবজি বাজার, পশুহাটসহ গুরুত্বপূর্ণ ৮-১০টি সড়ক। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পৌরসভার ৭ হাজার পরিবারের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরও অনেক পরিবার পানিবন্দী হওয়ার আশঙ্কা করছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে যশোর চুকনগর মহাসড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছে।
জানা গেছে, কেশবপুর পৌর শহরের বর্ষার অতিরিক্ত পানি বুড়িভদ্রা, হরিহর ও আপারভদ্রা নদী দিয়ে হরি নদীতে নিষ্কাশন হয়। এসব নদীতে অতিমাত্রায় পলি ওঠার কারণে নদী খননেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এ ছাড়া পলি ঠেকাতে আপারভদ্রা নদীর কাশিমপুর নামক স্থানে সময়মত ক্রসবাঁধ দেয়া ও অপসারণ না হওয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না পৌরসভার বাসিন্দারা। ফলে বিগত ৪ বছর যেনতেন বৃষ্টিতে পৌর শহর প্লাবিত হচ্ছে। দেড়মাস ধরে পানিবন্দী জীবনযাপন করছে পৌর বাসিন্দারা। তলিয়ে গেছে শহরের ধানহাটা, গমপট্টি, পাইকারি ও খুচরা সবজি বাজার, পাইকারি মাছের আড়ৎ। যে কারণে পাইকারি সবজির আড়ৎ মাইকেল গেটে স্থানান্তর করা হয়েছে। পানির ভেতরেই চলছে পাইকারি মাছের আড়তের বেচাকেনা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সাহাপাড়া, মধ্যকুল, আলতাপোল, হাবাসপোল, বালিয়াডাঙ্গা, ভোগতী নরেন্দ্রপুর এলাকার প্রায় ৫ হাজার পরিবার।
মধ্যকুল ১নং ওয়ার্ড (মধ্যকুল) কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান জানান, হরিহর নদী উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে মধ্যকুল, হাবাসপোল, ভোগতী নরেন্দ্রপুর এলাকার প্রায় প্রতিটি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। নদী পলিতে ভরাটের কারণে পানি সরছে না। পানিবন্দীরা যশোর সাতক্ষীরা সড়কের দুপাশে টংঘরে বসবাস করছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার টংঘরে আশ্রয় নেয়া বাসিন্দাদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। পানিতে বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপণ করছে।
আলতাপোল এলাকার কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু বলেন, এক মাস আগে তার নিজের বাসাসহ বাসিন্দাদের বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। পানি পচে কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর ভেতরই প্রতিনিয়ত গৃহস্থলির সমস্ত কাজ সারতে হচ্ছে। বাসিন্দারা বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএম শহিদুজ্জামান শহিদ বলেন, হরিহর নদী তার ওয়ার্ডের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর উপচে পড়া পানি এলাকায় ঢুকে পড়েছে। সবচয়ে বেশি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে গাজীপাড়ার বাসিন্দারা। মানুষকে যাতায়াতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আলা বলেন, তার ইউনিয়নের মধ্যকুল, আলতাপোল, মূলগ্রাম, মাগুরাডাঙা, সুজাপুর ও ব্যাসডাঙা গ্রামে প্রায় দুইশ পরিবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এলাকায় টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার জানান, আপারভদ্রা, হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদীর পলি অপসারণে প্রকল্প তৈরি করে কপোতাক্ষ নদের সংশোধনী প্রজেক্টে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। কিন্তু তা অনুমোদন না হওয়ায় নদী খনন সম্ভব হয়নি। তবে হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদীর পলি অপসারণে স্কাভেটর মেশিন দিয়ে কাজ চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন বলেন, ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। নদীর শ্যাওলা অপসারণসহ ভেকু মেশিন দিয়ে বুড়িভদ্রা ও হরিহর নদীর পলি অপসারণের কাজ চলছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।
কেশবপুর (যশোর) : পানির ভেতরেই চলছে পাইকারী মাছের আড়তের কার্যক্রম -সংবাদ
সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
ব্রিজ-কালর্ভাটের মুখ ভরাট করে অপরিকল্পিত মাছের ঘেরসহ পলিতে নদী ভরাটের প্রভাবে কেশবপুর পৌর শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ ধারণ করায় দেড় মাস ধরে পানিতে তলিয়ে আছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ধানহাটা, গমপট্টি, পাইকারি ও খুচরা সবজি বাজার, পশুহাটসহ গুরুত্বপূর্ণ ৮-১০টি সড়ক। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পৌরসভার ৭ হাজার পরিবারের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরও অনেক পরিবার পানিবন্দী হওয়ার আশঙ্কা করছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে যশোর চুকনগর মহাসড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছে।
জানা গেছে, কেশবপুর পৌর শহরের বর্ষার অতিরিক্ত পানি বুড়িভদ্রা, হরিহর ও আপারভদ্রা নদী দিয়ে হরি নদীতে নিষ্কাশন হয়। এসব নদীতে অতিমাত্রায় পলি ওঠার কারণে নদী খননেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এ ছাড়া পলি ঠেকাতে আপারভদ্রা নদীর কাশিমপুর নামক স্থানে সময়মত ক্রসবাঁধ দেয়া ও অপসারণ না হওয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না পৌরসভার বাসিন্দারা। ফলে বিগত ৪ বছর যেনতেন বৃষ্টিতে পৌর শহর প্লাবিত হচ্ছে। দেড়মাস ধরে পানিবন্দী জীবনযাপন করছে পৌর বাসিন্দারা। তলিয়ে গেছে শহরের ধানহাটা, গমপট্টি, পাইকারি ও খুচরা সবজি বাজার, পাইকারি মাছের আড়ৎ। যে কারণে পাইকারি সবজির আড়ৎ মাইকেল গেটে স্থানান্তর করা হয়েছে। পানির ভেতরেই চলছে পাইকারি মাছের আড়তের বেচাকেনা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সাহাপাড়া, মধ্যকুল, আলতাপোল, হাবাসপোল, বালিয়াডাঙ্গা, ভোগতী নরেন্দ্রপুর এলাকার প্রায় ৫ হাজার পরিবার।
মধ্যকুল ১নং ওয়ার্ড (মধ্যকুল) কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান জানান, হরিহর নদী উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে মধ্যকুল, হাবাসপোল, ভোগতী নরেন্দ্রপুর এলাকার প্রায় প্রতিটি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। নদী পলিতে ভরাটের কারণে পানি সরছে না। পানিবন্দীরা যশোর সাতক্ষীরা সড়কের দুপাশে টংঘরে বসবাস করছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার টংঘরে আশ্রয় নেয়া বাসিন্দাদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। পানিতে বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপণ করছে।
আলতাপোল এলাকার কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু বলেন, এক মাস আগে তার নিজের বাসাসহ বাসিন্দাদের বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। পানি পচে কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর ভেতরই প্রতিনিয়ত গৃহস্থলির সমস্ত কাজ সারতে হচ্ছে। বাসিন্দারা বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএম শহিদুজ্জামান শহিদ বলেন, হরিহর নদী তার ওয়ার্ডের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর উপচে পড়া পানি এলাকায় ঢুকে পড়েছে। সবচয়ে বেশি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে গাজীপাড়ার বাসিন্দারা। মানুষকে যাতায়াতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আলা বলেন, তার ইউনিয়নের মধ্যকুল, আলতাপোল, মূলগ্রাম, মাগুরাডাঙা, সুজাপুর ও ব্যাসডাঙা গ্রামে প্রায় দুইশ পরিবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এলাকায় টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার জানান, আপারভদ্রা, হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদীর পলি অপসারণে প্রকল্প তৈরি করে কপোতাক্ষ নদের সংশোধনী প্রজেক্টে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। কিন্তু তা অনুমোদন না হওয়ায় নদী খনন সম্ভব হয়নি। তবে হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদীর পলি অপসারণে স্কাভেটর মেশিন দিয়ে কাজ চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন বলেন, ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। নদীর শ্যাওলা অপসারণসহ ভেকু মেশিন দিয়ে বুড়িভদ্রা ও হরিহর নদীর পলি অপসারণের কাজ চলছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।