নওগাঁর রাণীনগরে মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস যেন অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ অফিসের উপ-সহকারী (নায়েব) সহ অফিসে কর্মরতদের চাহিদা মতো ঘুষ দিলেই হয় কাজ, না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয় সেবাগ্রহীতাদের।
অভিযোগ উঠেছে, মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী দুরুল হুদা, প্রসেস সার্ভার কুদ্দুস ও পিওন সোহাগ। তারা তিনজন মিলেমিশে এই ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে ঘুষের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর ও মিরাট ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি অফিস ছিল কাশিমপুরে। ভূমিসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রত্যন্ত এলাকা মিরাট ইউনিয়নের জন্য গত প্রায় সাত মাস আগে হামিদপুর বাজার এলাকায় নতুন করে মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস করা হয়। ওই ভূমি অফিসের উপ-সহকারী হিসেবে যোগদান করেন দুরুল হুদা। আর প্রসেস সার্ভার কুদ্দুস ও পিওন সোহাগ।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে- খাজনার অনুমোদন, খাজনার চেক করে দিতে, খারিজের প্রতিবেদন-প্রস্তাব, হোল্ডিং এন্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রতিবেদন দিতে দুই হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার, ২০ হাজার, এমনকি লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন দুরুল হুদা, কুদ্দুস ও সোহাগ। সেবাপ্রত্যাশীরা তাদের চাহিদা মতো ঘুষ দিলে কাজ হয়, না দিলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অফিসে দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগও। অফিসের স্টাফদের মতে দুইজন দালাল সব সময় থাকেন অফিসে। দালালদের মধ্যস্ততায় সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন তারা।
জায়গা-জমির খারিজ (নামজারি) করিয়ে দিতে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়া হয় ঘুষ। খারিজের জন্য কেউ ঘুষ দিয়েও ঘুরছে দিনের পর দিন। আবার টাকার বিনিময়ে গোপনে দেয়া হয় প্রস্তাবিত খতিয়ান। খারিজ শেষে কেউ হোল্ডিং খুলতে গেলে বা কেউ খাজনা দিতে গেলে সেবাপ্রত্যাশীদের মাসের পর মাস হয়রানি করে। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাজ সম্পন্ন করে দেয়।
মিরাট ইউনিয়নের জালালাবাদ গ্রামের রায়হান রাফু জানান, আমাদের একটি জমির খারিজের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ মিসকেস করেছে। এই মিসকেস থেকে কীভাবে উদ্ধার হওয়া যায় সেজন্য মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবের কাছে যাই। নায়েব দুরুল হুদা ও তার সঙ্গে থাকা একজন দালাল আমাদের জমির সব সম্যসা সমাধান করে দেয়ার জন্য টাকা দাবি করেন। তারা দুইজন মিলে প্রথমে ১৫ হাজার টাকা নেয়। এরপর নায়েব দুরুল হুদা বলে এই সামান্য টাকা দিয়ে কাজ হবে না। পরে এক দালালসহ আমাদের সঙ্গে ৯৭ হাজার টাকা চুক্তি করেন। কয়েক ধাপে নায়েব ও তার দালাল ৯৭ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই কাজের কোনো সমাধান হয়নি বা নায়েব আমাদের টাকাও ফেরত দেয়নি।
ধনপাড়া গ্রামের মোছা. মেঘনা নামে ভুক্তভোগী এক নারী জানান, জমি খারিজের পর খাজনা দেয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছি। কিন্তু অফিসের নায়েব অনুমোদন দেননি। আবার আবেদন করেছি। প্রায় ৬ মাস ধরে অফিসে ঘুরছি। অফিসের পিওন সোহাগের কাছেও ঘুরেছি। এখনও অনুমোদন মেলেনি, খাজনাও দিতে পারিনি।
পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার তুরুকবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ জানান, জমির খাজনা দিতে মিরাট ভূমি অফিসে নায়েবের কাছে গেলে তার একজন দালাল আমার কাছ থেকে জমির কাগজপত্র নেয়। পরে কী-জানি এন্টি করতে হবে এজন্য ২ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানায়। আমি তাদের চাহিদামতো টাকা দিইনি বলে খাজনা দেয়া হয়নি। এছাড়া চলতি বছরে আমার কয়েক দাগে জমির খারিজ করে নিয়েছি। সেই খাজিরের ৪৬ শতাংশ জমির খাজনা দিতে অফিসে গেলে নায়েব দুরুল হুদা আমার কাছে ৩১ হাজার ৮১৮ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা তাকে না দেয়ায় খাজনা দিতে পারিনি। পরে নায়েবের কাছে আবার গেলে তিনি আমার জমির হোল্ডিং বের করে জমির নানা সমস্যা তুলে ধরেন। এরপর টাকা না পেয়ে হোল্ডিংয়ে লাল কালির চিহ্ন দিয়ে দেয়।
হরিশপুর গ্রামের সোলাইমান জানান, আমার ৪৫ শতাংশ জমির খাজনা দেয়ার জন্য পিওন সোহাগ খাজনার চেক করে দিবে বলে ১৩ হাজার টাকা দাবি করেন। সেইদিন চাহিদামতো টাকা দিইনি বলে খাজনা করে দেননি।
মিরাট উত্তরপাড়া গ্রামের ফাহাদ জানান, জমির খাজনা দিতে মিরাট ভূমি অফিসে গেলে অফিসের কুদ্দুস ও সোহাগ ১০ হাজার টাকা চায়। এরপর তারা আমাকে বেশ কয়েকদিন ঘুরিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে মাত্র ৭৭২ টাকার খাজনার চেক করে দিয়েছে। একই এলাকার ফজলু সরদার ও মজনু সরদার দুই ভাই। তারা কয়েক মাস আগে পৃথক দলিলে ৬ শতাংশ জমির খারিজের জন্য সোহাগের হাতে ঘুষ দিয়েছিলেন ৫ হাজার টাকা। কাজ হওয়ার পর চুক্তি অনুযায়ী আরও ৭ হাজার টাকা দেয়ার কথা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী দুরুল হুদা কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে আমি কোনো কথা বলবো না।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে প্রসেস সার্ভার কুদ্দুসের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পিওন সোহাগও ফোন রিসিভ করেনি।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ নওশাদ হাসান বলেন, বিষয়গুলো আমার জানা নেই। তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫
নওগাঁর রাণীনগরে মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস যেন অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ অফিসের উপ-সহকারী (নায়েব) সহ অফিসে কর্মরতদের চাহিদা মতো ঘুষ দিলেই হয় কাজ, না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয় সেবাগ্রহীতাদের।
অভিযোগ উঠেছে, মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী দুরুল হুদা, প্রসেস সার্ভার কুদ্দুস ও পিওন সোহাগ। তারা তিনজন মিলেমিশে এই ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে ঘুষের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর ও মিরাট ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি অফিস ছিল কাশিমপুরে। ভূমিসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রত্যন্ত এলাকা মিরাট ইউনিয়নের জন্য গত প্রায় সাত মাস আগে হামিদপুর বাজার এলাকায় নতুন করে মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস করা হয়। ওই ভূমি অফিসের উপ-সহকারী হিসেবে যোগদান করেন দুরুল হুদা। আর প্রসেস সার্ভার কুদ্দুস ও পিওন সোহাগ।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে- খাজনার অনুমোদন, খাজনার চেক করে দিতে, খারিজের প্রতিবেদন-প্রস্তাব, হোল্ডিং এন্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রতিবেদন দিতে দুই হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার, ২০ হাজার, এমনকি লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন দুরুল হুদা, কুদ্দুস ও সোহাগ। সেবাপ্রত্যাশীরা তাদের চাহিদা মতো ঘুষ দিলে কাজ হয়, না দিলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অফিসে দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগও। অফিসের স্টাফদের মতে দুইজন দালাল সব সময় থাকেন অফিসে। দালালদের মধ্যস্ততায় সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন তারা।
জায়গা-জমির খারিজ (নামজারি) করিয়ে দিতে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়া হয় ঘুষ। খারিজের জন্য কেউ ঘুষ দিয়েও ঘুরছে দিনের পর দিন। আবার টাকার বিনিময়ে গোপনে দেয়া হয় প্রস্তাবিত খতিয়ান। খারিজ শেষে কেউ হোল্ডিং খুলতে গেলে বা কেউ খাজনা দিতে গেলে সেবাপ্রত্যাশীদের মাসের পর মাস হয়রানি করে। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাজ সম্পন্ন করে দেয়।
মিরাট ইউনিয়নের জালালাবাদ গ্রামের রায়হান রাফু জানান, আমাদের একটি জমির খারিজের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ মিসকেস করেছে। এই মিসকেস থেকে কীভাবে উদ্ধার হওয়া যায় সেজন্য মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবের কাছে যাই। নায়েব দুরুল হুদা ও তার সঙ্গে থাকা একজন দালাল আমাদের জমির সব সম্যসা সমাধান করে দেয়ার জন্য টাকা দাবি করেন। তারা দুইজন মিলে প্রথমে ১৫ হাজার টাকা নেয়। এরপর নায়েব দুরুল হুদা বলে এই সামান্য টাকা দিয়ে কাজ হবে না। পরে এক দালালসহ আমাদের সঙ্গে ৯৭ হাজার টাকা চুক্তি করেন। কয়েক ধাপে নায়েব ও তার দালাল ৯৭ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই কাজের কোনো সমাধান হয়নি বা নায়েব আমাদের টাকাও ফেরত দেয়নি।
ধনপাড়া গ্রামের মোছা. মেঘনা নামে ভুক্তভোগী এক নারী জানান, জমি খারিজের পর খাজনা দেয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছি। কিন্তু অফিসের নায়েব অনুমোদন দেননি। আবার আবেদন করেছি। প্রায় ৬ মাস ধরে অফিসে ঘুরছি। অফিসের পিওন সোহাগের কাছেও ঘুরেছি। এখনও অনুমোদন মেলেনি, খাজনাও দিতে পারিনি।
পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার তুরুকবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ জানান, জমির খাজনা দিতে মিরাট ভূমি অফিসে নায়েবের কাছে গেলে তার একজন দালাল আমার কাছ থেকে জমির কাগজপত্র নেয়। পরে কী-জানি এন্টি করতে হবে এজন্য ২ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানায়। আমি তাদের চাহিদামতো টাকা দিইনি বলে খাজনা দেয়া হয়নি। এছাড়া চলতি বছরে আমার কয়েক দাগে জমির খারিজ করে নিয়েছি। সেই খাজিরের ৪৬ শতাংশ জমির খাজনা দিতে অফিসে গেলে নায়েব দুরুল হুদা আমার কাছে ৩১ হাজার ৮১৮ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা তাকে না দেয়ায় খাজনা দিতে পারিনি। পরে নায়েবের কাছে আবার গেলে তিনি আমার জমির হোল্ডিং বের করে জমির নানা সমস্যা তুলে ধরেন। এরপর টাকা না পেয়ে হোল্ডিংয়ে লাল কালির চিহ্ন দিয়ে দেয়।
হরিশপুর গ্রামের সোলাইমান জানান, আমার ৪৫ শতাংশ জমির খাজনা দেয়ার জন্য পিওন সোহাগ খাজনার চেক করে দিবে বলে ১৩ হাজার টাকা দাবি করেন। সেইদিন চাহিদামতো টাকা দিইনি বলে খাজনা করে দেননি।
মিরাট উত্তরপাড়া গ্রামের ফাহাদ জানান, জমির খাজনা দিতে মিরাট ভূমি অফিসে গেলে অফিসের কুদ্দুস ও সোহাগ ১০ হাজার টাকা চায়। এরপর তারা আমাকে বেশ কয়েকদিন ঘুরিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে মাত্র ৭৭২ টাকার খাজনার চেক করে দিয়েছে। একই এলাকার ফজলু সরদার ও মজনু সরদার দুই ভাই। তারা কয়েক মাস আগে পৃথক দলিলে ৬ শতাংশ জমির খারিজের জন্য সোহাগের হাতে ঘুষ দিয়েছিলেন ৫ হাজার টাকা। কাজ হওয়ার পর চুক্তি অনুযায়ী আরও ৭ হাজার টাকা দেয়ার কথা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী দুরুল হুদা কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে আমি কোনো কথা বলবো না।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে প্রসেস সার্ভার কুদ্দুসের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পিওন সোহাগও ফোন রিসিভ করেনি।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ নওশাদ হাসান বলেন, বিষয়গুলো আমার জানা নেই। তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।