ছবি:ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
খুলনার ডুমুরিয়ায় গ্রাহকের পাওনা কয়েক কোটি টাকা না দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন ‘হাজিডাঙ্গা আদর্শ গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর মালিক রঞ্জন মন্ডল। গত শুক্রবার ভোরে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ট্রেনযোগে তিনি দেশত্যাগ করেন। তার সঙ্গে স্ত্রী ও এক ছেলে ছিলেন। এর ১৫ দিন আগে তার জামাই ও মেয়ে ভারতে চলে গেছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ডুমুরিয়া হাসপাতালের পাশে সমিতির কার্যালয়ে শত শত গ্রাহক টাকা পাওয়ার আশায় ধরনা দিয়ে বসে ছিলেন।
জানা যায়, রঞ্জন মন্ডল ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের হাজিডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। একসময় ডুমুরিয়া বাজারে তৃষ্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডার পরিচালনা করতেন তিনি। ব্যবসায় বেশ পরিচিতি থাকলেও মিষ্টি বিক্রির আড়ালে ২০০৫ সালের দিকে তিনি সমিতি খুলে সুদের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠলে সমবায় মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন পান তিনি। নামকরণ করা হয় ‘হাজিডাঙ্গা আদর্শ গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ (নিবন্ধন নং-৪১৮/কে)।
গ্রাহক বাড়ানোর জন্য গ্রাম পর্যায়ে একদল নারী কর্মী নিয়োগ দেন তিনি, যাদের কাজ ছিল নিরীহ মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে সমিতির সদস্য করা। সমিতিতে ব্যাংকিং পদ্ধতিতে লেনদেন চললেও সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে চালু করা হয় ডিপিএস, দৈনিক সঞ্চয়, বিশেষ সঞ্চয়, মাসিক সঞ্চয় ও মেয়াদি সঞ্চয়সহ (ডাবল স্কিম) নানা ধরনের স্কিম। প্রায় ১০ বছর আগে ডুমুরিয়া হাসপাতাল মোড়ে মাত্র ৩ শতক জমির ওপর অপরিকল্পিতভাবে ৮তলা একটি ভবন নির্মাণ করেন রঞ্জন মন্ডল। সমিতির নামে ১০টি যাত্রীবাহী বাস ক্রয় করা হয়, যা খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে চলাচল করত। ফলে দ্রুত গ্রাহক বৃদ্ধি পায় এবং সমিতিতে জমা হতে থাকে কোটি কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে, এসব অর্থ রঞ্জন মন্ডল ভারতে পাচার করেছেন।
গত শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় গ্রাহকের প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা নিয়ে রঞ্জন মন্ডল ভারতে পালিয়েছেন। সমিতির সভাপতি ছিলেন রঞ্জন মন্ডল এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তার স্ত্রী সন্ধ্যা মন্ডল। পুরো সমিতিই তারা ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে পরিচালনা করতেন। গত ছয় মাস ধরে তিনি গ্রাহকের পাওনা টাকা ফেরত দিতে নানা তালবাহানা করে আসছিলেন।
এদিকে জানা গেছে, রঞ্জন মন্ডলের নামে বিভিন্ন জায়গায় মূল্যবান সম্পত্তি রয়েছে, যা তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে গেছেন। ৮ তলা ভবনটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ডুমুরিয়া শাখার কাছে দায়বদ্ধ।
সেখানে ব্যাংকের পোস্টার সম্বলিত নোটিস টানানো আছে। গ্রাহক গুটুদিয়া গ্রামের প্রেমানন্দ রায় জানান, তিনি ৮ বছরের মেয়াদে মাসিক ১০ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে একটি ডাবল স্কিম চালু করেছিলেন। ইতোমধ্যে ৬৪ মাস টাকা জমা দিয়েছেন, কিন্তু গত দুই মাস ধরে সমিতি টাকা নিচ্ছে না। ওই স্কিমে তার মূলধন ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এ ছাড়া নগদ ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি সঞ্চয় আমানত রয়েছে। তিনি তার জীবনের সমস্ত অর্জিত অর্থ সমিতিতে জমা করেছেন। একই এলাকার গ্রাহক সত্যজিন মন্ডলের ৩টি অ্যাকাউন্টে ২ লাখ টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। খলসি গ্রামের ভ্যানচালক আনু শেখের ১৭ হাজার টাকা জমা রয়েছে সমিতিতে। এ রকম শত শত গ্রাহক প্রতিদিন সমিতির কার্যালয়ে ভিড় করছেন।
উপজেলা সমবায় অফিসার সরদার জাহিদুর রহমান জানান, গ্রাহকের হয়রানি যেন না হয়Ñ এ বিষয়ে বহুবার রঞ্জন মন্ডলকে সতর্ক করা হয়েছিল। তিনি ধীরে ধীরে টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই কাউকে না জানিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলে শুনেছেন। তিনি আরও বলেন, গ্রাহক হয়রানি বা টাকা না পাওয়ার বিষয়ে সমবায় অফিসে কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। কয়েকজন গ্রাহক জানালেন, তারা থানায় যাবেন। কেউ আবার সমবায় সমিতির অফিসে গিয়ে পরামর্শ চাইছেন। গোল না গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, তিনি তার জমা টাকা ফেরত পেতে আইনের দারস্থ হবেন।
ছবি:ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫
খুলনার ডুমুরিয়ায় গ্রাহকের পাওনা কয়েক কোটি টাকা না দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন ‘হাজিডাঙ্গা আদর্শ গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর মালিক রঞ্জন মন্ডল। গত শুক্রবার ভোরে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ট্রেনযোগে তিনি দেশত্যাগ করেন। তার সঙ্গে স্ত্রী ও এক ছেলে ছিলেন। এর ১৫ দিন আগে তার জামাই ও মেয়ে ভারতে চলে গেছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ডুমুরিয়া হাসপাতালের পাশে সমিতির কার্যালয়ে শত শত গ্রাহক টাকা পাওয়ার আশায় ধরনা দিয়ে বসে ছিলেন।
জানা যায়, রঞ্জন মন্ডল ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের হাজিডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। একসময় ডুমুরিয়া বাজারে তৃষ্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডার পরিচালনা করতেন তিনি। ব্যবসায় বেশ পরিচিতি থাকলেও মিষ্টি বিক্রির আড়ালে ২০০৫ সালের দিকে তিনি সমিতি খুলে সুদের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠলে সমবায় মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন পান তিনি। নামকরণ করা হয় ‘হাজিডাঙ্গা আদর্শ গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ (নিবন্ধন নং-৪১৮/কে)।
গ্রাহক বাড়ানোর জন্য গ্রাম পর্যায়ে একদল নারী কর্মী নিয়োগ দেন তিনি, যাদের কাজ ছিল নিরীহ মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে সমিতির সদস্য করা। সমিতিতে ব্যাংকিং পদ্ধতিতে লেনদেন চললেও সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে চালু করা হয় ডিপিএস, দৈনিক সঞ্চয়, বিশেষ সঞ্চয়, মাসিক সঞ্চয় ও মেয়াদি সঞ্চয়সহ (ডাবল স্কিম) নানা ধরনের স্কিম। প্রায় ১০ বছর আগে ডুমুরিয়া হাসপাতাল মোড়ে মাত্র ৩ শতক জমির ওপর অপরিকল্পিতভাবে ৮তলা একটি ভবন নির্মাণ করেন রঞ্জন মন্ডল। সমিতির নামে ১০টি যাত্রীবাহী বাস ক্রয় করা হয়, যা খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে চলাচল করত। ফলে দ্রুত গ্রাহক বৃদ্ধি পায় এবং সমিতিতে জমা হতে থাকে কোটি কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে, এসব অর্থ রঞ্জন মন্ডল ভারতে পাচার করেছেন।
গত শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় গ্রাহকের প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা নিয়ে রঞ্জন মন্ডল ভারতে পালিয়েছেন। সমিতির সভাপতি ছিলেন রঞ্জন মন্ডল এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তার স্ত্রী সন্ধ্যা মন্ডল। পুরো সমিতিই তারা ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে পরিচালনা করতেন। গত ছয় মাস ধরে তিনি গ্রাহকের পাওনা টাকা ফেরত দিতে নানা তালবাহানা করে আসছিলেন।
এদিকে জানা গেছে, রঞ্জন মন্ডলের নামে বিভিন্ন জায়গায় মূল্যবান সম্পত্তি রয়েছে, যা তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে গেছেন। ৮ তলা ভবনটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ডুমুরিয়া শাখার কাছে দায়বদ্ধ।
সেখানে ব্যাংকের পোস্টার সম্বলিত নোটিস টানানো আছে। গ্রাহক গুটুদিয়া গ্রামের প্রেমানন্দ রায় জানান, তিনি ৮ বছরের মেয়াদে মাসিক ১০ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে একটি ডাবল স্কিম চালু করেছিলেন। ইতোমধ্যে ৬৪ মাস টাকা জমা দিয়েছেন, কিন্তু গত দুই মাস ধরে সমিতি টাকা নিচ্ছে না। ওই স্কিমে তার মূলধন ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এ ছাড়া নগদ ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি সঞ্চয় আমানত রয়েছে। তিনি তার জীবনের সমস্ত অর্জিত অর্থ সমিতিতে জমা করেছেন। একই এলাকার গ্রাহক সত্যজিন মন্ডলের ৩টি অ্যাকাউন্টে ২ লাখ টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। খলসি গ্রামের ভ্যানচালক আনু শেখের ১৭ হাজার টাকা জমা রয়েছে সমিতিতে। এ রকম শত শত গ্রাহক প্রতিদিন সমিতির কার্যালয়ে ভিড় করছেন।
উপজেলা সমবায় অফিসার সরদার জাহিদুর রহমান জানান, গ্রাহকের হয়রানি যেন না হয়Ñ এ বিষয়ে বহুবার রঞ্জন মন্ডলকে সতর্ক করা হয়েছিল। তিনি ধীরে ধীরে টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই কাউকে না জানিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলে শুনেছেন। তিনি আরও বলেন, গ্রাহক হয়রানি বা টাকা না পাওয়ার বিষয়ে সমবায় অফিসে কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। কয়েকজন গ্রাহক জানালেন, তারা থানায় যাবেন। কেউ আবার সমবায় সমিতির অফিসে গিয়ে পরামর্শ চাইছেন। গোল না গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, তিনি তার জমা টাকা ফেরত পেতে আইনের দারস্থ হবেন।