যেন একখণ্ড সবুজ কৃষি রাজ্য
মধুপুর (টাঙ্গাইল) : যেন এক সবজু রাজ্য। সামাজিক বনায়নের আনারসের সঙ্গে ছয় ধরনের সাথী ফসল চাষ করা হয়েছে। ছবিটি মধুপুরের গাছাবাড়ি থেকে তোলা -সংবাদ
দেশের তৃতীয় বৃহত্তর মধুপুর শালবন। এ গড় অঞ্চলের মাটি লাল রঙের। নিচু বাইদ অংশে সেচ সুবিধার কারণে অনায়াসে ধান চাষ হয়। আর উঁচু অংশে মাটির উর্বরতা শক্তি বেশি থাকার কারণে সোনা ফলছে। আনারস চাষের সঙ্গে প্রায় দুই থেকে ছয় সাত ধরনের কৃষি ফসল চাষ হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে কৃষকরা মনে করছে গড় অঞ্চলের মাটির অধিক উর্বরতা শক্তি। গড় অঞ্চলের মাটি উঁচু থাকার কারণে বন্যা মুক্ত। তবে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা হলেও নালা-ড্রেন কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করায় ফসল নষ্টের শঙ্কা অনেকাই কমে যায়। ফলে বাণিজ্যিক চাষাবাদে সোনার ফসলে ছেয়ে গেছে এ অঞ্চলের বিশাল জায়গা। এ যেন একখণ্ড সবুজ কৃষি রাজ্য।
সবুজ কৃষিতে আনারসের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে আদা, হলুদ,কলা, পেঁপে, কচু, মুখিকচু, মরিচসহ বাহারি বৈচিত্র্যের কৃষি ফসল। সাথী ফসলে এক কৃষি অঞ্চল হিসেবে এ অঞ্চল যেন অনন্য মডেল।
সরজমিনে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চলে গাছাবাড়ি, ভুটিয়া, টেলকি, গায়ড়া, সাইনামারি, গোবুদিয়া, মাগন্তিনগর, জাঙ্গালিয়া, বেরিবাইদ, গেচুয়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় আনারসের সঙ্গে সাথী ফসলে এক সবুজ বৈচিত্র্য।
এক জমিতে এক সঙ্গে দেখা যায় সাথী ফসলের বৈচিত্র্য। আনারসের বাগানে কচু, আদা, হলুদ, পেঁপে, মরিচ, কলাসহ নানা ফসল চাষ হচ্ছে। সাথী ফসলগুলো এ সময়ে সবুজে আচ্ছাদিত। যেন চোখ জুড়ানো দিগন্ত। আবার অনেক স্থানে দেখা যায়, পেঁপের সঙ্গেও অন্যান্য ফসল করেছে। ড্রাগন বাগানেও রয়েছে সাথী ফসল। এভাবে লাল মাটির উচু এলাকাগুলোর বেশির ভাগ জমিতেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
গড় অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সাথী ফসল চাষের মজার গল্প। তাদের এলাকায় বনের সামাজিক বনায়নের প্লট ছাড়াও নিজেদের জমিতে বেশিরভাগই আনারস চাষ হয়ে থাকে। আনারসের ফলন আসে আঠার মাসে। এর মধ্যে আনারসের এ জমি অলস পড়ে থাকে। এজন্য তারা বাগানের মাঝে মাঝে কিছু কলা দিয়ে থাকে। কলা বিক্রির টাকায় কিছুটা খরচ উঠে আসে। মাঝে মাঝে কচু, আদা, হলুদ, পেঁপে দিয়ে থাকে, এ ফসলগুলো এক বছর ছয় মাসের মধ্যে ফলন আসে। একই পরিচর্যায় ও খরচে আনারসের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ হয়। কম খরচে এক সঙ্গে দুই থেকে ছয়টি পর্যন্ত ফসল পাওয়া যায়। ফলে কৃষকের লাভ বেশি হয়। ঝুঁকিও কম থাকে। এক ফসলে কম লাভ আসলেও অন্য ফসলে তা উঠে আসে।
গাছাবাড়ি গ্রামের আব্দুল হক (৫০) জানান, সে এবছর ৩২ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছে। সঙ্গে মিশ্র ফসল হিসেবে টপলেডি জাতের পেঁপে চাষ করেছে। পেঁপে পরিপক্ব হয়ে গেছে। শুধু বাগান থেকেই পেঁপেই বিক্রি করেছে প্রায় কোটির টাকার উপরে। সামনে বছর আনারস বিক্রি করবে। বাড়তি ফসল থেকে এ বছর কোটি টাকার উপরে পেয়েছে পেঁপে থেকেই।
মাগন্তিনগর গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান (৪৮) জানান, সে ১৫ বিঘা জমিতে এক সঙ্গে একই জমিতে আনারসের সঙ্গে কচু, কলা দিয়েছে। সাথী ফসলে পাবেন বাড়তি লাভ। আদা হলুদে সংসারের চাহিদা মিটে যায়। কিনতে হয় না। বাড়তি সুবিধা।
গাছাবাড়ি গ্রামের শাজাহান আলী, এ বছর ২৪ বিঘা জমিতে আনারসের সঙ্গে সাথী হিসেবে আদা পেঁপে কচু চাষ করেছে। মফিজ উদ্দিন (৪৮)। সে তার ৩২ বিঘা জমিতে মিশ্র ফসল চাষ করেছে। আনারসের সঙ্গে পেঁপে কচু আদা হলুদ কলাও দিয়েছে।
শুধু আব্দুল, মফিজ, শাজাহানই নয় এভাবে মধুপুরের আউশনারা, কুড়ালিয়া, বেরিবাইদ, মহিষমারা, অরণখোলা, কুড়াগাছা, ফুলবাগচালা ও শোলাকুড়ি ইউনিয়নে এমনই ভাবে অনেক কৃষক মিশ্র ফসল চাষ করে যাচ্ছে।
দোখলা রেঞ্জের সিএমসির সভাপতি মোতালেব হোসেন বলেন, মধুপুরের উঁচু এলাকাগুলোতে অনেক দিন যাবত মিশ্র ফসল চাষ হচ্ছে। আনারসের সঙ্গে আদা হলুদ পেঁপে কচুসহ বিভিন্ন মিশ্র ফসল চাষ করা হয়ে থাকে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা বলেন, মধুপুরে ভূ-প্রকৃতি কৃষি ফসলের জন্য বিশেষ উপযোগী। গড় অঞ্চলের লাল মাটি বন্যা মুক্ত। এখানে মিশ্র চাষে কৃষকরা সফলতা পাচ্ছে। আনারসসহ বিভিন্ন ফসলের বাগানে মিশ্র ফসল হিসেবে আদা কচু হলুদ কলা পেপেসহ বিভিন্ন সাথী মিশ্র চাষাবাদ হয়ে থাকে।
যেন একখণ্ড সবুজ কৃষি রাজ্য
মধুপুর (টাঙ্গাইল) : যেন এক সবজু রাজ্য। সামাজিক বনায়নের আনারসের সঙ্গে ছয় ধরনের সাথী ফসল চাষ করা হয়েছে। ছবিটি মধুপুরের গাছাবাড়ি থেকে তোলা -সংবাদ
বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫
দেশের তৃতীয় বৃহত্তর মধুপুর শালবন। এ গড় অঞ্চলের মাটি লাল রঙের। নিচু বাইদ অংশে সেচ সুবিধার কারণে অনায়াসে ধান চাষ হয়। আর উঁচু অংশে মাটির উর্বরতা শক্তি বেশি থাকার কারণে সোনা ফলছে। আনারস চাষের সঙ্গে প্রায় দুই থেকে ছয় সাত ধরনের কৃষি ফসল চাষ হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে কৃষকরা মনে করছে গড় অঞ্চলের মাটির অধিক উর্বরতা শক্তি। গড় অঞ্চলের মাটি উঁচু থাকার কারণে বন্যা মুক্ত। তবে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা হলেও নালা-ড্রেন কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করায় ফসল নষ্টের শঙ্কা অনেকাই কমে যায়। ফলে বাণিজ্যিক চাষাবাদে সোনার ফসলে ছেয়ে গেছে এ অঞ্চলের বিশাল জায়গা। এ যেন একখণ্ড সবুজ কৃষি রাজ্য।
সবুজ কৃষিতে আনারসের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে আদা, হলুদ,কলা, পেঁপে, কচু, মুখিকচু, মরিচসহ বাহারি বৈচিত্র্যের কৃষি ফসল। সাথী ফসলে এক কৃষি অঞ্চল হিসেবে এ অঞ্চল যেন অনন্য মডেল।
সরজমিনে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চলে গাছাবাড়ি, ভুটিয়া, টেলকি, গায়ড়া, সাইনামারি, গোবুদিয়া, মাগন্তিনগর, জাঙ্গালিয়া, বেরিবাইদ, গেচুয়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় আনারসের সঙ্গে সাথী ফসলে এক সবুজ বৈচিত্র্য।
এক জমিতে এক সঙ্গে দেখা যায় সাথী ফসলের বৈচিত্র্য। আনারসের বাগানে কচু, আদা, হলুদ, পেঁপে, মরিচ, কলাসহ নানা ফসল চাষ হচ্ছে। সাথী ফসলগুলো এ সময়ে সবুজে আচ্ছাদিত। যেন চোখ জুড়ানো দিগন্ত। আবার অনেক স্থানে দেখা যায়, পেঁপের সঙ্গেও অন্যান্য ফসল করেছে। ড্রাগন বাগানেও রয়েছে সাথী ফসল। এভাবে লাল মাটির উচু এলাকাগুলোর বেশির ভাগ জমিতেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
গড় অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সাথী ফসল চাষের মজার গল্প। তাদের এলাকায় বনের সামাজিক বনায়নের প্লট ছাড়াও নিজেদের জমিতে বেশিরভাগই আনারস চাষ হয়ে থাকে। আনারসের ফলন আসে আঠার মাসে। এর মধ্যে আনারসের এ জমি অলস পড়ে থাকে। এজন্য তারা বাগানের মাঝে মাঝে কিছু কলা দিয়ে থাকে। কলা বিক্রির টাকায় কিছুটা খরচ উঠে আসে। মাঝে মাঝে কচু, আদা, হলুদ, পেঁপে দিয়ে থাকে, এ ফসলগুলো এক বছর ছয় মাসের মধ্যে ফলন আসে। একই পরিচর্যায় ও খরচে আনারসের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ হয়। কম খরচে এক সঙ্গে দুই থেকে ছয়টি পর্যন্ত ফসল পাওয়া যায়। ফলে কৃষকের লাভ বেশি হয়। ঝুঁকিও কম থাকে। এক ফসলে কম লাভ আসলেও অন্য ফসলে তা উঠে আসে।
গাছাবাড়ি গ্রামের আব্দুল হক (৫০) জানান, সে এবছর ৩২ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছে। সঙ্গে মিশ্র ফসল হিসেবে টপলেডি জাতের পেঁপে চাষ করেছে। পেঁপে পরিপক্ব হয়ে গেছে। শুধু বাগান থেকেই পেঁপেই বিক্রি করেছে প্রায় কোটির টাকার উপরে। সামনে বছর আনারস বিক্রি করবে। বাড়তি ফসল থেকে এ বছর কোটি টাকার উপরে পেয়েছে পেঁপে থেকেই।
মাগন্তিনগর গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান (৪৮) জানান, সে ১৫ বিঘা জমিতে এক সঙ্গে একই জমিতে আনারসের সঙ্গে কচু, কলা দিয়েছে। সাথী ফসলে পাবেন বাড়তি লাভ। আদা হলুদে সংসারের চাহিদা মিটে যায়। কিনতে হয় না। বাড়তি সুবিধা।
গাছাবাড়ি গ্রামের শাজাহান আলী, এ বছর ২৪ বিঘা জমিতে আনারসের সঙ্গে সাথী হিসেবে আদা পেঁপে কচু চাষ করেছে। মফিজ উদ্দিন (৪৮)। সে তার ৩২ বিঘা জমিতে মিশ্র ফসল চাষ করেছে। আনারসের সঙ্গে পেঁপে কচু আদা হলুদ কলাও দিয়েছে।
শুধু আব্দুল, মফিজ, শাজাহানই নয় এভাবে মধুপুরের আউশনারা, কুড়ালিয়া, বেরিবাইদ, মহিষমারা, অরণখোলা, কুড়াগাছা, ফুলবাগচালা ও শোলাকুড়ি ইউনিয়নে এমনই ভাবে অনেক কৃষক মিশ্র ফসল চাষ করে যাচ্ছে।
দোখলা রেঞ্জের সিএমসির সভাপতি মোতালেব হোসেন বলেন, মধুপুরের উঁচু এলাকাগুলোতে অনেক দিন যাবত মিশ্র ফসল চাষ হচ্ছে। আনারসের সঙ্গে আদা হলুদ পেঁপে কচুসহ বিভিন্ন মিশ্র ফসল চাষ করা হয়ে থাকে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা বলেন, মধুপুরে ভূ-প্রকৃতি কৃষি ফসলের জন্য বিশেষ উপযোগী। গড় অঞ্চলের লাল মাটি বন্যা মুক্ত। এখানে মিশ্র চাষে কৃষকরা সফলতা পাচ্ছে। আনারসসহ বিভিন্ন ফসলের বাগানে মিশ্র ফসল হিসেবে আদা কচু হলুদ কলা পেপেসহ বিভিন্ন সাথী মিশ্র চাষাবাদ হয়ে থাকে।