সিংড়া (নাটোর) : ডাক্তারের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় রোগীদের -সংবাদ
নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগী। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে সরকারি হাসপাতাল এখন রোগীদের ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এসব বিষয়ে হাসপাতালে ছবি তুলতে গেলে বাধা দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমক্ষেক্স কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে বহির্বিভাগের রোগী ও তাদের স্বজনরা চিকিৎসকের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন বলে জানা যায়। হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ রয়েছে ১১টি, কাজ করছে রয়েছে ৫ জন, বর্তমানে নার্স আছে প্রায় ২০ জন যদিও কিছুদিন আগে ছিল ৩৪ জন।
মেডিকেল সূত্রে জানা যায়, সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার থাকলে প্রায় ৬ জন সংযুক্তিতে কর্মরত রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়, কেউ নাটোর সদরে, রাজশাহী মেডিকেলে, ঢাকাতে দায়িত্ব পালন করছে। উপজেলা ১২টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটা করে মেডিকেল অফিসার পোস্ট রয়েছে, এই পোস্টগুলোতে মেডিকেল অফিসার ছিল তাদের এনে কাজ করানো হতো বর্তমানে এই পদগুলো ফাঁকা রয়েছে চিকিৎসক সংকটে।
বহির্বিভাগের এনসিডি কর্নারের কার্ডধারী রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন ওষুধ না পেয়ে। হাসপাতালের দ্বিতীয়, তৃতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ি ময়লা-আবর্জনায় ভরা। রোগীর পাশেই মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালের কোথাও কোথাও কফ, থুতু ও পানের পিকের দাগ।
পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী। রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর হাসপাতালে ভর করে ভূতুড়ে পরিবেশ। ফলে বাধ্য হয়ে মোবাইলের টর্চ জালিয়ে চিকিৎসা দিতে হয় নার্স ও চিকিৎসকদের। হাসপাতালের পিছনে ময়লা ও জমাট বাঁধা দুর্গন্ধ পানির কারণে মশার উপদ্রপও বেড়েছে। ওয়ার্ডের অধিকাংশ ফ্যান নষ্ট হয়ে পড়ে আছে, লাইটও জ্বলে না ঠিকমতো, তিনটি ক্যাবিন থাকলেও রোগীদের থাকার অনুযোগী। তবে এসব বিষয়ে চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীসহ হাসপাতালের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নার্স জানান, হাসপাতালের জেনারেটর রয়েছে তা চালানো হয় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে গরমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের। অন্ধকারে রোগীদের ওষুধ দেয়া থেকে শুরু করে জরুরি সেবা ব্যাহত হয়। তখন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে কাজ করতে হয়।
জানা যায়, সিংড়া ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উপজেলার সাড়ে ৩ লাখ মানুষ সেবা নিতে আসে। হাসপাতালে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক্সরে ফিল্ম না থাকার অজুহাতে সেটিও বন্ধ রয়েছে।
আল্টাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও মাঝেমধ্যে ব্যবহার হলেও নিয়মিত সেটিও ব্যবহার হয় না। হাসপাতালের জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট থাকলেও তারা নিয়মিত বহির্বিভাগে বসেন না। সপ্তাহে দুই দিন হাসপাতালে আসলেও সেটি নির্ধারিত সময়ের পর আসেন আবার রোগীর সিরিয়ালে থাকলেও মুমূর্ষু রোগী রেখে দুপুর ২টা বাজলে চলে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে আসা কাজল বলেন, অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে ৪ ধরে হাসপাতালে ভর্তি। আসার পর থেকেই খাবার ও পানি কম খাচ্ছি যাতে টয়লেটে না যেতে হয়। টয়লেটে গিয়ে এখন নিজেই অসুস্থ হওয়ার উপক্রম। এখানে সেবা বলতে কিছু নেই শিশু ডাক্তার আমাদের সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করে। চলনবিলের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগীর স্বজন ৬৮ বছর বয়সি রাবেয়া বেওয়া বলেন, এই হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ, দুর্বল। ওয়ান টাইম টেপটা পর্যন্ত বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে এনেছি। তুলা থাকতেও বের করতে চায় না নার্সরা। নাতিনকে হাসপাতালে আনার পর দুই আড়াই ঘণ্টা কারেন্টের কোনো খবর নেই। পরে ছেলেকে বলে বাড়ি থেকে চার্জার ফ্যান এনেছি ঠিক মতো ওষুধও দেয় না চাইলে কয় সরকার ওষুধ দেয়নি ডাক্তার ও নার্সরা মাঝেমধ্যে খুব বাজে ব্যবহার করে।
হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালের পরিবেশ এতাই নোংরা যে এখানে এক মিনিট টিকে থাকা কষ্টকর। নিরুপায় হয়ে রোগী ও স্বজনরা কোনো রকমে এখানে সময় পাড় করছেন।
ভর্তি থাকা রোগী এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, হাসপাতালের টয়লেটে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। পুরুষদের টয়লেটে কমন একটি লাইট থাকলেও প্রতিটি টয়লেটে আলাদা কোনো লাইটের ব্যবস্থা নেই। ফলে মূল দরজা বন্ধ করে প্রয়োজন সারতে হয়, আবার টয়লেটের দরজার লকও নষ্ট।
সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার সংকট রয়েছে, কিছু যন্ত্রপাতির নেই, যার কারণে কয়েকটা ডাক্তার থাকায় তারা রোগী দেখতে গেলে মাথা ঠিক থাকে না এ কারণে রোগীদের সঙ্গে কখনও কখনও খারাপ আচরণ করে বলে অনেক অভিযোগও পেয়েছি, এ ছাড়া লোকবল সংকট রয়েছে, কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় সব কাজ করা সম্ভব না। কেউই শতভাগ কাজ করতে পারি না, আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
সিংড়া (নাটোর) : ডাক্তারের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় রোগীদের -সংবাদ
রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫
নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগী। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে সরকারি হাসপাতাল এখন রোগীদের ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এসব বিষয়ে হাসপাতালে ছবি তুলতে গেলে বাধা দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমক্ষেক্স কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে বহির্বিভাগের রোগী ও তাদের স্বজনরা চিকিৎসকের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন বলে জানা যায়। হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ রয়েছে ১১টি, কাজ করছে রয়েছে ৫ জন, বর্তমানে নার্স আছে প্রায় ২০ জন যদিও কিছুদিন আগে ছিল ৩৪ জন।
মেডিকেল সূত্রে জানা যায়, সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার থাকলে প্রায় ৬ জন সংযুক্তিতে কর্মরত রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়, কেউ নাটোর সদরে, রাজশাহী মেডিকেলে, ঢাকাতে দায়িত্ব পালন করছে। উপজেলা ১২টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটা করে মেডিকেল অফিসার পোস্ট রয়েছে, এই পোস্টগুলোতে মেডিকেল অফিসার ছিল তাদের এনে কাজ করানো হতো বর্তমানে এই পদগুলো ফাঁকা রয়েছে চিকিৎসক সংকটে।
বহির্বিভাগের এনসিডি কর্নারের কার্ডধারী রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন ওষুধ না পেয়ে। হাসপাতালের দ্বিতীয়, তৃতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ি ময়লা-আবর্জনায় ভরা। রোগীর পাশেই মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালের কোথাও কোথাও কফ, থুতু ও পানের পিকের দাগ।
পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী। রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর হাসপাতালে ভর করে ভূতুড়ে পরিবেশ। ফলে বাধ্য হয়ে মোবাইলের টর্চ জালিয়ে চিকিৎসা দিতে হয় নার্স ও চিকিৎসকদের। হাসপাতালের পিছনে ময়লা ও জমাট বাঁধা দুর্গন্ধ পানির কারণে মশার উপদ্রপও বেড়েছে। ওয়ার্ডের অধিকাংশ ফ্যান নষ্ট হয়ে পড়ে আছে, লাইটও জ্বলে না ঠিকমতো, তিনটি ক্যাবিন থাকলেও রোগীদের থাকার অনুযোগী। তবে এসব বিষয়ে চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীসহ হাসপাতালের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নার্স জানান, হাসপাতালের জেনারেটর রয়েছে তা চালানো হয় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে গরমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের। অন্ধকারে রোগীদের ওষুধ দেয়া থেকে শুরু করে জরুরি সেবা ব্যাহত হয়। তখন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে কাজ করতে হয়।
জানা যায়, সিংড়া ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উপজেলার সাড়ে ৩ লাখ মানুষ সেবা নিতে আসে। হাসপাতালে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক্সরে ফিল্ম না থাকার অজুহাতে সেটিও বন্ধ রয়েছে।
আল্টাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও মাঝেমধ্যে ব্যবহার হলেও নিয়মিত সেটিও ব্যবহার হয় না। হাসপাতালের জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট থাকলেও তারা নিয়মিত বহির্বিভাগে বসেন না। সপ্তাহে দুই দিন হাসপাতালে আসলেও সেটি নির্ধারিত সময়ের পর আসেন আবার রোগীর সিরিয়ালে থাকলেও মুমূর্ষু রোগী রেখে দুপুর ২টা বাজলে চলে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে আসা কাজল বলেন, অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে ৪ ধরে হাসপাতালে ভর্তি। আসার পর থেকেই খাবার ও পানি কম খাচ্ছি যাতে টয়লেটে না যেতে হয়। টয়লেটে গিয়ে এখন নিজেই অসুস্থ হওয়ার উপক্রম। এখানে সেবা বলতে কিছু নেই শিশু ডাক্তার আমাদের সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করে। চলনবিলের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগীর স্বজন ৬৮ বছর বয়সি রাবেয়া বেওয়া বলেন, এই হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ, দুর্বল। ওয়ান টাইম টেপটা পর্যন্ত বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে এনেছি। তুলা থাকতেও বের করতে চায় না নার্সরা। নাতিনকে হাসপাতালে আনার পর দুই আড়াই ঘণ্টা কারেন্টের কোনো খবর নেই। পরে ছেলেকে বলে বাড়ি থেকে চার্জার ফ্যান এনেছি ঠিক মতো ওষুধও দেয় না চাইলে কয় সরকার ওষুধ দেয়নি ডাক্তার ও নার্সরা মাঝেমধ্যে খুব বাজে ব্যবহার করে।
হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালের পরিবেশ এতাই নোংরা যে এখানে এক মিনিট টিকে থাকা কষ্টকর। নিরুপায় হয়ে রোগী ও স্বজনরা কোনো রকমে এখানে সময় পাড় করছেন।
ভর্তি থাকা রোগী এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, হাসপাতালের টয়লেটে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। পুরুষদের টয়লেটে কমন একটি লাইট থাকলেও প্রতিটি টয়লেটে আলাদা কোনো লাইটের ব্যবস্থা নেই। ফলে মূল দরজা বন্ধ করে প্রয়োজন সারতে হয়, আবার টয়লেটের দরজার লকও নষ্ট।
সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার সংকট রয়েছে, কিছু যন্ত্রপাতির নেই, যার কারণে কয়েকটা ডাক্তার থাকায় তারা রোগী দেখতে গেলে মাথা ঠিক থাকে না এ কারণে রোগীদের সঙ্গে কখনও কখনও খারাপ আচরণ করে বলে অনেক অভিযোগও পেয়েছি, এ ছাড়া লোকবল সংকট রয়েছে, কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় সব কাজ করা সম্ভব না। কেউই শতভাগ কাজ করতে পারি না, আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।