চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রায় সব কয়টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মৌসুমি জ্বরের রোগীদের ভিড়। সেবা দিতে চরম হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। গ্রামগঞ্জের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে এই মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ। এই জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধই বেশি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে রোগীর ভিড়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। হাসপাতালে দেখা দিয়েছে ওষুধ সংকট। জ্বরের প্রভাবে বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক, শ্বাসকষ্টজনিত রোগী এবং যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, জীবননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা গেছে, রোগীর ভিড়। অনেকেই বেডে (শয্যাই) জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রোগীরা জানান, জ্বরের সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ভুগতে হচ্ছে। জ্বর ভালো হওয়ার পরও শারীরিক ক্লান্তি, ব্যথা থাকছে দীর্ঘদিন। যার ছাপ পড়ছে দৈনন্দিন কাজে। ঠিকমতো খেতে পারছে না অনেকেই রুচিতে সমস্যা। এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, ৭ থেকে ১০ দিনের চিকিৎসায় জ্বর থেকে রেহায় পেলেও শারীরিক দুর্বলতা কাটতে ও গায়ে ব্যথা সারতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, গত এক সপ্তাহে সদর হাসপাতালেরসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও আশপাশ ক্লিনিক গুলোতে ভর্তি হয়েছেন হাজার হাজার রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই জ্বরে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্ক। জ্বরের রোগী হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায়। হাসপাতালে দেখা দিয়েছে ওষুধ সংকট।
আক্রান্ত রোগীরা জানান, প্রথমে মাথা ও শরীর ব্যথা হচ্ছে। তার পর কাঁপুনি দিয়ে প্রচ- জ্বর আসছে এবং তার সঙ্গে কাশি হচ্ছে। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে সেই পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন এবং মুমুর্ষু হয়ে পড়ছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার বলেন, জুলাইয়ের শুরু থেকে এই জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী দেখতে হচ্ছে। রোগী দেখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এটি আমরা মৌসুমি জ্বর বলছি। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বা বেশি তাপমাত্রা, বেশি ঠাণ্ডাজনিত এমনকি অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এ জ্বর হতে পারে। তবে অন্তত সাত থেকে ১০ দিন চিকিৎসা নিতে হবে। তবে জ্বর অনুভব হলে দ্রত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
এ বিষয় চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডাক্তার হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা জেলায় মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ বড়ো আকার ধারণ করছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীদের ভিড় সামলাতে হচ্ছে। তবে এ জ্বরে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুষ্টিকর খাবার খেলে, নিয়মিত ওষুধ সেবন, প্রচুর তরল গ্রহণ, বিশ্রাম নিলে এ ধরনের সংক্রামক থেকে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব। তবে জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।