চকরিয়া সংরক্ষিত বনের জমিতে অবৈধ করাতকল
চকরিয়া সংরক্ষিত বনের জমিতে অবৈধ করাতকল
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অধীন চকরিয়া উপজেলার হারবাং বনবিটের উত্তর হারবাং এলাকায় বনের জায়গায় গড়ে তোলা আওয়ামী লীগ নেতার একটি অবৈধ করাতকল এখন চোরাই গাছের ডিপোতে পরিণত হয়েছে।
গ্রামের ভেতরে বনের জমিতে স্থাপিত এ করাতকলে চোরাকারবারি চক্র কর্তৃক বেশিরভাগ গাছ এনে চিরাই করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চলের বনাঞ্চল থেকে। এ অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে আশপাশের সরকারি বনাঞ্চলের মূল্যবান বৃক্ষরাজি।
সরকারি অনুমোদন বিহীন গড়ে তোলা করাতকলটির মালিক স্থানীয় আজিজনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম। তবে বর্তমানে তার জামাতা মনির আহমদ করাতকলটি পরিচালনা করছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের আজিজনগর গজালিয়া সড়ক দিয়ে অর্ধকিলোমিটার গেলে হাতের ডান পাশে দেখা যায় সরকারি অনুমোদন বিহীন গড়ে তোলা এই করাতকল। আজিজনগর ও হারবাং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী স্থানে করাতকলের অবস্থান হলেও চকরিয়া উপজেলার হারবাং বনবিটের আওতাধীন বন এলাকায় করাতকলটি গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চুনতি সংরক্ষিত বনের হারবাং বিটের আওতাধীন জায়গায় গড়ে উঠেছে ৪টি দালান, কয়েকটি কলোনি, একটি করাতকল ও একটি প্লাইউড কারখানা। দীর্ঘ বছর ধরে নির্বিঘ্নে করাতকলে সংরক্ষিত বনের গাছ চেরাই করা হলেও বন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন একেবারে নীরব। অথচ এ পথ দিয়েই বন কর্মকর্তারা প্রতিদিন বনাঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্টে চলাফেরা করেন।
করাতকলের পরিচালক মনির আহমদ বলেন, আমাদের করাতকলটির কিছু জায়গা চুনতি বনের, কিছু জায়গা পার্বত্য চট্টগ্রামের। করাতকলের বিপরীতে পার্বত্য অংশের অনুমোদন আছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বনের জমিতে সরকারি লাইসেন্স ছাড়াই এ করাতকল চলছে দীর্ঘ বছর ধরে। করাতকলে প্রতিদিনই বনের গাছ চেরাই করে গোপনে কাঠ বাইরে পাচার হচ্ছে। ফলে আশপাশের বনাঞ্চল ছাড়াও সংরক্ষিত বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, অবৈধ এই করাতকলের কারণে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকার বাগান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারপরও অনুমোদনবিহীন এসব করাতকলের বিরুদ্ধে বন বিভাগের কার্যকর অভিযান না থাকায় অনেক সংরক্ষিত বনাঞ্চল এখন বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
বন আইনে বলা হয়েছে, বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ এই করাতকলটি বনের জায়গায় গড়ে উঠেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বন বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনুমোদনবিহীন এসব করাতকল গড়ে তোলা হয়েছে বনাঞ্চলসহ আবাসিক এলাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজিজনগরে আবাসিক এলাকার পাশে গড়ে ওঠা করাতকলের শব্দে অতিষ্ঠ তারা। এক প্রকার মানসিক রোগী হয়ে গেছেন বলে আক্ষেপের সুরে তারা বলেন, সারাদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরে শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারি না। প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা-হামলার ভয় দেখান করাতকলের মালিক। এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই।
অভিযোগ রয়েছে, চুনতি রেঞ্জ কর্মকর্তা ও হারবাং বনবিট কর্মকর্তার নাকের ডগায় দিন-রাত চোরাই গাছ চেরাই হচ্ছে ওই করাতকলে। তাছাড়া সন্ধ্যা নামলেই গজালিয়া সড়ক থেকে বের হয় কাঠভর্তি জিপ গাড়ি। প্রতিটি গাড়ি থেকে বন কর্মকর্তারা পান নির্ধারিত অঙ্কের মাসহারা।
সূত্রে জানা যায়, রেঞ্জ কর্মকর্তা, বনবিট কর্মকর্তা, স্পেশাল ও সহকারী বন সংরক্ষকের নামে গাছ কেটে পাচার, পাহাড় কেটে মাটি লুট এবং অবৈধ করাতকল চালাতে কথিত ক্যাশিয়ার টোকেন দেন। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা ও ফরেস্ট গার্ডদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বছরের পর বছর জুড়ে গাছ পাচারও হচ্ছে, অবৈধ করাতকলও চালু রয়েছে। ফলে এসব বন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না বন বিভাগ।চাইলে চকরিয়া উপজেলার হারবাং বনবিট কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অভিযান চালিয়ে ওই করাতকল থেকে বেশকিছু গাছ জব্দ ও করাতকলটি বন্ধ করে দিয়েছি। তবে মালিক বলেছে, তাদের অনুমোদন কাগজপত্র আছে। এ ধরনের কিছু কাগজ আমাকেও দিয়েছে।
কিন্তু আমি হারবাং বনবিট থেকে বদলি হয়ে যাবার কারণে করাতকলের কাগজপত্রগুলো আর যাছাই করে দেখা হয়নি। তবে আমাদের অভিযানের পর করাতকলটি বন্ধ রয়েছে জানি।
বনের জায়গায় অবৈধ করাতকল কীভাবে চলে? জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবির হাসান বলেন, অনুমোদন আছে কি না দেখতে হবে। করাতকলটি অবৈধ হলে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করে দেওয়া হবে।