alt

সারাদেশ

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান তাদের ‘বাড়ি ফিরতে’ হবে : খলিলুর রহমান

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের নাগরিকদের নিয়ে যে সংকট চলছে, তার ‘স্থায়ী সমাধান’ হিসেবে প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ করার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান।

আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে অনুষ্ঠেয় ‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য প্রাপ্ত বার্তা’ আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়ে সোমবার (১৮-০৮-২০২৫) সকালে ঢাকায় থাকা কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরে কক্সবাজারের সম্মেলনে যোগ দিয়ে সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ব্রিফিংয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাস্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দেশ এবং জোট মিলিয়ে ৫০টি মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিং শেষে খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “জাতিসংঘে আগামী সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে রোহিঙ্গা বিষয়ক যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে, তারই প্রস্তুতির একটা অংশ হিসেবে আমরা এ কক্সবাজারে এ আয়োজন করেছি।”

তিনি বলেন, “সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে যে- আমরা এই সমস্যাটির একটি আশু এবং স্থায়ী সমাধান চাই, তো সেটাই। আপনি আন্তর্জাতিক সাহায্য দিয়ে কতদিন রাখবেন, তাদের তো বাড়ি ফিরতে হবে। সেটাই তো আসল কথা।” রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা যে গুরুত্বপূর্ণ তা উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, “সাহায্য ইম্পর্টেন্ট। কারণ সেটা যদি কমে যায়, নানা ধরনের মানবিক সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর তার প্রতিক্রিয়া পড়ে। তো সাহায্য যাতে অব্যাহত থাকে, সে প্রচেষ্টা তো আমরা সবাই মিলে করছি এবং কিছু কিছু দাতা দেশ থেকে কিছু উদ্যোগের নিশানা পাচ্ছি।”

খলিলুর রহমান বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি কথা সবসময় বলি যে, গত আট বছরে আমরা পাঁচ বিলিয়নের ওপর খরচ করেছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ওপরে। এরা আসবার আগে কয় টাকা খরচ হয়েছে? এক পয়সাও না। রোহিঙ্গারা যখন ফিরে যাবেন, তাদের ভূমি অত্যন্ত উর্বর, তাদের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়। আমরাই তো তাদের কাছ থেকে শস্য কিনতাম একসময়। পৃথিবীর কোনো প্রয়োজন তাদের কাছে নাই। তো তাদের ফিরিয়ে দিলে সবার জন্য মঙ্গল।” বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা ঢলের শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। এরপর আসে কোভিড মহামারী; রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু-চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। তাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন ধাক্কা। এর মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের যুদ্ধের তীব্রতার মধ্যে প্রত্যাবাসনের আলোচনা কমে আসে। উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়।

গত ১৪ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কষ্ট নিজের চোখে দেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। এরপর এপ্রিলে থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সঙ্কট ও সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানকে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ প্রত্যাবাসন বিষয়ে অগ্রগতি জানান।

রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক আলোচনা থেকে ‘খসে পড়ার’ প্রেক্ষাপটে এ সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান খলিলুর। তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করার জন্য জাতিসংঘের সব সদস্যকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেটাতে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সাড়া পেয়েছি। সর্বসম্মতিক্রমে এই কনফারেন্সটা আহ্বান করার সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ গ্রহণ করে এবং বিশ্বের ১০৬টা দেশ এটাকে স্পন্সর করে। সুতরাং এখন আন্তর্জাতিক সমর্থন যথেষ্ট পরিমাণ আছে।” প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, “এই সম্মেলন হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য- এই সমস্যার একটা স্থায়ী এবং আশু সমাধানের পথনির্দেশিকা দেওয়ার একটা বড় সুযোগ। আমরা সেই কারণে রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর, তাদের কথা, তাদের আশা-আকাক্সক্ষা, তাদের স্বপ্ন- এগুলো আমরা সেই কনফারেন্সে নিয়ে যেতে চাই।” খলিলুর রহমান বলেন, “আপনারা জানেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্ররাই সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণ করে, রোহিঙ্গারা তো আর সদস্য নয়। কিন্তু কাউকে তো তাদের ভয়েসটা নিয়ে যেতে হবে। তো আমরা এ ধরনের প্রক্রিয়াতে সেই কাজটি করছি। আমরা আন্তর্জাতিক কমিউনিটি থেকে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি এবং সেটা আপনারা সম্মেলনে যারা অংশগ্রহণ করবেন সেখান থেকে, আপনারা দেখতে পাবেন এবং আমরা যে বার্তাটা নিয়ে যাব, রোহিঙ্গারা এই সম্মেলনের মাধ্যমে যে বার্তাটা পাঠাবেন, সেটা ওই আগামী সেপ্টেম্বরে ইউএন কনফারেন্সে একটা বড় উপাদান হবে।”

ছবি

লঘুচাপে উত্তাল বঙ্গোপসাগর, উপকুলে আশ্রয় নিয়েছে শত শত ট্রলার, বন্ধ ইলিশ আহরণ

ছবি

রিকশাচালক আজিজুরে ‘আশা’ পলকের

ছবি

নরসিংদীতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

খুলনায় বেড়িবাঁধে ভাঙন, ঝুঁকিতে ১৩ গ্রামের মানুষ

ছবি

আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

পায়নি চাঁদা, তাই মোটরসাইকেলে এসে ব্যবসায়ীর বাড়িতে গুলি

ছবি

সাদা পাথর লুটপাট: জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে ১০ সুপারিশ, জড়িতদের তালিকায় ১৩৭ নাম

ছবি

ঝিনাইদহ-যশোর ৬ লেন প্রকল্প: অগ্রগতি নেই, জমির মূল্য নির্ধারণে আপত্তি

ছবি

ডাকসু: মনোনয়ন জমা, এবার লড়াইয়ের পালা

ছবি

জাকসু নির্বাচনে প্যানেল দিতে দেরি: অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও জোটের জটিলতা

ছবি

দোহারে হেরোইন ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ৩

ছবি

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় আনন্দ মিছিল

ছবি

সিরাজগঞ্জে হত্যা মামলায় বাবা-ছেলের কারাদণ্ড

ছবি

কোম্পানীগঞ্জে ১১ বছর পর আলোচিত সাত খুন মামলার আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে ভাসমান পাটের হাটে কেনাবেচা শুরু

ছবি

আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী সাবেক নেতার ওপর ছাত্রদলের হামলা

ছবি

পোরশায় পানিবন্দীদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ

ছবি

পীরগাছার প্রভাবশালী থেকে কৃষকের জমি দখলমুক্ত করতে মানববন্ধন

ছবি

বগুড়ায় নিষিদ্ধ পলিথিনসহ আটক ১

ছবি

শিবগঞ্জে উচ্ছেদ হলো হাটের অবৈধ স্থাপনা

ছবি

রাকসু নির্বাচন ঘিরে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ১০ দফা প্রস্তাবনা

ছবি

ভৈরবে মেঘনার ভাঙনে বিলীন বাড়িঘরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি

ছবি

কুমির আতঙ্কে মাগুরার গড়াই মধুমতি নদী তীরের মানুষ

ছবি

কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ছবি

চাঁদপুরে মেঘনার পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে ফের ড্রেজারে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন

ছবি

বাংলাদেশি স্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে মার্কিন স্বামীকে ‘মারধর’র মামলায় পুনর্তদন্ত

ছবি

১৮তম নিবন্ধন : ৪১ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ

ছবি

মোহাম্মদপুরে শাহ আলম হত্যায় গ্রেপ্তার ২৬

ছবি

কুড়িগ্রামে বৃষ্টি ও বন্যায় পটোল চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি

ছবি

বনানীতে রাব্বি হত্যায় ৪ জন ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

মুন্সীগঞ্জে ধলেশ্বরীতে পড়ে শিশুর মৃত্যু

ছবি

গোমস্তাপুরে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

বাগেরহাটের দুই মাদক বিক্রেতা গ্রেপ্তার

ছবি

অনুমোদনবিহীন বেকারিকে অর্থদণ্ড

ছবি

ভালুকা সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ভাই নিহত

tab

সারাদেশ

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান তাদের ‘বাড়ি ফিরতে’ হবে : খলিলুর রহমান

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫

বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের নাগরিকদের নিয়ে যে সংকট চলছে, তার ‘স্থায়ী সমাধান’ হিসেবে প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ করার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান।

আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে অনুষ্ঠেয় ‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য প্রাপ্ত বার্তা’ আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়ে সোমবার (১৮-০৮-২০২৫) সকালে ঢাকায় থাকা কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরে কক্সবাজারের সম্মেলনে যোগ দিয়ে সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ব্রিফিংয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাস্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দেশ এবং জোট মিলিয়ে ৫০টি মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিং শেষে খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “জাতিসংঘে আগামী সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে রোহিঙ্গা বিষয়ক যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে, তারই প্রস্তুতির একটা অংশ হিসেবে আমরা এ কক্সবাজারে এ আয়োজন করেছি।”

তিনি বলেন, “সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে যে- আমরা এই সমস্যাটির একটি আশু এবং স্থায়ী সমাধান চাই, তো সেটাই। আপনি আন্তর্জাতিক সাহায্য দিয়ে কতদিন রাখবেন, তাদের তো বাড়ি ফিরতে হবে। সেটাই তো আসল কথা।” রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা যে গুরুত্বপূর্ণ তা উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, “সাহায্য ইম্পর্টেন্ট। কারণ সেটা যদি কমে যায়, নানা ধরনের মানবিক সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর তার প্রতিক্রিয়া পড়ে। তো সাহায্য যাতে অব্যাহত থাকে, সে প্রচেষ্টা তো আমরা সবাই মিলে করছি এবং কিছু কিছু দাতা দেশ থেকে কিছু উদ্যোগের নিশানা পাচ্ছি।”

খলিলুর রহমান বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি কথা সবসময় বলি যে, গত আট বছরে আমরা পাঁচ বিলিয়নের ওপর খরচ করেছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ওপরে। এরা আসবার আগে কয় টাকা খরচ হয়েছে? এক পয়সাও না। রোহিঙ্গারা যখন ফিরে যাবেন, তাদের ভূমি অত্যন্ত উর্বর, তাদের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়। আমরাই তো তাদের কাছ থেকে শস্য কিনতাম একসময়। পৃথিবীর কোনো প্রয়োজন তাদের কাছে নাই। তো তাদের ফিরিয়ে দিলে সবার জন্য মঙ্গল।” বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা ঢলের শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। এরপর আসে কোভিড মহামারী; রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু-চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। তাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন ধাক্কা। এর মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের যুদ্ধের তীব্রতার মধ্যে প্রত্যাবাসনের আলোচনা কমে আসে। উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়।

গত ১৪ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কষ্ট নিজের চোখে দেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। এরপর এপ্রিলে থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সঙ্কট ও সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানকে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ প্রত্যাবাসন বিষয়ে অগ্রগতি জানান।

রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক আলোচনা থেকে ‘খসে পড়ার’ প্রেক্ষাপটে এ সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান খলিলুর। তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করার জন্য জাতিসংঘের সব সদস্যকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেটাতে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সাড়া পেয়েছি। সর্বসম্মতিক্রমে এই কনফারেন্সটা আহ্বান করার সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ গ্রহণ করে এবং বিশ্বের ১০৬টা দেশ এটাকে স্পন্সর করে। সুতরাং এখন আন্তর্জাতিক সমর্থন যথেষ্ট পরিমাণ আছে।” প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, “এই সম্মেলন হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য- এই সমস্যার একটা স্থায়ী এবং আশু সমাধানের পথনির্দেশিকা দেওয়ার একটা বড় সুযোগ। আমরা সেই কারণে রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর, তাদের কথা, তাদের আশা-আকাক্সক্ষা, তাদের স্বপ্ন- এগুলো আমরা সেই কনফারেন্সে নিয়ে যেতে চাই।” খলিলুর রহমান বলেন, “আপনারা জানেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্ররাই সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণ করে, রোহিঙ্গারা তো আর সদস্য নয়। কিন্তু কাউকে তো তাদের ভয়েসটা নিয়ে যেতে হবে। তো আমরা এ ধরনের প্রক্রিয়াতে সেই কাজটি করছি। আমরা আন্তর্জাতিক কমিউনিটি থেকে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি এবং সেটা আপনারা সম্মেলনে যারা অংশগ্রহণ করবেন সেখান থেকে, আপনারা দেখতে পাবেন এবং আমরা যে বার্তাটা নিয়ে যাব, রোহিঙ্গারা এই সম্মেলনের মাধ্যমে যে বার্তাটা পাঠাবেন, সেটা ওই আগামী সেপ্টেম্বরে ইউএন কনফারেন্সে একটা বড় উপাদান হবে।”

back to top