টঙ্গীবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) : দিঘীরপাড় বাজারের ভাঙন দেখছেন এলাকাবাসী -সংবাদ
টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় পদ্মায় তীব্র স্রোতে দিঘীরপাড় বাজার সংলগ্ন নদী তীরে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাত থেকে আকস্মিক শুরু হওয়া ভাঙনে শতবর্ষী এ বাজারের বিভিন্ন দোকান নদীগর্ভে বিলীন হতে শুরু করে। গত ৩ দিনের ভাঙনে সার ও পাটের গুদামসহ ৭টি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দিঘিরপাড় বাজারসহ অই ভাঙ্গন কবলিত অই অঞ্চলটি রক্ষার জন্য প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব ছিল, তবে সেই স্থায়ী বাঁধ আজও হয়নি। দীর্ঘশ্বাস আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাজারের শতাধিক ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মাঝে। বুধবার সকাল থেকে ভাঙন হুমকিতে থাকা বাকি ঘরগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন এত তীব্র হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনরোধে দিঘিরপাড় থেকে লৌহজংয়ের শিমুলিয়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকার কাজে ধীরগতির কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশের বেশি। ভুক্তভোগীরা জানান, রাত থেকে দিঘিরপাড় বাজারে ভাঙন শুরু হয়েছে। রাতেই ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পদ্মায় বিলীন হয়েছে। শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করতে পারেননি কেউ। পুরো ঘর নদীতে তলিয়ে গেছে। তবে পাশের ঘরগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। স্রোতের তোড়ে বাঁধের জন্য ফেলা ব্লক ও জিও ব্যাগ ভেসে গেছে। তাই ভাঙনের মুখে রয়েছে জেলার অন্যতম বৃহৎ এই বাজার। প্রতি দিনের মাছের বড় আরৎ এবং গরু- ছাগলেরের হাট ছাড়াসহ বাজারটির সহ্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই এখন হুমকির মুখে। এদিকে যথাযথ কাজ না হওয়া এবং ধীরগতির কারণে সোয়া ৫ শ’ কোটি টাকার চলমান প্রকল্পের ভেতরের এই ভাঙ্গনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। আর রাতের আঁধারে অবৈধ বালু উত্তোলনের ক্ষোভ স্থানীয়দের। স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিজুল মোল্লা বলেন, “আগে এখানে ব্যাপকভাবে বালু উত্তোলন হয়েছে। ড্রেজিংয়ের কারণে যে গভীরতা তৈরি হয়েছে, সেটির কারণেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে জিও ব্যাগ ফেলছে, তা পর্যাপ্ত নয়। শুধু এসে কয়েকটি ব্যাগ দিয়ে চলে যায়, এরপর এরপর আর কোনো খোঁজখবর নেয় না।” স্থানীয় বাসিন্দা সুমন বেপারী বলেন “অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের কারণে আমাদের দিঘিরপাড় বাজারসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম যেমন- সরিষাবন, হালদার বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। যদিও হাইকোর্টে বালু উত্তোলন বন্ধে রিট হয়েছে, তবুও দিনে বন্ধ থাকলেও রাতে কাটার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হয়। কারণ প্রশাসন এত রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না। এজন্য বর্ষার সময় বা গভীর রাতে এই বালু উত্তোলন চলে।” দিঘিরপাড় ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাউসার সোহেল মিজি বলেন, “বাঁধ নির্মাণ কাজে যে সকল প্রতিষ্ঠান জড়িত, তারা একজন আরেকজনকে দোষারোপ করে। এতে করে কাজে অবহেলা হচ্ছে। সরকার পতনের পর কাজের গতি আরও ধীর হয়ে গেছে। এজন্য প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে এই বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ হয়।” প্রাচীন এই দিঘিরপাড় বাজার আগেও সাতবার নদীতে বিলীন হয়েছে। আবার ভাঙনের মুখে রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই বাজার। ২০২১ সালের এপ্রিলে পদ্মায় ভাঙন প্রবণ এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের ১৫ কিলোমিটারে সবশেষ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মুন্সীগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শেখ এনামুল হক বলেন, “আমাদের প্রকল্পে ২৬টি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি স্থায়ী। ব্লক ভিত্তিক স্থায়ী কাজ সম্পন্ন হয়েছে নয় দশমিক এক কিলোমিটার। ১৮টি প্যাকেজের সবগুলোতেই কাজ চলছে। প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ৬০ দশমিক ৫০ শতাংশ। “কাজের অগ্রগতি রয়েছে। কোনো কাজ বন্ধ হয়নি। নদী ভাঙনের মধ্যেও আমাদের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি চলমান আছে। ব্লক কাস্টিং, ব্লক ডাম্পিং, বালুর বস্তা ডাম্পিং সবই চলছে। ৩৩ হাজার ব্যাগের মধ্যে প্রায় সবগুলো জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫ সাইজের সিসি ব্লক এবং ৪৫ সাইজের সিসি ব্লক প্রস্তুতের পাশাপাশি ডাম্পিংও চলছে।” প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, সময়ের আগেই কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা। ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে আগেও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল, কিন্তু পানির স্রোতের কারণে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনে ঘর হারানো ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র দেখে ক্ষতিপূরণের দেওয়া হবে। এখানে দীর্ঘদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। যৌথ বাহিনীর অভিযানও হয়েছে। তবে পাশের জেলা শরিয়তপুর থেকে ড্রেজার নিয়ে এসে রাতে বালু কাটার অভিযোগ পাওয়ার কথা বলেছেন ইউএনও। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।” স্থানীয়রা জানান, প্রাচীন এই দিঘিরপাড় বাজার এর আগেও নদীতে ৭ বার বিলীন হয়ে যায়। এরপর দুই দশকে আবার জমে উঠার পর গেল তিন বছরের ভাঙ্গনে ক্ষতবিক্ষত বর্তমানের দিঘিরপাড়।
টঙ্গীবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) : দিঘীরপাড় বাজারের ভাঙন দেখছেন এলাকাবাসী -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় পদ্মায় তীব্র স্রোতে দিঘীরপাড় বাজার সংলগ্ন নদী তীরে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাত থেকে আকস্মিক শুরু হওয়া ভাঙনে শতবর্ষী এ বাজারের বিভিন্ন দোকান নদীগর্ভে বিলীন হতে শুরু করে। গত ৩ দিনের ভাঙনে সার ও পাটের গুদামসহ ৭টি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দিঘিরপাড় বাজারসহ অই ভাঙ্গন কবলিত অই অঞ্চলটি রক্ষার জন্য প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব ছিল, তবে সেই স্থায়ী বাঁধ আজও হয়নি। দীর্ঘশ্বাস আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাজারের শতাধিক ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মাঝে। বুধবার সকাল থেকে ভাঙন হুমকিতে থাকা বাকি ঘরগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন এত তীব্র হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনরোধে দিঘিরপাড় থেকে লৌহজংয়ের শিমুলিয়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকার কাজে ধীরগতির কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশের বেশি। ভুক্তভোগীরা জানান, রাত থেকে দিঘিরপাড় বাজারে ভাঙন শুরু হয়েছে। রাতেই ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পদ্মায় বিলীন হয়েছে। শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করতে পারেননি কেউ। পুরো ঘর নদীতে তলিয়ে গেছে। তবে পাশের ঘরগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। স্রোতের তোড়ে বাঁধের জন্য ফেলা ব্লক ও জিও ব্যাগ ভেসে গেছে। তাই ভাঙনের মুখে রয়েছে জেলার অন্যতম বৃহৎ এই বাজার। প্রতি দিনের মাছের বড় আরৎ এবং গরু- ছাগলেরের হাট ছাড়াসহ বাজারটির সহ্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই এখন হুমকির মুখে। এদিকে যথাযথ কাজ না হওয়া এবং ধীরগতির কারণে সোয়া ৫ শ’ কোটি টাকার চলমান প্রকল্পের ভেতরের এই ভাঙ্গনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। আর রাতের আঁধারে অবৈধ বালু উত্তোলনের ক্ষোভ স্থানীয়দের। স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিজুল মোল্লা বলেন, “আগে এখানে ব্যাপকভাবে বালু উত্তোলন হয়েছে। ড্রেজিংয়ের কারণে যে গভীরতা তৈরি হয়েছে, সেটির কারণেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে জিও ব্যাগ ফেলছে, তা পর্যাপ্ত নয়। শুধু এসে কয়েকটি ব্যাগ দিয়ে চলে যায়, এরপর এরপর আর কোনো খোঁজখবর নেয় না।” স্থানীয় বাসিন্দা সুমন বেপারী বলেন “অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের কারণে আমাদের দিঘিরপাড় বাজারসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম যেমন- সরিষাবন, হালদার বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। যদিও হাইকোর্টে বালু উত্তোলন বন্ধে রিট হয়েছে, তবুও দিনে বন্ধ থাকলেও রাতে কাটার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হয়। কারণ প্রশাসন এত রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না। এজন্য বর্ষার সময় বা গভীর রাতে এই বালু উত্তোলন চলে।” দিঘিরপাড় ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাউসার সোহেল মিজি বলেন, “বাঁধ নির্মাণ কাজে যে সকল প্রতিষ্ঠান জড়িত, তারা একজন আরেকজনকে দোষারোপ করে। এতে করে কাজে অবহেলা হচ্ছে। সরকার পতনের পর কাজের গতি আরও ধীর হয়ে গেছে। এজন্য প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে এই বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ হয়।” প্রাচীন এই দিঘিরপাড় বাজার আগেও সাতবার নদীতে বিলীন হয়েছে। আবার ভাঙনের মুখে রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই বাজার। ২০২১ সালের এপ্রিলে পদ্মায় ভাঙন প্রবণ এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের ১৫ কিলোমিটারে সবশেষ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মুন্সীগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শেখ এনামুল হক বলেন, “আমাদের প্রকল্পে ২৬টি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি স্থায়ী। ব্লক ভিত্তিক স্থায়ী কাজ সম্পন্ন হয়েছে নয় দশমিক এক কিলোমিটার। ১৮টি প্যাকেজের সবগুলোতেই কাজ চলছে। প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ৬০ দশমিক ৫০ শতাংশ। “কাজের অগ্রগতি রয়েছে। কোনো কাজ বন্ধ হয়নি। নদী ভাঙনের মধ্যেও আমাদের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি চলমান আছে। ব্লক কাস্টিং, ব্লক ডাম্পিং, বালুর বস্তা ডাম্পিং সবই চলছে। ৩৩ হাজার ব্যাগের মধ্যে প্রায় সবগুলো জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫ সাইজের সিসি ব্লক এবং ৪৫ সাইজের সিসি ব্লক প্রস্তুতের পাশাপাশি ডাম্পিংও চলছে।” প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, সময়ের আগেই কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা। ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে আগেও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল, কিন্তু পানির স্রোতের কারণে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনে ঘর হারানো ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র দেখে ক্ষতিপূরণের দেওয়া হবে। এখানে দীর্ঘদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। যৌথ বাহিনীর অভিযানও হয়েছে। তবে পাশের জেলা শরিয়তপুর থেকে ড্রেজার নিয়ে এসে রাতে বালু কাটার অভিযোগ পাওয়ার কথা বলেছেন ইউএনও। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।” স্থানীয়রা জানান, প্রাচীন এই দিঘিরপাড় বাজার এর আগেও নদীতে ৭ বার বিলীন হয়ে যায়। এরপর দুই দশকে আবার জমে উঠার পর গেল তিন বছরের ভাঙ্গনে ক্ষতবিক্ষত বর্তমানের দিঘিরপাড়।