শরীয়তপুরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। সিন্ডিকেটের প্রভাবে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবাও কার্যত সীমিত হয়ে পড়েছে। রোগী ও তাদের স্বজনেরা বলছেন, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি না থাকায় এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শরীয়তপুর শহরে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকার একটি অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়ার ঘটনায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। এর পরই নতুন করে আলোচনায় আসে এই অ্যাম্বুলেন্স চক্র। ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি সবুজ দেওয়ানকে শনিবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সবুজের বাবা তাহের দেওয়ান জেলা সিভিল সার্জনের গাড়ির চালক।
এ ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জন রবিবার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আল বিধান মোহাম্মদ সালাউল্লাহকে সভাপতি করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীয়তপুরে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নতুন কিছু নয়, বহুদিনের। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বর্তমান ও সাবেক কর্মচারীরাই এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। সরকারি সেবা সীমিত থাকার সুযোগে তারা রোগীদের জিম্মি করে রেখেছে।
শরীয়তপুর জেলায় ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে (প্রতিটি ৫০ শয্যা), একটি থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র (২০ শয্যা) এবং একটি জেলা সদর হাসপাতাল (১০০ শয্যা)। এসব হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জন রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে হয়। মাসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় আড়াই থেকে তিন হাজার।
জেলায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স আছে মাত্র ৭টি। সদর হাসপাতালে ২টি থাকলেও এর একটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। উপজেলা পর্যায়ের ৫টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ভেদরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালক নেই। ফলে প্রতিদিনের বিপুলসংখ্যক রোগী পরিবহনে সরকারি সেবা কার্যত অপ্রতুল হয়ে পড়েছে।
ঢাকা বা বাইরের জেলা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সে রোগী তোলা প্রায় অসম্ভব। স্থানীয় সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো অ্যাম্বুলেন্স রোগী বহন করলে তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়। গ্রেপ্তার হওয়া সবুজ দেওয়ান এই চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য।
সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহনের ভাড়া নির্ধারিত প্রতি কিলোমিটারে ২০ টাকা (যাওয়া-আসা মিলিয়ে)। এ হিসেবে ঢাকায় যেতে রোগীকে গড়ে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ স্থানীয় সিন্ডিকেটের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে এই ভাড়া দাঁড়ায় ৮-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন রেহান উদ্দিন সংবাদকে বলেন, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনার কোনো নীতিমালা আমাদের হাতে নেই। যার কারণে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। বিকল অ্যাম্বুলেন্স মেরামত ও চালকের শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, কয়েক বছর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি খসড়া নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শরীয়তপুর অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালক কল্যঠু সমিতি নামে একটি সংগঠন পুরো জেলায় রোগী পরিবহনের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। সিন্ডিকেটের মূল হোতা সিভিল সার্জনের গাড়ি চালক আবু তাহের দেওয়ান। এ ছাড়া তার নিজের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা রয়েছে। আর তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সদর হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক জাহাঙ্গীর হোসেন ও আবু তাহেরের ছেলে সবুজ দেওয়ান। সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন সমিতির সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান সরদার, উপদেষ্টা মানিক খান এবং সদস্য বিল্লাল মিয়া। একটি গণমাধ্যমের সাংবাদিক পরিচয় দেয়া অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী এইচএম ইমরান মাহমুদ। জাহাঙ্গীর ও মানিক বাদে উল্লেখিত সকলেই গণ বৃহস্পতিবার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার আসামি।
সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া কেউ অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করলে গাড়ি থামিয়ে দেয়া হয়। অন্যান্য জেলার চালকরা সরাসরি রোগীর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। তাদের স্থানীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রোগী জোগার করতে হয়। সিন্ডিকেটের নির্ধারিত স্থান শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ভেতরে এবং সদর হাসপাতাল সম্মুখ সড়কের পাশে অন্য জেলার গাড়ি চালকরা গাড়ি থামিয়ে বসে থাকেন। আবু তাহের এবং জাহাঙ্গীরের নির্ধারিত লোকজন পালাক্রমে অন্যান্য জেলার অ্যাম্বুলেন্সগুলো নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পাহারা দেন। কোনো রোগী আসলে তারাই প্রথমে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ভাড়া নির্ধারণ করেন। ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারিত হয়। তিন থেকে চার হাজার টাকা অন্যান্য জেলার অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ভাড়া বাবদ দিয়ে বাকি টাকা তারা রেখে দেন।
গত বৃহস্পতিবার নবজাতকের মৃত্যুর পর থেকে সিভিল সার্জনের গাড়িচালক আবু তাহের পলাতক রয়েছেন। যার কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এবিষয়ে কথা বলেছেন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, একটি শিশু মারা গেছে এরকম ঘটনা আমি ফেসবুক এবং নিউজের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি দুঃখজনক।
আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে আপনি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত এমন প্রশ্ন করলে, জাহাঙ্গীর বলেন, আমার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা আছে অনেকেই বলেন। কেউ কেউ বলে আমি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমার কোনো নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স নেই। শিশু মৃত্যুর ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালক কল্যঠু সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ভালো বলতে পারবেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের দুই কর্মচারী আবু তাহের দেওয়ান এবং জাহাঙ্গীর হোসেন। তাদের নেতৃত্বেই শরীয়তপুরের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়। এমন প্রশ্নের জবাবে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. রেহান উদ্দিন বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিষয়ে আমার গাড়িচালক আবু তাহের ও সদর হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তারা নাকি শরীয়তপুরের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। গণ ১৪ তারিখে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালকদের বাধার কারণে এক নবজাতক মারা যাওয়ার ঘটনার বিষয়ে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আল বিধান মোহাম্মদ সালাউল্লাহকে সভাপতি করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, স্বাস্থ্য বিভাগের যারা অপরাধী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫
শরীয়তপুরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। সিন্ডিকেটের প্রভাবে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবাও কার্যত সীমিত হয়ে পড়েছে। রোগী ও তাদের স্বজনেরা বলছেন, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি না থাকায় এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শরীয়তপুর শহরে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকার একটি অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়ার ঘটনায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। এর পরই নতুন করে আলোচনায় আসে এই অ্যাম্বুলেন্স চক্র। ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি সবুজ দেওয়ানকে শনিবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সবুজের বাবা তাহের দেওয়ান জেলা সিভিল সার্জনের গাড়ির চালক।
এ ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জন রবিবার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আল বিধান মোহাম্মদ সালাউল্লাহকে সভাপতি করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীয়তপুরে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নতুন কিছু নয়, বহুদিনের। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বর্তমান ও সাবেক কর্মচারীরাই এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। সরকারি সেবা সীমিত থাকার সুযোগে তারা রোগীদের জিম্মি করে রেখেছে।
শরীয়তপুর জেলায় ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে (প্রতিটি ৫০ শয্যা), একটি থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র (২০ শয্যা) এবং একটি জেলা সদর হাসপাতাল (১০০ শয্যা)। এসব হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জন রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে হয়। মাসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় আড়াই থেকে তিন হাজার।
জেলায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স আছে মাত্র ৭টি। সদর হাসপাতালে ২টি থাকলেও এর একটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। উপজেলা পর্যায়ের ৫টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ভেদরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালক নেই। ফলে প্রতিদিনের বিপুলসংখ্যক রোগী পরিবহনে সরকারি সেবা কার্যত অপ্রতুল হয়ে পড়েছে।
ঢাকা বা বাইরের জেলা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সে রোগী তোলা প্রায় অসম্ভব। স্থানীয় সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো অ্যাম্বুলেন্স রোগী বহন করলে তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়। গ্রেপ্তার হওয়া সবুজ দেওয়ান এই চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য।
সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহনের ভাড়া নির্ধারিত প্রতি কিলোমিটারে ২০ টাকা (যাওয়া-আসা মিলিয়ে)। এ হিসেবে ঢাকায় যেতে রোগীকে গড়ে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ স্থানীয় সিন্ডিকেটের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে এই ভাড়া দাঁড়ায় ৮-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন রেহান উদ্দিন সংবাদকে বলেন, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনার কোনো নীতিমালা আমাদের হাতে নেই। যার কারণে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। বিকল অ্যাম্বুলেন্স মেরামত ও চালকের শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, কয়েক বছর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি খসড়া নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শরীয়তপুর অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালক কল্যঠু সমিতি নামে একটি সংগঠন পুরো জেলায় রোগী পরিবহনের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। সিন্ডিকেটের মূল হোতা সিভিল সার্জনের গাড়ি চালক আবু তাহের দেওয়ান। এ ছাড়া তার নিজের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা রয়েছে। আর তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সদর হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক জাহাঙ্গীর হোসেন ও আবু তাহেরের ছেলে সবুজ দেওয়ান। সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন সমিতির সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান সরদার, উপদেষ্টা মানিক খান এবং সদস্য বিল্লাল মিয়া। একটি গণমাধ্যমের সাংবাদিক পরিচয় দেয়া অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী এইচএম ইমরান মাহমুদ। জাহাঙ্গীর ও মানিক বাদে উল্লেখিত সকলেই গণ বৃহস্পতিবার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার আসামি।
সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া কেউ অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করলে গাড়ি থামিয়ে দেয়া হয়। অন্যান্য জেলার চালকরা সরাসরি রোগীর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। তাদের স্থানীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রোগী জোগার করতে হয়। সিন্ডিকেটের নির্ধারিত স্থান শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ভেতরে এবং সদর হাসপাতাল সম্মুখ সড়কের পাশে অন্য জেলার গাড়ি চালকরা গাড়ি থামিয়ে বসে থাকেন। আবু তাহের এবং জাহাঙ্গীরের নির্ধারিত লোকজন পালাক্রমে অন্যান্য জেলার অ্যাম্বুলেন্সগুলো নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পাহারা দেন। কোনো রোগী আসলে তারাই প্রথমে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ভাড়া নির্ধারণ করেন। ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারিত হয়। তিন থেকে চার হাজার টাকা অন্যান্য জেলার অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ভাড়া বাবদ দিয়ে বাকি টাকা তারা রেখে দেন।
গত বৃহস্পতিবার নবজাতকের মৃত্যুর পর থেকে সিভিল সার্জনের গাড়িচালক আবু তাহের পলাতক রয়েছেন। যার কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এবিষয়ে কথা বলেছেন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, একটি শিশু মারা গেছে এরকম ঘটনা আমি ফেসবুক এবং নিউজের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি দুঃখজনক।
আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে আপনি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত এমন প্রশ্ন করলে, জাহাঙ্গীর বলেন, আমার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা আছে অনেকেই বলেন। কেউ কেউ বলে আমি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমার কোনো নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স নেই। শিশু মৃত্যুর ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালক কল্যঠু সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ভালো বলতে পারবেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের দুই কর্মচারী আবু তাহের দেওয়ান এবং জাহাঙ্গীর হোসেন। তাদের নেতৃত্বেই শরীয়তপুরের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়। এমন প্রশ্নের জবাবে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. রেহান উদ্দিন বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিষয়ে আমার গাড়িচালক আবু তাহের ও সদর হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তারা নাকি শরীয়তপুরের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। গণ ১৪ তারিখে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালকদের বাধার কারণে এক নবজাতক মারা যাওয়ার ঘটনার বিষয়ে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আল বিধান মোহাম্মদ সালাউল্লাহকে সভাপতি করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, স্বাস্থ্য বিভাগের যারা অপরাধী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।