প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)

সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫

৬০ বছর পথচলায় এক আলোর ফেরিওয়ালা খালেক

image

৬০ বছর পথচলায় এক আলোর ফেরিওয়ালা খালেক

সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের এক কোণায় প্রতিদিন সকালে বসে পড়েন ৭৮ বছর বয়সী মো. আব্দুল খালেক। না, তার দোকানে নেই ঝলমলে আলো কিংবা রঙিন পোস্টার। নেই ডিজিটাল ডিসপ্লে বা আকর্ষণীয় প্রচারণা। কিন্তু রয়েছে বইয়ের ঘ্রাণ, স্মৃতির স্পর্শ আর অদম্য এক ভালোবাসা—মানুষ গড়ার।

১৯৬৫ সালে কালীগঞ্জ বাজারে মাত্র কয়েকটি পুরোনো বই নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন খালেক। তখন স্থানীয় পর্যায়ে বইয়ের দোকান বলতে যা ছিল, তা হাতে গোনা। শিক্ষাকে সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই পথচলা শুরু করেন তিনি। খালেক বলেন, শিক্ষা যেন সবার হাতে পৌঁছায়, সাশ্রয়ী দামে—এই ছিল আমার স্বপ্ন।

আজও তার দোকানে আর আগের মত ৬০-৭০ দশকের বাংলা সাহিত্য নেই। কবে জীবনের প্রথম শিক্ষার আদর্শ লিপি। অনেকেই বলেন, খালেক ভাইয়ের কাছে এক সময় শুধু বই পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় অতীত, আবেগ আর জীবনের ছোঁয়া।

খালেক এখনো প্রতিদিন দোকানে বসেন। কাপা কাপা শরীর নিয়ে, চোখেও খুব একটা ভাল দেখেন না, করেন চশমার ব্যবহার, শরীরে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। তবু বইয়ের পাতায় হাত রেখে বলেন, এইগুলো শুধু কাগজ না, মানুষ এগুলার ভেতরে স্বপ্ন দেখে।

তার দোকানে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসেন। কেউ বই কিনতে, কেউ পুরোনো দিনের গল্প শুনতে। অনেকে খুঁজে বেড়ান নিজেদের শৈশবের পাঠ্যবই। কারও জীবনের প্রথম বই কিনেছেন খালেক মিয়ার হাত থেকে। আজ তারাই তাদের সন্তানদের হাতে সেই একই বই তুলে দিচ্ছেন।

জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বারিসাব ইউনিয়নের মানুষ খালেক কিশোর বয়সে বাবার সঙ্গে কালীগঞ্জে আসেন। তার বাবা কাজ করতেন তৎকালীন সময়কার এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম কারখানা মসলিন কটন মিলে। শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার না করতে পারলেও খালেকের হৃদয়ে ছিল শিক্ষার প্রতি এক গভীর ভালোবাসা। সেই টান থেকেই বই বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।

বয়সের ভারে এখন শরীর আর আগের মতো সাড়া দেয় না। মাঝে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে বিছানায়ও শুয়ে থাকতে হয়েছে অনেকদিন। তবে সেরে উঠে আবার ফিরে এসেছেন তার চিরচেনা পেশায়। বর্তমানে স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই পাশে। একমাত্র কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন, তিনি এখন শ্বশুরবাড়িতে। আমি কোনোদিন বড়লোক হইনি, ব্যাংক ব্যালেন্সও নেই। কিন্তু এই ছোট দোকান থেকে যতো মানুষ জীবনের প্রথম বই কিনে আজ শিক্ষক, ডাক্তার, লেখক হয়েছে। এই গর্বে আমি নিজেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির চেয়েও বড় মনে করি। কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমরা তখন এমসিএম হাই স্কুলে পড়ি। নতুন বই কেনা সবার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু খালেক ভাইয়ের কাছ থেকে পুরোনো বই কিনে মাধ্যমিক শেষ করেছি। লেখক ও চিকিৎসক অসীম হিমেল বলেন, আজ যখন ডিজিটাল যুগে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছে, তখন খালেক মিয়ার মতো মানুষেরা যেন একেকজন আলোর রাখাল। তারা মনে করিয়ে দেন—মানুষকে গড়ার জন্য, একটি জাতিকে জাগানোর জন্য এখনো বইয়ের বিকল্প নেই।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» গ্যাস সংকটের প্রতিবাদে শনির আখড়ায় তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ

» সিরাজগঞ্জে মরিয়ম হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন

» বেতাগীতে ঘনকুয়াশা, হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত

» মোরেলগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ ৫ বছরেও সম্পন্ন হয়নি

» বোয়ালখালীতে খালের গর্ভে বিলীন চলাচলের সড়ক

» রাউজানে আগুনে পুড়েছে ৩ পরিবারের বসতঘর

» রৌমারীতে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু

» রায়গঞ্জে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটায় ৪ ব্যক্তির জেল-জরিমানা

» পোরশায় গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

» প্রকৌশলীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

» টুঙ্গিপাড়ায় এনসিপির সমন্বয় কমিটি গঠন

» হবিগঞ্জে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

» নোয়াখালীতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে যুবক খুন

» সাঘাটায় হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপনে আলোচনা সভা

» বরুড়ায় কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ

» মহেশপুরে বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুতি সভা

» ‘লাইনম্যানের’ দৌরাত্মে দিশেহারা সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা

» ভালুকায় ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোষক কারিগরদের

» মীরসরাইয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে এক যুগের পুরোনো ভবন

» ধানের দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় কৃষকরা