রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ এলাকা, জনদুর্ভোগ চরমে -সংবাদ
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় অন্তত ৪০ গ্রামের প্রায় লাখো মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতা বন্যায় রূপ নিয়েছে। এতে করে প্রায় ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জলাবদ্ধতায় পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় মাছ চাষীরা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। বসতবাড়ি, হাটবাজার, দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। রাস্তায় জমেছে হাঁটুপানি। এমনকি বন্যা-পরিস্থিতির উপক্রম হয়েছে কিছু এলাকায়।
বিভিন্ন আবাসন কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালীমহল বালু ফেলে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৫০টি পানি নিষ্কাশনের সরকারী খাল ভরাট করায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল দখল ও বাড়িঘর নির্মাণ করাই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বলে মনে করেন স্থানীয়রা। পানি নিষ্কাশনে যাত্রামুড়া ও বানিয়াদির পাম্প হাউসগুলো কোনো কাজে আসছে না বলেও তাদের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রনী সেচ প্রকল্পের মাসাব, বরপা বাগানবাড়ি, সুতালড়া, আড়িয়াব, তেতলাব, কর্ণগোপ, মৈকুলী, ভায়েলা, পাঁচাইখা, মোগড়াকুল, পবনকুল, বরাব, খাদুন, যাত্রামুড়া, গোলাকান্দাইল, বিজয়নগর, বলাইখা, উত্তরপাড়া, মিয়াবাড়ি, নামাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, ৫ নম্বর ক্যানেল, রূপসী, হাটাবো টেকপাড়া, কালাদি, নলপাথর, নরাবো, কোশাব, আইতলা, ডুলুরদিয়া, গন্ধর্বপুর, শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি নিচু এলাকায় প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ এবং ১৯৯৩ সালে শতকোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের ভেতরে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। কল কারখানা ও জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনদুর্ভোগ। টানা বৃষ্টিতে দুটি সেচ প্রকল্প এলাকার কোথাও জমেছে হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সেচ প্রকল্প দুটির কৃষিজমিতে পানি সেচের তেমন ব্যবস্থা নেই। এসব কৃষিজমিতে ঘরবাড়ি ও শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এখন প্রকল্প দুটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দ্রুত করা দরকার। অগ্রণী সেচ প্রকল্পের যাত্রামুড়া পাম্প হাউস থেকে বরপা সেতু হয়ে একটি মূল খাল সেচ প্রকল্পের বানিয়াদী এলাকা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে সংযুক্ত হয়েছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পসহ প্রভাবশালীরা খালগুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও পানি সরাসরি ফেলা হয় বলে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে দুটি প্রকল্প এলাকার জনগণের পিছু ছাড়ছে না জলাবদ্ধতা।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ৫ নম্বর ক্যানেল ও নতুন বাজার এলাকায়। এখানে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বাস করে। জলাবদ্ধতা ঠেকাতে তারা খালগুলো পরিষ্কার করছেন। পরিষ্কার না করলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেবে।
রূপগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ১১ মাসে ৮টি খাল পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। একই সাথে কয়েকটি খাল পুনঃখনন করেছি। ইস্ট ঊড আবাসন কোম্পানি একটি পুরো খাল দখল করে ভরাট করেছিল সেটি আমরা উদ্ধার করে আবার পুনরায় খনন করেছি। আমাদের এখানে সিটি গ্রুপ নামের একটি বড় গ্রুপ খাল দখল করে মাটি ভরাট করে রেখেছে। এ ব্যাপারে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পত্র দিয়েছি, তারা কথা দিয়েছে আগামী মাসে উদ্ধার করে দিবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপপরিচালক রাকিবুল আলম রাজিব বলেন, রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো এখানকার অধিকাংশ খাল দখল হয়ে গেছে। বিশেষ করে তারাবো পৌরসভার খালগুলো এখন নানা শিল্পগ্রুপের দখলে। বেশ কিছু কোম্পানি খালের স্বাভাবিক প্রবাহ আটকে রেখেছে।
পাশাপাশি কাঞ্চন, ভুলতা, গোলাকান্দাইল এই সব এলাকায় আবাসন প্রকল্প ও সড়ক উন্নয়ন (চার লেন প্রকল্প) কাজের ফলে খালগুলো প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে পানি নিস্কাশন না হতে পেরে জরাবদ্ধতায় রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে চেষ্টা করছি দখল হওয়া খালগুলো উদ্ধার করতে, যাতে স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা যায়।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ এলাকা, জনদুর্ভোগ চরমে -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় অন্তত ৪০ গ্রামের প্রায় লাখো মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতা বন্যায় রূপ নিয়েছে। এতে করে প্রায় ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জলাবদ্ধতায় পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় মাছ চাষীরা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। বসতবাড়ি, হাটবাজার, দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। রাস্তায় জমেছে হাঁটুপানি। এমনকি বন্যা-পরিস্থিতির উপক্রম হয়েছে কিছু এলাকায়।
বিভিন্ন আবাসন কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালীমহল বালু ফেলে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৫০টি পানি নিষ্কাশনের সরকারী খাল ভরাট করায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল দখল ও বাড়িঘর নির্মাণ করাই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বলে মনে করেন স্থানীয়রা। পানি নিষ্কাশনে যাত্রামুড়া ও বানিয়াদির পাম্প হাউসগুলো কোনো কাজে আসছে না বলেও তাদের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রনী সেচ প্রকল্পের মাসাব, বরপা বাগানবাড়ি, সুতালড়া, আড়িয়াব, তেতলাব, কর্ণগোপ, মৈকুলী, ভায়েলা, পাঁচাইখা, মোগড়াকুল, পবনকুল, বরাব, খাদুন, যাত্রামুড়া, গোলাকান্দাইল, বিজয়নগর, বলাইখা, উত্তরপাড়া, মিয়াবাড়ি, নামাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, ৫ নম্বর ক্যানেল, রূপসী, হাটাবো টেকপাড়া, কালাদি, নলপাথর, নরাবো, কোশাব, আইতলা, ডুলুরদিয়া, গন্ধর্বপুর, শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি নিচু এলাকায় প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ এবং ১৯৯৩ সালে শতকোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের ভেতরে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। কল কারখানা ও জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনদুর্ভোগ। টানা বৃষ্টিতে দুটি সেচ প্রকল্প এলাকার কোথাও জমেছে হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সেচ প্রকল্প দুটির কৃষিজমিতে পানি সেচের তেমন ব্যবস্থা নেই। এসব কৃষিজমিতে ঘরবাড়ি ও শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এখন প্রকল্প দুটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দ্রুত করা দরকার। অগ্রণী সেচ প্রকল্পের যাত্রামুড়া পাম্প হাউস থেকে বরপা সেতু হয়ে একটি মূল খাল সেচ প্রকল্পের বানিয়াদী এলাকা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে সংযুক্ত হয়েছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পসহ প্রভাবশালীরা খালগুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও পানি সরাসরি ফেলা হয় বলে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে দুটি প্রকল্প এলাকার জনগণের পিছু ছাড়ছে না জলাবদ্ধতা।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ৫ নম্বর ক্যানেল ও নতুন বাজার এলাকায়। এখানে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বাস করে। জলাবদ্ধতা ঠেকাতে তারা খালগুলো পরিষ্কার করছেন। পরিষ্কার না করলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেবে।
রূপগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ১১ মাসে ৮টি খাল পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। একই সাথে কয়েকটি খাল পুনঃখনন করেছি। ইস্ট ঊড আবাসন কোম্পানি একটি পুরো খাল দখল করে ভরাট করেছিল সেটি আমরা উদ্ধার করে আবার পুনরায় খনন করেছি। আমাদের এখানে সিটি গ্রুপ নামের একটি বড় গ্রুপ খাল দখল করে মাটি ভরাট করে রেখেছে। এ ব্যাপারে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পত্র দিয়েছি, তারা কথা দিয়েছে আগামী মাসে উদ্ধার করে দিবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপপরিচালক রাকিবুল আলম রাজিব বলেন, রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো এখানকার অধিকাংশ খাল দখল হয়ে গেছে। বিশেষ করে তারাবো পৌরসভার খালগুলো এখন নানা শিল্পগ্রুপের দখলে। বেশ কিছু কোম্পানি খালের স্বাভাবিক প্রবাহ আটকে রেখেছে।
পাশাপাশি কাঞ্চন, ভুলতা, গোলাকান্দাইল এই সব এলাকায় আবাসন প্রকল্প ও সড়ক উন্নয়ন (চার লেন প্রকল্প) কাজের ফলে খালগুলো প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে পানি নিস্কাশন না হতে পেরে জরাবদ্ধতায় রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে চেষ্টা করছি দখল হওয়া খালগুলো উদ্ধার করতে, যাতে স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা যায়।