তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন
তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন
কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদী বেষ্ঠিত চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ও শতশত একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটে মাটি হারিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে হাজারো পরিবার, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শত শত একর ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে তিস্তা পারের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার থেতরাই, বজরা, গুনাইগাছ ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এই ইউনিয়ন গুলোর নদী উপকুলের চরাঞ্চল পশ্চিম বজরা, পাকার মাথা, উত্তর সাদুয়া দামার হাট, খামার দামার হাট নদীর পশ্চিম পাড়া, সাতালস্কর, চর বজরা, সন্তোষ অভিরাম, কাজিরচক, টিটমা, ঠুটাপাইকার, কর্পুরা, চাপরাপাড় রেডক্রস, লাল মসজিদ ও অর্জুন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা নদীর ভাঙনে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় বসত ভিটে ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এসব পরিবারের লোকজন মাথা গোজার জন্য অন্যের জমিতে ঘর তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেই আবার নিজেদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তা নদীতে বসত ভিটে হারিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকা মজিবর রহমান (৫০), আইয়ুব আলী (৬৫), তৈয়ব আলী (৫২), মর্জিনা বেগম (৩২) ও সাজিনা বেগমসহ (৪৬) আরও অনেকে বলেন, নদীর ভাঙনে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। শত শত একর আবাদি জমি বাড়িঘর-ভিটে সব নদীতে চলে গেছে। তিস্তা নদী আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের চলার মতো কিছুই থাকল না। তিস্তা নদীর ভাঙনের কবলে পড়া আব্দুল মজিদ (৪৫), মহুবর মিয়া (৫৫), শফিকুল (৪৬), বাবলু (৬২), আছিয়া বেওয়া (৪৩) ও মোকছেদুলসহ (৫৮) আরও অনেকে জানান, তিস্তার ভাঙনে আমরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছি। আমরা সাহায্য চাই না আমরা চাই নদী সংস্কার। নদী ভাঙনরোধের জোর দাবি জানান তারা।
উপজেলার চর গোড়াইপিয়ার এলাকার দবির উদ্দিন (৬৭) বলেন, স্থানীয় চর গোড়াইপিয়ার জামে মসজিদের মোয়াজ্জিনি ও কৃষি কাজ করে জীবন যাপন করি। গত কয়েক বছরে আমার বাড়ি ১৫ বার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে এ চরে অবস্থান নেই। সম্প্রতি তিস্তার ভাঙনে মসজিদ সহ আমার বাড়ি আবারো নদীতে চলে যায়। কয়েকদিন হয়ে গেলো ঠিকভাবে পেটভরে খেতে পারছি না। উপজেলার থেতরাই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজিজার রহমান বলেন, গত কয়েকদিনের ভাঙনে শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ও শতশত একর আবাদি জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এ ছাড়া হুমকিতে রয়েছে চর গোড়াইপিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাম নিয়াসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুয়ান সতরা চর গোড়াইপিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪টি মসজিদ, ৪টি নূরানী মাদ্রাসাসহ কয়েক হাজার লোকের বাড়িঘর ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা জানান, ভাঙনকবলিত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, তিস্তা নদীতে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকাগুলোতে নদী শাসনের জন্য আরও বিপুল পরিমাণ জিও ব্যাগ ফেলার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
সেখানে ভাঙনরোধে দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।