ছবি : অনলাইন থেকে সংগৃহীত
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার মেসার্স কেশব ট্রেডার্সে সার পেতে কৃষকদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের মাঝে সার বিক্রয় না করে কৌশলে সটকে পড়ে ডিলারের ম্যানেজার আব্দুল আজিত। এ সময় কৃষকরা সার না পেয়ে সার গোডাউনের সামনেই সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের নিজবাড়ি এলাকায় ওই সার ডিলারের গোডাউনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা যায়, উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভজনপুর বাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক অনুমোদিত মেসার্স কেশন ট্রেডার্স নামীয় প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হচ্ছেন গণেশ চন্দ্র ঘোষ। উপজেলার ভজনপুর বাজারে একাধিক বিসিআইসি ডিলার সহ বিএডিসি ডিলার থাকায় উপজেলা কমিটি কর্তৃক কেশব ট্রেডার্স নামীয় প্রতিষ্ঠানকে দেবনগড় বাজারে স্থানান্তর করা হয়েছে। আরও জানা যায়, আগস্ট মাসে ওই ডিলার সার বরাদ্দ পেয়েছেন ইউরিয়া ১২৮ মেট্রিক টন, টিএসপি ৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন, এমওপি ৮ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ৫ দশমিক ৪ মেট্রিক টন।
বিক্ষোভে কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, দেবনগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষকরা তাদের খেতের কাজ ফেলে সার ক্রয় করতে ওই প্রতিষ্ঠানে যান সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে কৃষকদের নিকট সার বিক্রি না করে ডিলারের নিযুক্ত ম্যানেজার সটকে পড়ে। এসময় দীর্ঘক্ষণ যোগাযোগ না করেও কোনো সাড়া না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে গুদামের সামনেই সার চাই, সার চাই বলে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করে গুদামের সামনে বসে পড়েন।
কৃষকরা আরও অভিযোগ করে বলেন, একটি আবাসিক এলাকায় মেসার্স কেশব ট্রেডার্স নামে প্রতিষ্ঠানটির ডিলার গোডাউন ঘর নির্মাণ করে সার বিক্রি করেন যার এক চতুর্থাংশ মানুষ অবগত নন। এর আগে প্রায় কয়েকমাস ওই গোডাউনের সামনেই ছিল না কোনো সাইবোর্ড। এলাকাবাসি ও কৃষকদের অভিযোগ রাতে কিংবা দিনের বেলায় এই গোডাউন থেকে ভ্যানে সার লোড করে বিভিন্ন স্থানে যায়। এছাড়া তাদের অভিযোগ কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করলে সরকারি রেটে সার বিক্রি করতে হবে তাই সিন্ডিকেট করে সারের ডিলার সার বিক্রি করেন খুচরা কীটনাশক দোকানদানদের নিকট। পরে তারাই কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দাম নেন।
এদিকে স্থানীয় বাজারগুলোতে কীটনাশক দোকানদাররা কৃষকদের কাছ থেকে সাড়ে ১৩শ টাকার বস্তা নিচ্ছে ১৭শ থেকে ১৯শ টাকা এবং এক হাজার ৫০ টাকার বস্তা নিচ্ছে ১২শ টাকা। যদিও কীটনাশক দোকানদাররা সার বিক্রি করতে পারবেন না তবুও ডিলারের থেকে তাদের দোকানগুলোতেই বেশি সার মজুদ রাখা আছে বলে সাধারন কৃষকদের অভিযোগ উঠেছে।
বিক্ষোভকারী কৃষকরা স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি অফিসকে বিষয়টি জানালে দীর্ঘক্ষণ পর কৃষি অফিসার ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর ডিলারের লোকজন এসে সার বিক্রি করেন।
রবিউল ইসলাম নামে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, রাতের আধারে সার ভ্যানে করে নিয়ে যায়, বাজারের দোকানদারের কাছে সার বিক্রি করে দেয়া হয় কিন্তু কৃষকদের দেয়া হয় না।
ওই ইউনিয়নের বাদিয়াগছ থেকে আসা কৃষক আজিবদ্দিন, টোটুয়াপাড়া থেকে আসা কৃষক রাশেদুজ্জামান, নতিফগছ থেকে আসা কৃষক মজিবর রহমান ও আতমাগছ থেকে আসা কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা ৭০ থেকে ১০০ জন কৃষক সার নিতে ওই ডিলারের প্রতিষ্ঠানে আসলে সকালে কয়েকজন কৃষকদের নিকট সার বিক্রি করে ডিলারের ম্যানেজার পালিয়ে যায়। পড়ে অনেকবার ফোন করেও তারা ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এরপর ইউএনও ও কৃষি অফিসারকে বিষয়টি জানালে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ^াস দিয়ে তাদের অপেক্ষা করতে বলেন। তারা আরও বলেন, সারের জন্য এসে সার পাচ্ছি না, খুচরা বাজারে সার বিক্রি করে দেয় এরা। পরে বেশি দামে আমাদের সার কিনতে হয়। ডিলারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে কৃষকরা প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা এই বিক্ষোভ করেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমাউন কবির বলেন, সকালের দিকে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন কৃষক সার নিতে এসে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে ডিলারের লোকজন সার বিক্রি করা বন্ধ করে দেয়। এরপর তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করেন।
কেশব ট্রেডার্সের ম্যানেজার আব্দুল আজিত বলেন, আমরা তো ভাই সার দিচ্ছিলাম।
দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছলেমান আলী বলেন, খবর পেয়ে তিনি গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে দেয়। তিনি বলেন, সার যে বরাদ্দ আসছে তাতে ১০০ লোক সার পাবে এখানে প্রায় ২ হাজারের বেশি জনগণ কৃষক আসছিলেন। চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যে উপস্থিত কৃষকরা অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, চেয়ারম্যানের বক্তব্যে পক্ষ পাতিত হয়েছে। যেখানে ৭০-১০০ কৃষক সেখানে চেয়ারম্যান ২ হাজার জন বানিয়ে দিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, কৃষি অফিসার এ বিষয়ে অবগত করেছেন। সার বিক্রয়ে ডিলারের বিরুদ্ধে কৃষক হয়রানির সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ছবি : অনলাইন থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার মেসার্স কেশব ট্রেডার্সে সার পেতে কৃষকদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের মাঝে সার বিক্রয় না করে কৌশলে সটকে পড়ে ডিলারের ম্যানেজার আব্দুল আজিত। এ সময় কৃষকরা সার না পেয়ে সার গোডাউনের সামনেই সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের নিজবাড়ি এলাকায় ওই সার ডিলারের গোডাউনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা যায়, উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভজনপুর বাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক অনুমোদিত মেসার্স কেশন ট্রেডার্স নামীয় প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হচ্ছেন গণেশ চন্দ্র ঘোষ। উপজেলার ভজনপুর বাজারে একাধিক বিসিআইসি ডিলার সহ বিএডিসি ডিলার থাকায় উপজেলা কমিটি কর্তৃক কেশব ট্রেডার্স নামীয় প্রতিষ্ঠানকে দেবনগড় বাজারে স্থানান্তর করা হয়েছে। আরও জানা যায়, আগস্ট মাসে ওই ডিলার সার বরাদ্দ পেয়েছেন ইউরিয়া ১২৮ মেট্রিক টন, টিএসপি ৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন, এমওপি ৮ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ৫ দশমিক ৪ মেট্রিক টন।
বিক্ষোভে কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, দেবনগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষকরা তাদের খেতের কাজ ফেলে সার ক্রয় করতে ওই প্রতিষ্ঠানে যান সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে কৃষকদের নিকট সার বিক্রি না করে ডিলারের নিযুক্ত ম্যানেজার সটকে পড়ে। এসময় দীর্ঘক্ষণ যোগাযোগ না করেও কোনো সাড়া না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে গুদামের সামনেই সার চাই, সার চাই বলে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করে গুদামের সামনে বসে পড়েন।
কৃষকরা আরও অভিযোগ করে বলেন, একটি আবাসিক এলাকায় মেসার্স কেশব ট্রেডার্স নামে প্রতিষ্ঠানটির ডিলার গোডাউন ঘর নির্মাণ করে সার বিক্রি করেন যার এক চতুর্থাংশ মানুষ অবগত নন। এর আগে প্রায় কয়েকমাস ওই গোডাউনের সামনেই ছিল না কোনো সাইবোর্ড। এলাকাবাসি ও কৃষকদের অভিযোগ রাতে কিংবা দিনের বেলায় এই গোডাউন থেকে ভ্যানে সার লোড করে বিভিন্ন স্থানে যায়। এছাড়া তাদের অভিযোগ কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করলে সরকারি রেটে সার বিক্রি করতে হবে তাই সিন্ডিকেট করে সারের ডিলার সার বিক্রি করেন খুচরা কীটনাশক দোকানদানদের নিকট। পরে তারাই কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দাম নেন।
এদিকে স্থানীয় বাজারগুলোতে কীটনাশক দোকানদাররা কৃষকদের কাছ থেকে সাড়ে ১৩শ টাকার বস্তা নিচ্ছে ১৭শ থেকে ১৯শ টাকা এবং এক হাজার ৫০ টাকার বস্তা নিচ্ছে ১২শ টাকা। যদিও কীটনাশক দোকানদাররা সার বিক্রি করতে পারবেন না তবুও ডিলারের থেকে তাদের দোকানগুলোতেই বেশি সার মজুদ রাখা আছে বলে সাধারন কৃষকদের অভিযোগ উঠেছে।
বিক্ষোভকারী কৃষকরা স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি অফিসকে বিষয়টি জানালে দীর্ঘক্ষণ পর কৃষি অফিসার ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর ডিলারের লোকজন এসে সার বিক্রি করেন।
রবিউল ইসলাম নামে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, রাতের আধারে সার ভ্যানে করে নিয়ে যায়, বাজারের দোকানদারের কাছে সার বিক্রি করে দেয়া হয় কিন্তু কৃষকদের দেয়া হয় না।
ওই ইউনিয়নের বাদিয়াগছ থেকে আসা কৃষক আজিবদ্দিন, টোটুয়াপাড়া থেকে আসা কৃষক রাশেদুজ্জামান, নতিফগছ থেকে আসা কৃষক মজিবর রহমান ও আতমাগছ থেকে আসা কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা ৭০ থেকে ১০০ জন কৃষক সার নিতে ওই ডিলারের প্রতিষ্ঠানে আসলে সকালে কয়েকজন কৃষকদের নিকট সার বিক্রি করে ডিলারের ম্যানেজার পালিয়ে যায়। পড়ে অনেকবার ফোন করেও তারা ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এরপর ইউএনও ও কৃষি অফিসারকে বিষয়টি জানালে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ^াস দিয়ে তাদের অপেক্ষা করতে বলেন। তারা আরও বলেন, সারের জন্য এসে সার পাচ্ছি না, খুচরা বাজারে সার বিক্রি করে দেয় এরা। পরে বেশি দামে আমাদের সার কিনতে হয়। ডিলারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে কৃষকরা প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা এই বিক্ষোভ করেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমাউন কবির বলেন, সকালের দিকে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন কৃষক সার নিতে এসে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে ডিলারের লোকজন সার বিক্রি করা বন্ধ করে দেয়। এরপর তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করেন।
কেশব ট্রেডার্সের ম্যানেজার আব্দুল আজিত বলেন, আমরা তো ভাই সার দিচ্ছিলাম।
দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছলেমান আলী বলেন, খবর পেয়ে তিনি গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে দেয়। তিনি বলেন, সার যে বরাদ্দ আসছে তাতে ১০০ লোক সার পাবে এখানে প্রায় ২ হাজারের বেশি জনগণ কৃষক আসছিলেন। চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যে উপস্থিত কৃষকরা অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, চেয়ারম্যানের বক্তব্যে পক্ষ পাতিত হয়েছে। যেখানে ৭০-১০০ কৃষক সেখানে চেয়ারম্যান ২ হাজার জন বানিয়ে দিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, কৃষি অফিসার এ বিষয়ে অবগত করেছেন। সার বিক্রয়ে ডিলারের বিরুদ্ধে কৃষক হয়রানির সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।