চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে দিন দিন আবাদ বাড়ছে ওলকচুর। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন ওলকচু চাষে।
পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে ওলকচুর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। এতে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান চাষিরা।
জানা গেছে, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা এবং পরামর্শে উন্নত জাতের কন্দাল ফসল উৎপাদন প্রদর্শনীর আওতায় ৪ বছর পূর্বে ওলকচু চাষ শুরু করেছিলেন উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ এলাকার প্রান্তিক কৃষক রূপক দে। ভালো লাভ হওয়ায় এবারও তিনি ২০ শতক জমিতে নিজ উদ্যেগে করেছেন ওলকচুর চাষ।
গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার খরণদ্বীপ এলাকার কৃষক রূপক দের ওলকচু ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ২০ শতক উঁচু জায়গার ওপর বারি-১ ওলকচু চাষ করেছেন তিনি। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে, বেড়ে উঠছে সারি সারি ওলগাছ। কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়ে সবুজ পাতাগুলোকে দুদিকে সাজিয়েছে গাছগুলো। এ সময় গাছের পরিচর্যা করছিলেন কৃষক রূপক দে। তিনি জানান, গত চৈত্র মাসের শেষের দিকে খাগড়াছড়ির ঘাগড়া বাজার থেকে ওল বীজ সংগ্রহ করে লাগিয়েছেন তিনি। এতে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে সার ও ওষুধ প্রয়োগ, বীজ বপন, জমির পরিচর্যা ও মজুরিসহ তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আরও অন্তত ৫ হাজার টাকা খরচ রয়েছে। সব মিলে ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে।
প্রতিটা গাছে ৭-৮ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
প্রতি কেজি পাইকারি ৫০ টাকা করে এ পর্যন্ত ৩০০ কেজি মতো বিক্রি করেছেন।
সে হিসাবে খরচ বাদে ৮০-৯০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে জানান তিনি। তার দেখাদেখি এবার ওলকচু চাষ করেছেন ঐ এলাকার কৃষক শঙ্কর দে, ঝুঁন্টু দে, দোলন দেসহ কয়েকজন কৃষক। ফলনও ভালো হয়েছে। এমন লাভের সম্ভাবনা থাকায় আগামীতে এ এলাকায় ওলকচুর চাষ দিন দিন আরো বাড়বে বলে জানান রূপক দে।
এ ছাড়া একই ইউনিয়নের পূর্ব জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকার পুতামুড়া মাজারের দক্ষিণ পাশে দুম্বাই চরে প্রায় ২০ শতক জমিতে ওল কচুর চাষ করেছেন কৃষক মো. সাইফু ও মো. খোকন।
গত কয়েকদিন ধরে তাদের ওলকচুর ক্ষেতে হানা দিয়ে তা-ব চালিয়েছে বুনো শূকর। তারা জানান, জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিকে ১৫০টি মাদায় (গর্তে) ৫০০ গ্রাম করে বীজ রোপণ করেছি। এসব বীজ ৬ থেকে ৭ কেজি ওজনের কচু হয়। এ ক্ষেত থেকে উৎপাদিত ওল কচু বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ধরে বিক্রি করলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হতো। বুনো শুকরের দল হানা দিয়ে সব তছনছ করে দিয়েছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।
ওই ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উদয়ন আশ্চার্য এ ব্যাপারে বলেন, বন্য শূকর মূলত খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসে। ওল কচু তাদের পছন্দের একটি খাবার। বন্য প্রাণীর হাত থেকে ফসল রক্ষায় শক্ত ঘেরা বেড়া দিতে হবে। বন্যপ্রাণীর কারণে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষি বিভাগ থেকে সরাসরি সহায়তা দেয়ার নিয়ম নেই। তবে বনবিভাগের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলে সহায়তা পাবেন।
বন্য প্রাণীর আক্রমণে ফসলের ক্ষতি হলে থানায় জিডি করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বনবিভাগে আবেদন দিলে ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে জানান চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের ভাণ্ডালজুড়ি বিট অফিসার মো. সাইফুল।
উপসহকারী কৃষি অফিসার সৌমিত্র দে জানান, ওলকচু চাষে সময় একটু বেশি লাগলেও খরচ হয় নামমাত্র। কিন্তু লাভ হয় তিন থেকে চার গুণ। এ ওলকচু এমন একটি ফসল যাতে পোকা-মাকড়ের বালাই নেই, রোগবালাই কম। অনাবৃষ্টি বা খরার কবলে না পড়লে সেচের প্রয়োজন হয় না। পরিত্যক্ত আধা ছায়াযুক্ত জমিতেও এটি হয়। অবশ্য রোদযুক্ত স্থানে লাগানো গেলে ফলন ভালো হয়।
গর্ত করে মাটির ১ ফিট নিচে এই কন্দ লাগানো হয়। ৭-৮ মাসে ফসল তোলা যায়। তাছাড়া বাজার দর কম থাকলে, ফসল না তুললেও ক্ষতি হয় না। ওলকচু মাটির নিচে থাকলে আকারে বড় হয় কিন্তু নষ্ট হয় না। এজন্য ওলকচু চাষে লোকসানের কোনো আশঙ্কা নেই। ইতোমধ্যেই বোয়ালখালীতে ওলকচু চাষাবাদ করে কৃষকেরা খুবই খুশি। কারণ ফলন ভালো হয়েছে আর বাজারে দামও ভালো পেয়ে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ওলকচু একটি লাভজনক কন্দ জাতীয় সবজি। বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই বারি-১ জাতের ওলকচু চাষে কৃষকদের নানা ভাবে পরামর্শের পাশাপাশি ওলকচু চাষে আগ্রহী করার জন্য কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করছে। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।
রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে দিন দিন আবাদ বাড়ছে ওলকচুর। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন ওলকচু চাষে।
পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে ওলকচুর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। এতে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান চাষিরা।
জানা গেছে, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা এবং পরামর্শে উন্নত জাতের কন্দাল ফসল উৎপাদন প্রদর্শনীর আওতায় ৪ বছর পূর্বে ওলকচু চাষ শুরু করেছিলেন উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ এলাকার প্রান্তিক কৃষক রূপক দে। ভালো লাভ হওয়ায় এবারও তিনি ২০ শতক জমিতে নিজ উদ্যেগে করেছেন ওলকচুর চাষ।
গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার খরণদ্বীপ এলাকার কৃষক রূপক দের ওলকচু ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ২০ শতক উঁচু জায়গার ওপর বারি-১ ওলকচু চাষ করেছেন তিনি। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে, বেড়ে উঠছে সারি সারি ওলগাছ। কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়ে সবুজ পাতাগুলোকে দুদিকে সাজিয়েছে গাছগুলো। এ সময় গাছের পরিচর্যা করছিলেন কৃষক রূপক দে। তিনি জানান, গত চৈত্র মাসের শেষের দিকে খাগড়াছড়ির ঘাগড়া বাজার থেকে ওল বীজ সংগ্রহ করে লাগিয়েছেন তিনি। এতে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে সার ও ওষুধ প্রয়োগ, বীজ বপন, জমির পরিচর্যা ও মজুরিসহ তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আরও অন্তত ৫ হাজার টাকা খরচ রয়েছে। সব মিলে ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে।
প্রতিটা গাছে ৭-৮ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
প্রতি কেজি পাইকারি ৫০ টাকা করে এ পর্যন্ত ৩০০ কেজি মতো বিক্রি করেছেন।
সে হিসাবে খরচ বাদে ৮০-৯০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে জানান তিনি। তার দেখাদেখি এবার ওলকচু চাষ করেছেন ঐ এলাকার কৃষক শঙ্কর দে, ঝুঁন্টু দে, দোলন দেসহ কয়েকজন কৃষক। ফলনও ভালো হয়েছে। এমন লাভের সম্ভাবনা থাকায় আগামীতে এ এলাকায় ওলকচুর চাষ দিন দিন আরো বাড়বে বলে জানান রূপক দে।
এ ছাড়া একই ইউনিয়নের পূর্ব জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকার পুতামুড়া মাজারের দক্ষিণ পাশে দুম্বাই চরে প্রায় ২০ শতক জমিতে ওল কচুর চাষ করেছেন কৃষক মো. সাইফু ও মো. খোকন।
গত কয়েকদিন ধরে তাদের ওলকচুর ক্ষেতে হানা দিয়ে তা-ব চালিয়েছে বুনো শূকর। তারা জানান, জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিকে ১৫০টি মাদায় (গর্তে) ৫০০ গ্রাম করে বীজ রোপণ করেছি। এসব বীজ ৬ থেকে ৭ কেজি ওজনের কচু হয়। এ ক্ষেত থেকে উৎপাদিত ওল কচু বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ধরে বিক্রি করলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হতো। বুনো শুকরের দল হানা দিয়ে সব তছনছ করে দিয়েছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।
ওই ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উদয়ন আশ্চার্য এ ব্যাপারে বলেন, বন্য শূকর মূলত খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসে। ওল কচু তাদের পছন্দের একটি খাবার। বন্য প্রাণীর হাত থেকে ফসল রক্ষায় শক্ত ঘেরা বেড়া দিতে হবে। বন্যপ্রাণীর কারণে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষি বিভাগ থেকে সরাসরি সহায়তা দেয়ার নিয়ম নেই। তবে বনবিভাগের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলে সহায়তা পাবেন।
বন্য প্রাণীর আক্রমণে ফসলের ক্ষতি হলে থানায় জিডি করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বনবিভাগে আবেদন দিলে ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে জানান চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের ভাণ্ডালজুড়ি বিট অফিসার মো. সাইফুল।
উপসহকারী কৃষি অফিসার সৌমিত্র দে জানান, ওলকচু চাষে সময় একটু বেশি লাগলেও খরচ হয় নামমাত্র। কিন্তু লাভ হয় তিন থেকে চার গুণ। এ ওলকচু এমন একটি ফসল যাতে পোকা-মাকড়ের বালাই নেই, রোগবালাই কম। অনাবৃষ্টি বা খরার কবলে না পড়লে সেচের প্রয়োজন হয় না। পরিত্যক্ত আধা ছায়াযুক্ত জমিতেও এটি হয়। অবশ্য রোদযুক্ত স্থানে লাগানো গেলে ফলন ভালো হয়।
গর্ত করে মাটির ১ ফিট নিচে এই কন্দ লাগানো হয়। ৭-৮ মাসে ফসল তোলা যায়। তাছাড়া বাজার দর কম থাকলে, ফসল না তুললেও ক্ষতি হয় না। ওলকচু মাটির নিচে থাকলে আকারে বড় হয় কিন্তু নষ্ট হয় না। এজন্য ওলকচু চাষে লোকসানের কোনো আশঙ্কা নেই। ইতোমধ্যেই বোয়ালখালীতে ওলকচু চাষাবাদ করে কৃষকেরা খুবই খুশি। কারণ ফলন ভালো হয়েছে আর বাজারে দামও ভালো পেয়ে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ওলকচু একটি লাভজনক কন্দ জাতীয় সবজি। বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই বারি-১ জাতের ওলকচু চাষে কৃষকদের নানা ভাবে পরামর্শের পাশাপাশি ওলকচু চাষে আগ্রহী করার জন্য কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করছে। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।