গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : বর্ষা মৌসুমে টমেটো চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কৃষক মো. শহিদুল্লাহ -সংবাদ
বাঁশঝাড় আর রাস্তাধারে পরিত্যক্ত বেগুন গাছে শোভা পাচ্ছে পাকা টমেটো। বিষ্মিত এলাকাবাসী, কৃষকরা। বর্ষা মৌসুমে টমেটো চাষ করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কৃষক মো. শহিদুল্লাহ। কৃষকের সাফল্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আগ্রহী কৃষকরা ভিড় করছেন এ খেতে। বিষমুক্ত টমেটো ক্রয়েও ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
এ মৌসুমে টমেটো চাষ করলে ঢলে পড়া রোগে আক্রান্ত হয়। বেগুন গাছে গ্রাফটিং (কাটিং কলম) পদ্ধতিতে চাষ করে এ রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছেন এ কৃষক।
এ প্রসঙ্গে তাঁতকুড়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, শহিদুল্লাহকে দেখেছি জঙ্গলাইয়া (জঙ্গি) বেগুন গাছ রাস্তা রাস্তা আর বাঁশঝাড়ে চারপাশ থেকে সংগ্রহ করেছে। তখন তো মনে হয়েছিল এরে কোনো ভূতে আঁচড় করছে। সে কইলো, এ গাছে টমেটো হবে। ওর কথা শোনে মনে হয়েছিল, পাগলের প্রলাপ।
তিনি আরও বলেন, এখন রাস্তা আর জঙ্গলের সেই কাঁটাযুক্ত বেগুন গাছে সত্যিই টমেটো হয়ে গেছে। এটা দেখে তো আমার নিজের চোখে দেখেই, চোখের দেখাকে বিশ্বাস হচ্ছে না। একই এলাকার কৃষক মো. সুরুজ আলী (৬৫) জানান, বর্ষা মৌসুমে টমেটো হয় তা জানতাম না। সেটা দেখার জন্যই শহিদুল্লাহর এখানে এসেছি। জীবনে প্রথম দেখলাম, তাও বেগুন গাছ কেটে টমেটোর টগা লাগিয়ে দিলে টমেটো হয়।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ কাজে সহযোগিতা করেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় পলিনেট হাউজ প্রদর্শনী বাস্তবায়িত হয়। পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্যের ফসল ও চারা উৎপাদন প্রযুক্তিতে জুন মাসের ৫ তারিখে এ টমেটোর চারা রোপণ করা হয়।
এলাকার আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মডেল মো. শহিদুল্লাহ ব্যতিক্রমী ফসল উৎপাদনে এলাকায় মডেল কৃষক। তিনি উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া গ্রামের আবুল হাসিমের ছেলে।
এ প্রসঙ্গে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকার জানান, এ পলিনেট ব্যবহারের কারণে ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায়। সার কম লাগে, কীটনাশকের খরচ নেই।
পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই। স্বল্প খরচ, অল্প স্থানে অধিক ফলনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তিনি আরও জানান, এ সময় টমেটো চাষের প্রধান শত্রু হলো ‘ঢলেপড়া’ রোগ। কৃষিবিভাগ ও আমাদের পরীক্ষায় আমরা দেখেছি বেগুন গাছে গোড়ায় টমেটো গ্রাফিটিং (কাটিং কলম) করলে এ রোগ থেকে শতভাগ ফলন রক্ষা পাচ্ছে।
এখানে এক হাজার গাছের ছাড়া আছে। একটিতেও ঢলেপড়া রোগের প্রাদুর্ভাব নেই। গ্রাফটিং করার ক্ষেত্রেও শতকরা ৯৯.৯৯ শতাংশ সফল হয়েছেন কৃষক শহিদুল্লাহ। তার মাত্র ২টি গাছে গ্রাফটিং ঠিকমতো হয়নি। তার জমিনে রোপিত ৯৯৮টি গাছে টমেটো এসেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি বলেন, কৃষকেরা বেগুন গাছে টমেটো কীভাবে চাষ করা যায়, তা কৃষকরা জানতেন না। তাদেরকে প্রযুক্তি সহযোগিতা-সার্বক্ষনিক ফসলের মাঠে তদারকি করেছি। এ সময়ে টমেটো চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব, কৃষককে বুঝিয়ে টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। টমেটো খেত দেখে সত্যিই আমিও বিস্মৃত, ব্যাপক ফলন হয়েছে। এই চাষ পদ্ধতি সহজ ও ফলন ভালো এবং রোগবালাই কম হয়।
কৃষক মো. শহীদুল্লাহ জানান, ১০ শতাংশ জমিনে টমেটো চাষে প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। প্রথম উত্তোলনেই ৭০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। আরও ৪০-৪৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হবে। লাগানো হয়েছিলো ৫জুন আর টমেটো উত্তোলন করছি ১২ আগস্টে। টমেটো ফলনে সময় লেগেছে ৬৭ দিন।
তিনি আরও জানান, জংলি বেগুন গাছ গ্রামে রাস্তার পাশে, বাড়িঘরে চারপাশে এমনেতেই পাওয়া যায়। কৃষি বিভাগ শিখানোর পর বেগুন গাছে গ্রাফটিং করতেও অসুবিধা হয়নি। গাছে কোনো রোগবালাই নেই।
কীটনাশকও দিতে হয়নি। বিষমুক্ত অসময়ের টমেটো। বর্ষাকালে টমেটো বাজারেও ব্যাপক চাহিদা। খেত থেকেই পাইকার ও ক্রেতা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : বর্ষা মৌসুমে টমেটো চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কৃষক মো. শহিদুল্লাহ -সংবাদ
রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫
বাঁশঝাড় আর রাস্তাধারে পরিত্যক্ত বেগুন গাছে শোভা পাচ্ছে পাকা টমেটো। বিষ্মিত এলাকাবাসী, কৃষকরা। বর্ষা মৌসুমে টমেটো চাষ করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কৃষক মো. শহিদুল্লাহ। কৃষকের সাফল্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আগ্রহী কৃষকরা ভিড় করছেন এ খেতে। বিষমুক্ত টমেটো ক্রয়েও ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
এ মৌসুমে টমেটো চাষ করলে ঢলে পড়া রোগে আক্রান্ত হয়। বেগুন গাছে গ্রাফটিং (কাটিং কলম) পদ্ধতিতে চাষ করে এ রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছেন এ কৃষক।
এ প্রসঙ্গে তাঁতকুড়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, শহিদুল্লাহকে দেখেছি জঙ্গলাইয়া (জঙ্গি) বেগুন গাছ রাস্তা রাস্তা আর বাঁশঝাড়ে চারপাশ থেকে সংগ্রহ করেছে। তখন তো মনে হয়েছিল এরে কোনো ভূতে আঁচড় করছে। সে কইলো, এ গাছে টমেটো হবে। ওর কথা শোনে মনে হয়েছিল, পাগলের প্রলাপ।
তিনি আরও বলেন, এখন রাস্তা আর জঙ্গলের সেই কাঁটাযুক্ত বেগুন গাছে সত্যিই টমেটো হয়ে গেছে। এটা দেখে তো আমার নিজের চোখে দেখেই, চোখের দেখাকে বিশ্বাস হচ্ছে না। একই এলাকার কৃষক মো. সুরুজ আলী (৬৫) জানান, বর্ষা মৌসুমে টমেটো হয় তা জানতাম না। সেটা দেখার জন্যই শহিদুল্লাহর এখানে এসেছি। জীবনে প্রথম দেখলাম, তাও বেগুন গাছ কেটে টমেটোর টগা লাগিয়ে দিলে টমেটো হয়।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ কাজে সহযোগিতা করেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় পলিনেট হাউজ প্রদর্শনী বাস্তবায়িত হয়। পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্যের ফসল ও চারা উৎপাদন প্রযুক্তিতে জুন মাসের ৫ তারিখে এ টমেটোর চারা রোপণ করা হয়।
এলাকার আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মডেল মো. শহিদুল্লাহ ব্যতিক্রমী ফসল উৎপাদনে এলাকায় মডেল কৃষক। তিনি উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া গ্রামের আবুল হাসিমের ছেলে।
এ প্রসঙ্গে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকার জানান, এ পলিনেট ব্যবহারের কারণে ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায়। সার কম লাগে, কীটনাশকের খরচ নেই।
পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই। স্বল্প খরচ, অল্প স্থানে অধিক ফলনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তিনি আরও জানান, এ সময় টমেটো চাষের প্রধান শত্রু হলো ‘ঢলেপড়া’ রোগ। কৃষিবিভাগ ও আমাদের পরীক্ষায় আমরা দেখেছি বেগুন গাছে গোড়ায় টমেটো গ্রাফিটিং (কাটিং কলম) করলে এ রোগ থেকে শতভাগ ফলন রক্ষা পাচ্ছে।
এখানে এক হাজার গাছের ছাড়া আছে। একটিতেও ঢলেপড়া রোগের প্রাদুর্ভাব নেই। গ্রাফটিং করার ক্ষেত্রেও শতকরা ৯৯.৯৯ শতাংশ সফল হয়েছেন কৃষক শহিদুল্লাহ। তার মাত্র ২টি গাছে গ্রাফটিং ঠিকমতো হয়নি। তার জমিনে রোপিত ৯৯৮টি গাছে টমেটো এসেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি বলেন, কৃষকেরা বেগুন গাছে টমেটো কীভাবে চাষ করা যায়, তা কৃষকরা জানতেন না। তাদেরকে প্রযুক্তি সহযোগিতা-সার্বক্ষনিক ফসলের মাঠে তদারকি করেছি। এ সময়ে টমেটো চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব, কৃষককে বুঝিয়ে টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। টমেটো খেত দেখে সত্যিই আমিও বিস্মৃত, ব্যাপক ফলন হয়েছে। এই চাষ পদ্ধতি সহজ ও ফলন ভালো এবং রোগবালাই কম হয়।
কৃষক মো. শহীদুল্লাহ জানান, ১০ শতাংশ জমিনে টমেটো চাষে প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। প্রথম উত্তোলনেই ৭০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। আরও ৪০-৪৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হবে। লাগানো হয়েছিলো ৫জুন আর টমেটো উত্তোলন করছি ১২ আগস্টে। টমেটো ফলনে সময় লেগেছে ৬৭ দিন।
তিনি আরও জানান, জংলি বেগুন গাছ গ্রামে রাস্তার পাশে, বাড়িঘরে চারপাশে এমনেতেই পাওয়া যায়। কৃষি বিভাগ শিখানোর পর বেগুন গাছে গ্রাফটিং করতেও অসুবিধা হয়নি। গাছে কোনো রোগবালাই নেই।
কীটনাশকও দিতে হয়নি। বিষমুক্ত অসময়ের টমেটো। বর্ষাকালে টমেটো বাজারেও ব্যাপক চাহিদা। খেত থেকেই পাইকার ও ক্রেতা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।