ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
স্কুল-কলেজে ভর্তি, চাকরি, পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ১৯টি সরকারি ও বেসরকারি কাজে জন্ম নিবন্ধন সনদ এখন বাধ্যতামূলক। তবে এই অত্যাবশ্যকীয় সনদ পেতে নাগরিকদের প্রতিনিয়ত নানা ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে যৌনকর্মী ও পথশিশুদের মতো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য জন্ম নিবন্ধন পাওয়া প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে নানা সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েও ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় জন্ম নিবন্ধন আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না
ভুয়া জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ে সহজ কোনো উপায় নেই
গত সোমবার ঢাকা আহছনিয়া মিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সংস্থাটির দাবি, জন্ম নিবন্ধনের জন্য আইন থাকলেও এর সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১৪ ক্যাটাগরির সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধন দেয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে উদাসীন।
আলোচনা সভায় উঠে এসেছে, বর্তমানে ভুয়া নিবন্ধন যাচাই করার কোনো সহজ উপায় নেই। এমনকি ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের সঙ্গে জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এ ধরনের জালিয়াতি বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করছে এবং অপরাধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে।
আহছনিয়া মিশন জানিয়েছে, তারা ‘বাংলাদেশে শিশু যৌন পাচার থেকে বেঁচে যাওয়াদের সুরক্ষা বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি পাইলটিং প্রকল্প পরিচালনা করছে। সংস্থাটির দাবি, এই প্রকল্পের আওতায় যৌন শোষণ ও পাচারের শিকার শিশুদের জন্ম নিবন্ধন, পুনর্বাসন, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেয়া হয়। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের কারণে নানা ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীরা নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হলেও ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের কারণে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। ঢাকা ও যশোরে ১৭ বছরের কম বয়সী ৫৯০ শিশুর ওপর জরিপ চালিয়ে এসব তথ্য জানায় সংস্থাটি।
সংস্থাটি জানায়, শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, যৌন পাচার বা শোষণের শিকার শিশুদের ক্ষতিপূরণের বিধান থাকলেও বাস্তবে এর কোনো নজির নেই। আইনি জটিলতা এবং পর্যাপ্ত সঠিক তথ্যের অভাবে ভুক্তভোগীরা ন্যায্য বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সভায় বক্তারা দাবি করে বলেছেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ভুয়া সনদের বিস্তার হচ্ছে এবং এই খাতে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দালালরা অর্থের বিনিময়ে জন্ম নিবন্ধন করিয়ে দিচ্ছে, যার অধিকাংশই ভুয়া। নিবন্ধনের জন্য যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দালালরা জোগাড় করে দেয় সেগুলোও ভুয়া। ফলে জন্ম সনদ জালিয়াতি ও ভুয়া তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করার ঘটনা বেড়েই চলেছে। আর বিরম্বনার শিকার হচ্ছে ভুক্তভোগীরা।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে- জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ ও অনলাইনভিত্তিক করা। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ের জন্য একটি শক্তিশালী ও সহজ পদ্ধতি তৈরি করা। শিশু আইন ২০১৩-এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধনের প্রক্রিয়াকে আরও সহজলভ্য করা। সংস্থাটি মনে করে, জন্ম নিবন্ধন জটিলতা নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য। পাশাপাশি এ ধরনের জালিয়াতি প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫
স্কুল-কলেজে ভর্তি, চাকরি, পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ১৯টি সরকারি ও বেসরকারি কাজে জন্ম নিবন্ধন সনদ এখন বাধ্যতামূলক। তবে এই অত্যাবশ্যকীয় সনদ পেতে নাগরিকদের প্রতিনিয়ত নানা ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে যৌনকর্মী ও পথশিশুদের মতো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য জন্ম নিবন্ধন পাওয়া প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে নানা সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েও ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় জন্ম নিবন্ধন আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না
ভুয়া জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ে সহজ কোনো উপায় নেই
গত সোমবার ঢাকা আহছনিয়া মিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সংস্থাটির দাবি, জন্ম নিবন্ধনের জন্য আইন থাকলেও এর সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১৪ ক্যাটাগরির সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধন দেয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে উদাসীন।
আলোচনা সভায় উঠে এসেছে, বর্তমানে ভুয়া নিবন্ধন যাচাই করার কোনো সহজ উপায় নেই। এমনকি ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের সঙ্গে জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এ ধরনের জালিয়াতি বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করছে এবং অপরাধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে।
আহছনিয়া মিশন জানিয়েছে, তারা ‘বাংলাদেশে শিশু যৌন পাচার থেকে বেঁচে যাওয়াদের সুরক্ষা বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি পাইলটিং প্রকল্প পরিচালনা করছে। সংস্থাটির দাবি, এই প্রকল্পের আওতায় যৌন শোষণ ও পাচারের শিকার শিশুদের জন্ম নিবন্ধন, পুনর্বাসন, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেয়া হয়। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের কারণে নানা ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীরা নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হলেও ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের কারণে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। ঢাকা ও যশোরে ১৭ বছরের কম বয়সী ৫৯০ শিশুর ওপর জরিপ চালিয়ে এসব তথ্য জানায় সংস্থাটি।
সংস্থাটি জানায়, শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, যৌন পাচার বা শোষণের শিকার শিশুদের ক্ষতিপূরণের বিধান থাকলেও বাস্তবে এর কোনো নজির নেই। আইনি জটিলতা এবং পর্যাপ্ত সঠিক তথ্যের অভাবে ভুক্তভোগীরা ন্যায্য বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সভায় বক্তারা দাবি করে বলেছেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ভুয়া সনদের বিস্তার হচ্ছে এবং এই খাতে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দালালরা অর্থের বিনিময়ে জন্ম নিবন্ধন করিয়ে দিচ্ছে, যার অধিকাংশই ভুয়া। নিবন্ধনের জন্য যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দালালরা জোগাড় করে দেয় সেগুলোও ভুয়া। ফলে জন্ম সনদ জালিয়াতি ও ভুয়া তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করার ঘটনা বেড়েই চলেছে। আর বিরম্বনার শিকার হচ্ছে ভুক্তভোগীরা।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে- জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ ও অনলাইনভিত্তিক করা। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ের জন্য একটি শক্তিশালী ও সহজ পদ্ধতি তৈরি করা। শিশু আইন ২০১৩-এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধনের প্রক্রিয়াকে আরও সহজলভ্য করা। সংস্থাটি মনে করে, জন্ম নিবন্ধন জটিলতা নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য। পাশাপাশি এ ধরনের জালিয়াতি প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।