নরসিংদী : কালভার্টের ওপর পাট শুকাচ্ছেন কৃষক -সংবাদ
সংবাদদাতা, নরসিংদী পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন নরসিংদী জেলার কৃষকরা। এক সময়ের সোনালি আঁশখ্যাত পাটের চাষ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিজমি হ্র্রাস, স্বল্প সময়ে জমিতে অধিক ফসল ফলানোর প্রবণতা, পাট পচনের পানি সংকটসহ বিভিন্ন কারণে পাট চাষে কৃষকদের এ অনীহা।পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, অনাবৃষ্টি আর পাট পচানোর পানি সংকটের কারণে পাটের আবাদ কমেছে নরসিংদীতে। চলতি বছরে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।চাষিদের দাবি, প্রতি বছরে পাট চাষে একরকম লোকসান গুনতে হয়। বাধ্য হয়ে অন্য ফসল আবাদ করছেন তারা।তবে কৃষি অফিস বলছে, পাট চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা ও বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে পাটের দরপতন, উৎপাদন খরচ বেশি ও পাট ছড়ানো পানির অভাবে কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। ১ বিঘা জমিতে দুই -তিন মণ পাট উৎপাদন হয়। আর প্রতি মণ পাট সর্বোচ্চ ২,২০০- ৩,৫০০ শত টাকা দরে বিক্রি হয়।এ ক্ষেত্রে বাজারমূল্য হিসেবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন।
প্রবীন কৃষকরা জানান, ষাটের দশকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাট ক্রয় কেন্দ্র ছিল,আবার বড় বড় জুট মিলের চাহিদা পূরণে কৃষকরা পাট চাষে ব্যাপক লাভবান হতেন। অপরদিকে ক্রয় কেন্দ্রগুলো পাট সংগ্রহ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করত। ফলে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে কৃষকরাও ঝুঁকে পড়তেন পাট চাষে।
কৃষকরা জানান,এক সময় পাটকে সোনালী আঁশ বলা হতো। তবে সেই প্রবাদ এখন বিলিন হওয়ার পথে। উৎপাদনে খরচ ও পরিশ্রম বেশি এবং জাগ দেয়ার জায়গা না থাকায় পাট চাষে আগ্রহ কমেছে চাষীদের। ফলে প্রতি বছর কমছে পাটের আবাদ। আগাম বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় ফলন যেমন কম হয়েছে, পাটের মানও হতাশাজনক। ন্যায্য মূল্য না পওয়ায় পাটের আবাদ ছেড়ে সবজির দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
বর্তমানে পাট শিল্প ও পাট উৎপাদন নিয়ে কৃষকদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তারা বলছেন, পাট চাষে ভোগান্তি বেশি, লাভ কম।উৎপাদিত পাট সংরক্ষণের উপযুক্ত জায়গা নেই,অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা খরায় ফলনও কমে যায়। আবার সরাসরি কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেই। অন্য ফসলে বর্তমানে লাভ হয় বেশি। তাই লাভজনক ফসলের দিকে ঝুঁকছেন নরসিংদীর কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয় ২ হাজার ৪৭০হেক্টর জমিতে।আর চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৫০৬হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও আবাদ হয় ২হাজার৪৩৪ হেক্টর জমিতে।সে হিসেবে গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ কমেছে ৩৬ হেক্টর জমির।
শিবপুর উপজেলার উত্তর সাধারচরের পাট চাষি খোকন জানান,প্রতিবছর চাষিরা এ পাট আবাদ করে মোটা অংকের টাকা আয় করেন।কিন্তু পানি সংকটের কারণে চাষিদের পাট পচাতে সইতে হয় নানা বিড়ম্বনা।অনেকেই খালে বিলে পানি না পেয়ে বাড়ির পাশে গর্তে সামান্য পানি দিয়ে পাট পচাতে দেন।এতে এক দিকে যেমন চাষিদের খরচ বেড়ে যায় তেমনি পাটের রং নষ্ট হয়।ফলে পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। একই উপজেলার ঘাশিরদীয়া গ্রামের কৃষক আতাউর বলেন,এ বার মাত্র ১ বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছি।শ্রমিকের মজুরি এখন ৮০০ টাকা। খরচের তুলনায় বিক্রি কম, লাভ তো দূরের কথা।লোকসান গুণতে হয়। একই পরিমাণ জমিতে যদি সবজি করি তাহলে তা থেকে বছরে ১০-২০হাজার টাকা আয় হয়।
অপর আরেক কৃষক শাজাহান বলেন, পাটের আবাদে সবচেয়ে বড় সমস্যা জাগ দেয়ার জায়গা না থাকা এবং পানি। পাট কাটার পর জাগ দেয়ার জন্য ঠিকমত পানি ও জায়গা পাওয়া যায় না।গত বছর এক বিঘায় পাট আবাদ করেছিলাম, এ সমস্যার কারণে এ বছর করিনি। সে জমিতে এখন কাঁকরোল ও পটল করেছি। প্রতিদিন কাঁকরোল ও পটল তুলে বাজারে বিক্রি করছি। ভাল দাম পাচ্ছি। পাটের মতো ঝামেলা পোহাতে হয় না।
পলাশ উপজেলার গজারিয়া গ্রামের পাট চাষি ছাইদ জানান, গেল বছর তিনি ১বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন।চলতি মৌসুমে তিনি আধা বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টি ও তাপদাহের কারণে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পাট বীজ বপন করতে পারেনি। উপরন্তু পাটক্ষেতে সেচ দিতে না পারায় পানির অভাবে পাট গাছ বাড়ছে না। অন্যদিকে পাট পচানোর ব্যবস্থা না করতে পারলে সামনে বছর আর পাট চাষ করবেন না বলেও জানান এই চাষি। পাটচাষিরা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে এবার লাভ তো দূরের কথা উঠবে না সার,বীজ আর কীটনাশক বাবদ খরচ হওয়া টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবদুল হাই জানান, ‘চলতি মৌসূমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এক সময় এখানে পাটের প্রচুর আবাদ হতো। বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতি বছর কমছে পাটের আবাদ। কৃষকরা এখন পাট ছেড়ে সবজি আবাদে ঝুঁকছেন। আঁশ ছাড়ানোর (পঁচানো) সময় পানি না পাওয়ায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়তে কৃষকদের।তিনি আরো বলেন,খরচ ও সময় কম লাগায় সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন তারা। পাট চাষিদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হচ্ছে পাট চাষে আগ্রহী করে তোলার জন্য। বিকল্প পদ্ধদিতে পাট পচানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানালেন এই কর্মকর্তা।
নরসিংদী : কালভার্টের ওপর পাট শুকাচ্ছেন কৃষক -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, নরসিংদী পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন নরসিংদী জেলার কৃষকরা। এক সময়ের সোনালি আঁশখ্যাত পাটের চাষ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিজমি হ্র্রাস, স্বল্প সময়ে জমিতে অধিক ফসল ফলানোর প্রবণতা, পাট পচনের পানি সংকটসহ বিভিন্ন কারণে পাট চাষে কৃষকদের এ অনীহা।পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, অনাবৃষ্টি আর পাট পচানোর পানি সংকটের কারণে পাটের আবাদ কমেছে নরসিংদীতে। চলতি বছরে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।চাষিদের দাবি, প্রতি বছরে পাট চাষে একরকম লোকসান গুনতে হয়। বাধ্য হয়ে অন্য ফসল আবাদ করছেন তারা।তবে কৃষি অফিস বলছে, পাট চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা ও বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে পাটের দরপতন, উৎপাদন খরচ বেশি ও পাট ছড়ানো পানির অভাবে কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। ১ বিঘা জমিতে দুই -তিন মণ পাট উৎপাদন হয়। আর প্রতি মণ পাট সর্বোচ্চ ২,২০০- ৩,৫০০ শত টাকা দরে বিক্রি হয়।এ ক্ষেত্রে বাজারমূল্য হিসেবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন।
প্রবীন কৃষকরা জানান, ষাটের দশকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাট ক্রয় কেন্দ্র ছিল,আবার বড় বড় জুট মিলের চাহিদা পূরণে কৃষকরা পাট চাষে ব্যাপক লাভবান হতেন। অপরদিকে ক্রয় কেন্দ্রগুলো পাট সংগ্রহ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করত। ফলে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে কৃষকরাও ঝুঁকে পড়তেন পাট চাষে।
কৃষকরা জানান,এক সময় পাটকে সোনালী আঁশ বলা হতো। তবে সেই প্রবাদ এখন বিলিন হওয়ার পথে। উৎপাদনে খরচ ও পরিশ্রম বেশি এবং জাগ দেয়ার জায়গা না থাকায় পাট চাষে আগ্রহ কমেছে চাষীদের। ফলে প্রতি বছর কমছে পাটের আবাদ। আগাম বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় ফলন যেমন কম হয়েছে, পাটের মানও হতাশাজনক। ন্যায্য মূল্য না পওয়ায় পাটের আবাদ ছেড়ে সবজির দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
বর্তমানে পাট শিল্প ও পাট উৎপাদন নিয়ে কৃষকদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তারা বলছেন, পাট চাষে ভোগান্তি বেশি, লাভ কম।উৎপাদিত পাট সংরক্ষণের উপযুক্ত জায়গা নেই,অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা খরায় ফলনও কমে যায়। আবার সরাসরি কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেই। অন্য ফসলে বর্তমানে লাভ হয় বেশি। তাই লাভজনক ফসলের দিকে ঝুঁকছেন নরসিংদীর কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয় ২ হাজার ৪৭০হেক্টর জমিতে।আর চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৫০৬হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও আবাদ হয় ২হাজার৪৩৪ হেক্টর জমিতে।সে হিসেবে গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ কমেছে ৩৬ হেক্টর জমির।
শিবপুর উপজেলার উত্তর সাধারচরের পাট চাষি খোকন জানান,প্রতিবছর চাষিরা এ পাট আবাদ করে মোটা অংকের টাকা আয় করেন।কিন্তু পানি সংকটের কারণে চাষিদের পাট পচাতে সইতে হয় নানা বিড়ম্বনা।অনেকেই খালে বিলে পানি না পেয়ে বাড়ির পাশে গর্তে সামান্য পানি দিয়ে পাট পচাতে দেন।এতে এক দিকে যেমন চাষিদের খরচ বেড়ে যায় তেমনি পাটের রং নষ্ট হয়।ফলে পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। একই উপজেলার ঘাশিরদীয়া গ্রামের কৃষক আতাউর বলেন,এ বার মাত্র ১ বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছি।শ্রমিকের মজুরি এখন ৮০০ টাকা। খরচের তুলনায় বিক্রি কম, লাভ তো দূরের কথা।লোকসান গুণতে হয়। একই পরিমাণ জমিতে যদি সবজি করি তাহলে তা থেকে বছরে ১০-২০হাজার টাকা আয় হয়।
অপর আরেক কৃষক শাজাহান বলেন, পাটের আবাদে সবচেয়ে বড় সমস্যা জাগ দেয়ার জায়গা না থাকা এবং পানি। পাট কাটার পর জাগ দেয়ার জন্য ঠিকমত পানি ও জায়গা পাওয়া যায় না।গত বছর এক বিঘায় পাট আবাদ করেছিলাম, এ সমস্যার কারণে এ বছর করিনি। সে জমিতে এখন কাঁকরোল ও পটল করেছি। প্রতিদিন কাঁকরোল ও পটল তুলে বাজারে বিক্রি করছি। ভাল দাম পাচ্ছি। পাটের মতো ঝামেলা পোহাতে হয় না।
পলাশ উপজেলার গজারিয়া গ্রামের পাট চাষি ছাইদ জানান, গেল বছর তিনি ১বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন।চলতি মৌসুমে তিনি আধা বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টি ও তাপদাহের কারণে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পাট বীজ বপন করতে পারেনি। উপরন্তু পাটক্ষেতে সেচ দিতে না পারায় পানির অভাবে পাট গাছ বাড়ছে না। অন্যদিকে পাট পচানোর ব্যবস্থা না করতে পারলে সামনে বছর আর পাট চাষ করবেন না বলেও জানান এই চাষি। পাটচাষিরা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে এবার লাভ তো দূরের কথা উঠবে না সার,বীজ আর কীটনাশক বাবদ খরচ হওয়া টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবদুল হাই জানান, ‘চলতি মৌসূমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এক সময় এখানে পাটের প্রচুর আবাদ হতো। বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতি বছর কমছে পাটের আবাদ। কৃষকরা এখন পাট ছেড়ে সবজি আবাদে ঝুঁকছেন। আঁশ ছাড়ানোর (পঁচানো) সময় পানি না পাওয়ায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়তে কৃষকদের।তিনি আরো বলেন,খরচ ও সময় কম লাগায় সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন তারা। পাট চাষিদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হচ্ছে পাট চাষে আগ্রহী করে তোলার জন্য। বিকল্প পদ্ধদিতে পাট পচানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানালেন এই কর্মকর্তা।