পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণ
ডিমলা (নীলফামারী) : তিস্তার পানি বৃদ্ধি ফলে সহস্রাধিক একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং আবাদি জমি হারিয়ে হাজারো কৃষক সর্বস্বান্ত -সংবাদ
উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় তিস্তা নদীর চ্যানেল তৈরি হয়ে নতুন নদীর সৃষ্টি হয়ে সহস্রাধিক একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আবাদি জমি হারিয়ে হাজারো কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছে। বন্যাকবলিত এলাকা ও ভাঙনকবলিত এলাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরানুজ্জামান পরিদর্শন করেছেন।
নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল ও চরগুলো তলিয়ে গেছে। চরবাসীরা গবাদিপশু ও মালপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলে গেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪-০৮-২০২৫) সকাল দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চতুর্থবারের মতো তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এর আগে গত ২৯ জুলাই রাতে প্রথমবার ৭ সেন্টিমিটার, গত ৩ আগস্ট ৪০ সেন্টিমিটার এবং গত ১২ আগস্ট ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এবার চতুর্থবারের মতো বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে।
ইতোমধ্যে খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামে সাবেক ইউপি সদস্য তফেল মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে নদীর একটি নতুন শাখা সৃষ্টি হয়ে সহস্রাধিক একর আবাদি জমি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে শতাধিক পরিবার গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে নিরাপদের জন্য আত্মীয়ের বাড়ি কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরে তিস্তার ভাঙনে অসংখ্য গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে গেছে। স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও খেলার মাঠসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। এবারের ভাঙনের তীব্রতা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে । প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি ও নদীপাড় ভেঙে যাচ্ছে, যার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার ও ঘাট ঝুঁকিতে রয়েছে।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন জানান, তার ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ড নদীর তীরবর্তী। সেখানে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস করে, এর মধ্যে প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝড়সিংহেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা বিনোদ আলী বলেন, ‘পানি বেড়ে চরগুলো ডুবে গেছে। অধিকাংশ মানুষ লোকালয়ে চলে এসেছে, গবাদিপশুর জন্য খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।’
খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের আব্দুল মালেক জানান, ‘প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। মানুষ নৌকায় করে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ ভাড়া বাসায় উঠছেন। যাদের গবাদিপশু আছে তারা বেশি বিপাকে পড়েছেন, অনেক পশু এখনও চরেই রয়ে গেছে।’
গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বাবর আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় নদীর তিনটি শাখা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক আবাদি জমির ধান তিস্তার পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর ওপারের কয়েকটি চর ডুবে গেছে, অনেকের বাড়ির কাছাকাছি পানি চলে এসেছে। গবাদিপশু সরানো নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ।’
তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, ‘উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান জানান, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার, ত্রাণসামগ্রী ও তাঁবু মজুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার নিম্নাঞ্চলের মানুষকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।’
পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণ
ডিমলা (নীলফামারী) : তিস্তার পানি বৃদ্ধি ফলে সহস্রাধিক একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং আবাদি জমি হারিয়ে হাজারো কৃষক সর্বস্বান্ত -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় তিস্তা নদীর চ্যানেল তৈরি হয়ে নতুন নদীর সৃষ্টি হয়ে সহস্রাধিক একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আবাদি জমি হারিয়ে হাজারো কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছে। বন্যাকবলিত এলাকা ও ভাঙনকবলিত এলাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরানুজ্জামান পরিদর্শন করেছেন।
নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল ও চরগুলো তলিয়ে গেছে। চরবাসীরা গবাদিপশু ও মালপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলে গেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪-০৮-২০২৫) সকাল দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চতুর্থবারের মতো তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এর আগে গত ২৯ জুলাই রাতে প্রথমবার ৭ সেন্টিমিটার, গত ৩ আগস্ট ৪০ সেন্টিমিটার এবং গত ১২ আগস্ট ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এবার চতুর্থবারের মতো বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে।
ইতোমধ্যে খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামে সাবেক ইউপি সদস্য তফেল মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে নদীর একটি নতুন শাখা সৃষ্টি হয়ে সহস্রাধিক একর আবাদি জমি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে শতাধিক পরিবার গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে নিরাপদের জন্য আত্মীয়ের বাড়ি কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরে তিস্তার ভাঙনে অসংখ্য গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে গেছে। স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও খেলার মাঠসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। এবারের ভাঙনের তীব্রতা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে । প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি ও নদীপাড় ভেঙে যাচ্ছে, যার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার ও ঘাট ঝুঁকিতে রয়েছে।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন জানান, তার ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ড নদীর তীরবর্তী। সেখানে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস করে, এর মধ্যে প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝড়সিংহেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা বিনোদ আলী বলেন, ‘পানি বেড়ে চরগুলো ডুবে গেছে। অধিকাংশ মানুষ লোকালয়ে চলে এসেছে, গবাদিপশুর জন্য খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।’
খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের আব্দুল মালেক জানান, ‘প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। মানুষ নৌকায় করে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ ভাড়া বাসায় উঠছেন। যাদের গবাদিপশু আছে তারা বেশি বিপাকে পড়েছেন, অনেক পশু এখনও চরেই রয়ে গেছে।’
গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বাবর আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় নদীর তিনটি শাখা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক আবাদি জমির ধান তিস্তার পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর ওপারের কয়েকটি চর ডুবে গেছে, অনেকের বাড়ির কাছাকাছি পানি চলে এসেছে। গবাদিপশু সরানো নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ।’
তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, ‘উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান জানান, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার, ত্রাণসামগ্রী ও তাঁবু মজুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার নিম্নাঞ্চলের মানুষকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।’