রূপগঞ্জ : অতি বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত ধুন্দল গাছ -সংবাদ
প্রবল বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত ও রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল, দাউদপুর, রূপগঞ্জ, মুড়াপাড়া, ভোলাবো, কাঞ্চনসহ আশপাশের এলাকার সবজি চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ সবজির ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সবজি ক্ষেত বাঁচাতে পানি সরাতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও মাঠে কাজ করেন চাষিরা। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পারার আশঙ্কায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অতি বর্ষণে রাস্তা-ঘাট ভেঙে ও মাছের ঘের ভেসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ বৃষ্টির মধ্যে বাইরে বের হতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
পূর্বাচল উপশহর, রূপগঞ্জ ও দাউদপুর ইউনিয়নের ৩০ হেক্টর জমিতে লাউ, ২০ হেক্টর জমিতে বরবটি, ২০ হেক্টর জমিতে শসা, ২৫ হেক্টর জমিতে ঢেঁড়স, ৪৫ হেক্টর জমিতে চিঁচিঙ্গা, ৪০ হেক্টর জমিতে জিঙা, ৪৫ হেক্টর জমিতে চালকুমড়া, ১৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া, ১২ হেক্টর জমিতে করলা, ২৫ হেক্টর জমিতে পুঁইশাক, ১১০ হেক্টর জমিতে ধুন্দল, ৬ হেক্টর জমিতে ডাটা, ২ হেক্টর জমিতে কলমি শাক, ২ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষাবাদ করা হয়েছে। অতি বর্ষণে খরিপ-২ মৌসুমের প্রায় ৩৮ বিঘা জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে কৃষকরা ৩৬ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর, দাউদপুর ও রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ১৪/১৫টি গ্রামের কৃষকরা সবজি চাষাবাদ করেছেন। এখানকার জমির তিন ভাগের দুই ভাগই সবজি চাষ হয়। মাঠজুড়ে সবজি ক্ষেত। অতি বর্ষণে সবজি গাছের চারা হলুদ বর্ণ হয়ে গেছে। কোনো কোনো গাছের পাতা মরে গেছে। গাছের চেহারা মলিন। ফুল নেই। ফলনও নেই। তবুও চাষিরা মাঠে কাজ করছেন। তারা বলছেন, এবারের অতি বর্ষণে সবজি চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বর্তমানে খরিপ-২ মৌসুমের সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন কৃষকরা। এখানে মাঠের পর মাঠজুড়ে লাউ, বরবটি, শসা, ঢেঁড়স, চিঁচিঙ্গা, ঝিঙা, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, করলা, পুঁইশাক, ধুন্দল, ডাটাসহ তারা বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলেন। আষাঢ়ের শুরুতেই এবার ভারী বর্ষণে কৃষকরা অনেকটা কষ্ট করেই সবজি চাষে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে অধিকাংশ সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর ‘সবজি জোন’ খ্যাত এ অঞ্চলের সবজির মাঠ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর প্রথম দিন থেকেই রূপগঞ্জে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কিছু দিন বিরতি দিয়ে আষাঢ় মাসজুড়েই বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে শেষের কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ছিল প্রবল।
বৃষ্টির মধ্যে ঝড়ো হাওয়া সবজি চাষিদের জন্য অনেকটা মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। বাতাসের তীব্রতার কারণে বিভিন্ন সবজির মাচা ভেঙে যেতে শুরু করেছে। যা কৃষকদের জন্য খুবই ক্ষতির কারণ। এবছর সবজির জন্য বাজারে হাহাকার দেখা দেবে। বাজারে সবজির দাম দ্বিগুণ দিয়েও মিলবে না।
আলমপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মিয়া বলেন, প্রচুর বৃষ্টির কারণে বরবটি গাছের ফুল সব ঝরে যাচ্ছে, যার কারণে কোনো ফলন নেই। গাছে ফুলও বের হচ্ছে না। তাতে তিনি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
পশি গ্রামের কৃষক কলিম উদ্দিন বলেন, আরও বৃষ্টি হলে সবজি গাছের চারা বাঁচানো সম্ভব হবে না। তিনি ধার-দেনা করে জমি লিজ নিয়ে এবার চিঁচিঙ্গা ও জিঙার চাষ করেছিলেন। এবারের অতি বর্ষণে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। বাঘবের গ্রামের কৃষক রকমত আলী বলেন, বৃষ্টিতে তাদের বেগুন ক্ষেতের সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
বেলদী গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, এ বৃষ্টির পর রোদে সবজি গাছের গোড়ায় জমে থাকা পানি গরম হয়ে সব সবজি গাছের পচন দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে হয়তো গাছগুলো মরে যাবে।
দক্ষিণবাগ গ্রামের মাছ চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে এলাকার সব ঘের ভেসে একাকার হয়ে যাবে। এতে মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার আফরোজা সুলতানা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সব সময়ই কৃষি মন্ত্রণালয় তাদের প্রণোদনা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করে। প্রত্যেক বছরের ন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এবারও কৃষকদের পাশে থাকবেন বলে আমি আশা করছি।
রূপগঞ্জ : অতি বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত ধুন্দল গাছ -সংবাদ
সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫
প্রবল বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত ও রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল, দাউদপুর, রূপগঞ্জ, মুড়াপাড়া, ভোলাবো, কাঞ্চনসহ আশপাশের এলাকার সবজি চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ সবজির ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সবজি ক্ষেত বাঁচাতে পানি সরাতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও মাঠে কাজ করেন চাষিরা। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পারার আশঙ্কায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অতি বর্ষণে রাস্তা-ঘাট ভেঙে ও মাছের ঘের ভেসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ বৃষ্টির মধ্যে বাইরে বের হতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
পূর্বাচল উপশহর, রূপগঞ্জ ও দাউদপুর ইউনিয়নের ৩০ হেক্টর জমিতে লাউ, ২০ হেক্টর জমিতে বরবটি, ২০ হেক্টর জমিতে শসা, ২৫ হেক্টর জমিতে ঢেঁড়স, ৪৫ হেক্টর জমিতে চিঁচিঙ্গা, ৪০ হেক্টর জমিতে জিঙা, ৪৫ হেক্টর জমিতে চালকুমড়া, ১৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া, ১২ হেক্টর জমিতে করলা, ২৫ হেক্টর জমিতে পুঁইশাক, ১১০ হেক্টর জমিতে ধুন্দল, ৬ হেক্টর জমিতে ডাটা, ২ হেক্টর জমিতে কলমি শাক, ২ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষাবাদ করা হয়েছে। অতি বর্ষণে খরিপ-২ মৌসুমের প্রায় ৩৮ বিঘা জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে কৃষকরা ৩৬ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর, দাউদপুর ও রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ১৪/১৫টি গ্রামের কৃষকরা সবজি চাষাবাদ করেছেন। এখানকার জমির তিন ভাগের দুই ভাগই সবজি চাষ হয়। মাঠজুড়ে সবজি ক্ষেত। অতি বর্ষণে সবজি গাছের চারা হলুদ বর্ণ হয়ে গেছে। কোনো কোনো গাছের পাতা মরে গেছে। গাছের চেহারা মলিন। ফুল নেই। ফলনও নেই। তবুও চাষিরা মাঠে কাজ করছেন। তারা বলছেন, এবারের অতি বর্ষণে সবজি চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বর্তমানে খরিপ-২ মৌসুমের সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন কৃষকরা। এখানে মাঠের পর মাঠজুড়ে লাউ, বরবটি, শসা, ঢেঁড়স, চিঁচিঙ্গা, ঝিঙা, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, করলা, পুঁইশাক, ধুন্দল, ডাটাসহ তারা বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলেন। আষাঢ়ের শুরুতেই এবার ভারী বর্ষণে কৃষকরা অনেকটা কষ্ট করেই সবজি চাষে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে অধিকাংশ সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর ‘সবজি জোন’ খ্যাত এ অঞ্চলের সবজির মাঠ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর প্রথম দিন থেকেই রূপগঞ্জে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কিছু দিন বিরতি দিয়ে আষাঢ় মাসজুড়েই বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে শেষের কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ছিল প্রবল।
বৃষ্টির মধ্যে ঝড়ো হাওয়া সবজি চাষিদের জন্য অনেকটা মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। বাতাসের তীব্রতার কারণে বিভিন্ন সবজির মাচা ভেঙে যেতে শুরু করেছে। যা কৃষকদের জন্য খুবই ক্ষতির কারণ। এবছর সবজির জন্য বাজারে হাহাকার দেখা দেবে। বাজারে সবজির দাম দ্বিগুণ দিয়েও মিলবে না।
আলমপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মিয়া বলেন, প্রচুর বৃষ্টির কারণে বরবটি গাছের ফুল সব ঝরে যাচ্ছে, যার কারণে কোনো ফলন নেই। গাছে ফুলও বের হচ্ছে না। তাতে তিনি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
পশি গ্রামের কৃষক কলিম উদ্দিন বলেন, আরও বৃষ্টি হলে সবজি গাছের চারা বাঁচানো সম্ভব হবে না। তিনি ধার-দেনা করে জমি লিজ নিয়ে এবার চিঁচিঙ্গা ও জিঙার চাষ করেছিলেন। এবারের অতি বর্ষণে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। বাঘবের গ্রামের কৃষক রকমত আলী বলেন, বৃষ্টিতে তাদের বেগুন ক্ষেতের সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
বেলদী গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, এ বৃষ্টির পর রোদে সবজি গাছের গোড়ায় জমে থাকা পানি গরম হয়ে সব সবজি গাছের পচন দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে হয়তো গাছগুলো মরে যাবে।
দক্ষিণবাগ গ্রামের মাছ চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে এলাকার সব ঘের ভেসে একাকার হয়ে যাবে। এতে মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার আফরোজা সুলতানা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সব সময়ই কৃষি মন্ত্রণালয় তাদের প্রণোদনা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করে। প্রত্যেক বছরের ন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এবারও কৃষকদের পাশে থাকবেন বলে আমি আশা করছি।