alt

সারাদেশ

বিপৎসীমার দ্বারপ্রান্তে পদ্মা, ডুবেছে চর, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী : বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫

রাজশাহীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে পদ্মার পানি। ডুবছে তীরবর্তী এলাকা -সংবাদ

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর তীরবর্তী জেগে ওঠা চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের জমি ও বসতবাড়ি। গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন চরবাসীরা।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৭.৪৩ মিটার, যা বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটারের মাত্র ০.৬৬ মিটার নিচে। পানি বৃদ্ধির কারণে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি এড়াতে টি-বাঁধ এলাকায় প্রবেশ ও পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাশাপাশি নদীর পাড়সংলগ্ন ব্যবসায়ী ও দোকানিদেরও স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করে। ওইদিন পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৩৫ মিটার। পরবর্তীতে পানি কিছুটা কমলেও ৩১ জুলাই থেকে আবারও বৃদ্ধি শুরু হয় এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। গত ১০ আগস্ট সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭.১৩ মিটার, যা একই দিনের সন্ধ্যায় বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.২২ মিটারে। ১১ আগস্ট সকালে তা হয় ১৭.৩২ মিটার এবং সন্ধ্যায় পৌঁছায় ১৭.৩৯ মিটারে।

পানি বৃদ্ধির ফলে রাজশাহী ও সংলগ্ন বিভিন্ন চরের ওপরের অংশ ডুবে গেছে। চর খিদিরপুরের বাসিন্দা মাসুদ বলেন, ‘নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় চরগুলো তলিয়ে গেছে। আমরা গবাদিপশু ও মালামাল লোকালয়ে নিয়ে এসেছি, কিন্তু খাওয়ানোর জন্য এখন গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।’

আরেক বাসিন্দা রাকিব জানান, প্রতিদিন নৌকায় করে চরবাসীরা মালামাল সরাচ্ছেন। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ ভাড়া বাসায় উঠছেন। গবাদিপশু সরাতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন, কারণ চর এলাকায় এখনও অনেক পশু রয়ে গেছে। পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকের বাড়ির কাছে পানি পৌঁছে গেছে। চর ছেড়ে লোকালয়ে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, তবে গবাদিপশু নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি।’

পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, রাজশাহীতে পদ্মার বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটার। গত সোমবার সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭.৩৯ মিটার, যা বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি।

স্থানীয়দের ধারণা, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত বা গঙ্গার পানি প্রবাহ বাড়তে থাকলে পদ্মার পানি দ্রুত বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে আরও ব্যাপকভাবে সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কৃষি জমি, বসতবাড়ি ও গোখাদ্যের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে।

এদিকে ৭ বছর আগে চকরাজাপুর চরের মৃত শেখ রজব আলী মুন্সীর স্ত্রী করিমুন্নেছা ও ছেলে আবদুল খালেকের মৃত্যু হয়। ১০ বছর আগে ছেলে সুমনকে হারিয়েছেন মা জহুরা বেগম। ১৩ বছর আগে বাবা-মাকে হারিয়েছেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেন শিকদার। ১৫ বছর আগে বাবা-মাকে হারিয়েছেন লক্ষী।

তাদের ভিটে-মাটিসহ অতি আদরের বাবা-মা-সন্তানকে দাফন করা কবর কেড়ে নিচ্ছে রাক্ষুসে পদ্মা। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের দিয়ারকাদিরপুর চরের হতভাগা আবদুস সালামের স্ত্রী জহুরা বেগম ছেলে সুমনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায়।

তিনি বলেন, ১০ বছর আগে মাঠে পাউরুটিতে বিষ মাখিয়ে পাখি মারছিল চরের কিছু লোকজন। এই বিষ মাখানো পাউরুটি খেয়ে ছেলে সুমন মারা যায়। ওই সময় ভাঙনের ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে দাফন করা হয়। ১০ বছরের মাথায় কবর পদ্মা গ্রাস করছে।

এছাড়া চকরাজাপুর চরের লক্ষীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা হাজেরা বেগম ১৭ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। পূর্ব চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে দাফন করা হয়। ১৭ বছর পর ভাঙনে পদ্মায় চলে গেছে। লক্ষীর বাড়িঘরও ভেঙে গেছে। ফলে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছে বাড়ি।

২০১৮ সালে মা করিমুন্নেছা ও ছেলে আবদুল খালেকের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি তাদের কবর দেয়া হয়। সেই কবরও পদ্মা গ্রাস করে নিয়েছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন শিকদারের মতে, শুধু কবর না, এই চরে অনেক মানুষ গৃহহারা হয়েছেন।

চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, কবর তো নিয়ে যাচ্ছে রাক্ষুসে পদ্মা। পাশাপাশি ফসলি জমিসহ গাছপালা, বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কোনোরকম বেঁচে আছে কিছু মানুষ। তার বিদ্যালয়টি পদ্মা গ্রাস করে নিয়েছে। ফলে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টি তিনবার স্থানান্তর করা হয়েছে।

ছবি

তারাগজ্ঞে মব সন্ত্রাসে দুই জনকে হত্যা: ৮ পুলিশ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত, তদন্তে কমিটি

ছবি

চলে গেলেন বামপন্থি তাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ যতীন সরকার

ছবি

‘ঘুষের’ আখড়া; রাণীনগরের মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস!

ছবি

রংপুরে জাতীয় পার্টির তিন নেতার কুশপুত্তলিকা দাহ

ছবি

সংসদে নারী আসন ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির

ছবি

মধুপুর গড়ে ফলছে একসঙ্গে ছয় ফসল

ছবি

ভেড়ামারায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু

ছবি

হাসপাতালে নেই অ্যান্টিভেনম সাপের কামড়ে ৫ জনের মৃত্যু

ছবি

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

গজারিয়ার বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কিশোরের মৃত্যু

ছবি

হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ কালিহাতীবাসী

ছবি

সিলেটে ২ হাজার টাকার জন্য যুবককে খুন

ছবি

গোয়ালন্দে যুব ও কৃষক লীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ১৫ স্বর্ণবার উদ্ধার

ছবি

শেরপুরে ঢলের পানিতে ফসলি জমি থইথই

ছবি

ঝালকাঠিতে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

আড়াইহাজারে ট্রাক, সিএনজি ও অটোরিক্সা মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ২, আহত ৫

ছবি

পটিয়া বাইপাস সড়কে বাস-কার মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ১২

ছবি

গ্রাহকের আমানত আত্মসাৎ: আহমেদীয়া সমবায়ের ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ছবি

জন্ম নিবন্ধন জটিলতা: বিচার বঞ্চিত যৌনকর্মী ও পথশিশুরা

ছবি

চার দিনে বিমান তৈরি, আকাশে উড়ালো রাজবাড়ীর খুদে আবিষ্কারক রাহুল

ছবি

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: ময়মনসিংহে ৪৬তম বিসিএসের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন

ছবি

একুশে পদকপ্রাপ্ত উপমহাদেশের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয়সংগীত সাধক পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরীর জীবনাবসান

ছবি

বঙ্গোপসাগরে জেলের জালে ধরা পড়লো ১৫ কেজির পাঙাশ

ছবি

না ফেরার দেশে ডাকসুর একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানম

ছবি

চট্টগ্রামে আ’লীগের মিছিল থেকে পুলিশকে কুপিয়ে জখম, দুই মামলায় গ্রেপ্তার ১৮

ছবি

জাতিসংঘ শান্তিপদক পেলেন বাংলাদেশের ৬৮ নারী পুলিশ

ছবি

ধর্ষণচেষ্টার আসামি আদালতে জামিন না পাওয়ায় আবারও বাদীর পরিবারকে মারধর

ছবি

কালিহাতীতে বয়েল মাঠে দৃষ্টিনন্দন খড়ের গাদা

ছবি

কুষ্টিয়ায় গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, স্বামীর হত্যার দায় স্বীকার

ছবি

বাগেরহাট পৌরসভার অনিয়ম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন

ছবি

প্রেমের টানে চীনা যুবক দিনাজপুরে

ছবি

ঘিওরে শিক্ষকদের নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক কর্মশালা

ছবি

ধনবাড়ী জমিদার বাড়ির পুকুরের মাছের সঙ্গে এ কেমন শত্রুতা!

ছবি

গোয়ালন্দে যুব দিবস উদযাপন

ছবি

দীঘিনালায় দুর্যোগবিষয়ক অধিপরামর্শক সভা

tab

সারাদেশ

বিপৎসীমার দ্বারপ্রান্তে পদ্মা, ডুবেছে চর, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

রাজশাহীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে পদ্মার পানি। ডুবছে তীরবর্তী এলাকা -সংবাদ

বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর তীরবর্তী জেগে ওঠা চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের জমি ও বসতবাড়ি। গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন চরবাসীরা।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৭.৪৩ মিটার, যা বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটারের মাত্র ০.৬৬ মিটার নিচে। পানি বৃদ্ধির কারণে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি এড়াতে টি-বাঁধ এলাকায় প্রবেশ ও পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাশাপাশি নদীর পাড়সংলগ্ন ব্যবসায়ী ও দোকানিদেরও স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করে। ওইদিন পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৩৫ মিটার। পরবর্তীতে পানি কিছুটা কমলেও ৩১ জুলাই থেকে আবারও বৃদ্ধি শুরু হয় এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। গত ১০ আগস্ট সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭.১৩ মিটার, যা একই দিনের সন্ধ্যায় বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.২২ মিটারে। ১১ আগস্ট সকালে তা হয় ১৭.৩২ মিটার এবং সন্ধ্যায় পৌঁছায় ১৭.৩৯ মিটারে।

পানি বৃদ্ধির ফলে রাজশাহী ও সংলগ্ন বিভিন্ন চরের ওপরের অংশ ডুবে গেছে। চর খিদিরপুরের বাসিন্দা মাসুদ বলেন, ‘নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় চরগুলো তলিয়ে গেছে। আমরা গবাদিপশু ও মালামাল লোকালয়ে নিয়ে এসেছি, কিন্তু খাওয়ানোর জন্য এখন গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।’

আরেক বাসিন্দা রাকিব জানান, প্রতিদিন নৌকায় করে চরবাসীরা মালামাল সরাচ্ছেন। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ ভাড়া বাসায় উঠছেন। গবাদিপশু সরাতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন, কারণ চর এলাকায় এখনও অনেক পশু রয়ে গেছে। পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকের বাড়ির কাছে পানি পৌঁছে গেছে। চর ছেড়ে লোকালয়ে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, তবে গবাদিপশু নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি।’

পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, রাজশাহীতে পদ্মার বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটার। গত সোমবার সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭.৩৯ মিটার, যা বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি।

স্থানীয়দের ধারণা, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত বা গঙ্গার পানি প্রবাহ বাড়তে থাকলে পদ্মার পানি দ্রুত বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে আরও ব্যাপকভাবে সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কৃষি জমি, বসতবাড়ি ও গোখাদ্যের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে।

এদিকে ৭ বছর আগে চকরাজাপুর চরের মৃত শেখ রজব আলী মুন্সীর স্ত্রী করিমুন্নেছা ও ছেলে আবদুল খালেকের মৃত্যু হয়। ১০ বছর আগে ছেলে সুমনকে হারিয়েছেন মা জহুরা বেগম। ১৩ বছর আগে বাবা-মাকে হারিয়েছেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেন শিকদার। ১৫ বছর আগে বাবা-মাকে হারিয়েছেন লক্ষী।

তাদের ভিটে-মাটিসহ অতি আদরের বাবা-মা-সন্তানকে দাফন করা কবর কেড়ে নিচ্ছে রাক্ষুসে পদ্মা। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের দিয়ারকাদিরপুর চরের হতভাগা আবদুস সালামের স্ত্রী জহুরা বেগম ছেলে সুমনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায়।

তিনি বলেন, ১০ বছর আগে মাঠে পাউরুটিতে বিষ মাখিয়ে পাখি মারছিল চরের কিছু লোকজন। এই বিষ মাখানো পাউরুটি খেয়ে ছেলে সুমন মারা যায়। ওই সময় ভাঙনের ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে দাফন করা হয়। ১০ বছরের মাথায় কবর পদ্মা গ্রাস করছে।

এছাড়া চকরাজাপুর চরের লক্ষীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা হাজেরা বেগম ১৭ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। পূর্ব চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে দাফন করা হয়। ১৭ বছর পর ভাঙনে পদ্মায় চলে গেছে। লক্ষীর বাড়িঘরও ভেঙে গেছে। ফলে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছে বাড়ি।

২০১৮ সালে মা করিমুন্নেছা ও ছেলে আবদুল খালেকের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি তাদের কবর দেয়া হয়। সেই কবরও পদ্মা গ্রাস করে নিয়েছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন শিকদারের মতে, শুধু কবর না, এই চরে অনেক মানুষ গৃহহারা হয়েছেন।

চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, কবর তো নিয়ে যাচ্ছে রাক্ষুসে পদ্মা। পাশাপাশি ফসলি জমিসহ গাছপালা, বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কোনোরকম বেঁচে আছে কিছু মানুষ। তার বিদ্যালয়টি পদ্মা গ্রাস করে নিয়েছে। ফলে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টি তিনবার স্থানান্তর করা হয়েছে।

back to top