ছাত্রদলের তিন নেতা বহিষ্কার
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ময়মনসিংহে মুক্তাগাছায় উপজেলার ৬নং মানকোন ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতির নেতৃত্বে ‘মব’ সৃষ্টি করে মো. ফাহিম (৩০) নামে এক অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় আরও ৩ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সজিবসহ ১২ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। ঘটনার জেরে ওই ছাত্রদল সভাপতিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফাহিমের মৃত্যু হয়।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের বোর্ডঘর মোড় এলাকায় প্রকাশ্যে তাকে বেদম পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের বোর্ডঘর মোড় এলকার বাসিন্দা মজনু মিয়ার ছেলে ইয়াছিনের কাছে পার্শ^বর্তী আলগীর চর গ্রামের মুদির দোকানদার রাসেল ৩৫০ টাকা বাকি পেত। এ নিয়ে মজনু মিয়া ও তার ছেলে ইয়াছিনের সঙ্গে দোকানদার রাসেলের কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার সূত্র ধরে গত সোমবার দুপুরে মানকোন বোর্ডঘর মোড়ে দোকানদার রাসেলের পক্ষ হয়ে মানকোন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সজিব মিয়ার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি দল একত্রিত হয়। সেখানে মজনু মিয়া, তার ছেলে ইয়াছিন, ভাতিজা ফাহিমকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে। পরে ছাত্রদল নেতা সজিব ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মব সৃষ্টি করে মজনু মিয়া, ইয়াছিন ও ফাহিমকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ফাহিমের দাদি ফিরোজা খাতুন, বোন ফারজানা খাতুন গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ফাহিমসহ অন্যদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানেই হত মঙ্গলবার দুপুরে ফাহিমের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় সেদিন রাতেই নিহত ফাহিমের মা রুবি আক্তার বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানায় ছাত্রদল নেতা সজিব মিয়াকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার (১৪-০৮-২০২৫) দুপুরে নিহত ফাহিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুরো বাড়িতে শোকের মাতম বইছে। ফাহিমের নয় মাসের কন্যা শিশু ফাওজিয়াকে নিয়ে তার স্ত্রী খাদিজা বুক চাপড়ে কান্না করছেন। পাশেই তার দাদা আব্দুল হাকিম ও তার দাদি ফিরোজা খাতুন মাটিতে লুটিয়ে নাতিকে হারিয়ে কান্না করছেন। তার বোনেরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিহতের স্ত্রী খাদিজা বেগম নয় মাসের শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে বলেন, আমার এই শিশু সন্তান তার বাবার জন্য পাগল। বাবাকে না দেখলে সে কান্না করে। এখন কে তার কান্না থামাবে। কে তাকে দুধ কিনে দিবে? আমার এই সন্তানের ভবিষ্যৎ কী? আমার স্বামীকে বিনা দোষে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি তার খুনিদের ফাঁসি চাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোবারক হোসেন বলেন, ইউনিয়ন ছাত্রদলে সভাপতি সজিব ও তার লোকজন অটোরিকশাচালক ফাহিমকে স’মিলের কাঠ দিয়ে বেদম পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আমরা এগিয়ে গেলে আমাদেরকে সরিয়ে দেয়। পরে ফাহিম হাসপাতালে মারা যায়। আমরা এ ঘটনার চূড়ান্ত বিচার দাবি করছি।
মুক্তাগাছা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল হক আরিফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল বুধবার মুক্তাগাছা উপজেলা ছাত্রদল মানকোন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. সজীব হাসান ও দুই কর্মী আবির ও মারুফকে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করে চিঠি দিয়েছে। উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. মনজুরুল হক আরিফ ও সদস্য সচিব আসাদ ফরাজী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ মোতাবেক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় অনেকেই দাবি করেছেন, স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের একাধিক গ্রুপ রয়েছে এলাকায়। ছাত্রদল নেতা সজীব তেমনি একটি গ্রুপের লোক। তারা এলাকায় বিভিন্ন সময় মব সৃষ্টি করে নানাভাবে মানুষকে হয়রানি করে থাকে।
মুক্তাগাছা থানার ওসি রিপন চন্দ্র গোপ বলেন, দোকানের বাকি নিয়ে ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অটোরিকশাচালক ফাহিমের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়। থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুক্তাগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক শামছুলক হক। নিহত ফাহিমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি এই ধরনের ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ছাত্রদলের তিন নেতা বহিষ্কার
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
ময়মনসিংহে মুক্তাগাছায় উপজেলার ৬নং মানকোন ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতির নেতৃত্বে ‘মব’ সৃষ্টি করে মো. ফাহিম (৩০) নামে এক অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় আরও ৩ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সজিবসহ ১২ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। ঘটনার জেরে ওই ছাত্রদল সভাপতিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফাহিমের মৃত্যু হয়।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের বোর্ডঘর মোড় এলাকায় প্রকাশ্যে তাকে বেদম পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের বোর্ডঘর মোড় এলকার বাসিন্দা মজনু মিয়ার ছেলে ইয়াছিনের কাছে পার্শ^বর্তী আলগীর চর গ্রামের মুদির দোকানদার রাসেল ৩৫০ টাকা বাকি পেত। এ নিয়ে মজনু মিয়া ও তার ছেলে ইয়াছিনের সঙ্গে দোকানদার রাসেলের কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার সূত্র ধরে গত সোমবার দুপুরে মানকোন বোর্ডঘর মোড়ে দোকানদার রাসেলের পক্ষ হয়ে মানকোন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সজিব মিয়ার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি দল একত্রিত হয়। সেখানে মজনু মিয়া, তার ছেলে ইয়াছিন, ভাতিজা ফাহিমকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে। পরে ছাত্রদল নেতা সজিব ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মব সৃষ্টি করে মজনু মিয়া, ইয়াছিন ও ফাহিমকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ফাহিমের দাদি ফিরোজা খাতুন, বোন ফারজানা খাতুন গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ফাহিমসহ অন্যদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানেই হত মঙ্গলবার দুপুরে ফাহিমের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় সেদিন রাতেই নিহত ফাহিমের মা রুবি আক্তার বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানায় ছাত্রদল নেতা সজিব মিয়াকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার (১৪-০৮-২০২৫) দুপুরে নিহত ফাহিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুরো বাড়িতে শোকের মাতম বইছে। ফাহিমের নয় মাসের কন্যা শিশু ফাওজিয়াকে নিয়ে তার স্ত্রী খাদিজা বুক চাপড়ে কান্না করছেন। পাশেই তার দাদা আব্দুল হাকিম ও তার দাদি ফিরোজা খাতুন মাটিতে লুটিয়ে নাতিকে হারিয়ে কান্না করছেন। তার বোনেরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিহতের স্ত্রী খাদিজা বেগম নয় মাসের শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে বলেন, আমার এই শিশু সন্তান তার বাবার জন্য পাগল। বাবাকে না দেখলে সে কান্না করে। এখন কে তার কান্না থামাবে। কে তাকে দুধ কিনে দিবে? আমার এই সন্তানের ভবিষ্যৎ কী? আমার স্বামীকে বিনা দোষে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি তার খুনিদের ফাঁসি চাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোবারক হোসেন বলেন, ইউনিয়ন ছাত্রদলে সভাপতি সজিব ও তার লোকজন অটোরিকশাচালক ফাহিমকে স’মিলের কাঠ দিয়ে বেদম পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আমরা এগিয়ে গেলে আমাদেরকে সরিয়ে দেয়। পরে ফাহিম হাসপাতালে মারা যায়। আমরা এ ঘটনার চূড়ান্ত বিচার দাবি করছি।
মুক্তাগাছা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল হক আরিফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল বুধবার মুক্তাগাছা উপজেলা ছাত্রদল মানকোন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. সজীব হাসান ও দুই কর্মী আবির ও মারুফকে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করে চিঠি দিয়েছে। উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. মনজুরুল হক আরিফ ও সদস্য সচিব আসাদ ফরাজী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ মোতাবেক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় অনেকেই দাবি করেছেন, স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের একাধিক গ্রুপ রয়েছে এলাকায়। ছাত্রদল নেতা সজীব তেমনি একটি গ্রুপের লোক। তারা এলাকায় বিভিন্ন সময় মব সৃষ্টি করে নানাভাবে মানুষকে হয়রানি করে থাকে।
মুক্তাগাছা থানার ওসি রিপন চন্দ্র গোপ বলেন, দোকানের বাকি নিয়ে ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অটোরিকশাচালক ফাহিমের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়। থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুক্তাগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক শামছুলক হক। নিহত ফাহিমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি এই ধরনের ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।