ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে থাকা খুলনা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ‘দখল’ করে একটি আবাসিক হলের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে গত রোববার খামারের নামফলকের ওপর নতুন ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক খালেদ কনক ও সদস্যসচিব মশিউর রহমানের সই করা এক প্রতিবাদলিপিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয়, মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, গল্লামারী, খুলনা; উপ-প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট; দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র ফিশ হেলথ ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি ও একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ প্রায় ১০.৩৫ একর সরকারি জমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থী জবরদখল ও প্রতিষ্ঠানের মূল নামফলক অপসারণ করে অবৈধভাবে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ ঘোষণা করেছে। এতে মৎস্য অধিদপ্তরের এ প্রতিষ্ঠানে কার্প ও চিংড়ি হ্যাচারি, প্রজননক্ষম মৎস্য ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কলাকৌশল সংবলিত প্রশিক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা, জেনেটিক্যালি পরিশুদ্ধ রেণু ও পোনা উৎপাদন, বৃহত্তর খুলনাসহ পাশের অন্য জেলার ঘের ও খামারগুলোর ভৌত-রাসায়নিক প্যারামিটার পরীক্ষা, পিসিআর অ্যামপ্লিফিকেশনসহ অন্য কার্যক্রম বন্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দেয়া হয়েছে।
এহেন জঘন্য মবোক্রেসির মাধ্যমে শুধু জুলাই আন্দোলনের মহৎ ও পবিত্র উদ্দেশ্যই ভূলুণ্ঠিত হয়নি বরং দেশের উৎপাদনমুখী মৎস্য সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব এবং কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত ও বিপর্যস্ত হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের দ্বারা সরকারি সম্পত্তি ও দপ্তরসমূহ জবরদখলের এহেন কর্মকা- দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি অশ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।
এর আগে ১০ আগস্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে থাকা ‘খুলনা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার’ দখল করে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ নামে আবাসিক হলের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে তারা খামার কার্যালয়ের নামফলকের ওপর নতুন ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে থাকা ১০ দশমিক ৩৫ একর আয়তনের খামারটি মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনসংকট নিরসন, গবেষণাগার সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে খামারটি বাধা হয়ে আছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা সাত হাজারের বেশি হলেও হল আছে মাত্র পাঁচটি। এতে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হয়। জীববিজ্ঞানভিত্তিক ডিসিপ্লিনগুলোর মাঠ গবেষণার ক্ষেত্রেও জমির অভাব তীব্র সমস্যা তৈরি করেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের এক সূত্র জানায়, এ জায়গার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি আবেদন দিয়েছিল। সেটির অনুলিপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাকেও দেয়া হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঢাকায় একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে উভয়পক্ষ নিজেদের যৌক্তিকতা তুলে ধরে। আলোচনায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, খামারটি হস্তান্তর করা হবে না। কারণ এর সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, খামারে জিনগত বিশুদ্ধ ও উচ্চবর্ধনশীল ১৮৩৬টি প্রজননক্ষম মাছ প্রতিপালন ও সরবরাহ করা হয়। যার মাধ্যমে এই প্রজাতির মাছের বিশুদ্ধতা রক্ষা ও মৎস্যচাষিদের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে ৪৮০ জন খামারিকে পোনা ও রেণু সরবরাহ করা হয়। প্রতি বছর এখান থেকে প্রায় ছয় হাজার চাষিকে উন্নত মাছচাষে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। খামারে অবস্থিত ফিশ হেলথ অ্যান্ড ডিজিজ ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের চিংড়ি ঘেরের মাটি ও পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়। ৭৬৩টি ঘেরের চিংড়ির রোগের পরীক্ষা (পিসিআর টেস্ট) করা হয়েছে। এ খামার থেকে বছরে কমপক্ষে ২০ হাজারের বেশি চাষি উপকার পেয়ে থাকেন। বিজ্ঞানসম্মত সেবা প্রদানের জন্য গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৫৬৯ মে.টন চিংড়ি বেশি রপ্তানি হয়েছে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে থাকা খুলনা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ‘দখল’ করে একটি আবাসিক হলের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে গত রোববার খামারের নামফলকের ওপর নতুন ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক খালেদ কনক ও সদস্যসচিব মশিউর রহমানের সই করা এক প্রতিবাদলিপিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয়, মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, গল্লামারী, খুলনা; উপ-প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট; দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র ফিশ হেলথ ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি ও একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ প্রায় ১০.৩৫ একর সরকারি জমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থী জবরদখল ও প্রতিষ্ঠানের মূল নামফলক অপসারণ করে অবৈধভাবে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ ঘোষণা করেছে। এতে মৎস্য অধিদপ্তরের এ প্রতিষ্ঠানে কার্প ও চিংড়ি হ্যাচারি, প্রজননক্ষম মৎস্য ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কলাকৌশল সংবলিত প্রশিক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা, জেনেটিক্যালি পরিশুদ্ধ রেণু ও পোনা উৎপাদন, বৃহত্তর খুলনাসহ পাশের অন্য জেলার ঘের ও খামারগুলোর ভৌত-রাসায়নিক প্যারামিটার পরীক্ষা, পিসিআর অ্যামপ্লিফিকেশনসহ অন্য কার্যক্রম বন্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দেয়া হয়েছে।
এহেন জঘন্য মবোক্রেসির মাধ্যমে শুধু জুলাই আন্দোলনের মহৎ ও পবিত্র উদ্দেশ্যই ভূলুণ্ঠিত হয়নি বরং দেশের উৎপাদনমুখী মৎস্য সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব এবং কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত ও বিপর্যস্ত হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের দ্বারা সরকারি সম্পত্তি ও দপ্তরসমূহ জবরদখলের এহেন কর্মকা- দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি অশ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।
এর আগে ১০ আগস্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে থাকা ‘খুলনা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার’ দখল করে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ নামে আবাসিক হলের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে তারা খামার কার্যালয়ের নামফলকের ওপর নতুন ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে থাকা ১০ দশমিক ৩৫ একর আয়তনের খামারটি মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনসংকট নিরসন, গবেষণাগার সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে খামারটি বাধা হয়ে আছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা সাত হাজারের বেশি হলেও হল আছে মাত্র পাঁচটি। এতে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হয়। জীববিজ্ঞানভিত্তিক ডিসিপ্লিনগুলোর মাঠ গবেষণার ক্ষেত্রেও জমির অভাব তীব্র সমস্যা তৈরি করেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের এক সূত্র জানায়, এ জায়গার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি আবেদন দিয়েছিল। সেটির অনুলিপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাকেও দেয়া হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঢাকায় একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে উভয়পক্ষ নিজেদের যৌক্তিকতা তুলে ধরে। আলোচনায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, খামারটি হস্তান্তর করা হবে না। কারণ এর সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, খামারে জিনগত বিশুদ্ধ ও উচ্চবর্ধনশীল ১৮৩৬টি প্রজননক্ষম মাছ প্রতিপালন ও সরবরাহ করা হয়। যার মাধ্যমে এই প্রজাতির মাছের বিশুদ্ধতা রক্ষা ও মৎস্যচাষিদের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে ৪৮০ জন খামারিকে পোনা ও রেণু সরবরাহ করা হয়। প্রতি বছর এখান থেকে প্রায় ছয় হাজার চাষিকে উন্নত মাছচাষে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। খামারে অবস্থিত ফিশ হেলথ অ্যান্ড ডিজিজ ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের চিংড়ি ঘেরের মাটি ও পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়। ৭৬৩টি ঘেরের চিংড়ির রোগের পরীক্ষা (পিসিআর টেস্ট) করা হয়েছে। এ খামার থেকে বছরে কমপক্ষে ২০ হাজারের বেশি চাষি উপকার পেয়ে থাকেন। বিজ্ঞানসম্মত সেবা প্রদানের জন্য গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৫৬৯ মে.টন চিংড়ি বেশি রপ্তানি হয়েছে।