গাইবান্ধা : ফুলছড়ি উপজেলার উজালড্ংাগা গ্রামের আশ্রয় কেন্দ্রে অলস সময় পার করছেন লোকজন -সংবাদ
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উজালডাংগা চরের কুদ্দুস মিয়া। ছয় সদস্যের সংসারের ব্যয়ভারের দায়িত্ব তার উপর এর এই ব্যয় পরিচালনা করে কৃষিশ্রম বিক্রি করে। কিন্তু বন্যাকালীন গত মে মাস থেকে প্রায় পাঁচ মাস ধরে কোন ধরণের কাজকর্ম না থাকায় বেকার ও অলস বসে সময় পার করছেন কুদ্দুস মিয়ার মতো আফজাল সরকার, হাকিমুদ্দুন, নুরইসলাম, খালেক মিয়াসহ লাখো শ্রমজীবীরা।
বিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১৮টি উপজেলার ৪১৬টি চরে প্রায় ২২লাখ মানুষ বসবাস করে। এদের মধ্যে তিস্তা,ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী ও চরের অন্ততপক্ষে ১০ লাখ শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে এবং শ্রমজীবীর ৭০শতাংশ মানুষ কৃষিশ্রমের সাথে যুক্ত। বন্যা কবলিত চরাঞ্চলে এই সময়ে কোন ধরণের আয় উপার্জনমূর্খী কাজ ও অর্থ যোগানের উপায় না থাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্য সন্ধান করতে পারছেন না এসব পরিবারের সদস্যরা। এতে করে চরম খাদ্য নরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নারী পুরুষ ও শিশুরা। এদিকে চলতি মৌসুমে বন্যার গতিপ্রকৃতিও বুঝে উঠে পারছেন না চরাঞ্চলের মানুষ। একারণে কৃষি চাষবাদের জন্য মাঠেও কাজ নেই।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটিকাপাসিয়া গ্রামের রাজা মিয়া জানান, এবছর তিস্তা নদীর পানি ওঠানামা করছে। বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে না। এতে করে লোকজন কৃষি চাষাবাদও ঠিকমতো করতে পারছে না।
চরের মানুষজন কৃষি কাজের সাথে জড়িত থেকে আয় উপার্জন করে। কিন্তু কোন ধরণের কাজকর্ম না থাকায় সবাই এখন বেকার সময় পার করছে।
সাঘাটা উপজেলার কালুরপাড়া চরের আব্দুল আজিজ মিয়া জানান, চার-মাস ধরে কাজকর্ম নেই, ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছি। মাঝেমধ্যে অনাহারেও থাকতে হচ্ছে। এভাবে কতদিন এর সঠিক হিসেব নেই তার কাছে।
এই গ্রামের ছকিনা বেগম জানান, স্বামী আব্দুল হাকিম মোল্লা গাইবান্ধা শহরের একটি ইটভাটায় কাজ করতো। কিন্তু এখন বৃষ্টির কারণে ভাটার কাজ বন্ধ। পরিবারের ৩টি শিশু সন্তান। হাতে কোন টাকা পয়সা নেই, তিনবেলা খাবার নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
ফুলছড়ি চরের নুরুজ্জামান জানান সবখাদ্য দ্রব্যের মূল্য এখন বেশি, কিন্তু হাতে টাকা নেই। এজন্য অশান্তিতে সময় যাচ্ছে। এদিকে এবছর সরকারের বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচিও নেই বলে তিনি জানান।
উত্তরাঞ্চলভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র এর প্রধান নির্বাহী প্রধান এম.আবদুস্্ সালাম জানান মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের মানুষজনের বিশেষ করে চরাঞ্চলে কাজ থাকে না। এই দীর্ঘসময় কাজকর্ম না থাকায় জমানো অর্থ শেষ হয়ে যায়। এরপর ধারদেনা ও চরাসুদে ঋণগ্রহণ করে চলতে হয়। আর এই ধারদেনা পরিশোধ করা নিয়ে পরবর্তীতে চরম মুশকিলে পড়তে হয়।
তিনি জানান এইসময়ে চরাঞ্চলের মানুষজনের জন্য কাজ ও অর্থের যোগানের জন্য টেকসই পরিকল্পনা প্রয়োজন, কেননা শুধুমাত্র ত্রাণ নির্ভর কর্মসূচি না নিয়ে জীবনজীবিকার উন্নয়নে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (সার্বিক) এ.কেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলের প্রেক্ষাপট মেইনল্যান্ড থেকে পুরোপুরি ভিন্ন।
এখানে প্রায় ছয় মাস কোন কাজ থাকেন না। এজন্য এই বেকার মানুষজনকে কাজে লাগাতে হবে এবং কাজের সাথে যুক্ত করতে হবে। এজন্য কারিগারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরিবারের কোন সদস্যকে সারা বছর কাজের সাথে যুক্ত রাখার বিকল্প নেই বলে তিনি জানান।
গাইবান্ধা : ফুলছড়ি উপজেলার উজালড্ংাগা গ্রামের আশ্রয় কেন্দ্রে অলস সময় পার করছেন লোকজন -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উজালডাংগা চরের কুদ্দুস মিয়া। ছয় সদস্যের সংসারের ব্যয়ভারের দায়িত্ব তার উপর এর এই ব্যয় পরিচালনা করে কৃষিশ্রম বিক্রি করে। কিন্তু বন্যাকালীন গত মে মাস থেকে প্রায় পাঁচ মাস ধরে কোন ধরণের কাজকর্ম না থাকায় বেকার ও অলস বসে সময় পার করছেন কুদ্দুস মিয়ার মতো আফজাল সরকার, হাকিমুদ্দুন, নুরইসলাম, খালেক মিয়াসহ লাখো শ্রমজীবীরা।
বিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১৮টি উপজেলার ৪১৬টি চরে প্রায় ২২লাখ মানুষ বসবাস করে। এদের মধ্যে তিস্তা,ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী ও চরের অন্ততপক্ষে ১০ লাখ শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে এবং শ্রমজীবীর ৭০শতাংশ মানুষ কৃষিশ্রমের সাথে যুক্ত। বন্যা কবলিত চরাঞ্চলে এই সময়ে কোন ধরণের আয় উপার্জনমূর্খী কাজ ও অর্থ যোগানের উপায় না থাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্য সন্ধান করতে পারছেন না এসব পরিবারের সদস্যরা। এতে করে চরম খাদ্য নরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নারী পুরুষ ও শিশুরা। এদিকে চলতি মৌসুমে বন্যার গতিপ্রকৃতিও বুঝে উঠে পারছেন না চরাঞ্চলের মানুষ। একারণে কৃষি চাষবাদের জন্য মাঠেও কাজ নেই।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটিকাপাসিয়া গ্রামের রাজা মিয়া জানান, এবছর তিস্তা নদীর পানি ওঠানামা করছে। বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে না। এতে করে লোকজন কৃষি চাষাবাদও ঠিকমতো করতে পারছে না।
চরের মানুষজন কৃষি কাজের সাথে জড়িত থেকে আয় উপার্জন করে। কিন্তু কোন ধরণের কাজকর্ম না থাকায় সবাই এখন বেকার সময় পার করছে।
সাঘাটা উপজেলার কালুরপাড়া চরের আব্দুল আজিজ মিয়া জানান, চার-মাস ধরে কাজকর্ম নেই, ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছি। মাঝেমধ্যে অনাহারেও থাকতে হচ্ছে। এভাবে কতদিন এর সঠিক হিসেব নেই তার কাছে।
এই গ্রামের ছকিনা বেগম জানান, স্বামী আব্দুল হাকিম মোল্লা গাইবান্ধা শহরের একটি ইটভাটায় কাজ করতো। কিন্তু এখন বৃষ্টির কারণে ভাটার কাজ বন্ধ। পরিবারের ৩টি শিশু সন্তান। হাতে কোন টাকা পয়সা নেই, তিনবেলা খাবার নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
ফুলছড়ি চরের নুরুজ্জামান জানান সবখাদ্য দ্রব্যের মূল্য এখন বেশি, কিন্তু হাতে টাকা নেই। এজন্য অশান্তিতে সময় যাচ্ছে। এদিকে এবছর সরকারের বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচিও নেই বলে তিনি জানান।
উত্তরাঞ্চলভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র এর প্রধান নির্বাহী প্রধান এম.আবদুস্্ সালাম জানান মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের মানুষজনের বিশেষ করে চরাঞ্চলে কাজ থাকে না। এই দীর্ঘসময় কাজকর্ম না থাকায় জমানো অর্থ শেষ হয়ে যায়। এরপর ধারদেনা ও চরাসুদে ঋণগ্রহণ করে চলতে হয়। আর এই ধারদেনা পরিশোধ করা নিয়ে পরবর্তীতে চরম মুশকিলে পড়তে হয়।
তিনি জানান এইসময়ে চরাঞ্চলের মানুষজনের জন্য কাজ ও অর্থের যোগানের জন্য টেকসই পরিকল্পনা প্রয়োজন, কেননা শুধুমাত্র ত্রাণ নির্ভর কর্মসূচি না নিয়ে জীবনজীবিকার উন্নয়নে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (সার্বিক) এ.কেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলের প্রেক্ষাপট মেইনল্যান্ড থেকে পুরোপুরি ভিন্ন।
এখানে প্রায় ছয় মাস কোন কাজ থাকেন না। এজন্য এই বেকার মানুষজনকে কাজে লাগাতে হবে এবং কাজের সাথে যুক্ত করতে হবে। এজন্য কারিগারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরিবারের কোন সদস্যকে সারা বছর কাজের সাথে যুক্ত রাখার বিকল্প নেই বলে তিনি জানান।