লাল শাপলা তুলে বিমোহিত শিশু -সংবাদ
বরিশালের উজিরপুরের সাতলা বিল এলাকা এবারও লাল শাপলার কার্পেটে একাকার হয়ে গেছে। প্রকৃতির এক অনাবিল সৌন্দর্যে দিগন্ত বিস্তৃত শাপলা বিলের সৌন্দর্য সকাল ও সন্ধ্যার সূর্যের সোনালী আভাকেও এখন হার মানায়। বিলের পানিতে লতাপাতা গুল্মে ভরা শত সহস্র লাল ও সাদা শাপলা। কেউ কেউ বলছেন দিগন্ত বিস্তৃত ভাসমান লাল কার্পেট। এ যেন প্রকৃতির বুকে বাহারী রঙের এক নকশি কাঁথা।
বরিশাল মহানগরী থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ ও মধ্য সাতলা গ্রামের বিশাল বিলজুড়ে প্রতি বছরের মতো এবারও শাপলায় ভড়ে উঠেছে। তবে মধ্য ও পশ্চিম সাতলার বিলগুলো যেন দিগন্ত বিস্তৃত লাল কার্পেট হয়ে গেছে। এখানে লাল শাপলারই প্রাধান্য বেশি। জুলাইর শেষভাগ থেকে অক্টোবরের মধ্যভাগ পর্যন্ত সাতলার শাপলা বিল শাপলার ফুলে ফুলে ভরপুর থাকে। তবে শাপলার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে হলে সেখানে পৌঁছতে হবে খুব ভোরে। কারণ প্রকৃতির এ আপরদান শাপলা, সূর্যের রস্মির সঙ্গে মিল রেখেই পাপড়ি মেলে। আবার সূর্যের তেজ বাড়ার সঙ্গে নিজেকে গুঁটিয়ে নেয়।
আর এ শাপলার বিল দেখতে ইতোমধ্যে স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের পর্যটকদের আনাগোনো বেড়েছে। শাপলার বিলকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ধরে ঐ এলাকায় কিছু অর্থনৈতিক কর্মকা-ও শুরু হয়েছে। বছরের ৩-৪টি মাস শাপলা বিল দেখতে আসা বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখান সহ তাদের আহার থেকে শুরু করে নানামুখী সেবামূলক কাজের সঙ্গে অর্থনৈতিক কার্মকা- জড়িত। যা ঐ এলাকার যুবক ও তরুণসহ নানা বয়সী মানুষের কয়েকটি মাস বিকল্প কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দিচ্ছে।
তবে শাপলা বিলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে আসা স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের পর্যটকদের যথেচ্ছ নৌকা চালনাসহ তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন প্লাস্টিক দ্রব্য দূষণও ছড়াচ্ছে শাপলা বিলে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এ শাপলা বিলের জলজ উদ্ভিজ ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পরিবেশবিদসহ উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষকরা।
প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দেশি নৌকা নিয়ে উজিরপুরের শাপলা বিলে ভ্রমনে আসা শত শত পর্যটক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও এখানের পরিবেশ প্রতিবেশের দিকে অনেকেরই সচতনতার ঘাটতি রয়েছে। যথেচ্ছ নৌকা চালনায় বৈঠা আর লগির আঘাতে শাপলার কা- থেকে মূল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপরন্তু পর্যটকদের খাবার নিয়ে আসা পলিব্যাগ ও প্লস্টিকের পানির বোতল ছাড়াও বিভিন্ন শুকনো খাবারের প্যাকটগুলোও বিলের মধ্যে ফেলায় পরিবেশের ক্ষতি তড়ান্বিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবেশবীদদের।
গত দু সপ্তাহ ধরেই শতশত একর জলাভূমিতে জন্ম নেয়া নানা রঙ ও বাহারের অগনিত শাপলা এক নজর দেখার জন্য ভোর থেকেই নানা বয়সী হাজারো মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন শাপলা বিলে। পর্যটকদের আনাগোনায় ক্রমেই মুখরিত হচ্ছে শাপলার রাজ্য সাতলা এলাকা। ওই বিল এলাকার সহজ সরল মানুষগুলো যুগের পর যুগ অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটিয়ছে ফসল না হওয়ায়। তাদের আয়ের কোনো উৎস্য ছিল না। ১৯৯০ সালের পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘সাতলা-বাগদা সেচ প্রকল্প’র আওতায় ৩টি পোল্ডারে বাঁধ, স্লুইস গেট, রেগুলেটার, আউটলেট ও ইনলেট স্ট্রাকচার নির্মাণ করে পুরো এলাকার পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসে। ফলে রবি মৌসুমে এখানে প্রচুর বোরো ধান উৎপাদন হচ্ছে। আর বর্ষা মৌসুমে মাইলের পর মাইলজুড়ে শাপলা উৎপাদন হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে দেশি মাছ। পর্যটক আকর্ষণের পাশাপাশি এ বিলে উৎপাদিত শাপলা বরিশালসহ সুদূর ঢাকাতেও বিপণন হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা সাতলার শাপলা কিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছে।
এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় অনেকেই বিলের পানিতে জীবন সংগ্রামের আয়ের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছেন শাপলা তোলাকে। তারা সকালের সূর্যের আলো ফোটার আগেই ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে নেমে পড়ে বিলের শাপলা তুলতে। শাপলা বিলই এ অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা হয়ে উঠেছে। আর তাই এখানের সুস্বাদু শাপলা বরিশাল পেরিয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজারেও।
স্থানীয়দের মতে, প্রায় দুশ’ বছর ধরে সাতলার বিলে শাপলা জন্মাচ্ছ। তবে সাম্প্রতিককালেই বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে শাপলার কদর যথেষ্ট বেড়েছে। আর তাই এই এলাকার প্রায় ৫০ ভাগ মানুষই বর্ষা মৌসুমে শাপলা আহরণ ও বিপণনে জড়িত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমেই শাপলা উত্তোলনসহ পরিবেশ সহনীয় পর্যটন ব্যাবস্থা গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
ইতোপূর্বে উজিরপুর উপজেলা প্রশাসন সাতলার শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের জন্য কালবিলা এলাকায় ছোট পরিসরে একটি আবসন ব্যবস্থার জন্য স্থান নির্ধারণ করেছিল। সাতলা দিনে দিনে পর্যটন এলাকায় পরিণত হওয়ায় শাপলা বিলকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণেরও উদ্যোগ নিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। বরিশালের জেলা প্রশাসনও শাপলা বিল যথাযথ সংরক্ষণসহ পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির সুপারিশ করেছিল মন্ত্রণালয়ে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তবে সচেতন মহল সতলা বিলের সৌন্দর্য ধরে রাখার পাশাপাশি শাপলার বংশ বিস্তার নির্বিঘœ রাখতে এখানকার পর্যটন ব্যবস্থাকে পরিবেশ বান্ধব রাখার ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।
লাল শাপলা তুলে বিমোহিত শিশু -সংবাদ
রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫
বরিশালের উজিরপুরের সাতলা বিল এলাকা এবারও লাল শাপলার কার্পেটে একাকার হয়ে গেছে। প্রকৃতির এক অনাবিল সৌন্দর্যে দিগন্ত বিস্তৃত শাপলা বিলের সৌন্দর্য সকাল ও সন্ধ্যার সূর্যের সোনালী আভাকেও এখন হার মানায়। বিলের পানিতে লতাপাতা গুল্মে ভরা শত সহস্র লাল ও সাদা শাপলা। কেউ কেউ বলছেন দিগন্ত বিস্তৃত ভাসমান লাল কার্পেট। এ যেন প্রকৃতির বুকে বাহারী রঙের এক নকশি কাঁথা।
বরিশাল মহানগরী থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ ও মধ্য সাতলা গ্রামের বিশাল বিলজুড়ে প্রতি বছরের মতো এবারও শাপলায় ভড়ে উঠেছে। তবে মধ্য ও পশ্চিম সাতলার বিলগুলো যেন দিগন্ত বিস্তৃত লাল কার্পেট হয়ে গেছে। এখানে লাল শাপলারই প্রাধান্য বেশি। জুলাইর শেষভাগ থেকে অক্টোবরের মধ্যভাগ পর্যন্ত সাতলার শাপলা বিল শাপলার ফুলে ফুলে ভরপুর থাকে। তবে শাপলার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে হলে সেখানে পৌঁছতে হবে খুব ভোরে। কারণ প্রকৃতির এ আপরদান শাপলা, সূর্যের রস্মির সঙ্গে মিল রেখেই পাপড়ি মেলে। আবার সূর্যের তেজ বাড়ার সঙ্গে নিজেকে গুঁটিয়ে নেয়।
আর এ শাপলার বিল দেখতে ইতোমধ্যে স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের পর্যটকদের আনাগোনো বেড়েছে। শাপলার বিলকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ধরে ঐ এলাকায় কিছু অর্থনৈতিক কর্মকা-ও শুরু হয়েছে। বছরের ৩-৪টি মাস শাপলা বিল দেখতে আসা বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখান সহ তাদের আহার থেকে শুরু করে নানামুখী সেবামূলক কাজের সঙ্গে অর্থনৈতিক কার্মকা- জড়িত। যা ঐ এলাকার যুবক ও তরুণসহ নানা বয়সী মানুষের কয়েকটি মাস বিকল্প কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দিচ্ছে।
তবে শাপলা বিলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে আসা স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের পর্যটকদের যথেচ্ছ নৌকা চালনাসহ তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন প্লাস্টিক দ্রব্য দূষণও ছড়াচ্ছে শাপলা বিলে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এ শাপলা বিলের জলজ উদ্ভিজ ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পরিবেশবিদসহ উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষকরা।
প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দেশি নৌকা নিয়ে উজিরপুরের শাপলা বিলে ভ্রমনে আসা শত শত পর্যটক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও এখানের পরিবেশ প্রতিবেশের দিকে অনেকেরই সচতনতার ঘাটতি রয়েছে। যথেচ্ছ নৌকা চালনায় বৈঠা আর লগির আঘাতে শাপলার কা- থেকে মূল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপরন্তু পর্যটকদের খাবার নিয়ে আসা পলিব্যাগ ও প্লস্টিকের পানির বোতল ছাড়াও বিভিন্ন শুকনো খাবারের প্যাকটগুলোও বিলের মধ্যে ফেলায় পরিবেশের ক্ষতি তড়ান্বিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবেশবীদদের।
গত দু সপ্তাহ ধরেই শতশত একর জলাভূমিতে জন্ম নেয়া নানা রঙ ও বাহারের অগনিত শাপলা এক নজর দেখার জন্য ভোর থেকেই নানা বয়সী হাজারো মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন শাপলা বিলে। পর্যটকদের আনাগোনায় ক্রমেই মুখরিত হচ্ছে শাপলার রাজ্য সাতলা এলাকা। ওই বিল এলাকার সহজ সরল মানুষগুলো যুগের পর যুগ অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটিয়ছে ফসল না হওয়ায়। তাদের আয়ের কোনো উৎস্য ছিল না। ১৯৯০ সালের পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘সাতলা-বাগদা সেচ প্রকল্প’র আওতায় ৩টি পোল্ডারে বাঁধ, স্লুইস গেট, রেগুলেটার, আউটলেট ও ইনলেট স্ট্রাকচার নির্মাণ করে পুরো এলাকার পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসে। ফলে রবি মৌসুমে এখানে প্রচুর বোরো ধান উৎপাদন হচ্ছে। আর বর্ষা মৌসুমে মাইলের পর মাইলজুড়ে শাপলা উৎপাদন হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে দেশি মাছ। পর্যটক আকর্ষণের পাশাপাশি এ বিলে উৎপাদিত শাপলা বরিশালসহ সুদূর ঢাকাতেও বিপণন হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা সাতলার শাপলা কিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছে।
এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় অনেকেই বিলের পানিতে জীবন সংগ্রামের আয়ের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছেন শাপলা তোলাকে। তারা সকালের সূর্যের আলো ফোটার আগেই ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে নেমে পড়ে বিলের শাপলা তুলতে। শাপলা বিলই এ অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা হয়ে উঠেছে। আর তাই এখানের সুস্বাদু শাপলা বরিশাল পেরিয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজারেও।
স্থানীয়দের মতে, প্রায় দুশ’ বছর ধরে সাতলার বিলে শাপলা জন্মাচ্ছ। তবে সাম্প্রতিককালেই বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে শাপলার কদর যথেষ্ট বেড়েছে। আর তাই এই এলাকার প্রায় ৫০ ভাগ মানুষই বর্ষা মৌসুমে শাপলা আহরণ ও বিপণনে জড়িত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমেই শাপলা উত্তোলনসহ পরিবেশ সহনীয় পর্যটন ব্যাবস্থা গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
ইতোপূর্বে উজিরপুর উপজেলা প্রশাসন সাতলার শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের জন্য কালবিলা এলাকায় ছোট পরিসরে একটি আবসন ব্যবস্থার জন্য স্থান নির্ধারণ করেছিল। সাতলা দিনে দিনে পর্যটন এলাকায় পরিণত হওয়ায় শাপলা বিলকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণেরও উদ্যোগ নিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। বরিশালের জেলা প্রশাসনও শাপলা বিল যথাযথ সংরক্ষণসহ পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির সুপারিশ করেছিল মন্ত্রণালয়ে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তবে সচেতন মহল সতলা বিলের সৌন্দর্য ধরে রাখার পাশাপাশি শাপলার বংশ বিস্তার নির্বিঘœ রাখতে এখানকার পর্যটন ব্যবস্থাকে পরিবেশ বান্ধব রাখার ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।